কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_৩৭ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
521

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আছিয়া খাতুন হুট করেই মেহবিনের হাত ধরলেন। হুট করে ধরায় ও একটু অবাক হলো। তবুও বলল,,

‘কিছু বলবেন?”

আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখ দুটো ছলছল করছে তা দেখে মেহবিন বলল,,

“কি হয়েছে দাদিজান?”

‘আমি বোধহয় অনেক বড় একটা ভুল কইরা ফালাইছি নাতবউ।”

নাতবউ শুনে মেহবিন একটু থমকালেও পরক্ষনেই নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,

“কি ভুল করেছেন? আর হঠাৎ করে আজকে কেন মনে হচ্ছে আপনি ভুল করে ফেলেছেন।”

“আমি আজ তোমায় সব,,

তখন আচংকা মুখর এলো এসেই বলল,,

“মেহু তোমায় আরবাজের বাবা ডাকছে?”

হুট করে ওর আসাতে মেহবিন আর আছিয়া খাতুন দু’জনেই চমকে উঠলো। মেহবিন বলল,,

‘আসছি দাদিজানের সাথে কথা শেষ করে।”

‘উনি এখনি যেতে বলেছে।”

‘নাতবউ তুমি যাও।”

আছিয়া খাতুনের কথায় মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“কোথায় আছেন চেয়ারম্যান সাহেব?”

“ঐ তো সদর দরজার সামনে দেখো।”

মেহবিন তাকিয়ে দেখলো ওখানেই আছে। মেহবিন সেদিকে গেল। সদর দরজায় কেন যেতে বললো না মেহবিন বুঝলো না। মিশু আর মেহবিনের কথা বলার পরে মুনিয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সব স্বাভাবিক করে নেয়। তার সাথে সবাই ও স্বাভাবিক হয়। মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“আমায় ডাকছিলেন চেয়ারম্যান সাহেব।”

শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“হুম চলুন বাগানে যাই।”

‘আপনার ছেলের এঙ্গেজমেন্ট এর অনুষ্ঠান চলছে চেয়ারম্যান সাহেব। এখানে আলাদা করে বাগানে আমার সাথে কথা বলা খুব একটা ভালো চোখে দেখা যায় না।”

“আমি আর পারছি না।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“সব জেনেশুনেই আপনি আপনার পথ বেছে নিয়েছিলেন চেয়ারম্যান সাহেব। তবে আজ কেন?”

“আমার বুকে বড্ড যন্ত্রনা হয় আজকাল তেমন সহ্য করতে পারি না।’

‘আপনার তো সবাই আছে তাও যদি এইরকম অবস্থা হয় তাহলে ভাবুন আমার কি অবস্থা হয়। তবে আমি দুর্বল নই চেয়ারম্যান সাহেব।
যে দূর্বল সে অল্প আঘাতেই ঘায়েল হয় কিন্তু যে মেন্টালি অনেক শক্ত সে যতই ক্ষতবিক্ষত হোক তার দূর্বলতা প্রকাশ পায় না সেই হিসেবে সে ঘায়েল ও হয় না।

কথাটা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ এর চোখ ছলছল করে উঠলো। তখনি বাইরে হুট করেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। হুট করে বৃষ্টিটা বোধহয় কেউ আশা করেনি। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“আপনার কথায় বাগানে গেলে এখন ভিজে যেতাম চেয়ারম্যান সাহেব।”

এমনিতেও দূরে দেখে কেউ কিছুই শুনতে পাচ্ছে না তার ওপর ঝুম বৃষ্টি সেদিকের কোন কথাই ভেতরে যাচ্ছে না। চেয়ারম্যান সাহেব মেহবিনের কথায় কথা পাল্টালো না। তিনি তার প্রসঙ্গে থেকেই বললেন,,

“আপনি এতো কঠিন কেন? আমি তো আপনার মতো নই।”

“আপনার যে অবস্থা সেটা আপনি ডিজার্ভ করেন।”

“এতটাও কি আমার প্রাপ্য!”

“যদি বলি হ্যা।”

তখন আরবাজ এলো ওখানে এসে বলল,,

‘না এতটা তার প্রাপ্য নয়।”

তখন মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

‘আপনিও আপনার বাবার দেখানো পথেই হাঁটছেন। যদি খুব একটা ভুল নাই হই আপনিও শেখ শাহনাওয়াজ এর মতো একই অতীত পুনরাবৃত্তি করবেন।”

মেহবিনের কথায় আরবাজ বুঝতে পারলো ও কি বুঝাতে চাইছে। তাই ও বলল,,

‘”বাবাকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবি না তুই।”

“কেন এখানে মিথ্যের কি দেখলেন আপনি। আর তুই তোকারি করছেন কেন আপনি?

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘এসব কি হচ্ছে আরবাজ তুমি এরকম ব্যবহার করছো কেন?”

“ও কি বলছে তুমি শুনতে পাচ্ছো না।”

“আমি সব শুনতে পাচ্ছি। তবে এটাও বুঝতে পারছি এখানে আমার অগোচরে কিছু হয়েছে তার ইঙ্গিত বারবার দিচ্ছে সে।”

তখন মেহবিন বলল,,

‘কিছু না চেয়ারম্যান সাহেব আপনি এখান থেকে চলে যান। আমার উনার সাথে কিছু কথা আছে।”

“না আমি কোথাও যাচ্ছি না আরবাজ তুমি এখানে থেকে যাও।”

“চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে কি বললাম আমি। আপনি এখান থেকে যান উনার সাথে কথা আছে আমার।”

মেহবিনের দৃঢ় কন্ঠে বলা কথাটা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ চলে গেলেন। তখন মেহবিন বলল,,

“নাফিয়া আপুকে খুব ভালোবাসেন তাই না?”

হুট করে এমন প্রশ্নে আরবাজ একটু চমকালো তবুও শান্ত হয়ে বলল,,

“হুম।”

‘তার হাত কখনো ছাড়বেন না তাই না।”

“আমৃত্যু পর্যন্ত না।”

‘যদি কোনো এমন পরিস্থিতি আসে যা সামলাতে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”

‘দরকার পরে নেব তবুও নাফিয়ার গাঁয়ে একটা আঁচ লাগতে দেব না।”

“শুনে ভালো লাগলো। আসছি তাহলে?

‘আপনি কি কোন কারন নিয়ে ভয় পাচ্ছেন ?”

“হুম একটু তো হচ্ছে কে জানে শেখ বাড়ির অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটে কি না।”

“তা কোনদিন ও ঘটবে না। যাই হোক না কেন সেই অতীতের কখনো পুনরাবৃত্তি হবে না।”

“আরিফা জামান কিন্তু শেখ শাহনাওয়াজ কে কম ভালো বাসেনি। তবুও তার স্বার্থপরতার জন্য আরেকজন কে শেখ শাহনাওয়াজ এর সাথে জড়াতে হয়েছে।”

“না তবুও এইসব কিছুই হবে না।”

“তার গ্যারান্টি আপনি দিতে পারবেন না‌। কারন শেখ শাহেনশাহ তার বংশবৃদ্ধির জন্য একজনকে ঢুকিয়ে ছিল তিনিও কিন্তু খারাপ মানুষ নন। কে বলতে পারে শেখ শাহনাওয়াজ ও এমন করবে না। শেখ বাড়ির সব মানুষ কিন্তু স্বার্থপর । তাদের স্বার্থপরতার জন্য কখনো কখনো অনেক দাম দিতে হয়েছে।”

“বাবার নামে কোন কথা বলবি না তুই।”

“কেন বলবো না? না বলার কারন কি?

‘দেখ আমি তোকে ভালোমতো বলছি।”

“আপনার বাবা একটা স্বার্থপর মানুষ।”

“তিনি স্বার্থপর কিভাবে হলেন?”

“সেটা না হয় আপনার বাবার থেকেই জেনে নিয়েন।”

“না আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই।”

“তার একটা স্বার্থপরতার কথা যদি বলি তাহলে আপনি। আপনাকে পাওয়ার জন্য তিনি আরেকজন কে নিজের সাথে জড়িয়েছিলেন।”

‘মেহু!”

“একদম চিৎকার করবেন না চিৎকার করলেই সত্য পাল্টে যাবে না।”

“বাবা মাকে ভালোবাসতো।”

‘আচ্ছা মেনে নিলাম তাহলে বুকে হাত দিয়ে বলুন তো তাকে বিয়ে করেছিল কিসের জন্য ভালোবাসার জন্য নাকি তার ওয়ারিসের দরকার ছিল। যেই আপনি আছেন তখন তাকেও আর দরকার নেই সেই সাথে আরেকজনকেও।”

আরবাজ মেহু বলে হাত ধরলো কিন্তু মেহবিনের দিকে তাকাতেই সে হাত নামিয়ে ফেলল। দূর থেকে সবাই দেখছে ওর হাত ধরার কারন কিছুই বুঝতে পারলো না কেউ। কারন কেউ কিছু শুনতেই পাচ্ছে না। আরবাজ কিছু একটা ভেবে বলল,,

“একদম না জেনে কোন কথা বলবি না। মায়ের মৃত্যু তে সবথেকে কিন্তু সেই ভেঙে পরেছিল তুই ছিলিস না। তুই থাকবি কি করে তুই তো পালিয়ে গিয়েছিলি।

কথাটা শুনেই মেহবিনের হাত শক্ত হয়ে এলো। তখন আরবাজ বলল,,

‘আমার কি মনে হয় জানিস মায়ের মৃত্যুর কারন তুই। তাই বাবা তোকে খোঁজেনি। সবাইকে বলেছে মায়ের ওখানে গিয়ে তোকে কোথাও পায় নি। এই জন্য বাবা তোকে আমাদের মতো তুমি করে ডাকে না। এই জন্যই বাবা তোকে ঘৃনা করে আর তোর দিকে তাকিয়ে কথা বলে না।

মেহবিন নিজেকে যথআসম্ভব সামলে বলল,,

“শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ মুখ সামলে কথা বলুন।”

‘কেন এখন কেন? আমি তো মনে হয় বলেছিলাম এখন তো মনে হচ্ছে তুই সত্যিই মায়ের মৃত্যুর কারন।”

মেহবিন এবার নিজেকে সামলাতে পারলো না। ও আরবাজের নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিল। আর বলল,,

‘আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এসব বলার।”

“আমাকে মারলে সত্যি মিথ্যে হয়ে যাবে না।”

মেহবিন আরেকটা ঘুষি মারলো এবার আরবাজ মাটিতে পরে গেল। প্রথম ঘুষির সময়ই সবাই চমকে দরজার দিকে তাকিয়েছিল। আরেকটা ঘুষি মারতেই সবাই ও দিকে এগিয়ে যেতে নিল। তার আগে শেখ শাহনাওয়াজ তিনি আসেপাশেই ছিলেন। তিনি সকলকে নিষেধ করলেন সেখানে যেতে তিনি যাচ্ছেন। কেউ যেন ওখানে না যায়। তিনি আলাদা কিছু আন্দাজ করতে পেরেছেন বলেই সবাইকে মানা করলো
তাই কেউ ওদিকে এগুলো না। মেহবিন আরবাজের কলার ধরলো আরেকটা ঘুষি মারবে তখন শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের হাত ধরে চিৎকার করে বললেন,,

‘ডক্টর মেহবিন মুসকান আপনার সাহস হয় কি করে আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার।”

মেহবিন রেগেই শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘যেভাবে উনার সাহস হলো আমার সম্পর্কে বলার। হাত ছাড়ুন আপনি আমার একদম আমাকে ছুঁবেন না। আমাকে ছোঁয়ার কোন অধিকার নেই।”

কথাটা শুনে তিনি বললেন,,

‘শান্ত হোন আপনি।”

মেহবিন হাত ঝাড়া দিয়ে বললেন,,

‘হাত ছাড়তে বলেছি আমি।”

মেহবিনের কথায় সকলেই চমকে উঠলো। আর কিছু না শুনলেও মেহবিনের এই চিৎকার টা জোরেই ছিল তাই সকলের কানে পৌঁছেছে। এতটাই জোরে ছিল যে শেখ শাহনাওয়াজ ও চমকে ওর হাত ছেড়ে দিলেন।আরবাজ ও চমকে গেছে ও ভাবেই নি এখানে এরকম কিছু হবে ও উঠে দাঁড়ালো। এদিকে মেহবিনের ঝাড়ি শুনে তিনি অস্ফুট স্বরে বললেন,,

“মুসকান।”

কথাটা মেহবিনের কানে যেতেই মেহবিন শান্ত চোখে ওনার দিকে তাকালো। ওর একটু আগের কথা মনে পরে মায়ের মৃত্যুর পর ওর এই উনিশ বছরে প্রথমবার চোখ ছলছল করে উঠলো ও শেখ শাহনাওয়াজ খুব কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে বলল,,

“আমার দিকে তাকিয়ে আপনি কেন কথা বলতে পারেন শেখ শাহনাওয়াজ। কি করেছেন আপনি আমার সাথে? শুনেছি মানুষ কারো সাথে অন্যায় করলে নাকি তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। আপনিও তেমন নাকি আপনি আমায় ঘৃনা করেন।

শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলেন কারন তিনি সেদিনের পর কখনোই ওর চোখে পানি দেখেনি। তবে আজ কেন সে কি খুব কষ্ট পেয়েছে। মুহুর্তেই তার চোখ দুটো ভিজে উঠলো সেই সাথে গড়িয়েও পড়লো। আর কথাগুলো যেন তার বুকে আরো বেশি আঘাত করছে। তিনি বললেন,,

“মুসকান আম্মা কি হয়েছে আপনার? আপনি ,,

তিনি আর কিছু বলতে পারলো না তার আগে মেহবিন মুচকি হাঁসি ফুটিয়ে বলল,,

“আচ্ছা আপনি আমায় তুমি করে কেন বলেন না । আপনার বাকি ছেলেমেয়েদের মতো। আরে বলবেন কি ভাবে আমি তো আপনার বউকে মেরে পালিয়ে গিয়েছিলাম তাই না। এই জন্যই কি আপনি আমায় খুঁজেন নি সবার কাছে হারিয়ে গেছি বলে ঘোষনা করেছেন। এই কারনেই ঘৃনায় আপনি আমার দিকে তাকাতে পারেন না তাই না।”

চোখে পানি মুখে অদ্ভুত মুচকি হাঁসি এটা দেখে একটা মানুষের কিরকম অনুভুতি হওয়া উচিত। এতোক্ষণ যে মানুষটা মেহবিন কে নিয়ে বলছিল সেই মানুষটাও মেহবিনের কথা শুনে থমকে গেল । সে তো জানে না কি হয়েছিল আন্দাজে কয়েকটা কথা বলেছিল সে কিন্তু এখন বুঝতে পারছে তার মস্তবড় ভুল হয়ে গেছে। সব শুনে শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“মুসকান আম্মা এসব কি কথা বলছেন আপনি?”

“একটু আগে এই কথাগুলোই শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ আমাকে বলেছেন।

মেহবিনের চোখের পানি গড়াতেই মেহবিন তাতে হাত দিয়ে বলল,,

‘সেদিনের পর আমার চোখে কোনদিন পানি ছলছল করেনি । তাহলে আজ কেন? না না আমার চোখের পানি কেউ দেখতে পারবে না। মা বলে গেছে আমায় না কাঁদতে।”

বলতে বলতেই মেহবিন এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে চলে গেল। পেছন থেকে শেখ শাহনাওয়াজ ডাকতে লাগলো

“মুসকান আম্মা দাঁড়ান।”

বলতে বলতে তিনিও বেরিয়ে গেল। মেহবিন দৌড়ে একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ালো। বারবার ওর পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ছে। চোখ দু’টোও বারবার ঝাঁপসা হয়ে আসছে‌। ও গাছে ধরে বলল,,

‘না মুসকান তোমার কান্না মানায় না। তুমি তো সবার মতো নও। তোমার মা বলেছে তুমি princess। আর Princess Doesn’t Cry … একদম কাঁদবে না তুমি।”

তবুও বারবার কান্নারা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। ও গাছে ইচ্ছে মতো ঘুষি মারতে লাগলো। আর চিৎকার করে বলতে লাগলো,,

‘মা! মা! কোথায় তুমি তোমার প্রিন্সেস কে দেখতে পাচ্ছো আজ। আজ তার ভাই তাকে বলেছে আমি তোমার মৃত্যুর কারন।”

বলেই আরও জোরে জোরে ঘুষি মারতে লাগলো গাছে। হাত দুটো থেঁতলে যাচ্ছে এতে ওর ভ্রুক্ষেপ নেই। তখনি কেউ মেহবিন কে শক্ত করে ধরে জড়িয়ে ধরে বলল,,

‘আম্মা শান্ত হোন আপনি।”

মেহবিন তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। সে আবারও ধরলো আর বলল,,

‘প্লিজ আপনি শান্ত হোন নাহলে আপনার ক্ষতি হবে।”

মেহবিন আবারো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,,

“একদম না শেখ শাহনাওয়াজ আপনি আমায় ধরবেন না। আপনি আমার মায়ের খুনীদের জেনেও কোন শাস্তি দেন নি। আপনার আমাকে ছোঁয়ার কোন অধিকার নেই। আপনার জন্য আমি নীড়হীন আপনার জন্য আমি এতিম হয়েছি । আমার জীবনের সবকিছুর জন্য আপনি দায়ী।”

‘আমার কথাটা শুনুন?”

‘কি শুনবো আমি? কি শুনাবেন আপনি? আপনি কি আপনার প্রথম স্ত্রীর আর বাবার হয়ে ওকালতি করতে এসেছেন। আপনি আমার মাকে ধোঁকা দিয়েছেন।”

“আমি আপনার মাকে অনেক ভালোবাসি মুসকান?”

‘না ভালোবাসেন না আপনি? যদি বাসতেন তাহলে এর একটা বিহিত আপনি করতেন কিন্তু আপনি তা করেন নি।”

‘আমি আপনাকে আর আপনার মাকে দুজনকেই অনেক ভালোবাসি আমি। সেই জন্যই আপনাকে আমি দূরে রেখেছিলাম।”

‘আমি আর কিছু শুনতে চাই না। চলে যান আপনি আমার কাউকে দরকার নেই। আমার কাউকে লাগবে না। চলে যান এখান থেকে আপনাকে আমার একটুও সহ্য হচ্ছে না চলে যান আপনি। যেভাবে তখন ছেড়ে দিয়েছিলেন এবারো ছেড়ে দিন। আর এই মেহবিন মুসকান কখনো আপনার আর আপনার বাড়ির ত্রী সীমানায় পা রাখবে না। আর হ্যা ভুলেও আমার পেছনে আসার চেষ্টা করবেন না নাহলে আমার চেহারাও কোনদিন দেখতে পাবেন না আপনি।”

বলেই মেহবিন দৌড়ে চলে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ ওখানেই দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। যা উনার জীবনে কোনদিন হয় নি। তিনি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,

“আমাকে মাফ করে দিও মেহের। আমাদের সবথেকে প্রিয় আদরের কলিজাকে আগলে রাখতে পারি নি। আমি একজন ব্যর্থ পিতা মেহের। আমাদের মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে আজ মেহের। আজ তার চোখে পানি এসেছে তোমায় ভেবে নিশ্চয়ই তার ভয়ঙ্কর অতীত তার চোখে ভাসছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি কিছুই করতে পারছি না। আমায় মাফ করে দিও তুমি। তোমার ভালোবাসার মর্যাদা আমি রাখতে পারি নি।”

মেহবিন বেরিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে যাতে ওর পিছু কেউ না নিতে পারে। কিন্তু শেখ শাহনাওয়াজ বুঝতে পেরেছিলেন তাই তিনি ওর পেছনেই আসে। ওনাদের বের হতে দেখে মুখর দৌড়ে আসে ও কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে ও নিজেও বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ও রাস্তা খুঁজে পায় না কোন রাস্তায় গিয়েছে।আর বাড়ির সবাইকে বলে এখানে থাকতে। সবাই একপ্রকার থমকে গেছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। এতক্ষন যে মানুষ টা থম মেরে দাঁড়িয়ে ছিল সে হলো আরবাজ মিশু এসে ওর হাত ধরতেই ও মিশুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো,,

‘আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি মিশু।”

“বাবা আর ফুল কোথায় গেল বাজপাখি?”

কথাটা কানে যেতেই ওর মস্তিষ্ক সচল হয়ে উঠলো। ও দৌড়ে বেরিয়ে গেল। এদিকে কি হচ্ছে এখানে কিছুই কেউ বুঝতে পারছে না। মিশু নিজেও আরবাজের পেছনে বের হলো আজ আর কোন ভয় কাজ করছে না ওর ভেতরে। ওরা বেরিয়ে গেল কিন্তু পেছনে বাড়ির ভেতর রেখে গেল একঝাঁক প্রশ্ন।

রাত সেই সাথে ঝুম বৃষ্টি রাস্তায় কাক পক্ষি কেউই নেই। মেহবিন পাকা রাস্তায় বসে পরলো আর চিৎকার করতে লাগলো। উনিশ বছরের যতো কষ্ট আছে আজ সব যেন চিৎকারের মাধ্যমেই বের করতে চাইলো। ঝুম বৃষ্টি দেখে কেউ ওর বুকফাটা আর্তনাদে ভরা চিৎকার শুনতে পেল না। দুই জায়গায় দুই বাবা মেয়ের আর্তনাদের সাথে কি প্রকৃতিও চলতে চাইছে তাই তো থামার নাম নিচ্ছে না।

~ চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজকে বারবার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছিল সেই না কাঁদা মানুষটার জন্য। আগে থেকেই মাথাব্যথা আর হালকা জ্বর ছিল দুপুরে বেশি হলো তাই চাইলেও বড় করে পর্বটা লিখতে পারিনি আমি চাইছিলাম অতীত শেষ করতে কিন্তু হলো না। ইনশাআল্লাহ কাল হবে সব ঠিক থাকলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here