#copyrightalert❌🚫
এয়ারপোর্টের ডিপার্চার গেইটের কাছে নিজের ছেড়ে যাওয়া অতীতকে দেখে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো আর্শি। কিছুক্ষণ আগে,,
“হ্যালো, মা। আমি এয়ারপোর্টে ওয়েট করছি। তুমি তো বলেছিলে আরিয়া ওর উডবির সাথে এসে আমাকে রিসিভ করবে। দ্যান হোয়ার আর দে?”
মিসেস আশালতা উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালেন,
“কী বলছিস! আরিয়া তো প্রায় আধঘণ্টা আগে আমাকে জানালো ওরা পৌঁছে গেছে। দাঁড়া কল করে দেখি। তুই ডিপার্চার এড়িয়াতেই থাক। আমি ওদের ওখানেই যেতে বলছি।”
“আচ্ছা।”
বলে আর্শি ফোন কেটে আশেপাশে আবারও নজর বুলাতে শুরু করলো। প্রায় দশ মিনিট যাবত লাগেজ নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। এখন তো রীতিমতো মাথা চক্কর দিচ্ছে। এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা যে! অস্বস্তি হয়। তাই খানিক সাইডে গিয়ে লাগাজটাকে কাত করে তাতেই বসলো। বসে বসে আশেপাশের লোকজনের ভীড়ে নিজের বোনকে খুঁজতে লাগলো।
অপরদিকে আরিয়াকে ওর উডবি নাহিদ এয়ারপোর্টের ভেতরের স্টল গুলো থেকে চকলেট কিনে দিয়েছে। আরিয়া চকলেট খেতে খেতে বলছে,
“আপনার যে কখন কী হয়! জাস্ট বলেছিলাম, আপু নিশ্চয়ই আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবে। তাতেই আপনি আমাকে জোড় করে চকলেট কিনে দিতে নিয়ে আসলেন! আবার প্যাকেট খুলে বলছেন, খাও! স্ট্রেঞ্জ আপনি।”
“তুমি তো চকলেট ভালোবাসো। তাহলে সমস্যা কোথায়? খাও না।”
নাহিদের কথার পিঠে আরিয়া প্রত্যুত্তর করবে তার আগেই আরিয়ার ফোন বেজে উঠলো। আরিয়া চকলেটের প্যাকেটটা নাহিদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফোন বের করে দেখে তার মা কল করেছে। নিশ্চয়ই মেয়ের খবর জানতে। সে ফোন রিসিভ করে,
“হ্যাঁ, মা। বলো।”
“কই তোরা?”
“এইতো এয়ারপোর্টেই।”
“তাহলে আর্শিকে রিসিভ করছিস না কেন? মেয়েটা আমার কতক্ষণ ধরে তোদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।”
আরিয়া হকচকাল। তাড়াহুড়ো করে বলল,
“আপু চলেও এসেছে! আচ্ছা রাখো রাখো। আমরা এখনি যাচ্ছি।”
কল কেটে হড়বড়িয়ে নাহিদের বাম হাত চেপে ধরে ছুটতে শুরু করলো আরিয়া। নাহিদ পেছন পেছন তাল মিলিয়ে ছুটতে ছুটতে বলতে থাকে,
“আরে এভাবে ছুটছো কেন? রিলাক্স! তোমার বোন বাচ্চা না যে হারিয়ে যাবে!”
আরিয়া ঘাড় সামান্য পেছনের দিকে ঘুরিয়ে জবাবে বলে,
“আমি জানি আমার বোন বাচ্চা না। বাচ্চা হলে নিশ্চয়ই একটা বছর ভিনদেশে একা একা কাটিয়ে দিতে পারতো না! আমরা এখানে এসেছি কেন? আপুকে রিসিভ করতেই, তাই না? তাহলে এখানে এসে চকলেট খাওয়ার মানে তো দেখছি না আমি।”
কথা বলতে বলতে আরিয়া কিন্তু দাঁড়ায়নি। যার বদৌলতে সামনের দিকে এক ব্যাক্তির সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে গেছে। লোকটিকে সরি বলে আবার ছুটতে থাকে। নাহিদ আরিয়ার জবাব শুনে খানিক ইতস্তত বোধ করলো। সে আশা করেনি আরিয়া তাকে এভাবে পালটা জবাব দিবে। আরিয়া শান্তশিষ্ট, কম কথা বলে বলেই তো তাকে পছন্দ করেছে। নয়তো…!
নাহিদ কিছুটা সংকোচ করে বলে,
“আরিয়া, আমার মনে হয় তোমার বোন এতক্ষণে হয়তো চলে গেছে। প্লেন ল্যান্ড করেছে প্রায় অনেক্ষণ তো হলো। চলো আমরা ফিরে যাই। তোমাকে ড্রপ করে আমার একটা কাজ আছে।”
আরিয়া এবার থামলো। নাহিদের হাত ছেড়ে তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। অতঃপর সন্দিহান হয়ে বলল,
“প্লেন অনেকক্ষণ আগে ল্যান্ড করেছে তা আপনি জানতেন! তারপরও আপনি আমাকে নিয়ে চকলেট কিনতে এসেছেন? আবার এখন বলছেন, বাড়ি ফিরে যাই! আমাকে ড্রপ করে আপনার একটা কাজ আছে! তাহলে গতকাল রাতে আপনাকে যখন বললাম, আপনি আমার সাথে এয়ারপোর্টে আপুকে রিসিভ করতে যাবেন, তখন সরাসরি কেন না করলেন না? আপনি না করলে আমি ভাইয়াকে রাজি করিয়ে নিয়ে আসতাম নয়তো আমি একাই আসতাম। আমি তো গতকাল আপনাকে শুধু এটা বলেছিলাম যে আমি আপুকে সারপ্রাইজ দিতে চাই। আপু এখনো আপনার ছবি দেখেনি এমনকি নামও শুনিনি। আমি সরাসরি আপুর সাথে আপনাকে এয়ারপোর্টে মিট করাতে চেয়েছিলাম।”
নাহিদ ভেতরে ভেতরে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। কিন্তু বাহ্যিকভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে নিজের যুক্তি রাখতে বলে,
“আমি চাইনি তুমি হার্ট হও। তাই বলিনি। লেট ইট বি। লেটস গো। সি মাইট বি ওয়েটিং।”
আরিয়া কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। চুপচাপ আগে আগে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। কিন্তু নাহিদ চিন্তায় পড়ে গেছে। গতকাল রাতে আরিয়া তাকে এয়ারপোর্টে যাওয়ার কথা বলার পর সে চেয়েও না করতে পারেনি, এজন্য এই প্ল্যান করেছিল। সে জানে আরিয়ার বড়ো বোন আর্শি ভিষণ অধৈর্য মেয়ে। এতো পথ জার্নি করে এসে এতো সময় অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকবে না। যেভাবেই হোক আর্শির সাথে দেখা হওয়াটা আটকাতে চাচ্ছিলো সে। কিন্তু এখন আরিয়ার মনে সন্দেহ ঢুকে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই দেখা করতে হবে। মনে মনে খুব করে চাইছে যেন আর্শি তাকে দেখে নেগেটিভ রিয়াকশন না দেয়।
ডিপার্চার এড়িয়াতে পৌঁছাতেই আরিয়া সামনে তার বোনকে লাগেজ কাত করে বসে থাকতে দেখলো। খুশিতে তার আঁখিদ্বয় যেন ডগমগিয়ে ওঠলো। ছুটে গিয়ে হাঁটু গেড়ে জড়িয়ে ধরলো আর্শিকে। আচমকা জড়িয়ে ধরাতে আর্শি ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। আঁতকে উঠে সে। অতঃপর বুঝতে পেরে আরিয়ার পিঠে একটা কি*ল বসিয়ে দিয়ে বলে,
“শ*য়-তা*ন! আমি ভয়ে পেয়ে গেছিলাম জাস্ট।”
আরিয়া সরে এসে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলে,
“ভয় পেতেই তো করেছি। ওয়েলকাম ব্যাক, আপু।”
“হুহ্! চল এবার। অনেক্ষণ ধরে বসে আছি। শরীর খারাপ লাগছে।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, যাবো তো। আগে কারও সাথে তোমাকে ইন্ট্রোডিউস তো করাই।”
আর্শি উঠে দাঁড়িয়ে লাগেজ সোজা করে সামনে তাকাতেই থমকে যায়। প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো শক্তিও যেন সে পাচ্ছে না। ল্যাগেজে ভর দিয়ে ব্যালেন্স সামলে নির্নিমেষ সম্মুখে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখছে। এদিকে আরিয়া পরিচয় করায়।
“আপু, মিট, মিস্টার নাহিদ আহমেদ। আমার উডবি হাজবেন্ড।”
আরিয়ার প্রথমোক্ত কথাগুলো ঠিকমতো খেয়াল না করলেও শেষোক্ত ‘আমার উডবি হাজবেন্ড’ বাক্যটা যেন তার কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতেই সব সমীকরণ ঘেটে দিয়েছে। মস্তিষ্কের নিউরণ গুলোর মধ্যে যেন এক অদৃশ্য প্যাঁচ লেগে গেছে। ক্রমশ শরীরের ভেতরকার তাপমাত্রা বাড়ছে এবং হুট করে শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করলো। যার দরুণ হুট করেই মাথা ঘুরে উঠলো। আরিয়া নাহিদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বোনের দিকে চাইতেই ভয় পেয়ে যায়। আর্শি লাগেজ ধরে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়েছে। আরিয়া উদগ্রীব হয়ে ওঠলো। বোনের সন্নিকটে বসে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে প্রশ্ন ছুঁ*ড়লো,
“কী হলো তোমার? শরীর বেশি খারাপ করছে? প্রেশার ফল করলো মনে হচ্ছে।”
তারপর নাহিদের দিকে চেয়ে ঘাবড়ানো কণ্ঠে বলল,
“জলদি একটা চকলেট দিন। আপুর প্রেশার ফল করেছে। এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা যে করছিল।”
নাহিদ ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে চকলেট এগিয়ে দিলো। আরিয়া ছোঁ মে*রে চকলেটটা নিয়ে আর্শিকে জোড় করে খাওয়ালো। এয়ারপোর্টের মধ্যে এমন অবস্থায় চার-পাঁচজন মহিলা-পুরুষ এগিয়ে এসে ‘কী হয়েছে?’ জানতে চাইছে। উনাদেরকে নাহিদ হ্যান্ডেল করে নেয়। মিনিট দুয়েক পেরোনোর পর আরিয়া সতর্ক স্বরে বলে,
“আপুকে খোলা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। নাহিদ, আপনি আপুর লাগেজ নিয়ে আসুন। আমি আপুকে ধরে নিয়ে বের হচ্ছি।”
নাহিদ প্রত্যুত্তর না করে তাই করলো। আর্শি সেন্স হারায়নি কিন্তু একা একা চলাচল করতে পারছে না। আরিয়ার সাহায্যে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে খোলা জায়গায় এসে বেঞ্চে বসলো। এক্ষেত্রে এয়ারপোর্টের নিরাপত্তারক্ষীরা খুব সাহায্য করেছে।
কিছুক্ষণ পর আর্শি সুস্থ বোধ করলে মৃদু স্বরে বলে,
“বাড়ি চল, আরু।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ চলো। সরি আপু। আমি ইচ্ছে করে লেট করিনি। নাহিদ আমাকে বলেছিল প্লেন ল্যান্ড করতে সময় বাকি। তাই আমাকে চকলেট কিনে দিতে নিয়ে গেছিলো। সো সরি, আপু।”
আর্শি এক পলক নাহিদের চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে মনে মনে তাচ্ছিল্য হেসে আরিয়াকে কৃতিম হাসি দেখায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#সূচনা_পর্ব
আসসালামু আলাইকুম। প্রায় দেড় মাস পর গল্প লিখলাম। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। প্রথম পর্ব পড়ে প্লিজ বিরূপ মন্তব্য করবেন না।