শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৫

0
395

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
আশিক ফোন হাতে নিয়ে চিন্তা করছে কী করবে। তখন হাসান আহমেদ আশিককে ডেকে বলেন,
“তোমার ভাইটা কোথায় গেছে, আশিক?”

“ছাদে।”
মুখ ফসকে কথাটা বলে নিজেই নিজের মুখে হাত দিয়ে ফেলে আশিক। তৎক্ষণাৎ সুর পালটে বলে,
“মনে হয় ছাদে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখেছিলাম।”

হাসান আহমেদ নিজের ছেলের উপর বিরক্তি প্রকাশ করতে করতে সোফায় বসে ফোনে খবর দেখছেন। আশিকও হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

_______

নাহিদের পরিবারকে বিদায় দিয়ে মিসেস আশালতা মেয়ের শাড়ি দেখতে বসেছেন। বেশ পুরাতন ডিজাইনের ঘন কাজের শাড়ি। মিসেস আশালতা সন্তুষ্টিচিত্তে বলেন,

“শাড়িটা সত্যি খুব সুন্দর মানাবে আরুর গায়ে। দেখ আর্শি, তোর গায়েও কিন্তু মানাবে!”

“আমার গায়ে মানাতে হবে না। তুমি রাখো শাড়ি। তোমার না কোমড় ব্যাথা করতেছে? যাও গিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকো।”

আর্শি চোখে-মুখ কুঁচকে কথাটা বলল। মিসেস আশালতা বেজার কণ্ঠে বলেন,
“বিয়ে ইঙ্গিত শুনলেই তোর মনে হয় গরম তেলে পানি ছিঁটার অবস্থা হয়। বিয়ে তো করতে হবে। তোর ছোটোবোনের বিয়ে আগে দিচ্ছি বলে যে তোকে বিয়ে দিবো না, এমন তো না। নেহাৎ নাহিদের পরিবার বিশেষ অনুরোধ করলো বলে।”

“হয়েছে, থামো না! তোমার রেস্ট করতে হবে না। শাড়ি নিয়েই বসে থাকো! আমি গেলাম!”

আর্শি উঠে চলে যায়। মিসেস আশালতা ছোটো মেয়ের সাথে বড়ো মেয়ের রাগ, একগুঁয়েমির কথা বলতে লাগলেন।

_______

সন্ধ্যায় নাস্তা শেষে আরিয়া ফোনে বাংলা টেলিফিল্ম দেখছিল তখন আর্শি ইতস্তত করে আরিয়ার পাশে বসে। কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজেকে ধাতস্থ করে ডাকে,

“আরু!”

“হু”

আরিয়া ফোনেই দৃষ্টি রেখে জবাব দেয়। আর্শি আবার ডাকে,
“আরু, শোন না!”

“হুম বলো। শুনতেছি।”

“ফোন রেখে আমার দিকে তাকা।”

আরিয়া মানা করে কিউট ফেস করে অনুরোধ করে,
“একটু পর, আপু। টেলিফিল্মটার মাঝে অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারছি না। তাহলে মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”

আর্শি নিরবে নিরববাক্যে মেনে নেয়। প্রায় আধঘণ্টা পর আরিয়া ফোন রেখে শুধায়,
“বলো এবার। কী যেনো বলবে বলছিলে?”

আর্শি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,
“না না। কিছু না। ভুলে গেছি আসলে।”

“উফ! আপু, তুমিও না! মনে পড়লে বইলো। আমার কালকে ক্লাস আছে। একটু পড়ি।”

আর্শি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। অতঃপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

______

পরদিন আরিয়া ভার্সিটিতে যায়। একটা ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে এসে বসতেই আশিকও সেখানে এসে দাঁড়ায়। আশিক ইতস্তত করে বলে,

“আরিয়া, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

আরিয়া চা খেতে খেতে ইশারা করলো বসতে। আশিক বসে চুপ করে আছে। আরিয়া বলে,
“বলো।”

“না মানে। যদি তোমার বান্ধবীদের একটু…..”

“কেন? বান্ধবীরা থাকলে প্রবলেম কী?”

আরিয়ার সাথে সাথে ইশা ও রিনি নামের ওর ফ্রেন্ডরাও তাল মেলালো।
“আমরা থাকলে কী প্রবলেম? তুমি বলতে পারো।”

আশিক অনুরোধ করে,
“প্লিজ তোমরা কিছু মনে করো না। আমি জানি তোমরা ছেলেদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলো না। আই রেসপেক্ট দ্যাট। খুব আর্জেন্ট না হলে বলতাম না।”

আরিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আচ্ছা, চলো। ক্যাম্পাসে গিয়ে কথা বলি।”

“ইশা, রিনি, তোরা দশ মিনিট বস। আমি আসতেছি।”

তারপর আরিয়া তার ফ্রেন্ডদের রেখে আশিকের সাথে যায়। দুজনে একটা জায়গায় গিয়ে বসে। আরিয়া জিজ্ঞাসা করে,
“বলো এবার।”

আশিক লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে বলে,
“তোমার সাথে আমার কাজিনের বিয়ে হচ্ছে। কয়েকদিন পর তুমি আমার ভাবি হবে। দুই বছর আগে যদিও আমি তোমায় প্রপোজ করেছিলাম। যেটা আমার করা উচিত হয়নি, সরি। ওটা মনে রেখে আমাকে জাজ করো না। তখন জাস্ট সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছিলাম আর তোমাকে ভালো লাগতো বলে বন্ধুদের বুদ্ধিতে প্রপোজ করে ফেলেছিলাম।”

“তুমি এগুলো বলতে ডেকেছো?”

“না না। অন্যকিছু।”

“তাহলে বলো। পুরোনো কথা টেনো না। তোমার প্রতি আমি কোনো রাগ-ঘৃণা রাখিনি। আমি ভুলে গেছি সেসব, তুমিও ভুলে যাও।”

আশিক জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে খানিক দম নিয়ে বলে,
“আমি তোমাকে কিছু বলব না। কিন্তু কিছু শোনাতে চাই। জানিনা এরপর তোমার রিয়াকশন কেমনটা হবে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তোমাকে এটা জানানোটা জরুরী। আফটারঅল এটা তোমার সারা জীবনের প্রশ্ন। এজ অ্যা ফ্রেন্ড, অন্ধকারে থেকে তুমি নতুন জীবন শুরু করো, এটা আমি চাই না। তাই তোমাকে জানানোর জন্য মনে অনেক সাহস নিয়ে আমি এখানে এসেছি। প্লিজ পুরোটা শুনবে। তারপর রিয়েক্ট করবে।”

আরিয়া সম্মতি জানিয়ে বলে,
“ঠিক আছে।”

আশিক আশ্বস্ত হয়ে ফোনে রেকর্ডটা অন করলো। বেশি না, মাত্র চার-পাঁচ মিনিটের একটা রেকর্ড। আরিয়া প্রথমেই তার আপুর কন্ঠ শুনে বলে,
“এটা আপু?”

“হ্যাঁ। শোনো আগে। পুরোটা শুনে কথা বলবে। তার আগে না।”

আরিয়া মাথা নাড়িয়ে আবার রেকর্ডটা চালু করলো। রেকর্ড চলতে চলতে আরিয়ার মুখভঙ্গিও বদলাতে শুরু করলো। পুরোটা শুনে সে বলল,
“আমার আপুর চরিত্রে প্রশ্ন তোলা! তোমার ভাইকে এই অধিকার কে দিয়েছে? এই যে আমি তোমার সাথে এখানে বসে আছি, কথা বলছি, তার মানে কি এই যে আমার চরিত্র খারাপ হয়ে গেছে? আমার আপু যাদের সাথে ঘুরতে গিয়েছে তাদের মধ্যে একজন আমার কিছুটা দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই। মানে আম্মুর চাচাতো বোনের ছেলে। রাকিব ভাইয়া। ভাইয়া ছিল বলেই, আম্মু আপুকে পারমিশন দিয়েছিল। ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা জাস্ট ফ্রেন্ডের নামে অনেক খারাপ কিছু করে। মানলাম। কিন্তু তাই বলে সবাই তো না। উনার যেহেতু আমার আপুকে পছন্দ না, সরাসরি মানা করে দিতে পারতো। আমার আপুর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না। এখন যদি আমি তোমার ভাইয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলি তখন? তোমার ভাই তো আমাকে ডিজার্ভ করে না। তোমার ভাইয়ের উচিত এমন কাউকে বিয়ে করা, যে মেয়ে তার কথায় উঠবে বসবে। যেহেতু তোমার ভাই ভাবে, আমার আপুর চরিত্র খারাপ! তাহলে আমার জন্য বাড়িতে বিয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কোন দরকার ছিল না। এখন তো আমার মনে হচ্ছে, তোমার ভাই আমাকে বিয়ে করার জন্য আমার আপুকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছে। কারন তোমার ভাই বলেছে আমাকে বিয়ে করছে আমার আপুর বিয়ের আগে। আমার পরিবারের বদনাম হতে পারে ভেবে, আমার আপু সেই বদনামের ভয়ে কাউকে না বলতে পারে। হাউ চিপ!”

আশিক বলে,
“দেখো আমার মনে হয়েছে, তোমার আপু তোমাকে এটা শত চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হয়তো বলতে পারবে না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে তোমার এটা জানা উচিত। তাই তোমাকে আমি জানিয়ে দিলাম। আরেকটা কথা, আমার ভাই মেয়েদেরকে তেমন একটা সম্মান করে না। সেটা আমি জানি কিছুটা। কিন্তু এরকম কাহিনী জানতাম না। এখন কী করবে না করবে তোমার ব্যাপার।”

“হুম। থ্যাংকিউ। আপু আমাকে দুইবার বলার চেষ্টা করেছে, বলতে চেয়েছে আমার মনে হয়। কিন্তু বলতে পারেনি। কাইন্ডলি এই অডিও রেকর্ডটা আমাকে সেন্ড করে দাও। আর সময় থাকতে সত্যটা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।”

এই বলে আরিয়া সেখান থেকে উঠে সোজা বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।

______

বাড়ি পৌঁছে আরিয়া চিৎকার করে তার বাবা-মা, বোনকে ডাকে। হঠাৎ আরিয়ার এভাবে চিৎকার শুনে সবাই কিছুটা ঘাবড়ে যায়। মিসেস আশালতা রান্নাঘরের কাজ রেখে ছুটে এসে মেয়েকে হরবড়িয়ে জিজ্ঞাসা করেন,

“কী হয়েছে? তুই এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি?”

“আপু কই?”

আর্শি এসে জিজ্ঞেসা করে,
“কী হয়েছে?”

আরিয়া আর্শির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে দৃষ্টি মিলিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“নাহিদই সেই লোক?”

আর্শি আঁতকে ওঠে।
“মানে?”

“সত্যি করে বলো আপু। নাহিদই কী সেই লোক? যে তোমার আত্মসম্মানে আ*ঘাত করেছিল কারণ তুমি তাকে প্রপোজ করেছিলে!”

মিসেস আশালতা ও মিস্টার রিয়াজউদ্দীন একে অপরের মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকান। মিসেস আশালতা হতচকিত কন্ঠে শুধান,
“কী বলছিস এসব?”

আরিয়া তার মাকে বলে,
“বলব। সব বলব।আগে এখনই নাহিদের বাবা-মাকে কল করো। ”

“কিন্তু…”

“কোনো কিন্তু না, মা। উনাদেরকে আগে থেকেই কিছু বলবে না। শুধু বলবে জরুরী কথা আছে যেন বাসায় আসে। সাথে উনাদের ওই ছেলেকে না আসলেও হবে।”

মিসেস আশালতা মাথায় হাত দিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পড়লেন।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।
রাতে আরেকটা পর্ব পাবেন। তিন দিন বিয়ে বাড়িতে নারায়ণগঞ্জ থেকে আশুলিয়া, উত্তরা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে লিখতে পারিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here