শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৪

0
327

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
পরিপাটি হয়ে তৈরি আর্শি। আরিয়া বলছিল একটু সাজতে। কিন্তু আর্শি চোখ রা*ঙালে সে আর জোড়াজোড়ি করে না। মুখ গোমড়া করেই মা ও বোনের সাথে ড্রয়িংরুমে যায় আর্শি। মায়ের কনুইয়ের ধা*ক্কা খেয়ে সালাম দিয়ে ফ্লোর থেকে নজর সামনের দিকে নেয়। ওমনি তার ঠোঁ*ট জোড়া একে অপরের সাথে দূরত্ব তৈরি করে। চোখের পলক ফেলাও যেন সে ভুলে গেছে। কয়েক সেকেন্ডের এই অবাক মিশ্রিত চাহনির অবসান ঘটে পাশ থেকে আরিয়ার ফিসফিস কথায়। আরিয়া বলে,

“শ্রাবণ ভাইয়াকে কি আজকে খুব বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে, আপু?”

আর্শি জলদি নজর সরিয়া আরিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। আরিয়া আবার বলে,
“কী হলো? তুমি আমাকে এভাবে দেখছো কেন?”

আর্শিও ফিসফিস করে বলে,
“তুই জানতি। তাই না? জেনেও আমাকে কেন বলিসনি?”

“আমি কি বলবো। তখন বললে বুঝি তুমি নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যেতে? ইগো নিয়ে ঢিট ধরে বসে থাকতে। তাই তোমাকে জানাইনি। স্বচক্ষেই দেখে নেবে।”

আর্শি চোখ ছোটো ছোটো করে কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই মিসেস আশালতা মেয়ের হাত ধরে টান দেন। আর্শি নিজেকে সামলে মায়ের সাথে গিয়ে শ্রাবণের বিপরীত পাশের সোফায় বসে। শ্রাবণের মা মিসেস সন্ধ্যা বলেন,

“ভাইজান, কথা আর কী বলব? মেয়ে তো আমাদের আগে থেকেই পছন্দ। এখন আপনারা বলেন। শুভ কাজে দেরি তো করা ঠিক না।”

আর্শির বাবা মিস্টার রিয়াজউদ্দীন বলেন,
“আমরাও তো চাই না দেরি করতে। এখন ছেলে-মেয়ে যা বুঝে।”

মিসেস সন্ধ্যা প্রত্যুত্তরে বলেন,
“বিয়ের অনুষ্ঠান তো এক বছর পরে করার ইচ্ছা। এখন আকদ হবে কী-না সেটা আপনারা বলেন।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দীন মেয়ের দিকে তাকান। আর্শি অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। সে এখন সবার সামনে কী বলবে! সময় তো দিতে হবে। মিস্টার রিয়াজউদ্দীন দ্বিধান্বিত স্বরে বলেন,

“সেটা আমরা পরে আপনাদের জানিয়ে দেবো। আলাপ আলোচনা করে নেই।”

“তাহলে আজকে শুধু আংটি পরিয়ে দিয়ে যাই।”

কথাটা বলেই মিসেস সন্ধ্যা উঠে আর্শির কাছে আসেন। আর্শির হাত ধরে আংটি পড়িয়ে দেন। আর্শি বিপরীতে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে চুপ করে থাকে। অতঃপর আরিয়ার বদৌলতে শ্রাবণ ও আর্শির একা কথা বলার সুযোগ হয়। আর্শি শ্রাবণের সাথে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে শ্রাবণ দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আর্শি হা*ম*লা করে বসে! সে দাঁত কিড়মিড় করে শ্রাবণের শার্টের কলার ধরে বলে,

“আপনারা সবাই এতদিন যাবত আমার সাথে মজা নিয়েছেন? সবকিছু জেনেও না জানার ভান করেছিলেন। সকালবেলা তো বলেছিলেন, ওয়াও কনগ্রেটস! এখন বুঝতে পারছি কেন বলেছিলেন। ফা*লতু লোক একটা। এইজন্যই আপনাকে আমার সহ্য হয় না। আমার মন চাচ্ছে আপনাকে একটা ঘু*ষি মে*রে আপনার মুখের নকশা বদলে দেই!”

শ্রাবণ হাসতে হাসতে বলে,
“রাগলে কিন্তু তোমাকে দারুণ লাগে! একদম লাল টমেটো! ”

আর্শি আরও ক্ষেপে যায়। চোখ রাঙিয়ে বলে,
“আপনি আমাকে টমেটো বললেন? এই আপনার সাহস তো কম না!”

“তুমি বুঝি আজকে জানলে যে আমার সাহস কম না! মাঝে মাঝে তুমি এমন ফানি ফানি কথা বলো না বৃষ্টি! ভীষণ হাসি পায়।”

“আর আপনার কথা শুনলে আমার ভীষণ রাগ পায়! মন চায়, আপনার এই সিল্কি চু*লগুলো যদি আমি একদম টে*নে ছিঁ*ড়ে টা*কলা করে দিতে পারতাম! মনে অনেক অনেক অনেক শান্তি পেতাম!”

“ওকে! ছিঁ*ড়ে ফেলো। আমার তো তাতে কোনো সমস্যা নেই। তুমি একটা টা*কলা জামাই পাবে! তখন লোক সমাজে কিভাবে বলবে? যে আমার জামাই টা*কলা! মানে প্রেস্টিজে লাগবে তাই না?”

আর্শি এবার শ্রাবণের কলার ছেড়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে,
“এই আপনি এতো বিরক্তিকর কেন? এত অস*ভ্য কেন? সবসময় আমাকে ক্ষেপাতে হয় কেন আপনার?”

বলতে বলতে রেলিংয়ের কাছে পৌঁছাতেই শ্রাবণের দেহের উপরিংশ কিছুটা বাহিরের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অমনি আর্শি ভয় পেয়ে খপ করে শ্রাবণের শার্ট ধরে টান দেয়। শ্রাবণও রেলিং ধরে নিজেকে সামলে নেয়। আর্শি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর শ্রাবণের দিকে তাকাতেই বোকার মতো বলে,

“আপনি হাসছেন? আপনার ধারণা আছে? এখান থেকে পড়ে গেলে আপনার কি অবস্থা হতো? চারতলার উপর থেকে পড়তেন আপনি। মরতেন কী-না জানিনা! কিন্তু বেঁচে থাকলে হাড়-গোর আস্ত থাকতো না।”

শ্রাবণ রসিকতার সুরে দুই দিকে দুই হাত ছাড়িয়ে বলে,
“শুনো হে দখিনা হাওয়া, আজ এক প্রেমিক তার প্রেয়সীর নজরে নিজেকে হারানোর ভয় দেখেছে। ধন্য তুমি দখিনা হাওয়া! ধন্য!”

আর্শি তৎক্ষণাৎ কোমড়ে এক হাত গুজে আরেক হাত দিয়ে শ্রাবণকে এক ঘা লাগিয়ে বলে,
“ইউ আর টু মাচ! আপনাকে কিছু বলাই বেকার। সরি। কিছু না, আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!”

এই বলে আর্শি শ্রাবণকে ছাদে রেখেই নিজে একা নিচে নেমে আসে। শ্রাবণ সেখানে দাঁড়িয়ে হাসছে।

_________

শ্রাবণের পরিবার চলে যাওয়ার পর সবাই মিলে আর্শিকে ঘিরে ধরেছে। আদিব বলে,
“প্লিজ আর্শু, রাজি হয়ে যা বোন।”

আরিয়া বলে,
“রাজি হয়ে যাও না, আপু। শ্রাবণ ভাই কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”

আশিকও বলে,
“রাজি হয়ে যাও, আপু। ভাইয়াটা কতো ভালো।”

এই তিনজনের কথা শুনে আর্শি এবার তার বাবা-মায়ের দিকে তাকায়। উনারা অসহায়ের মতো চেয়ে আছেন। আর্শি বলে,

“কী? তোমরা এভাবে চেয়ে আছো কেন আমার দিকে? আমি কি একবারও মানা করেছি যে আমি বিয়ে করবো না? শুধু বলেছি এক বছর পর।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দীন এগিয়ে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,
“বিয়ে তো শ্রাবণকেই করবে। সেটা এখন করো বা এক বছর পর করো। কিন্তু দেখো, এখন আমরা তোমার বিয়েটা দিতে চাইছি কারণ তুমি মানো আর না মানো, আগের তুলনায় আমরা এখন বেশি ভয় পাচ্ছি।”

মিসেস আশালতাও বলেন,
“ঠিক তাই। বলা তো যায় না কিছু। রাজি হয়ে যা, মা।”

আদিব হুট করে বলে ওঠে,
“দেখ আর্শু, রাজি হয়ে যা। তোর জন্য আমার বিয়েটাও পিছিয়ে যাচ্ছে! আমি কলিকে আর কতো বছর অপেক্ষা করাবো?”

ভাইয়ের কথা শুনে আর্শি দৃষ্টি সরু করে তাকায়। ফের তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,
“আমি কি তোমাকে বিয়ে করতে মানা করেছি? আমার দোষ দাও কেন? নাকি তোমার আমাকে ঝ*গ*ড়াটে ননদ মনে হয়? যে কলিকে বিয়ে করে আনবে আর আমি প্রতিদিন কলির সাথে ঝ*গড়াঝা*টি করতেই থাকব! আরে ভাই, আমি তো এক বছরের জন্য চলে যাচ্ছি।”

“তুই বুঝতেছিস না। তোর আগে আরিয়ার বিয়ে হয়েছে। এখন যদি তোর আগে আমিও বিয়ে করি লোকে তো আরো খারাপ কথা বলবে। ”

“ফাইন! রাজি আমি। কিন্তু তোমার ওই বে*য়াদ*ব বন্ধুকে বলে দিবে, আমার সাথে যেন পা*ঙ্গা না নেয়। এর কাছে হাজারটা কারণ থাকে আমাকে বিরক্ত করার!”

আর্শির কথাতে সবাই খুশি হয়। আরিয়া বলে ওঠে,
“ওই বিরক্ত করতে করতেই তো তুমি তার প্রেমে এখন হাবুডুবু খাচ্ছো!”

আর্শি তৎক্ষণাৎ আরিয়ার কান ধরে শা*সায়,
“বড্ড বেশি পেকে গেছো তুমি। তোমার বড়ো কিন্তু আমি।”

আরিয়া নিজের কান ছুটানোর প্রয়াস করছে আর বলছে,
“হতে পারো তুমি বড়ো। কিন্তু তোমার আগে আমার বিয়ে হয়েছে। সো রেসপেক্ট মি!”

আর্শি হা হয়ে আরিয়ার কান ধরা হাত শিথিল করে দিলো। তার আগে বিয়ে হয়েছে বলে নাকি তাকে সম্মান করতে হবে! আরিয়া ছাড়া পেয়ে বড়ো বোনের মতিগতি দেখছে। এবার আর্শি ও-কে ধরতে উঠবে তার আগেই আরিয়া উঠে দৌঁড়! আর্শিও ওর পিছে! দুই বোন ডাইনিং টেবিলের চারিপাশে, খাট, সোফা সব ডিঙিয়ে ধাওয়া করে চলেছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here