#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ১৬
আদ্রিয়ান ঃ ভাগ্যিস ঘুমাইনি। নয়তো এত সুন্দর মুহুর্ত দেখতে পারতাম না।
আমি তার কথা শুনে মাথাটা সরিয়ে নিতে চাইলাম। কিন্তু তা স্বপ্নই থেকে গেল।
আদ্রিয়ান ঃ কি! এখানে ভালোলাগছে না?
আমিঃ উহু
আদ্রিয়ান ঃ তো কোথায় যাচ্ছো! চুপচাপ শুয়ে থাকো।
একটু নড়াচড়া করলে কিন্তু ভাবনাকে আনবো(হেসে)
এখন তোমার ইচ্ছা তুমি কি করবে।
আমিঃ এই কোন বজ্জাতের পাল্লায় পরলাম।
চুপচাপ তার কথামত শুয়ে রইলাম। নয়তো কি না কি করে বসে এর ঠিক নাই।
—————————————-
সকালে মাসুদ সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজে মনযোগ দিলেন।
মাসুদ সাহেবের পাশেই অন্যরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।
হঠাৎ মাসুদ সাহেবের চোখ কপালে উঠার উপক্রম।
রাহুল!! খবরের কাগজে বড় করে রাহুলের মুখটা দেখা যাচ্ছে। আর ছবির নিচেই লেখা ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করছে।
মাসুদ সাহেবের বেহাল অবস্থা দেখে রোহানা বেগম তারাতারি কাগজটি হাতে নিয়ে দেখলেন। কিন্তু তার অবস্থাও মাসুদ সাহেবের মত, যতই হোক ছোট থেকে ছেলেটিকে দেখছে।
এভাবে জঘন্য কাজে যে লিপ্ত হবে এটা ভাবেনি।
আমিও পাশে ছিলাম। রাহুল ভাইয়ার কথাটি শুনে খারাপ লাগলেও সেদিনের কথা মনে পরলো।
আদ্রিয়ান যদি না থাকতো তাহলে হয়তো আমারও আজকের মেয়েটির মত অবস্থা হত।
কিন্তু তার পাপের শাস্তি যেন তিনি পায়।
আদ্রিয়ান, আশিক ভাইয়া সকাল থেকে কই যেন গেছে আর মোহনা আপুকেও দেখছিনা। মনে হয় তাদের সাথেই আছে।
কিন্তু আদ্রিয়ান!! মোহনার সাথে থাকলে তো নির্ঘাত ওই মেয়ে কিছু করবে। কেমন ভাবে আদ্রিয়ানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
মনে চায় চোখ দুটো উঠিয়ে ফেলি।আর আমার বজ্জাত জামাই আছে তার তো ভালো লাগে।
কিন্তু আমাই তাকালেই তার উপর যত নজর পরে।
তাকাবোনা আমি। হুহ,,,,।
-কার দিকে তাকাবেনা?
এতক্ষন রুমে পায়চারি করছিলাম আর কথাগুলো বলছিলাম। কিন্তু কারো কথা শুনে দড়জার দিকে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আসছে।
~আপনি!!
আদ্রিয়ান ঃ তো! অন্য কাউকে আশা করছিলে নাকি??
আমিঃ আপনার মত আমি না। হুহ…..!
সারাক্ষন অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করবেন আর বউ তাকালেই আপনার উপর নজর পরবে।
আদ্রিয়ান ঃ কোন মেয়ে!!(অবাক হয়ে)
আমিঃ এখন সাধু সাজলে কিছুই হবেনা। সকালে একবারের জন্যও বকে যাননি। আবার ওই মোহনা সারাক্ষন পিছুপিছু ঘুরবে। তার সাথে কিসের এত কথা?
আমি থাকলেই যে সব কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়!!
আদ্রিয়ান ঃ কেন! হিংসে হয়?(হেসে)
আমিঃ সারাক্ষন ফাজলামি ভালো লাগেনা।
এরপরে যদি আর একবারো দেখি, তাহলে আপনার একদিন কি ওই মোহনার একদিন।
আদ্রিয়ান ঃ কেন কেন! মোহনার সাথে কথা বলবো না কেন!!একশো বার বলবো(হেসে)
আমিঃ কিইইইই(রেগে)। থাক তোর মোহনা নিয়ে, আমি থাকবোনা 😭
আদ্রিয়ান ঃ মোহনা আমার ভালো বন্ধু হয়। ওর সাথে কথা বলবোনা বলো??
তাছাড়া আমাদের বাসার গেস্ট।
!
আচ্ছা ঠিক আছে। এভাবে কান্না করোনা প্লিজ(হাত আদ্রিয়ানের হাতের মুঠোয় নিয়ে)
মোহনা একটা কাজের জন্য আসছে তোমাকে সাহায্য করার জন্য।তারপরেই চলে যাবে।
তাছাড়াও ও আমাদের বাড়ির গেস্ট, আর গেস্টদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হয়।
আমিঃ গেস্টদের সাথে জরাজরি করে মানুষ??
এবার থেকে যে ছেলে আসবে আমিও জরাজরি করে গেস্টদের সাথে ভালো ব্যবহার করবো।(মুখ ভেঙিয়ে)
আদ্রিয়ান মুখ হা করে তাকিয়ে আছে মনির বোকাবোকা কথা শুনে। ও হাসবে নাকি কান্না করবে কনফিউজড।
অতঃপর বলেই ফেললো,
অন্য কোনো ছেলের নাম মুখে আনলেও মেরে ফেলবো(দাঁতে দাঁত চেপে)
আমিঃ নিজে মেয়েদের নাম তো দুরের কথা বউয়ের সামনে চুমু খেতে পারেন, জরাজরি করতে পারেন। তাতে কোনো দোষ হয়না!!(চোখ রাঙিয়ে)
আদ্রিয়ান ঃ (ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরার অবস্থা। এসব আবার কখন করলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরলো রিয়া চুমু খেয়েছিলো আর মোহনা জরিয়ে ধরছে।)তাই মনিকে ক্ষেপানোর জন্য আদ্রিয়ান বললো,,,,,,
হ্যা। বউ(আর কিছু বলতে দিলোনা তার আগেই মনি মুখে হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলো)
আদ্রিয়ান ঃ উম্মম
আমি হাত সরিয়ে অন্যদিকে ফিরে বসে রইলাম। বজ্জাত জামাই বউ রেখে অন্য মেয়েদের কথা বলছে!!
থাকুক সে তার মতো😭।
আদ্রিয়ান মনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। তারপর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
অন্য মেয়েদের পাশে দেখলে রাগ করে!! অথচ নিজেও কাছে নেয়না।
তাই আদ্রিয়ান অন্য কিছু ভেবে হাসি দিলো।
আদ্রিয়ান আমার সামনে আসেনি একবারের জন্যও। বুঝে গেছি, আমায় আর দরকার নেই তার।
রাতে আদ্রিয়ান রুমে এসে একপাশ হয়ে শুয়ে রইলো। একবারের জন্য আমার দিকে তাকালোও না। আজকে আর গতকালকে মত ভুল করবোনা।হুহ!
তার মোহনা আছে, আমায় তো আর লাগেনা।
আমি এপাশ-ওপাশ ফিরছি কিন্তু তিনি একবারের জন্যও আমার দিকে তাকালেন না।
!
আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু উঠবো যে তেমন কোনো শক্তি নেই। কারন দুইটা হাত আমায় জরিয়ে আছে।
এনাকন্ডা, ইদুর,টিকটিকি, কুমির রাতে আমার দিকে একবারের জন্যও তাকালো না। কিন্তু এখন দিব্যি আমায় জরিয়ে ঘুমানো হচ্ছে!!!
!
আমি উঠবো তখনই তার মায়াবী মুখের দিকে চোখ পরলো। আবারও ক্রাশ খেলাম কিন্তু কিছু করার নাই আমি তো রাগ করছি তার সাথে।
তাই নিজেকে সামলে তার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দিলাম।
!
উঠুন, নামাজের সময় হইছে।
আদ্রিয়ান ঃ উম্মম। ঘুমাতে দাও
আমিঃ এখন নামাজের সময় হইছে, নামাজ আদায় করে যত ইচ্ছা ঘুমান।
উঠুন,,,,,,।
আদ্রিয়ান ঃ ( চোখ মেলে) উঠবো। কিন্তু শর্ত আছে। তাহলে ভদ্র ছেলের মত মসজিদে যাবো।
আমি ঃ ঠিক আছে আমি রাজি। তবুও নামাজে যাবেন।
আদ্রিয়ান ঃ এই যে একটু আগে লুকিয়ে লুকিয়ে কি যেন দিছিলে। আবার দাও(মুচকি হেসে)
আমিঃ কিইইইই(চোখ বড়বড় করে)। আপনি সজাগ ছিলেন????
আদ্রিয়ান ঃ ছিলাম তো। সজাগ না থাকলে এত সুন্দর মুহূর্ত মিস করতাম।
আমিঃ নামাজে যাবেন। তারজন্য উঠতে বলেছি সেখানেও লুচুগিরি শুরু করছেন??
তাছাড়া আপনি আমায় জরিয়ে ঘুমিয়েছিলেন কেন শুনি??
রাতে তো বেশ একাএকা ছিলেন(মন খারাপ করে)
আদ্রিয়ান ঃ ওরে বউ আমার অভিমান করছে(হেসে)।
কে বলছে আমি একাএকা ছিলাম!! হুম্মম্ম?
আমিতো আমার বউয়ের সাথেই ছিলাম। কিন্তু বউ ঘুমে বিভোর ছিলো তাই বুঝতে পারেনি।
আমিঃ এখন বানিয়ে বানিয়ে কোনো কথা বললেও বিশ্বাস করছিনা। ইগ্নোর করছেন আমায়😭।
কালকে আপনি আমার সামনেও আসেননি।
আদ্রিয়ান ঃ ভাবনার আম্মু!!(করুন ভাবে তাকিয়ে)।
একটা কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তাই আসতে পারিনি।
আর রাতে যখন বাসায় আসছি তখম দেখি তুমি শুয়ে আছো তাই আর ডিস্টার্ব করিনি।
আমিঃ কাজ তো সবসময় থাকে মোহনার সাথে।
আমি তো কেউ না তাই আমাকে বলারও প্রয়োজন মনে করেননি।
বলেই উঠে পরলাম।
আদ্রিয়ান ঃ আরে আরেহ কই যাচ্ছো!!
কথা ছিলো কি?
আমিঃ মোহনা আছে তো তার কাছে যাবেন।
আদ্রিয়ান ঃ এসবের জন্য😳!!!
আমিঃ যাবেন কিনা মসজিদে!! (চোখ রাঙিয়ে)
আদ্রিয়ান ঃ হ্যা যাবোতো😳।
মসজিদ থেকে এসে তিনি আবার শুয়ে পরলেন।
আমি পাশে বসে ম্যাগাজিন পড়ছি।
হঠাৎই তিনি আমার হাত থেকে ম্যাগাজিন কেড়ে নিলেন।
আশ্চর্য!! আমি যা করি তাতেই তার অশান্তি।
যত্তসব তেলাপোকা।
আদ্রিয়ান ঃ (কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে।)
আমিঃ এভাবে হা করে থাকলে সত্যি সত্যিই তেলাপোকা যাবে মুখে।
#চলবে