তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_২৮ #মেহরিন_রিম

0
394

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৮
#মেহরিন_রিম
মেয়েলি কণ্ঠস্বর কানে আসতেই ভ্রুযুগল সঙ্কুচিত হলো আদৃতের। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো ইশা এদিক ওদিক তাকিয়ে নজর আড়াল করার চেষ্টা। আদৃত ইশাকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ইশা এখনো শাড়ির কিছুটা অংশ আঙুলে প্যাঁচাচ্ছে আর আশপাশে তাকাচ্ছে। আদৃত ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে কড়া গলায় বললো,
_তুমি এখানে কি করছো?

হঠাৎ আদৃতের গলা শুনে কিছুটা কেপে উঠলো ইশা। শুকনো ঢোক গিলে তাকালো আদৃতের দিকে, তার ভ্রুযুগল এখনো কুঁচকানো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম বিদ্যমান, দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে সে। ইশা এত সাহস নিয়ে এসেছিল,কিন্তু এখন তার কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা। কি বলবে এখন? কেনো এসেছে? না আসলেই বোধহয় ভালো হতো। আরো বিভিন্ন কথা মনেমনে আওড়ালো ইশা। তবে এখন চুপ করে থাকলে চলবে না। তাই বড়বড় নিঃশ্বাস নিয়ে যথাসম্ভব সাহস সঞ্চয় করে বললো,
_আপনি চলে এলেন কেনো এভাবে?

আদৃত একনজর ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমার জানার দরকার নেই।

কথাটা ইশার কাছে বেশ অপমানের মনে হলেও সে আবারো আদৃতের উদ্দেশ্যে বললো,
_হ্যা হ্যা,আমার এমনিতেও কোনো দরকার নেই। তবে আপনি তো গান গাইবেন বলেছেন কিনা,তাই আপনি না থাকলে আবার অনেকে কষ্ট পাবে। তাই বলতে এসেছিলাম।

চোখ বন্ধ করে দুই আঙুল কপালে স্লাইড করলো আদৃত। তারপর বিরক্তির সূরে বললো,
_আমি না থাকলে অনুষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাবে না,যাও এখন।

কথাটা বলে আবারো বেঞ্চে বসে পড়লো আদৃত। হঠাৎ যেন ইশার মনে বিশাল সাহস চলে এলো। সে আদৃতের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আচ্ছা আপনি কি অন্য কারোর জন্য গান গাইতে চাইছেন না? লাইক কোনো শত্রু বা…

_ইশা আই সেইড গেট আউট অফ হেয়ার..

ইশার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা জোড়েই বললো কথাটা। অন্যসময় হলে হয়তো ইশা ভয়ে পালাতো,তবে আজ কোনো কারণে তার ভয় করছে না। ইশা আবারো ঢোক গিলে বললো,
_দেখুন এভাবে ঝাড়ি দেওয়ার কিছুই বলিনি। কলেজে তো আমারো কত অপছন্দের মানুষ আছে যাদের আমি সহ্য করতে পারিনা। এখন তাদের জন্য কি আমি পালিয়ে যাচ্ছি? যাচ্ছিনা তো। তাদের দিকে না তাকালেই হয়, আমি আমার মতো থাকছি তাড়া তাদের মতো।

আদৃত গম্ভীর গলায় চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
_জ্ঞান দিচ্ছো আমায়?

_জ্ঞান দেওয়ার কি হলো? আর যদি দিয়েও থাকি তাতে দোষের কি আছে? হ্যা আপনি আমার চেয়ে বড় হতে পারেন, তবে ছোটদের থেকেও অনেক কিছু জানার থাকে। আর কোথায় লেখা আছে যে ছোটরা বড়দের কিছু বোঝাতে পারবে না?

কিছুটা থামলো ইশা। আদৃতের চোখে চোখ রেখেই কথাগুলো বলেছে সে। এবার ভীতু চোখে আদৃতের দিকে তাকালো,আদৃত কিছু বলছেনা দেখে ইশা আবারো বললো,
_আমি তখন স্পষ্ট শুনলাম আপনি বলছিলেন, উনি এখানে থাকলে আপনি কিছুতেই স্টেজ এ উঠবেন না। কাকে দেখে এমন বলেছেন আমি জানিনা, তবে আপনি যে কাউকে এত ভয় পাবেন সেটা ভাবিনি।

_হোয়াট? আমি কাকে ভয় পাচ্ছি?

_এইযে যার জন্য অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে এলেন। যদি তাকে ভয়ই না পাবেন,তাহলে তার থেকে পালাচ্ছেন কেন?

আদৃতের দিকে তাকিয়েই বললো ইশা। আদৃত নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইশার চোখের দিকে,মোটা করে কাজল লাগানো দুটি চোখে। এই চোখ দুটোই পাগল করে দিচ্ছে আদৃত কে। এর আগে বিদায় অনুষ্ঠান এর দিনও এভাবে কাজল পড়েছিল ইশা, এর মাঝেও দু একদিন পড়েছিল তবে খুব বেশি নয়। ইশার প্রশ্নের দিকে খেয়াল না করে আদৃত তার চোখের দিকেই তাকিয়ে রইলো। অদ্ভুত এক কথা বলতে ইচ্ছে হলো ইশাকে, “তুমি সবসময় এভাবে কাজল পড়োনা কেন?”

কথাটা নিজের মনেই থেকে গেলো,মুখ ফুটে সেটা বলা হলোনা। আদৃতের নজর খেয়াল না করলেও তাকে চুপ করে থাকতে দেখে অবাক হলো ইশা। সঙ্গে আরো কিছুটা সাহস পেয়ে বললো,

_আপনি থাকলেন কি না থাকলেন তাতে আমার কিছুই যায় আসেনা। আমার এমনিতে ইচ্ছে হলো তাই বললাম কথাটা। বাকিটা আপনার ব্যাপার, চাইলে আসবেন না চাইলে আসবেন না। অ্যাজ ইয়োর খায়েশ।

ইশার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো আদৃত,এভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকাটা ঠিক হচ্ছেনা। ইশা আর আদৃতের কথার অপেক্ষা না করে উলটো দিকে ঘুড়ে পা বাড়ালো। তবে আদৃতের কিছু না বলা তার মনে ভীতির সৃষ্টি করছে। উনি কি রেগে গেলেন আমার কথায়? রাগলে রাগুক আই ডোন্ট কেয়ার। আর কিছু না ভেবে স্টেজ এর পিছনে গিয়ে দাড়ালো ইশা।

নাচের বাকি মেয়েরাও সেখানে অপেক্ষা করছে। ম্যাম তাদেরকে খুঁজেছিল তবে ইশাকে না পাওয়ায় অন্য এক ছেলে আবৃত্তি করতে উঠেছে স্টেজ এ। সে নামলেই তাড়া যাবে। সায়ান আর পূর্ণ সামনের দিকের চেয়ারেই বসে ছিল। জয়নাল স্যার এসে সামনে দাঁড়াতেই তাড়া দুজন উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। স্যার ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম’ বলে নিজের চশমাটা ঠিক করে আশেপাশে তাকিয়ে আদৃতকে দেখতে না পেয়ে বললেন,

_তা আদৃত কোথায়? একটু আগেই তো দেখলাম এখানে।

পূর্ণ সায়ান এর দিকে একবার তাকিয়ে নিচু স্বরে বলতে নিলো,
_স্যার আসলে আদৃত বোধ হয়..

_আরে ঐতো আদৃত।

পাশে তাকিয়ে হেসে কথাটা বললেন স্যার। পূর্ণ আর সায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো আদৃত গম্ভীর মুখ করে এদিকে আসছে। সায়ান এর মুখ আপনা আপনি খুলে গেলো। হা করে তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
_ইয়ে ক্যাসে হুয়া ভাই?

পূর্ণ ও আদৃতের দিকে তাকিয়ে একইভাবে বললো,
_আই ডোন্ট নো..

ছেলেটির আবৃত্তি করাও শেষ হয়ে গেছে। এবার ইশাদের স্টেজ এ যাওয়ার পালা। আদৃতকে আসতে দেখে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো ইশার। আদৃত তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো ইশা।
অত:পর সকলে একসঙ্গে স্টেজ এ উঠলো। আদৃত স্টেজ এর একপাশে বসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান ধরলো, আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচ শুরু করলো ইশা এবং বাকি মেয়েরা।

পুড়োটা সময় আদৃতের নজর ছিলো ইশার দিকে। স্টেজ এর সামনে কারা আছে তার দিকে সে খেয়ালই করেনি, ইশার কথা অনুযায়ী কাজটি করেছে আদৃত। সামনে তাকিয়ে কোনোভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ব্যাক্তির দিকে চোখ পড়লে যে স্থির হয়ে থাকতে পারবে না সেটা ভালো করেই জানে আদৃত। অবশ্য সেসবের কথা মাথাতেও নেই আদৃতের। গান গাওয়ার মাঝে সে কেবলই মুগ্ধ নয়নে ইশাকে দেখছে।

সকলের হাততালির আওয়াযে হুশ ফিরলো আদৃতের। চোখের পলক ফেলে নিচের দিকে তাকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ইশাসহ বাকিরাও ধন্যবাদ বলে স্টেজ থেকে নেমে এলো। নামার সময় একবার পাশ ফিরে আদৃতের দিকে তাকিয়েছিল ইশা, পরমুহূর্তেই চোখ সরিয়ে নেমে আসে। আদৃত ও নেমে যায় স্টেজ থেকে। সায়ান হাসিমুখে হাততালি দিলেও পূর্ণর নজর ছিলো আদৃত এর দিকে। ইশাকে পুকুরের দিকে যেতে দেখেছিল পূর্ন, তাহলে ইশার কথাতেই আদৃত চলে এলো!

অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কিছুক্ষন আগে। আদৃত স্টেজ থেকে নেমে কোথায় গেছে খেয়াল করেনি কেউ। স্টুডেন্ট রা নিজেরা আনন্দ করছে এখন, রঙ মাখাচ্ছে কেউ কেউ। সায়ান এক সাইডে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিল। পুর্ন ওর পাশে এসে ধাক্কা দিয়ে বললো,
_কিরে,ওদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখছিস?

_আরে ভাই,ঐ মেয়েটাকে দেখ? কি সুন্দর! একদম জিরো ফিগার। তার সঙ্গে হাইটও মাশাল্লাহ। ঐ মেয়েটার বড় বোন হবে বোধ হয় তাইনা?

_তুই আর ভালো হবিনা তাইনা? আর মোহনার সঙ্গে কি করছিস তুই? তুই কি ভেবেছিস,লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবি আর আমরা কেউ জানতে পারবো না?

পূর্ণর কথা শুনে সায়ান হঠাৎ হো হো করে হাসতে লাগলো।
সায়ানকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছেই আসছিল মোহনা। তবে কিছুটা দূড়ে থাকতেই সায়ান এর কথা শুনে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায় সে। খুব রাগ হয়েছিল তখন। তবে এখন সায়ান কে এভাবে হাসতে দেখে আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়াতে পারলো না মোহনা। চোখ থেকে নোনাজল গাড়িয়ে পড়তেই অন্যদিকে ঘুড়ে ছুটে চলে যায় একটা ক্লাসরুম এ।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here