তোর_জন্য #sumaiya_moni #পার্টঃ০২

0
491

#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ০২

~তোমার এত দরদ দেখাতে হবেনা। এত দরদ থাকলে নিজের ছেলের জন্য নাওনা।
তোমার ছেলের জন্যই পারফেক্ট হবে।
~~~কথাগুলো বলেই রোহানা আন্টি ও তার বোন হেসে দিলো।

ফুফু রোহানা আন্টিকে কিছু বলতে পারলোনা। কারন রোহানা আন্টির কাছেই তার হাত পেতে সাহায্য নিতে হয়। ফুফা কয়টা টাকাই বা রোজগার করে। ঘরে একজন অসুস্থ ছেলে যা রোজগার করে সবকিছুই ওষুধের জন্য শেষ হয়ে যায়।
মাসুদ আংকেল তেমন দিতে পারেননা, তাহলে রোহানা আন্টির সাথে দিনভর ঝগড়া লেগেই থাকে।
তবুও শত অপমান সহ্য করেও ফুফু রোহানা আন্টির থেকে টাকা নেন। নয়তো ঘরে দুমুঠো খাবার খাবেন কিভাবে!! ছেলেকেই বা কি খাওয়াবে!!
তাই অপমান, উপহাস, ঠাট্টা সবকিছুই তিনি মুখ বুঝে সহ্য করেন।
ফুফুর ছেলে!! ফুফুর ছেলের নাম নিলয়। নিলয় ভাইয়া কিছুদিন আগেও স্বাভাবিক ছিলেন। কিন্তু এক বছর আগে!!! তখন নিলয় ভাইয়া আমাদের মতোই স্বাভাবিক ছিলেন। নিলয় ভাইয়া অনার্স বর্ষে থাকতেন। একদিন কলেজ থেকে বাসায় আসার পূর্বে রাস্তায় কারা যেনো নিলয় ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে মাঝপথে ফেলে দেয় গাড়ির কাছে। ভাগ্য ভালো কিংবা খারাপ জানিনা।ভাগ্য ভালো থাকায় সে প্রানে বেঁচে আছে। আর খারাও থাকায় পা হারিয়ে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
তাই ফুফু এই অসুস্থ ছেলের জন্য সবকিছু সহ্য করেন। স্বামীর রোজগারের টাকা দিয়ে তো ওষুধই হয়না ভালোভাবে। ছেলেকে কি খাওয়াবেন ও নিজেরাই বা কি খাবেন!

রোহানা আন্টির কথাশুনে ফুফুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।

আমার!!! আমিতো অভাগী,,,যে যা বলে তাই শুনতে হয়।
সবার কথা অনুযায়ী মনে হয়,,,নিজের ইচ্ছেতেই নিজের মা-বাবাকে খুন করে নিজে অনাথ সাঁঝছি।
আচ্ছা! আমি কেন চলে গেলাম না মা-বাবার কাছে! তাহলে এত ভালোভালো কথা কারো মুখ থেকে শুনতে হতোনা।
খুব ভালো থাকতে পারতাম মা-বাবার সাথে। একটা ছোট্ট পরিবারের ছোট সদস্য থাকতাম আমি।
কিন্তু আমার মা-বাবা তারা স্বার্থপরের মতো আমাকে রেখে চলে গেছে।
খুব সুখেইতো ছিলাম আমরা,,, তাহলে কার এমন কি ক্ষতি করছি! যার জন্য মা-বাবাকে আমার থেকে কেরে নিতে হবে? আমাকেও তাদের সাথে পাঠাতে পারতো,~~~~মনে মনে ভাবছিলাম আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।

~~ আদ্রিয়ানের কাছে যেতে বারন করছি দেখে কান্না করছে!!নাকি পা হারানো পঙ্গু ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছি বলে তার জন্য কান্না করছে!!(রোহানা আন্টির বোন,, রোহানা আন্টিকে কথাগুলো বললো)

~~আমি কি বলবো! কিছু বলার নাই আমার। সত্যিই তো আমি একজন আশ্রিতা। একে কেইবা বিয়ে করবে।
কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়ার খালার কথা শুনে ফুফুর দিকে তাকালাম।
ফুফুর দিকে তাকানোর থেকে না তাকানোই হয়তো ভালো ছিলো।
মানুষ কতোটা নিচে নামলে এমন একজন অভাগী মা’কে কথা শুনাতে পারে!
ফুফুর দিকে তাকানোর পরে নিজেই নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম।তিনি নিজের ছেলেকে পঙ্গু বলা শুনে অনবরত চোখের পানি ঝরাচ্ছেন। মুখ বুঝে সহ্য করছেন।
আমি কিছু বলতে পারলাম না। নিরূপায় আমি, শুধু ফুফুর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।

~~~~~~~~~

বাসার সামনে গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে নামার পরে দেখি আদ্রিয়ান ভাইয়া ওই মেয়েটার গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।আদ্রিয়ান ভাইয়া দাঁড়িয়েছে বললে ভুল হবে,,,মেয়েটাই নিজ থেকেই ভাইয়াকে জরিয়ে ছবি তুলছেন । দুজনকে মানিয়েছে ভালোই। একজন ফুল ড্রেস-আপে(আদ্রিয়ান) আরেকজন হাফ ড্রেসে(তার গফ)

রোহানা আন্টিঃ এভাবে ভেবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন! একদম আমার ছেলের দিকে নজর দিবিনা বলে দিলাম। চোখ উঠিয়ে দিবো(রাগীভাবে তাকিয়ে)

~আমার মেয়েটাকে আদ্রিয়ানের সাথে কতভালো মানাচ্ছে(রোহানা আন্টির বোন)
!
!
এতক্ষনে বুঝলাম, ওই মিস. হাফ প্যান্ট তার মেয়ে!! তার জন্যই এমন করছে আমার সাথে।
যাই হোক আদ্রিয়ান ভাইয়াই আমাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। আমি কেন তার পিছনে ঘুরঘুর করবো।
এতদিন তো একটা আশার আলো নিয়ে ছিলাম। আদ্রিয়ান ভাইয়া দেশে আসলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সবকিছু ঠিক হওয়ার বদলে আগের থেকে কয়েকগুন পরিবর্তন হলো।
রোহানা আন্টি যখন আমার সাথে জোরে রেগে রেগে কথাগুলো বললেন,,,,তখন আদ্রিয়ান ভাইয়া একবার তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলো।

~আদ্রিয়ান ভাইয়া ও তার বন্ধুদের আপ্যায়নের দায়িত্ব আমার উপরে পরলো। তাও রোহানা আন্টি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ছেলের খাবারে কিছু মিশিয়ে দেই কিনা তা দেখার জন্য।
আমি হাত দিয়ে কাজ করছি আর কান দিয়ে রোহানা আন্টির কথা শুনছি।
খাবারগুলো গুছানোর পরে যখন নিয়ে আসবো তখনই রোহানা আন্টি বাঁধা দিলেন।

রোহানা আন্টিঃ নাঁচতে নাঁচতে কই যাচ্ছিস। একদম আদ্রিয়ানের কাছে ঘেষতে যাস না(রেগে)
আর শোন , উপরের রুম থেকে সবকিছু গুছিয়ে নিস। বুঝোইতো কত আত্নীয় আসছে,,, তাদেরকে ভালোভাবে যত্ন করতে হবেতো।

আমিঃ কোথায় যাবো তাহলে?

রোহানা আন্টিঃ স্টোর রুমে যাবি,,,এত বলার কি আছে!
কেউ যদি কিছু জিজ্ঞেস করে,, তোর কিছু বলার দরকার নাই। আমি সামলে নিবো।
মনে থাকবেতো?

আমিঃ হুম(মাথা নিচু করে)

সবকিছু গুছিয়ে স্টোর রুমে গেলাম। রুমে যাওয়ার পরে মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। কি সুন্দর রুম!! দেখলেই ইচ্ছে হয় এর থেকে অন্যের বাসায় কাজ করে খাওয়া ভালো।
আচ্ছা আমিইবা এখন এ বাসায় পরে আছি কেন! আমার এত দিনের অপেক্ষা তো মুহুর্তেই শেষ হয়ে গেছে।
তাহলে এখানে আর পরে থাকার কোনো মানেই হয়না। হয়তো বাবা-মায়ের কাছে চলে যাবো। নয়তো দুচোখ যেদিকে যাবে সেদিকেই চলে যাবো।
নিশ্চয় একটা উপায় তো পাবোই।
আর না খেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। অন্ততপক্ষে কারো অবহেলার পাত্রী তো হতে হবেনা।
আচ্ছা মাসুদ আংকেলের কাছে বলে যাবো?
তার থেকে কারো কাছে না বলে যাওয়াটাই ভালো হবে। মাসুদ আংকেলের কাছে বললে রোহানা আন্টির সাথে ঝগড়া হবে।
তার থেকে রাতের আধাঁরেই অজানা পথের খোঁজে চলে যাবো কারো কাছে না বলে।যেখানে কোনো অবহেলা থাকবেনা। না থাকবে কারো ঘৃনা, আমি অনাথ বলে।
আচ্ছা! অনাথ হলেই কি সবার অবহেলা দেখতে হবে!! তারা তো নিজ থেকে কখনোই অনাথ হয়না।
শুনছি অনাথদের ভালোবাসতে হয়। কিন্তু সবকিছুই ভুল শুনছি,,,অবহেলা ছাড়া তাদের কপালে আর কিছুই থাকেনা। আমি নিজেই তার প্রমান।
রুমটা কোনোভাবে পরিষ্কার করলাম। কারন আজকেই হয়তো আমার শেষ দিন হতে পারে এ বাড়িতে।
নিজেকে স্টোর রুমের মধ্যেই রাখলাম, কারন বাহিরে বের হলে মাসুদ আংকেল অনেক প্রশ্ন করতে পারে। জানতে পারলে রোহানা আন্টির সাথে ঝগড়া বাধাঁবে। আছিই আজকের দিন শুধু শুধু রোহানা আন্টিকে দোষারোপ করতে চাইনা। যেভাবেই হোক তার কাছে থেকেই বড় হইছি।
তাছাড়াও আদ্রিয়ান ভাইয়ার আশেপাশে যেতেও বারন করছে। আর আমি যেতেও চাইছিনা,,,শুধু শুধু অবহেলা ও মায়া বাড়াতে চাইনা।
তার থেকে নিজে নিজে কল্পনা করা ভালো কিভাবে এই নরক থেকে পালানো যায়।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার রুমে আসছে। দড়জা লাগানোর শব্দ পেলাম। আমি ভয়ে ভয়ে দড়জার দিকে তাকালাম।
যা দেখলাম তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না আমি।
মনে হচ্ছে এ বাড়িতে আমার আজকে শেষ দিন হবেনা। পৃথিবীতেই শেষ দিন হতে পারে।
~~আপনি!!

#চলবে

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্বটি বা গল্পটি কেমন হচ্ছে জানিনা😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here