#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৩ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
বর্তমান
মেহবিন চোখ বন্ধ করে টেবিলে হাত রেখে মাথা ধরে রেখেছে। আচংকা ক্ষত জায়গায় ওষুধ লাগতেই মেহবিন চমকে উঠলো। ও সামনে তাকাতেই দেখলো তাজেল দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তাকাতেই দেখলো নার্স এর হাতে তুলো। ও যা বোঝার বুঝে গেল। তাজেল বলল,,
“এই যে নার্স আপা থাইমা গ্যালা ক্যান? লাগাও ওষুধ হাতের রক্তের মতো ছিটাছিটা দেহো না তুমি।”
তাজেলের কথা শুনে মেহবিনের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। ও বলল,,
“নেত্রী এখানে কি করছো?”
তাদের দাঁত কেলিয়ে বলল,,
‘কিছু না হাসপাতাল দ্যাখবার আইছিলাম একটু। পরে দেখলাম তুমি আইলা কারে জানি নিয়া ঐ চেয়ারম্যান বাড়ির। তারপর দেখলাম তুমি তার চিকিৎসা করলা। বাইরে মেলা মানুষ দেইহা ওনে যাইনাই। পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালাও তো আছিল। তুমি বাইর হইয়া কি জানি কইলা পরে দেহি তোমার হাত দিয়া রক্ত বাইরেতেছিল তো তাই দেইহা নার্স আপারে নিয়া আইলাম। এহন কথা কম কও নার্স আপা তুমি কাম করো।”
মেহবিন নার্সের দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল ওষুধ লাগাতে। তারপর মেহবিন তাজেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তোমার সৎমায়ের কি হয়েছে নেত্রী? যার জন্য তুমি তাকে দেখতে এসেছো হাসপাতালে?
মেহবিনের কথা শুনে তাদের বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তুমি এইডাও জানো?
“আমার স্পেশাল পাওয়ার আছে।”
“তোমার পশাল পাওয়ার তোমার কাছেই রাহো। আমি হাসপাতাল দেখবার আইছি কতো বড় হাসপাতাল। এমনি তো দেহা অয় নাই। তাই মন চাইলো চইলা আইলাম আমগো বাড়ি থিকা তো বেশি দূর না।
“ওটা পশাল নয় স্পেশাল। আর আমাকে মিথ্যা বলতে হবে না আমি জানি তুমি তাকেই দেখতে এসেছো।
তাজেল মাথা চুলকিয়ে বলল,,
“ঐ হইলো।”
“কি হয়েছে তার?”
“পিত্তিতে পাথর অইছে বলে। আমি যে এনে আইছি তুমি কিন্তু কাউরে কইও না।
তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো। ও বুঝতে পারলো তাজেলের মনে তার মাকে নিয়ে আলাদা কিছু একটা আছে। হয়তো একই বাড়িতে থাকে বলে। মেহবিন বলল,,
‘আচ্ছা।”
“এহন কও তুমি বাড়ি যাইবা নাকি? আমি বাড়ি যামু। আমি যে এনে আইছি কেউ জানে না। ভাবছিলাম সন্ধ্যার আগেই বাড়ি যামু কিন্তু তোমার জন্যে আন্দার অইয়া গেল।”
“আমি আজ বাড়ি যাবো না।”
“এইডা কি কও তুমি এনে থাকবা?”
নার্সের হয়ে গেছে তাই সে চলে গেল। মেহবিন তাজেল কে ডাকলো আর ওকে কোলে বসিয়ে বলল,,
“হুম আজ এখানে থাকবো। আমি যাকে নিয়ে এসেছি সে আমার বন্ধু ছিল অনেক আগে। সে এখন অসুস্থ আমি আমার দায়িত্বে তাকে এখানে এনেছি। তাই তার সবকিছু আমাকেই দেখতে হবে এই জন্য আমাকে এখানে থাকতে হবে।”
‘অনেক আগে বন্ধু ছিল এহন নাই।”
“হুম এখনো আছে তবে মনে মনে।”
“ওহ আইচ্ছা তোমার কতো বন্ধু ডাক্তার। কয়দিন আগেই আইছিল কি জানি নাম রাই না খাই।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘ওর নাম রাই ছিল। তুমি জানো আমি যাকে আজ হাসপাতালে আনলাম তার নাম ও রাই।”
“তুমি দুই রাইরে একলগে পাইলা কেমনে?”
“সে অনেক কথা এসব রাখো। আমি তোমার বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করছি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো।”
‘তোমারে রাইতে খাওয়ায় দিবো কি রা ডাক্তার? আর খাওনই আইনা দিব কিরা?
তাজেলের কথায় মেহবিন অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। এই ছোট্ট মেয়েটা ওর খাওয়ার চিন্তা করেছে। সকাল বেলা তাজেলই বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার এনে ওকে খায়িয়ে দিয়েছিল। আর দুপুর বেলাও তাই কারন সে আজ ও হাতের জন্য ছুটিতে ছিল শুধু কুদ্দুস এর জন্য তিনবার হাসপাতালে এখানে এসেছিল। মেহবিন ওকে সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,,
“খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমার ড্রয়ারে কাপ নুডুলস আছে রাতে গরম পানি করে নুডুলস বয়েলড করে চামচ দিয়ে খেয়ে নিতে পারবো।”
“সত্যি তো দেহি কোনে লুডুস?”
মেহবিন ড্রয়ার খুলে দেখালো সেখানে চকলেট চিপস আর তিনটা কাপ নুডুলস রাখা। মেহবিন এগুলো রাখে মাঝে মাঝেই খায়। মেহবিন একটা চকলেট তাজেলের হাতে দিয়ে খেতে বলল তারপর ওকে নিয়ে বের হবে এমন সময় মুখর ঢুকলো একজন নার্সকে নিয়ে সে এসেছিল মেহবিনের হাতে ওষুধ লাগাতে। মুখর দেখলো তার দরকার নেই। মেহবিন ওকে নিয়ে বের হলো। বাইরে বেরিয়ে দেখলো কেউ যায় নি। তাই দেখে মেহবিন বলল,,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনারা কেউ বাড়ি যাবেন না নাকি?”
তখন মিসেস আমজাদ বলল,,
“আমার ছেলের বউকে এই অবস্থায় রেখে আমরা বাড়ি যাবো নাকি।”
‘ওহ আচ্ছা তাহলে এখানের কেউ কি বাড়ি যাবেন না।”
শেখ শাহনাওয়াজ তাজেলকে দেখে বললেন,,
‘কেন আপনার কোন দরকার নাকি। তাছাড়া এখন মুখরের পরিবার চলে যাবে। ওনাদের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি।
তখন মুখরের বাবা মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,
“না ভাইসাব আগে রাইফার জ্ঞান ফিরুক ওকে দেখে ওর সাথে দেখা করে তারপর যাবো। আজকে বাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও তো যেতে পারলাম না। কাল সকালে বাড়ি যেতে হবে আর দেখা হবে না।
মেহবিন বুঝতে পারলো এখন কেউ বাড়ি যাবে না। হয়তো একেবারে রাতে যাবে। মেহবিন তাজেলের দিকে তাকালো তাদের বলল নিচু হতে ও নিচু হলো তা দেখে সবাই ওদের দিকে তাকালো। তাজেল ফিসফিস করে বলল,,
“পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালারে দিয়াইতে কও। আব্বা আর দাদি মনে হয় আমারে খুজতেছে।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“ঠিক আছে।”
মেহবিন ফোন নিয়ে মুখরকে টেক্সট করলো তারপর মুখের দিকে তাকালো। মুখর টেক্সট টা দেখে মাথা নাড়ালো। মুখর সবাইকে বলল,,
“তোমরা একটু থাকো আমার একটা ইম্পোর্টেন্ট কল করার আছে করে আসছি। আসার সময় তোমাদের জন্য চা ও নিয়ে আসছি।”
বলেই মুখর ওখান থেকে চলে গেল। মেহবিন তাজেলের হাত ধরে ওকে নিয়ে বের হলো। বাইরে বেরুতেই মুখর দরজা খুলে তাজেলকে কোলে নিয়ে সেখানে বসিয়ে দিল। মেহবিনকে বলল ওকে নামিয়ে দিয়ে আসছে। মুখররা চলে গেল। মেহবিন ওপরে গিয়ে দেখলো রাইফার বাবা মা এসেছে মেহবিনকে দেখেই চিনে ফেলল। রাইফার মা মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো আর ধমক দিল তাদের না বলে হাওয়া হলো কেন। আসলে সেদিনের পর আলম আহমেদ বাসা চেঞ্জ করেছিল তাই ওকে পায় নি কেউ। রাইফার মা মেয়ের জন্য কাঁদলো। মেহবিন তাকে শান্তনা দিয়ে নিজের কেবিনে গেল। ঘন্টাখানেক পর শুনলো রাইফার জ্ঞান ফিরেছে ও তখন কফি খাওয়ার জন্য কেটলিতে গরম পানি করছিল। মেহবিন সেটা দিয়ে কফি না বানিয়ে কাপ নুডুলস বের করে তাতে ঢেলে বের হলো। মেহবিন বাইরে গিয়ে বলল কাউকে না ঢুকতে সে বের হলে যেন সবাই যায়। মেহবিন কেবিনে গিয়ে দেখলো রাইফা আধশোয়া হয়ে বসে আছে। মেহবিন টুলে ভালো করে বসে নুডুলস কাঁটা চামচ দিয়ে নাড়াতে লাগলো। রাইফা সেদিকে তাকালো মেহবিন ওর দিকে না তাকিয়ে নুডুলসের দিকে তাকিয়ে নেড়ে চেরে মুখে পুরে নিল। দুই দিন বার নেওয়ার পর তারপর বলল,,
‘এভাবে তাকাস না রাই আমার পেট খারাপ হবে ।”
রাই মেহবিনের থেকে চোখ সরিয়ে বলল,,
“আমার বয়েই গেছে তোর দিকে তাকাতে?”
“তাহলে কে তাকাচ্ছিল শুনি শেখ সায়িদের বউ রাইফা আফনূর নাকি।”
কথাটা শুনে রাইফার মুখে অন্ধকার হয়ে এলো। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“তুই কিছু বলবি নাকি আমি কিছু বলবো। আচ্ছা তোর হয়েছে টা কি বলবি? যদি তুই জেনে থাকিস তাহলে আমায় বল।”
রাইফা কিছু বললো না। মেহবিন বুঝলো ও কিছু বলবে না। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“নুডুলস খাবি রাই? কেউ কিন্তু এই নুডুলস কে কখনো না করতো না।”
রাইফা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘কারো এইটুকুতে পেট ভরবে না। তাই এটুকু খেয়ে তার মুখ নষ্ট করবে না।”
মেহবিন হেঁসে ফেললো তা দেখে রাইফাও হাসলো। কতোদিন পর রাইফা এভাবে হাসলো তা রাইফা নিজেও জানে না। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“আপাতত এটা খা আমি আরেকটা নিয়ে আসছি।”
“আরেকটায় হবে না মেহু।”
“আচ্ছা আরো দু’টো নিয়ে আসছি হ্যাপি।”
রাইফা ওপর নিচ করে হাসলো। মেহবিন হেঁসে বের হলো আর বলল,,
‘রাইফা এখন খাবে কেউ যেন ভেতরে না ঢুকে।”
তখন সায়িদ বলল,,
“আমরা তো কতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি ওর জন্য। ওকে দেখতে পেলে আমাদের ভালো লাগতো তাইনা।
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘আপনারা তো ওকে দেখে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা ভাবছেন তাই না। ওর জন্য কনসার্ন আমাকে দেখাতে আসবেন না। আপনাদের সবাইকে চেনা শেষ আমার।”
বলেই মেহবিন চলে গেল কিছুক্ষণ পর দুইটা কাপ নুডুলস নিয়ে ফিরে গেল। রাইফার ওটা খাওয়া শেষ মেহবিন একটা ওকে দিল একটা সে নিল একটা। রাইফা বলল,,
“অনেকদিন পর শান্তি মতো নিজের পছন্দের নুডুলস খেলাম। শুকরিয়া মেহু।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“তোর মরার এতো তাড়া এখন মরলে কি এই নুডুলস খেতে পেতি।”
‘সত্যি কথাই বলেছিস তুই। সত্যি সত্যি মরলে মিস করতাম এটা।”
বলেই রাইফা হাসলো। মেহবিন কিছু বললো না বাইরে এসে সবাইকে দেখা করতে সবাই এক এক করে দেখা করলো। তখন রিপোর্ট এলো মেহবিন রিপোর্ট টা খুলে দেখতেই ওর মাথা ঘুরে গেল। তখন সবাই ওখানেই ছিল। রিপোর্ট এসেছে শুনে শেখ শাহনাওয়াজ শেখ আমজাদ আর সায়িদ মেহবিনের দিকে গেল। মেহবিন রাইফার কেবিনের বাইরে বসে ছিল বেঞ্চে আর চিন্তিত অবস্থায় রিপোর্ট দেখছিল। ওর চেহারা দেখে শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কি আছে রিপোর্ট এ?”
মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,
“রাইয়ের ব্রেন টিউমার যা এখন সময়ের সাথে বেশ বড় আকার ধারন করেছে। খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে হবে আর অপারেশনটাও বেশ রিস্কি। তাছাড়া ,
এইটুকু বলেই মেহবিন থামলো শেখ আমজাদ বললেন,,
“তাছাড়া কি?”
“রাইফার একটা কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে আরেকটা ড্যামেজের পথে। খুব তাড়াতাড়ি করে অপারেশন করতে হবে। আর দুটো অপারেশনই জরুরি। কিন্তু ওর শরীর দুটোর ধকল সহ্য করতে পারবে কিনা এটা নিয়ে যথেষ্ট ভয় আছে। কিন্তু ওকে দেখে এতটা অসুস্থ মনে হচ্ছিল না। ওকে দেখে সুস্থ স্বাভাবিক লাগছিল।
সব শুনে রাইফার মা বাবা কেঁদে উঠলো। সবারই খারাপ লাগছে। মেহবিন সায়িদের দিকে তাকালো। তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মেহবিন বলল,,
“ওর এখন বেস্ট ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন।”
তখন সায়িদ বলল,,
“রাইফাকে এখানে রাখা ঠিক হবেনা। ওকে এখনই আমাদের হাসপাতালে বেস্ট কেবিনে শিফট করতে হবে। আর হ্যা ওখানে গিয়ে আমরা আবার ওর টেস্ট করাবো। তারপর শিওর হয়ে চিকিৎসা নেব।”
“আপনারা ভাবলেন কি করে? আমি রাইফার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা আপনাদের ওপরে ছেড়ে দেব।”
কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। সায়িদ বলল,,
“তো তুমি করবে? তুমি এই সরকারি হাসপাতাল থেকে কি করবে। তাছাড়া কয়টাকা আছে তোমার ? আমাদের হাসপাতাল নামকরা হাসপাতাল ওখানের ট্রিটমেন্ট ও বেস্ট। তাছাড়া বেস্ট ডক্টরদের সাথে কনসার্ন করে রাইফার চিকিৎসা করাতে হবে। আমি ওর জন্য বেস্ট ডক্টর আনবো। রাইফা ভালো হয়ে যাবে।”
মেহবিন কিছু বলবে তার আগে মেহবিনের ফোন এলো ও ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে বলল,,
” ম্যাডাম রিপোর্ট এ একটা জিনিস দেওয়া হয় নি। ভুল হয়ে গেছে একটা।
‘কি দেওয়া হয় নি।”
“মিসেস রাইফা আফনূর এর শরীরে একটা কেমিক্যাল পাওয়া গেছে। ”
“কি কেমিক্যাল?”
লোকটা কেমিক্যাল এর নাম বলতেই মেহবিনের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো আর লোকটা এটাও বলল বেশ কয়েকবার এই কেমিক্যাল রাইফার শরীরে দেওয়া হয়েছে। শুনেই মেহবিন দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে বলল,
“আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। কিছু একটা তো চোখের আড়ালে হচ্ছে।
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। ওর শরীর রাগে জ্বলছে আর ওর মনে হচ্ছে শেখ পরিবার কে মেরে ফেলতে। রাইয়ের শরীরে এমন কেমিক্যাল পাওয়া গেছে যা কিডনি ড্যামেজ করে ফেলে। আর ঐ কেমিক্যালের জন্যই ওর একটা কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি কিছু না করলে আরেকটাও হয়ে যাবে। মেহবিন সায়িদের দিকে তাকালো । মেহবিন বড় বড় শ্বাস নিল। তখন শেখ শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কি হয়েছে আপনি এরকম রেগে যাচ্ছেন কেন?’
মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,
“কিছু না আপনাদের তো রাইফাকে দেখা হয়ে গেছে এখন বাড়ি চলে যান।”
তখন শেখ আমজাদ বলল,,
‘আমরা রাইফাকে নিয়ে যাবো এখান থেকে। এই সরকারি হাসপাতালে রাখবো না। রাইফার জন্য এক একটা মুহুর্ত খুব দামী। শরীরের যে কন্ডিশন? কোন ভালো স্পেশালিস্ট দিয়ে ওর অপারেশন করাতে হবে। আমার পরিচিত ভালো ডক্টর আছে আমি তাদের সাথে কথা বলছি। আমাদের হাসপাতালে নিয়ে ওর বেটার ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। যা আপনার ভরসায় আমি ফেলে রাখবো না। আপনি আর কয় টাকায় রোজগার করেন আমাদের মতো ভালো ডাক্তার ট্রিটমেন্ট তো দূরে থাক আপনি তো ভালো হাসপাতালে ওর এডমিট ও করতে পারবেন না। তাছাড়া কিডনি ও তো লাগবে সেটা দেবে কে আপনি। ব্রেন টিউমার এর জন্য বেস্ট ডাক্তার লাগবে আপনার মতো নগন্য সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার বেস্ট ডাক্তারের কি বেস্ট ডাক্তারের সাথে পরিচয় আছে আর থাকলেও ওনার ফিস দিতে পারবে তুমি। আমরা ওকে বাইরের দেশে পাঠাবো চিকিৎসার জন্য। আমরা ওর পরিবার আর আপনি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়তো আগে ছিলে এখন দেখে মনে হয় নও। আমরা তোমার ভরসায় ওকে ফেলে রাখবো না। তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো না। তাছাড়া যার কোন ফ্যামিলি নেই সে ফ্যামিলির মানে বুঝবে না।
শেখ আমজাদের এমন কথায় রাই শান্ত ভাবেই তার দিকে তাকালো। তারপর শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তারপর মুখরদের পরিবারের দিকে তারা সবাই ওর দিকে অসহায় চোখে তাকালো। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“আমার বুঝতেও হবে না এইসব ফ্যামিলির মানে। আর বাকিটা না হয় আমার হাতেই ছেড়ে দিন। আপনারা যতো যাই বলুন না কেন আমি আপনাদের হাতে রাইকে তুলে দেব না। ”
বলেই ফোন বের করে মেহবিন রাই মালিকের নাম্বারে ফোন করলো। ওপাশ থেকে রাই ফোন ধরতেই বলল,,
“কাল বাংলাদেশ সময় দুটোর আগে তোকে আমার এখানে দেখতে চাই। আর হ্যা তোকে মেইল পাঠাচ্ছি একজনের সেটা দেখে অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিবি।”
“মানে তুই থাকতে আমি!”
‘আমার হাতের অবস্থা ভালো নয় আর আমি রাইয়ের ব্যাপারে কোন রিস্ক নিতে রাজি নই। রাখছি কাল দেখা হচ্ছে।”
বলেই মেহবিন ফোন কেটে দিল। তারপর আরেকজনকে আরেকটা কল দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। কিছুক্ষণ পর আবার দিল এখন ফোনটা রিসিভ হলো ও ইংলিশ এ বলল,,
“হ্যালো ডক্টর ইলিয়ানা ফার্নান্দেজ আমি ডক্টর মেহবিন মুসকান। আপনার একটা সাহায্য লাগবে। একটা পেশেন্ট তার ব্রেন টিউমার হয়েছে এবং বড় আকার ধারণ করেছে। ব্যাপারটা খুব রিস্কি। আপনি যদি তার অপারেশন টা করতেন। আমি ওখানে তাকে পাঠাবো।আমি ডিটেলস পাঠাচ্ছি আপনাকে।
তিনি জানালো সে পারবে। মেহবিন বলল সে বিশ দিনের মধ্যে তাকে পাঠাবে। তিনি যেন তার অবস্থা দেখে অপারেশনটা করে। কথা বলা শেষ করে মেহবিন শেখ আমাজাদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“সি শেখ আমজাদ দুটো বেস্ট ডক্টর রেডি। রাই মালিক কে তো চিনেন। আর ডক্টর ইলিয়ানা ফার্নান্দেজ কেও চেনার কথা। এমন কোন রেপুটেডেড ডক্টর নেই যে ইলিয়ানা ফার্নান্দেজ কে না চিনে এবং অপারেশনের ডেট ও প্রায় রেডি। হয়ে গেছে সব দেখা এখন আপনারা যে যার মতো বাড়ি যেতে পারেন।
সবাই সব দেখে অবাক হয়ে গেল কে কি বলবে। মুখরের পরিবার ও কম অবাক হয় নি। শুধু অবাক হয় নি মুখর আর শেখ শাহনাওয়াজ। তখন সায়িদ বলল,,
“সব বুঝলাম কিন্তু কিডনি! কিডনি পাবে কোথায়? আর টাকা এতো গুলো টাকা কি উরে উপরে আসবে নাকি?”
“টাকার ব্যাপারটা না হয় আমার ওপর ছেড়ে দিন। আর কিডনি সে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। আর যদি না পারি তাহলে নিশাচর কে ফোন করবো কিডনির জন্য।”
বলেই মেহবিন হেঁসে ওখান থেকে চলে এলো। একবার রাইকে দেখলো ও ঘুমাচ্ছে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। শেখ বাড়ির সকলে চলে গেল। মেহবিন কাউকে কিডনির কথা বলে রাইফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। পাচ মিনিট পর ফোনে একটা ফোন এলো। মেহবিন ফোন উঠালো ও কিছু বলবে তার আগে ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,
“শুনলাম তুমি তোমার বান্ধবীর জন্য নাকি আমার কাছে কল করবে? তুমি বোধহয় ব্যস্ত আছো খুব। তাই ভাবলাম আমিই করি।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“ভালো করেছেন কল দিয়ে। কি করবো বলুন এতকিছু কি আর একসাথে করা যায়।”
‘আমার কাজকে বেআইনি অবৈধ বলো আবার অন্যায় বলো। দেখলে তো এই কাজ মানুষের কতো সাহায্যে আসে। এখন তুমি ইমার্জেন্সি কিডনি কোথায় পাবে সেই আমার দ্বারস্থ হতে হলো। তো বলো তোমার বান্ধবীর কিরকম কিডনি লাগবে ডিটেলস বলো। আমি পাঠিয়ে দেব সমস্যা নেই আমি টাকা নেব না। শুধু একটা কথা দেবে তুমি আমার দূরে থাকবে।”
মেহবিন হাঁসি মুখেই বলল,,
“সেদিন আমার সাথে কথা বললেন তবুও আপনার এতো ভয় আমাকে নিয়ে। বাহ বেশ লাগলো তো! তবে আপনাকে কে বলল আমি অবৈধ অন্যায়ভাবে নেওয়া কিডনি আমার বান্ধবীর শরীরে ঢুকাবো।”
‘মানে?”
“মানে আমি তখন এমনিই বলেছিলাম যে নিশাচর কে ফোন করবো। তার মানে এই নয় সত্যি সত্যি আপনাকে কল করে বলবো কিডনির জন্য। আমার কিডনি রেডি কালকেই এসে পরবে। তবে আপনাকে ধন্যবাদ।”
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। ফোনের দিকে তাকাতেই ওর মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। ও কাউকে ফোন করে বলল,,
“নাম্বারটার ঠিকুচি গুষ্টি সব আমার চাই।”
বলেই ফোন রেখে হেঁসে বলল,,
“আপনাকে এতটা বোকা ভাবিনি আমি নিশাচর। আপনার নাম বলতেই আপনি খুশিমনে আমাকে কোন ননট্র্যাকার প্রাইভেট নাম্বার ছাড়াই আমাকে ফোন করবেন আমি ভাবতেও পারিনি। একে বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা আমি তো ইচ্ছে করেই আপনার নাম নিয়েছিলাম।”
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ চিকিৎসা সম্পর্কে আমার তেমন ধারনা নেই। তাই সে বিষয়ে ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যা বোনাস পার্ট দিলাম আজ মন ভরেছে তো । আশা করছি আজ মন রাখতে পেরেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।