অপ্রিয়_জনাব #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব_০৯

0
161

#অপ্রিয়_জনাব
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_০৯

(নিচের বি:দ্র পড়ার অনুরোধ রইলো।)
রাতের ঝড়ের তান্ডবে গাছপালা ভেঙে পরে আছে উঠানে। শীতল আবহাওয়া। বাতাসের সাথে ভেজা মাটির ঘ্রান নাকে আসছে। মাত্রই ঘুম ভেঙেছে ছায়ার। সোহরাবের কক্ষে গোসলখানা আছে। ছায়া এলোমেলো পায়ে বিছানা থেকে নেমে গোসলখানায় ঢুকে পরে। লম্বা সময়ে গোসল নিয়ে গতকালের শাড়ীই পুনরায় পরে নেয়। গোসলখানা থেকে বের হয়ে একবার ঘুমন্ত সোহরাবকে দেখে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় সে। দোতালার বারান্দায় মিনাকে কান্নারত্ব অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছায়া পিলে চমকায়। মাথায় আঁচল তুলে এগিয়ে যায়। শান্ত স্বরে জিগ্যেস করে,
-ছোট আম্মা কী হয়েছে? আপনি কাঁদছেন কেনো? ছোট আব্বা বকেছে?
মিনা ছায়াকে দেখে আরো ভেঙে পরে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। মিনার ক্রন্দনধ্বনি শুনতে পেরে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে উপমা, তাহেরা, তারনা। সবাইকে দেখে সাহস পেয়ে বলল,
-কাল রাতে তোমাদের ছোট আব্বা কক্ষে আসেনি। গৃহে এসেছিলো রাতের খাবার খাওয়ার পর কোথায় চলে গেলো আমি জানি না।
ছায়া সহ সকলে চিন্তিত হয়ে পরলো। তুলসীও এসে পরেছে। এতো কিছুর মধ্যে তুলসীর নজরে পরে ঘোমটার আড়ালে ছায়ার ভেজা কেশ। সবাই মিনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ছায়া দৌড়ে সোহরাবের কক্ষে আসে। তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে সবটা বলে। সোহরাব উদাম গায়ে শার্ট জড়িয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসে। আলাউদ্দিন আর সে গৃহের বাহিরে খুঁজতে থাকে। সৈন্যদল পাঠিয়ে দেয় সালাউদ্দিনের খোঁজে। চিন্তিত ভঙ্গিতে উঠানে দাঁড়াতেই একজন সৈন্য ভয়াত অবস্থায় দৌড়ে আসে। মাথা নত করে বলল,
-জনাব গৃহের পিছনে ছোট মালিকের মৃত লাশ পাওয়া গিয়েছে।

সৈন্যর কথায় দৌড়ে সেখানে যায় সোহরাব। সালাউদ্দিনের নিথর দেহ পরে আছে মাটির ওপর। লাল র’ক্ত মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। সোহরাব ভূমির ওপর বসে সালাউদ্দিনের শ্বাসপ্রশ্বাস পরীক্ষা করে দেখলো সে আর জীবিত নেই। সোহরাব একবার ওপরে তাকালো। ওপর থেকে পরার জন্য অতিরিক্ত রক্তখরণেই মৃত্যুবরণ করেছেন সালাউদ্দিন।
জমিদার গৃহে শোকের ছায়া ভর করে। হামাগুড়ি দিয়ে কান্না করছে মিনা। তুলসীও কান্নায় ভেঙে পরেছে। একে একে আত্মীয়স্বজন আসছে। পাড়া-প্রতিবেশীরা আসছে। উপমা রুমকি আর রোমানাকে নিয়ে তাহেরার কক্ষে বসে আছে। মেয়েদুটি ভীষণ কান্না করছে। রুমকিকে কোলে নিয়ে তার মাথা বুকে চেপে ধরে রেখেছে। কেনো জানি সে রুমকির মধ্যে নিজেকে দেখতে পাচ্ছে। একদিন সেও এভাবে কান্না করেছিল।

মাটি দিয়ে এসে গৃহে প্রবেশ করে সোহরাব। মোটামোটি আত্মীয়স্বজন সকলেই চলে গিয়েছে শুধু হাতে গোনা কয়েকজন আছে। মিনা ক্ষণে ক্ষণে কান্না করছে তাকে কেউ আটকাতে পারছে না। সোহরাব সবাইকে উপেক্ষা করে সেই বদ্ধ কক্ষে আসে। দ্বার খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। জমিনে ধুলোয় কয়েকটা পায়ের ছাপ দেখতে পেলো সোহরাব। এগিয়ে যেয়ে দেয়ালচিত্রের স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কেউ একজন নিজ আঙুল দিয়ে স্পর্শ করেছে চিত্র। সবটা ভালোভাবে পরোক্ষ করে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় সে।

______________________
এরই মধ্যে কেটে যায় চার মাস। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে জমিদার গৃহে। আগের মতো হৈচৈ আর নেই। সবসময় নীরব হয়ে থাকে গৃহ। তাহেরার বিবাহ হয়ে গিয়েছে। বেশ সুখেই আছে সে। তুলসী অসুস্থ হয়ে পরেছে বিছানায়। একদিন আলাউদ্দিনের সাথে তার তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায় আলাউদ্দিন তাকে মারধর করে। তারপর থেকে অসুস্থ সে। এটা নিয়ে সোহরাব আর আলাউদ্দিনের মধ্যে বিশাল ঝগড়া লেগেছিলো। রাগ করে সোহরাব আজও তার আব্বাজানের সাথে কথা বলে না। মিনা সবসময় মনমরা হয়ে বসে থাকে। হাসে না, বেশি কথা বলে না। সাইয়েরা, উপমা আর ছায়াই গৃহের সকল কাজ করে। সাইয়েরার দায়িত্ব যেনো বেড়ে গিয়েছে।

সোহরাব কয়েকবার গ্রামে এসেছিলো। এখন আর সে তার স্ত্রীকে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে না। একরাত ছায়ার সাথে কাটালে আরেক রাত উপমার সাথে কাটায়। উপমার সাথে এখনও তার স্বামী স্ত্রীয় সম্পর্ক তৈরি হয়নি কিন্তু দুইজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক। ছায়ার মতো চুপচাপ নয় সে। সোহরাবের সাথে অনেক কথা বলে সে।
ছায়া আর সোহরাবের মধ্যে সম্পর্ক এখন শুধু স্বামী স্ত্রী নয় প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দুইজনের মধ্যে। সোহরাব উপলব্ধি করতে পারে ছায়া তাকে পছন্দ করে তেমনই সে এটাও বুঝতে পারে ছায়ার প্রতি তার অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।

কয়েকদিন যাবৎ ছায়া অসুস্থ। মাথা চক্কর দিয়ে পরে যায়, ঘন ঘন বমি হয়, শরীর দুর্বল মনে হয়। উপমা ছায়াকে কয়েকবার বলেছে সোহরাবের সাথে শহরে যেয়ে পরীক্ষা করে আসতে। তাছাড়াও উপমা আন্দাজ করছে ছায়া অন্তসত্ত্বা। কিন্তু ছায়া এটা মানতে নারাজ। ডাক্তার যে বলল সে মা হতে পারবে না তাহলে এখন কিভাবে হবে সে! আজ সোহরাব আসবে গ্রামে। উপমা ভালো ভালো রান্না করছে তার জন্য। রান্না শেষ হলে ইয়ামিন, রোমানা, সাইফা, রুমকিকে পড়াতে বসে বৈঠকখানায়। সকলের জানামতে সে মেট্রিক পাশ তাই মোটামোটি ভালোই পড়ায়।

-এখন যে দুষ্টামি করবে তাকে কিন্তু আমি সত্যি পিটুনি দেবো বলে দিলাম।

উপমার কথায় ভয়ে আরষ্ঠ হয়ে পড়ায় মনোযোগী হয় সকলে। এমন সময় গৃহের সদর দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে সোহরাব। ভাই বোনদের দেখে হেসে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
-বাহ্!আমার ভাইবোনরা দেখছি তাঁদের শিক্ষিকাকে ভীষণ ভয় পায়!
সোহরাবের কথায় সকলে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ছুটে যায় সোহরাবের কাছে। সোহরাব সবাইকে একটা করে চকলেট দেয়। সকলে খুশিতে পড়া বাদ দিয়ে বাহিরে চলে যায়। সোহরাব এগিয়ে এসে উপমাকে একটি চকলেট ধরিয়ে দেয়। উপমা ভাবুক হয়ে জিগ্যেস করে,
-আমিও কী বাচ্চা নাকি!
-অবশ্যই। আমাদের বাড়ির সবথেকে বড় বাচ্চা।
সোহরাবের কথায় উপমা চমৎকার একটি হাসি উপহার দেয় তাকে। সোহরাব হাতের চিকিৎসা ব্যাগ উপমাকে ধরিয়ে দিয়ে বসে পরে। উপমা সযত্নে সেটা নিয়ে অস্থির হয়ে বলল,
-যান গিয়ে আগে আম্মাজানকে দেখে আসুন তারপর আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।
-ঠিক যাচ্ছে।

সোহরাব উঠে তার আম্মাজানের কক্ষে চলে যায়। উপমা চিকিৎসা ব্যাগ নিয়ে এসে সোহরাবের কক্ষে রেখে দেয়। নিজ কক্ষে এসে আলমিরা খুলে একটি শাড়ী বের করে দ্রুত পায়ে পুকুর পাড়ে চলে যায়।
অসুস্থ অনুভব করায় বিছানায় শুয়িত ছিল ছায়া। সোহরাব অনুমতি না নিয়েই ভিতরে প্রবেশ করে। ছায়া ভাবলো হয়তো উপমা এসেছে তাই চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
-উপমা যাও তো তুমি। তুমি যেরকম ভাবছো সেইরকম কিছুই না। বারে বারে বলে আমার মনে কোনো আশা সঞ্চয় করিও না।
সোহরাব বুকে দু’হাত গুঁজে এগিয়ে আসে ছায়ার কাছে। কপালে হাত দেয় তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে। ছায়া ত্বরিতগতিতে বদ্ধ আঁখিজোড়া খুলে ফেলে। সোহরাবকে দেখে ধরফড়িয়ে উঠে বসে। সোহরাব একটু দূরে সরে যায়। গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করে,
-শরীর অসুস্থ? এভাবে ভয় পেলেন কেনো?
-তেমন কিছুই না। আমি ঠিক আছি।

সোহরাব কিছু বলল না তাকিয়ে রইলো শুধু। ছায়া অপ্রস্তুত ভনিতায় বলল,
-আপনি এসে জামাকাপড় পরিবর্তন করেননি? কখন এসেছেন?
-বেশ কিছুক্ষন আগেই।
-গোসল করে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
-হুম।
ছোট উত্তর দিয়ে কক্ষ থেকে প্রস্থান করে সোহরাব। ছায়া কয়েকবার বুকে ফুঁ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। উপমা পুকুরপাড় থেকে গৃহে প্রবেশ করছিলো এমন সময় তার সাক্ষাৎ হয় আলাউদ্দিনের সাথে। ভদ্রতার খাতিরে উপমা ঘোমটা টেনে বলল,
-আব্বাজান খাবার খেয়ে বাহিরে যেয়েন।
-হুম।
উপমা মাথা নত করে গৃহের ভিতরে প্রবেশ করে। আলাউদ্দিন একমনে চেয়ে থাকে উপমার যাওয়ার পানে। যতবার সে উপমার মুখশ্রী দেখেছে ততবার তার মনে হয় এই মুখ সে আগেও কয়েকবার দেখেছে। এই মেয়ে সামনে থাকলে কেমন যেনো একটা টান অনুভব করে আলাউদ্দিন। রক্তের টান।
_____________________
খাওয়া দাওয়ার পর্ব ঠুকিয়ে উপমা সোহরাবের কক্ষে আসে। একে একে ছায়ার শরীরের অবস্থা সবটা বলে দেয় সে। সোহরাব নীরবে সব শুনে বিকালেই ছায়াকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। উপমা মনে মনে দোয়া করতে থাকে যাতে সে যেটা ভাবছে সেটাই হয়। ছায়াকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে দেখেছে এবং শুনেছে সে। মাঝে মাঝে তো তারই মায়া হয় নাজুক মেয়েটার ওপর। এইটুকু সুখ তো তারও পাওনা। সে বিবাহের পর থেকেই তেমন কোনো কষ্ট করেনি। ধীরে ধীরে সে তার পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাচ্ছে। এখন ছায়া আর সোহরাবের একটা সন্তান হোক আর তার শেষ পরিকল্পনা সফল হোক তারপরই সে নিজ গন্তব্যে চলে যাবে।

সন্ধ্যার পর গৃহে আসে সোহরাব ও ছায়া। উপমা নিজ কক্ষ থেকে দৌড়ে বৈঠকখানায় আসে। চেয়ারে বসে কান্না করছে ছায়া। থেমে থেমে শরীর কাঁপছে তার। ছায়ার কান্না শুনে সাইয়েরা মিনা চলে আসে। উপমা ছায়াকে জড়িয়ে ধরে বিচলিত হয়ে সোহরাবকে জিগ্যেস করে,
-কী হয়েছে? আপা কান্না করছে কেনো? ডাক্তার কী বলেছে?
সোহরাবও কিছু বলতে পারলো না। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুধু ছায়াকে দেখছে। উপমার বুকে মাথা রেখে কম্পিত কণ্ঠে ছায়া বলল,
-উপমা সৃষ্টিকর্তা আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছেন। আমার দুঃখের দিন শেষ হলো বোধয়!
-মানে?
-তুমি যেটা বলেছিলে সেটাই হয়েছে। আমি অন্তসত্ত্বা।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না উপমা। খুশিতে তার চোখেও পানি চলে এসেছে। কয়েকমাসে তার ছায়াকে সত্যি নিজের বড় বোন বলে মনে হয়। ছায়া যে তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী এটা ভুলেই যায় উপমা। ছায়াও ছোট বোনের মতো আগলে রাখে উপমাকে। উপমাও সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছায়ার চোখের পানি মুছে দেয়।
-দূর বোকা মেয়ে এভাবে কাঁদে! আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আপনি। আজ তো খুশির দিন। আনন্দের দিন জমিদার বাড়িতে।

অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া বাড়ি মুহূর্তেই আলোতে ভরে উঠে। সকলের মনে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তুলসী এই সংবাদ শোনার পর কিছুক্ষন অনেক কেঁদেছেন। সন্তান হয়না বলে পুত্রকে দ্বিতীয় বিবাহ করিয়েছিলেন অথচ আজ তাঁদের গৃহে খুশির সংবাদ তো এলো তাও আবার পুত্রের প্রথম স্ত্রী ধারাই। ছায়ার কাছে মাফও চেয়েছেন তিনি। ছায়া তাকে ক্ষমা করে দেয়। যে ভুল তিনি করেছেন এখন সে চাইলেও সেটা পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই অভিমান করে থাকা অনুচিত।
পরেরদিন খবর শুনে সকলে জমিদার গৃহে আসে। ছায়ার মা বাবা আসে। তাহসিয়া ইয়াশারও আসে। অনেকেই অবাক হয় উপমাকে দেখে। এই মেয়ের বিন্দুমাত্র ক্ষোপ নেই। কী সুন্দর আপন বোনের মতো ছায়ার পিছনে লেগেই থাকে। তাহসিয়ার মন ভালো হয়ে উঠলো উপমার এমন ব্যবহার দেখে। না চাওয়ার সত্ত্বেও সোহরাবকে হাসপাতালে চলে যেতে হয়েছে। উপমার ওপর ছায়ার সকল দায়-দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন সোহরাব। উপমা সেইসময় মজার ছলে বলেছিলো,
-ঠিক আছে আপার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। নিজের প্রাণ দিবো তাও আপার কিছু হতে দেবো না। কিন্তু এর ফলস্বরূপ সন্তানের নাম আমি রাখবো। রাজি?
উপস্থিত সকলে হেসে ফেলে উপমার কথায়। সোহরাব কিছু বলবে তার পূর্বেই ছায়া বলে,
-শুধু নাম কেনো আমার সন্তানকেও তোমার নিজ সন্তান ভেবে পালতে হবে উপমা। যাই হোক আরেক মা তুমি! ভুলে যেও না।
_______________________

ছায়ার কক্ষ থেকে বের হয়ে নিজের কক্ষে যাচ্ছিলো উপমা। বারান্দায় তার ইয়াশারের সাথে দেখা হয়। মুচকি হাসি দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ইয়াশার। উপমা খুশি হয় ইয়াশারের পরিবর্তন দেখে। অতীত ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। যে ব্যক্তি অতীত ভুলতে পারে না সে কখনই জীবনে আগে বাড়তে পারে না।
তাহেরার সাথে দেখা হলে দুইজন মিলে উপমার কক্ষে যেয়ে বসে। তাহেরা তার সংসারিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ পারছে। তাঁদের কথার মধ্যেই কক্ষে প্রবেশ করে তাহসিয়া। তাহেরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-তাহেরা তোর স্বামী টেলিফোন করতে বলেছিলো তোকে।
তাহেরা বিরক্ত হয়ে বলল,
-পরে করবো নে। ভিতরে আসো আপা। বসো আমাদের সাথে, কথা বলো।
গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ তাহসিয়া মৃদু পায়ে এগিয়ে যেয়ে বিছানায় বসে পরে। উপমা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। তাহেরা প্রসন্ন স্বরে বলল,
-আপা তুমি শহরে থাকো সেখানে কত সুদর্শন। কাউকে কী তোমার মনে ধরে না? পারো তো একজনকে আমার বোন জামাই করে দিতে!
তাহসিয়া তাহেরার পিঠে চাপর মারে। গম্ভীর স্বরে বলে,
-বিবাহের পর তোর মুখ থেকে বেশি বুলি ফুটছে। অসভ্য মেয়ে।

তাহেরা হাসতে হাসতে উপমার ওপর গড়াগড়ি খায়। তাহসিয়া আড়চোখে উপমার পানে তাকায়। শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
-আপনার কী একটুও হিংসে হচ্ছে না বড় ভাবিজানের প্রতি?
-একদমই না। সে এইসকল সুখ পাওয়ার অধিকারী। আর হিংসের কোনো কারণই আমি দেখছি না! একদিন তার সন্তান হবে একদিন আমারও হবে।
তাহসিয়া আর কিছু বলল না। তাহেরা আরো অনেক বিষয় প্রশ্ন করে উপমাকে। উপমাও সুন্দর ভাবে সবটার উত্তর দেয়। কথায় কথায় একসময় তাহেরা বলল,
-আম্মাজানের জন্য আমার ভীষণ কষ্ট লাগছে। সে এখন সুস্থ থাকলে খুশিতে গৃহের আনাচে কানাচে ঘুরতো। বড় ভাবিজানের কত যত্ন করতো!
তাহেরার কথায় তেঁতো হয়ে উঠে তাহসিয়া। রুদ্ধ শ্বাস ছেড়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
-আম্মাজানের সাথে যেটা হয়েছে সেটা সে নিজ কর্মের ফলস্বরূপ পেয়েছে।

>>>চলবে।
(বি:দ্র :- আসসালামু ওলাইকুম। গল্পের নায়িকা কে? আমি কারো সাথে অনুচিত করছি নাকি!এইরকম নানান প্রশ্ন সকলের মনে। ছায়াকে কী আমি ঠকিয়েছি? তার অধিকার মোটামোটি দেওয়ার চেষ্টা করেছি না? সেভাবে গল্পে উপমাও যদি নির্দোষ থাকে তাহলে তাকেও ঠকানো হবে না। সব কিছুই আমার পূর্ব পরিকল্পিত। আপনারা কী একটু ভরসা করতে পারেন না লেখিকার ওপর? একটু করে দেখুন শেষ পর্বে যদি আপনাদের মন ক্ষুন্ন হয় তাহলে আপনারা যা মন চায় বলিয়েন।
গল্পকে গল্প হিসেবেই নেবেন বাস্তবের সাথে মেলাতে যাবেন না। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here