কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_৩৪ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
554

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

সবার শেষে মেহবিনের সাথে আসা মুখর বাদে আরো দুজন নতুন মানুষ দেখে তাজেল বলল,,

“ঐ দুইজন কিরা ডাক্তার?”

এতোক্ষণ মিহির আর মাইশা অবাক হয়ে সব দেখছিল। হুট করে তাজেলের প্রশ্নে ওরা এগিয়ে এলো। দু’জনেই মুখ ঢাকা মিহিরের মুখে মাস্ক মুখরের মতো আর মাইশার মুখে হিজাব নিকাব। মেহবিন কে দিতে এসেছে ওরা। মেহবিন হেঁসে ওদের সাথে তাজেল এর পরিচয় করিয়ে দিল। মেহবিনের মুখে যখন তাজেলের কথা শুনেছিল তখন ওরা অবাক হয়ে গেছিল আজ চোখের সামনে এসব দেখে বুঝলো মেহবিন ওর সম্পর্কে যা বলেছে কমই বলেছে। মেহবিন গ্ৰামের আসা সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। ওরা বাড়ির ভেতরে ঢুকলো মেহবিন তাজেলকে ও নিয়ে ঢুকলো। দুই মাস বাড়িতে কেউ ছিল না। তাই বেশ ময়লা তখন নওশি আর দুইজন মহিলা এলো ঝাড়ু হাতে ওদের বসতে বলে বলল ওরা পরিস্কার করে দিচ্ছে মেহবিন মানা করলেও তারা শুনলো না। তাজেলকে বলল নওশিদের বাড়িতে নিয়ে যেতে। নওশি ওদের বলল যেতে ওরা বলল সমস্যা নেই ওরা বাইরে দাঁড়াচ্ছে। মুহুর্তেই মহুয়াপুর গ্ৰামে ছড়িয়ে গেল ডক্টর মেহবিন মুসকান আবার গ্ৰামে ফিরে এসেছে। মহিলারা ঘর পরিষ্কার করে বের হতেই মেহবিন সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। যেদিন শেষ এই ঘরটায় ছিল সেদিন সকালেও সবাই কি সুন্দর খেলছিল গল্প করছিল খেয়েছিল। কি থেকে কি হয়ে গেল। মেহবিন কিচেনে যেতে চাইলে মাইশা বারন করলো সে কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে এলো। তখন তাজেল মাইশা কে বলল,,

“ডাক্তার তাইলে তোমাগো বাড়িতে আছিল?”

মাইশা হেঁসে বলল,,

“হুম। মেহু তোর নেত্রী তো দেখি সেই। এইবার ভাবছি ওকেই নির্বাচনে দাঁড়া করাবো ওকে দাঁড় করালে আমাদের বাড়ির মন্ত্রীসাহেব ও ডাব্বা মারবে। তোর নেত্রী এতো কিউট যে সবাই ওকেই ভোট দেবে।”

তখন তাজেল বলল,,

“তোমাগো বাড়ি কি শেখ হাসিনা থাহে নাকি? আর আমি ভোটে দাড়ামু না আমার বয়স হয় নাই এহনো আগে আমি বড় হইয়া নেই।

“এই মেয়েটা এতো কিউট কেন মেহু?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“মাইশা আপু ভাগ্যিস কিউট বলেছো কিউটের ডিব্বা বলোনাই নাহলে সে বলতো সে ডিব্বা না সে মানুষ। আর আপু তুমি যে মজাটা করতে চাচ্ছো ও বুঝছে না তাই বলে লাভ নেই। আর নেত্রী ওদের বাড়িতে শেখ হাসিনা থাকে না। আর বাকি কিছু তোমার চিন্তা করতে হবে না।

অতঃপর ওরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো। এখন মুখর মিহির আর মাইশা চলে যাওয়ার জন্য উঠবে এমন সময় কেউ দৌড়ে এসে মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো আর কেঁদে উঠলো। মেহবিন বুঝতে পারলো এটা কে ও বলল,,

“ফুল কাঁদছো কেন? এই দেখো এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।”

মিশু বলল,,

“ফুল তোমার কতো রক্ত পরছিল তুমি জানো?”

“তুমি দেখেছিলে? নাকি ফোবিয়ার জন্য আমার ওখানে যাও নি।”

“গিয়েছিলাম তো আমি তাই জন্যই তো !”

এইটুকু বলেই মিশু থেমে গেল ও সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তখন ঘরে রাইফা, মুনিয়া ,শান্তা ,আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ ঢুকলো। মিশু বলল,,

“কেমন আছো তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও ভালো আছি।”

মেহবিন সবাইকে বসতে বলল তখন মিহির বলল,,

“সাবধানে থাকিস মেহু আমরা আসছি আল্লাহ হাফেজ।”

মেহবিন মাথা নাড়ালো ওরা কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন মুনিয়া বলল,,

“এরা কারা ছিল আপু?”

মেহবিন বলল,,

“আমার হাজবেন্ড আর আমার দুজন শুভাকাঙ্ক্ষী। ওনাদের একটু তাড়া ছিল তাই এভাবে বেরিয়ে গেল। কিছু মনে করো না।”

“ওহ আচ্ছা!”

সকলে একে একে ওর অবস্থা জিজ্ঞেস করলো। শেখ শাহনাওয়াজ রাইফা আর আরবাজ শুধু দেখে গেল। তারাও কিছুক্ষণ পর চলে গেল। মিশু বলে গেল শুক্রবার যেন মেহবিন ওদের বাড়ি যায় মেহবিন বলল সে যাবে। সবাই গেলেও রয়ে গেছে তাজেল সে বাড়িতে বলে এসেছে আজ ডাক্তারের সাথে থাকবে। মেহবিনের জন্য ওর মামী খাবার প্যাক করে দিয়েছে তাই খাবার নিয়ে টেনশন নেই। তাজেল বিছানায় বসে মেহবিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তা দেখে মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“কি দেখছো নেত্রী?”

“তোমারে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা হাসপাতাল থেইকা নিয়া গেছে শুইনা আমি ভাবছি তুমিও আমার মায়ের মতো আমারে ধোঁকা দিবা ডাক্তার।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“তা ধোঁকা দিয়েছি কি?”

“তারপর দুইদিন পর যহন দেখলাম পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আইলো তহন বুঝলাম তুমি আমারে ধোঁকা দিবা না ডাক্তার।’

“ডাক্তার কি তার নেত্রীকে ধোঁকা দিতে পারে হুম?”

“কি জানি দিবার পারো যেনে আমার মায়ের রক্তের সম্পর্কও থাহার পরেও আমারে ধোঁকা দিছে। হেনে তো তোমার সাতে আমার কোন রক্তের সম্পর্ক নাই।”

মেহবিন বুঝতে পারলো এই কথাটা তাজেলের নয় অন্য কেউ মাথায় ঢুকিয়েছে। এই জন্যই তাজেল ওর খবর পাওয়ার পরও মনমরা হয়ে থাকতো। মেহবিন তাজেলকে নিজের কোলে বসিয়ে বলল,,

“একটা কথা সবসময় মনে রাখবে নেত্রী। সবসময় রক্তের সম্পর্কই যে বড় হয় তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো রক্তের সম্পর্কগুলো আমাদের ধোঁকা দেয়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক থাকে না তাদের সাথে তৈরি হয় আত্মার সম্পর্ক। তা কখনো কখনো রক্তের সম্পর্কগুলো থেকেও অনেক গভীর হয় এবং অনেক রক্তের সম্পর্ক থেকেও উর্ধ্বে হয়।”

“তোমার ভারী ভারী কথা কতসময় আমার মগজে ঢুকে না।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“ঢুকাতে হবেও না শুধু এই মনে রেখো মাঝে মাঝে রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও আমাদের অন্য মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে। যেমন তোমার আর আমার একটা আত্মার সম্পর্ক।”

তাজেল ঘুরে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার আত্মা কি তোমার শরীরে গেছে নাকি আর তোমার আত্মা আমার শরীরে আইছে নাকি।”

“মানে?”

“আমাগো আত্মার সম্পর্ক কেমনে হইলো যদি আমাগো আত্মা অদলবদল না হয়।”

এবার মেহবিন বুঝতে পারলো তাজেল কি বলতে চেয়েছে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মেহবিন হেঁসে উঠল আর বলল,,

“নেত্রী তুমিও না!”

“আরে কওনা কেমনে হইলো?”

“আমিও জানি না কেমনে হইলো কিন্তু সম্পর্ক তো হয়েছেই তাইনা নেত্রী।”

“হুম! ও আল্লাহ মেলা রাইত হইয়া গেছে এহন খায়া নও। পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কইছে তাড়াতাড়ি খাইয়া ওষুধ খাইতে‌।”

“হুম যাবো তো!”

“যাও আগে তুমি!”

তাজেলের জোরাজুরিতে মেহবিন খাবার নিয়ে এলো তাজেলকে খেতে দিল আর নিজেও খেল। অতঃপর তাজেল এই দুই মাসের জমানো সব বলতে লাগলো মেহবিন ও হেঁসে মনোযোগ শ্রোতার মতো শুনতে লাগলো।

_______________

অনেকদিন পর রাতে কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজ থেকে নতুন পোস্ট করা হলো,,

“রক্তের সম্পর্ক থেকেও উর্ধ্বে কিছু মানুষের সাথে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয় আমাদের। আর কখনো কখনো সেই সম্পর্কগুলোর সমস্ত স্বার্থপরতার উর্ধ্বে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্যই পৃথিবী এতো সুন্দর লাগে।”

অনেকদিন পর পোস্ট হওয়াতে লাইক কমেন্ট করে সবাই যেন বিহঙ্গিনীর খোঁজ নিচ্ছে। তার সাথে সবাই তার বেস্ট ফ্রেন্ডদের মেনশন দিচ্ছে “***** যেমন তুই’ লিখে কেউ কেউ তার প্রিয় মানুষটাকে ও মেনশন দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ শেয়ার ও দিচ্ছে নানান প্রিয় মানুষদের ট্যাগ দিয়ে।

তার আধ ঘন্টা পর বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে নতুন পোস্ট হলো সেটা হলো কাব্যের বিহঙ্গিনীর পেজের আজকের করা পোস্ট শেয়ার করার ওপরে ক্যাপশন

“আপনি ঠিক বলেছেন এডমিন মহাদয়া যেমন কাব্যের বিহঙ্গিনীর সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্য পৃথিবী শুধু সুন্দর নয় সে পাশে থাকলে অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে।”

নোটিফিকেশন এর শব্দে মেহবিন পাশে তাকালো ও দেখলো তাজেল ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিতে ওর পেটের ওপর হাত দিয়ে। এতোক্ষণ মেহবিন এই নোটিফিকেশন এর অপেক্ষায় করেছিল ও জানতো আসবে এটা। মেহবিন মুচকি হেসে ফোনটা হাতে নিল আর সাইলেন্ট করে নোটিফিকেশন খুললো। পোস্ট টা দেখে ওর মুখের হাঁসিটা আরো প্রশস্ত হলো। সে মুচকি হেসে কমেন্ট করলো,,

“হুম বুঝলাম!”

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

‘কি বুঝলেন ম্যাডাম?”

“এই যে আপনার পৃথিবী অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে।”

“তা, পৃথিবী অনেক অনেক বেশি সুন্দর কখন আর কে সাথে থাকলে লাগে সেটা বুঝোনি?”

” না বুঝিনি আমি বোকার বউ বোকী কি না।”

ওপাশ থেকে অবাক হওয়ার ইমুজি এলো। কাব্য বুঝতে পারলো সেদিনের রিভেঞ্জ নিচ্ছে। এদিকে মেহবিন হাসছে। বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে আবার রিপ্লাই আসলো,,

“থাক আপনার বুঝতে হবে না আমার বিহঙ্গিনী বুঝলেই হলো।”

‘হুম সেটাই তো!”

“আমার বিহঙ্গিনীর জন্য দুইটা লাইন লিখেছি এখনি দেখাবো কি?”

“না দেখিয়ে সারারাত ঘুমাতে পারবেন?”

‘সেটাই তো!”

‘হুম!”

“আসিও বৃষ্টি হয়ে ,
ভিজিবো তোমার বর্ষনে!
দূরত্ব আছে হয়ত বা
তবুও ভালোবাসা বাড়ছে ক্রমশে!

মেহবিন এটা দেখে মুচকি হাসলো। সে দু’টো ফুলের ইমুজি পাঠিয়ে ফোন নামিয়ে রাখলো। এমতাবস্থায় ও আর কিছু বলতে চাইছে না।
_______________

পরদিন মেহবিন কে অনেকেই দেখতে এলো। মেহবিন মুচকি হেসে সবার সাথে কথা বলল। তারপর দিন থেকে মেহবিন হাসপাতালে গেল সকলে ফুল দিয়ে ওকে সাদরে শুভেচ্ছা স্বাগতম জানালো। দেখতে দেখতে তিনদিন পর শুক্রবার চলেই এলো। মেহবিন বেলা তিনটার দিকে চেয়ারম্যান বাড়িতে গিয়ে শেখ পরিবারের সাথে আরো একজন নতুন মানুষ দেখতে পেল । মেহবিন কে দেখে মিশু এগিয়ে এলো। আরিফা জামান মিসেস আমজাদ যারা মেহবিন কে দেখতে যায় নি তারা সবাই মেহবিনের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো। মেহবিন সবাইকে তার অবস্থা জানালো। তখন শেখ আমজাদ বললেন,,,

“ডক্টর মেহবিন তোমাকে আবার এভাবে এবাড়িতে দেখতে পাবো ভাবতেই পারি নি।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘কেন?”

“আমরা তো ভেবেছিলাম তোমার হাজবেন্ড যখন তোমায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেল। তখন তোমাকে এখানে আর পাঠাবে না।”

মেহবিন মুচকি হাসলো আর বলল,,

“জীবনে অনেক সময় অনেক বাধা বিপত্তি আসে তাই বলে কি মানুষ জীবন যাপন করা ছেড়ে দেয় নাকি। হ্যা হয়তো একটু পরিবর্তিত হয় এই যা।’

‘হ্যা তা তো বটেই?”

“তা আপনার মেয়ে জিনিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে?”

‘হুম আরো পনেরো দিন আগে।”

‘আলহামদুলিল্লাহ শুনে বেশ খুশি হলাম।”

‘ভাইজান বলেছিল আরো এক মাস পর করতে। পরে আমি ভাবলাম এঙ্গেজমেন্ট করে এতোদিন রাখাটা ঠিক হবে না। ভাইজান ও আমার কথা একটু ভেবে করে দিলেন।”

‘আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘আপনিও বসুন না ডাক্তার।”

‘আমি মিশুর জন্য এখানে এসেছি তাই ওর সাথে থাকাটাই বেটার আপনারা আপনাদের মতো কথা বলুন।”

“হুম আসুন পরিচয় করিয়ে দিই উনি হচ্ছে নুপুরের মা।”

“ওহ আচ্ছা।”

মেহবিন সালাম দিয়ে মিশুর কাছে গেল তখন সিঁড়ি দিয়ে আরবাজ এলো। আরবাজ মেহবিন কে দেখে হেঁসে ওর দিকে গিয়ে কিছু বলবে তার আগে নুপুরের মা বলল,,

‘ঐ তো আরবাজ বাবা এসে পরেছে এখন তাহলে কথা বলা যাক।”

আরবাজ কথাটা শুনে মেহবিনের দিকে না গিয়ে অবাক হয়ে ওর বাবার পাশে বসলো তখন মেহবিন মিশুকে নিয়ে সিঁড়িতে পা রাখবে এমন সময় আরিফা জামান বললেন,,

‘আরবাজ আমরা নুপুরের সাথে তোমার বিয়ের কথা ভাবছি তুমি এই বিষয়ে কি বল?”

কথাটা শুনে মেহবিন দাঁড়িয়ে পড়লো। ও পেছনে ঘুরলো ওর দেখাদেখি মিশুও দাঁড়ালো। আরবাজের দিকে তাকাতেই দেখলো আরবাজ কথাটা শুনে মেহবিন এর দিকে তাকিয়ে আছে। আরবাজ শান্ত স্বরে বলল,,,

‘এটা সম্ভব নয়!”

কথাটা শুনে শেখ পরিবারের সবার মুখ অবাকতায় ছেয়ে গেল। শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

‘কেন সম্ভব নয় নুপুর ভালো মাইয়া একজন ডাক্তার সে। তুমি কি ওর বাবার জন্য এরকমটা কইতেছো আরবাজ।”

“দেখুন দাদুভাই আমি কখনো কারো পরিবারের জন্য কাউকে বিচার করিনা। নুপুরের বাবা যা করেছে তাতে নুপুরের দোষ নেই তবে ব্যাপারটা এখানে সেটা না। ব্যাপার হলো আমি আগে থেকেই নুপুরকে বোনের নজরেই দেখে এসেছি।”

তখন নুপুরের মা বলল,,

“তো কি হয়েছে কাজিন কাজিন অনেক বিয়ে হয় এ আর নতুন কি ? আগে বোনের নজরে দেখতে বিয়ের পর বউয়ের নজরে দেখবা।”

‘সরি তাও আমার দ্বারা সম্ভব নয়।”

এবার শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,,

“যা বলার পরিস্কার করে বলো আরবাজ তোমার কি অন্য কোন মেয়েকে পছন্দ?”

এবার সবাই উৎসুক হয়ে আরবাজের দিকে তাকায়। সে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

‘জি!”

সবাই আরেকদফা অবাক। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,,

‘কে সে? যদি সব ঠিক থাকে তাহলে তোমার বিয়ে তার সাথেই হবে।

তখন আরিফা জামান বললেন,,

‘এ আপনি কি বলছেন?”

“আরবাজ আমার সন্তান আরিফা আমি জানি কোনটায় আমার ছেলেমেয়ের জন্য ভালো হবে। আর তাছাড়া বিয়ে একটা বড় ব্যাপার যদি অমতে বিয়ে হয় তাহলে সারাজীবনেও কেউ সুখী হতে পারবে না। আমি তো আমার ছেলের বিয়ে তার পছন্দের মানুষের সাথেই দেব। আর আরবাজ তুমি বলো সে কে?”

শেখ শাহনাওয়াজ এর কথায় আরিফা জামান চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু দুজন রাগে ফোঁস ফোঁস করছে ভেতরে কিন্তু দেখাতে পারছে না। তখন মেহবিনের পাশ থেকে রাইফা আস্তেকরে বলে উঠলো,

“আলহামদুলিল্লাহ! বিয়েটা তাহলে নুপুরের সাথে হবে না। ”

আর কথাটা আস্তে হলেও মেহবিনের পাশেই রাইফা ছিল বলে ও শুনে ফেলল মেহবিনের রাইফার দিকে তাকালো মেয়েটার মুখে অদ্ভুত খুশির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে তা দেখে মেহবিন একটু অবাক হলো বটে। তখন আরবাজ বলল,,

‘কমিশনার মাহফুজ শাহরিয়ার এর একমাত্র মেয়ে নাফিয়া শাহরিয়ার।’

এ কথা শুনে মেহবিন পুরোপুরি অবাক হয়ে গেল। ব্যাপারটা মোটেও আশা করে নি সে। ও কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু কি ভেবে আবার চুপ রইলো। ও মিশুর হাত ধরে ওপরে চলে গেল। এদিকে আরবাজ এর কমিশনার এর মেয়েকে পছন্দ শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ খুশি হয়েছেন আরবাজের কথা শুনে তিনি বললেন,,

“মুখরের বোন নাফিয়া!

“জি বাবা!”

তখন সায়িদ বলল,,

‘মুখর এর বাবা কমিশনার?”

আরবাজ হেঁসে বলল,,

‘হুম পুলিশ কমিশনার মাহফুজ শাহরিয়ার এর একমাত্র পুত্র মুখর শাহরিয়ার। এখন আমাদের থানার ওসি মুখর শাহরিয়ার।”

কথাটা শুনে অবাক হলেও কেউ কিছু বললো না। কারন তারা মুখরের ব্যাপারে কিছুই জানতো না। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“ওনাদের সাথে আমি কথা বলছি।”

‘না বাবা তুমি আগেই বলো না। তার আগে আলাদা করে আমি ওনাদের সাথে কথা বলতে চাই।”

“ঠিক আছে।”

________________

মেহবিনের কেমন যেন আরবাজের কথাটা শুনে অস্থির লাগছে। ও কিসের আশঙ্কা করছে ও নিজেও জানে না। তখন মিশু বলল,,

‘ফুল কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন লাগছে কেন?”

“কিছু না ফুল আমি ঠিক আছি।”

‘তুই কি মনে করেছিস আমাকে না বললে আমি কিছু বুঝতে পারবো না।”

হুট করে এমন কথায় মেহবিন চমকে উঠলো। আর মিশুর দিকে তাকালো তখন মিশু বলল,,

‘তোমাকে তুই করে বললে কি তুমি রাগ করবে ফুল?”

মেহবিন ফ্যালফ্যাল করে মিশুর দিকে তাকিয়ে থাকে। তা দেখে মিশু হেঁসে বলল,,

“তোমার এক্সিডেন্টের পর দেখি তুমি বদলে গেছো ফুল। অন্যরকম লাগছে তোমায়। এখন বলো তোমায় তুই করে বললে কি তুমি রাগ করবে। আমার না তুই করে বলতে খুব ভালো লাগে। আমার যদি একটা ছোট বোন থাকতো তাহলে আমি তাকে তুই করে বলতাম অনেক ভালোবাসতাম জানো।”

মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

‘সমস্যা নেই তুমি তুই করেই বলো।”

‘তাহলে আজ থেকে তোকে আমি তুই করে বলবো ঠিক আছে।’

‘ঠিক আছে।”

“তাহলে এখন চল আমার সাথে খেল। আর হ্যা গল্পও করবো তোর সাথে এই দুই মাসে কি কি হয়েছে সব।”

‘আচ্ছা।”

মেহবিন বসে বসে মিশুর কথা শুনতে লাগলো। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর ও নিচে নামতে লাগলো তখন নতুন কন্ঠে কাউকে কিছু বলতে শুনলো,,,

“এখন এক মিনিট ও দেরি করা যাবে না। আসলে আমাকে এখনি বেরুতে হবে নাহলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে। আমার দেশে ফেরাটা খুব দরকার। বাকিটা আমি ই-মেইল এর মাধ্যমে সব সেন্ট করে দেব।”

তখন মেহবিনের ফোনটা বেজে উঠলো ও ফোন ধরে নিচে আসতেই মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হলো। মেয়েটা মেহবিন কে দেখে মনে চরম অবাক প্লাস খুশি হয়েছে সেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মেহবিন ও মেয়েটাকে দেখে খুশি হলো তবে ফোনে ইম্পোর্টেন্ট কিছু নিয়ে কথা বলছে তাই ও কোন রিয়াক্ট করলো না। মেয়েটা মেহবিন কে ঠিক দিল,,,

“এই মেহু তুই এখানে?”

মেহবিন হাত দিয়ে বলল পাঁচ মিনিট ও আসছে। মেহবিন একটু দূরে গেল। মেয়েটা দাড়িয়ে রইল। তা দেখে পুরো শেখ পরিবার যেন আকাশ থেকে পড়লো। একটু আগে খাওয়ার জন্য বলেছিল সবাই তাকে কিন্তু সে বলল তার এক মিনিট ও দেরি করা চলবে না। আর এখন, মেয়েটা কাউকে ফোন করে বলল ফ্লাইট ক্যানসেল করে দিতে। এটা দেখে সবাই আরেক দফায় অবাক। অতঃপর মেহবিন পাঁচ মিনিট পর এলো মেয়েটাকে আর পায় কে সে দুই হাত উঁচু করে দৌড়ে মেহু বলে জাপটে ধরলো। মেয়েটার কান্ডে মেহু হাসলো আর বলল,,,

“কি করছিস রাই ছাড় এভাবে ধরলে আমি তো চ্যাপ্টা হয়ে যাবো।”

‘আহ হা ওমন করিস কেন কতোদিন পর দেখা এতদিনের সবকিছু উসুল করতে হবে না।”

‘তুই ও না রাই পাগল একটা।”

“আমি রাই মালিক তো পাগল না পাগলি।তাও শুধু তোর কাছে।”

মেহবিন রাইয়ের কথায় হাসলো। রাই বলে মেয়েটা মেহবিন কে ছেড়ে দিল । আর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“আপনাদের বাড়িতে এতো ভালো ডক্টর থাকতে। আমাকে ইন্ডিয়া থেকে আনালেন হাউ ফানি।”

তখন সায়িদ বলল,,

“মানে?”

“আমি আর মেহু বিদেশে একসাথে ডাক্তারি পাশ করেছি। আর আমাদের ব্যাচের মধ্যে সবথেকে ভালো ডক্টর হচ্ছে এই ইনি ডক্টর মেহবিন মুসকান।”

~ চলবে,,

বিঃদ্রঃ আপনারা আবার বইলেন না ভুল করে আবার রাই লিখেছি এটা সত্যি সত্যি রাই তবে অন্য রাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here