#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৬ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
সায়িদের খবরটা শুনেই রাইফার মা বাবা ভিশন ভেঙে পরেছেন। এমনিতেই মেয়েটার এতো বড় অপারেশন হলো তার মধ্যে এইরকম একটা ঘটনা মেয়েটাকে না জানি কতবড় আঘাত পেতে হবে। তারা তো আর জানে না এই খবরটাই তার মেয়ের মনে কতটা খুশি এনে দেবে। শেখ পরিবার থেকে শেখ শাহনাওয়াজ আর মিসেস আমজাদ রাইফার মা বাবার কাছে ক্ষমা চাইলেন। রাইফাকে এখনো খবরটা জানানো হয় নি। সবাই ভাবছে যদি রাইফা জানতে পারে তাহলে খুব ভেঙে পরবে। তাই কেউ রাইফাকে জানায় নি। এমনকি মেহবিন ও জানায় নি। এভাবেই পার হয়ে গেল সাত দিন। সেদিনই রাই ফিরে গেছে। সাত দিন ধরে রাইফা হাসপাতালে আজ সে বাড়ি ফিরবে। শেখ বাড়ির অবস্থা বেশ করুন। রাইফার মা বাবা বলেছে ওকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যাবে এতে রাইফা অবাক হলেও কিছু বলেনি। মেহবিন কাগজ করতে দিয়েছে সেগুলো তৈরি হয়ে গেলে তিনজনেই বিদেশে চলে যাবে রাইফার চিকিৎসার জন্য। রাইফারা বেরুবে কিন্তু শেখ বাড়ির কেউ আসেনি এটা দেখে রাইফার একটু মন খারাপ হলো। ও মেহবিনের দিকে তাকালো মেহবিন সবাইকে বাইরে যেতে বলল । সবাই চলে গেলে মেহবিন নিউজটা রাইফাকে দেয়। ও প্রথমে অবাক হলেও পরে খুশি হলো যে মানুষ টা ওকে এতটা টর্চার করেছে তার শাস্তি পাওয়া উচিৎ সবথেকে বড় কথা ও পরকীয়ার লিপ্ত ছিল। সারাজীবনের জন্য প্যারালাইজড হয়ে গেছে আর যা ঘটনা ঘটে গেছে ও প্রতিটা মুহূর্তে নিজের মৃত্যকামনা করছে। নুপুরের নুপুরের শাস্তি হয়েছে দেখে সে খুশি হয়েছে। তার সাথে আফসোস ও করেছে। এরকম করুন অবস্থা দেখে। এভাবে ওদের অবস্থা সবার সামনে আসবে ও ভাবেও নি। তখন শেখ বাড়ির সকলে এলো শেখ শাহেনশাহ আর শেখ আমজাদ ছাড়া মিসেস আমজাদ কেঁদে দিয়ে রাইফার কাছে মাফ চাইলো। তিনি এটাও বলল তাদের ডিভোর্স করাবে কিছুদিন পর পাঠিয়ে দেবে আরও বলল তুমি বাঁচবে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে বলল ভয় পেতে বারন করলো। পরে অনেকক্ষণ মেলোড্রামার পর রাইফারা বেরুবে। রাইফা বলল,,
“এই মেহু তুই আমার সাথে যাবি?”
“নারে তোরা যা আমার অনেক কাজ আছে।”
“প্লিজ মেহু! যদি আর না ফিরি। আমার ভিশন ভয় করছে। ”
“এতো ভয় পাস না ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না। এখন তোর এখানে থাকা টা ঠিক হবে না। তুই ঢাকায় ফিরে যা। তাছাড়া আমি দেখা করে আসবো তো।”
মেহবিন বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাইফাকে বাড়ি পাঠানোর জন্য রাজি করালো।ওরা গাড়িতে উঠবে এমন সময় রাইফার বাবা মেহবিনের মাথায় হাত দিয়ে বলল,,
“আমার মেয়ের জন্য যা করলে তার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া মেহু মা।
মেহু হেঁসে বলল,,
“আরে আঙ্কেল এসব কি বলছেন। রাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর এইটুকু করা একজন ডক্টর হিসেবে আমার দায়িত্ব।
“আমি জানি তবুও একজন বাবা হিসেবে তোমার শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ। আমি জানি তুমিই আমাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাচ্ছো তা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই মেহু মা। আর আমি জানি তুমি এখানে আমাদের নিচু দেখাচ্ছো না শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য কিছু করছো। তবুও সেখানের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ আমি দেব। আমার একটাই মেয়ে সব ওর জন্যই এই জন্যই আমি সব নিজের হাতে করতে চাই মেহু মা।
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘ সমস্যা নেই আঙ্কেল করুন আপনি আপনার মেয়ের জন্য। এতে আমি হস্তক্ষেপ করবো না কিন্তু কোন সমস্যায় পড়লে সবার আগে যেন আমার কাছেই ফোনটা আগে আসে।”
“তা আর বলতে। নিজের খেয়াল রেখো সাবধানে থেকো আসছি। আল্লাহ হাফেজ।”
“হুম আল্লাহ হাফেজ।”
ওরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এ কয়েকদিন তাজেলের সাথে সময় কাটানো হয় নি মেহবিনের বেশীরভাগ সময় হাসপাতালেই কেটেছে মুখরের সাথেও তেমন যোগাযোগ হয় নি। ক’দিন বাদেই আলভি আর মাইশার বিয়ে। মেহবিন আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রওনা দিল। বাড়ির সামনে আসতেই তাজেলের সাথে দেখা। তাজেল একবার ওর দিকে তাকালো আবার অন্য দিকে তাকি হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো। তা দেখে মেহবিন বলল,,
‘নেত্রী কেমন আছো?”
তাজেল আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো আর মেহবিনের উল্টো দিকে ঘুরে রইলো। তা দেখে মেহবিন একটু ভরকালো। ও তাজেলের সামনে দাঁড়ালো আর হাঁটু গেড়ে বসে বলল,,
“কি হয়েছে এতো রাগ কিসের শুনি?”
তাজেল পাশ ফিরে দাঁড়ালো আর বলল,,
“কেউ জানি আমার সাতে কথা না কয়। তার জন্যে আমার একটা পশাল দিন খুব খারাপ গেছে।”
মেহবিন কিছুই বুঝতে পারলো না। ও বলল,,
“তা ঐ একটা স্পেশাল দিনে ছিল। আর ঐ স্পেশাল দিনটা কবে ছিল। যে নেত্রীর তার ডাক্তার কে ছাড়া খারাপ গেছে।”
“তুমি তো আমার সাতে কথাই কইয়ো না। কাল আমার জন্মদিন আছিল। আমি চাইছিলাম তোমার সাথে ঘুইরা জন্মদিনের কেক কাটুম আর খামু। এই জন্য আব্বারেও কইছিলাম আব্বা ও কইছে ট্যাহা দিবো। কিন্তু তুমি বাড়িই আইলা না তোমার জন্য আমি কতোক্ষন অপেক্ষা করছিলাম।”
‘এই ছোট্ট একটা জিনিসের জন্য তুমি রাগ করেছো?”
“হ তোমার কাছে তো তোমার বন্ধুই বড় আমি তো আর কেউ না।”
মেহবিন তাজেলকে ওর দিকে ঘুরালো আর বলল,
“আজ আমার বন্ধু চলে গেছে। তাই তো কাল আসতে পারি নি সব গোছগাছ করে দিয়ে আসতে হতো তো। রাত হয়ে গেছিল আমার বন্ধুও বলল ওর সাথে থাকবে ভাবলাম কাল চলে যাবে তাই ওর সাথে থেকে গেলাম।”
‘তোমার জন্য আমি জন্মদিনের কেক কাটতে পারলাম না। আবার খাইতেও পারলাম না। আব্বা সবাইরে খিচুড়ি খাইয়াইছে আমার জন্মদিনের জন্যে আমার অনেকদিনের শখ আছিল কুলসুমের ভাইয়ের মতো সবাইরে দাওয়াত দিয়া খাওয়ামু আর মোমবাত্তি নিভাইয়া কেক ও কাটুম। তুমি আইলে তুমারে নিয়া কেক কিনতে যামু বাজারে কিন্তু তুমি আইলাই না আমার কেক ও কিনা হইলো না। পরে আব্বা কইছিল হে আনবো আমি তোমার জন্য না কইরা দিলাম।”
মেহবিন তাজেলকে কোলে তুলে নিল। আর বলল,,
“সরি নেত্রী আমার জন্য তুমি কেক খেতে পারলে না। তবে তুমি কি জানো এসব জন্মদিন পালন করা হারাম।জন্মদিন পালন করা খুবই কমন কালচার আমাদের সমাজে। আজ আমরা পাপকে পাপই মনে করি না তবে জন্মদিন খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় কালচার। আর ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, , রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক।
অন্য ধর্মের কোন সিম্বল মুসলমান ধারন করতে পারেনা।
খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে ঈসা আঃ জন্মদিন তাদের জন্য বিশেষ রহমত বয়ে আনে, তাই এই দিন তাদের জন্য রহমতময়, এই রহমতকে তাদের জীবনে ধরে রাখার জন্য তারা নিজেদেরো জন্মদিন পালন করে থাকে,,আর তাদের এই উৎসব আজকে আমরাও পালন করি,,,!
অথচ জেনে না জেনে কত বড় ঈমানহানীকর কাজ আমরা করছি নিজেরাই বুঝতে পারছিনা,,,,!
আর আমরা যদি জন্মদিন পালন করি, তবে খ্রিষ্টানদের কালচার গ্রহন করলাম।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”
[সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]
আল্লাহ তাআলা সকলকে সঠিক বুঝ দান করুক আর এইসব জিনিস থেকে দূরে রাখুক। যারা আমরা জন্মদিন পালন করি তারা মন থেকে তওবা করি এবং এসব কাজ থেকে বিরত থাকি। আমিন।”
সব শুনে তাজেল বলল,,
“তুমি কি কইলা কিছুই বুঝিনাই আমি। খালি এইটুকু বুঝলাম জন্মদিন পালন করা যাইবো না।”
“হুম ঠিক বুঝেছো।”
‘তাইলে কি কেক ও খাওয়া যাইবো না।”
“কেক খাওয়া যাবে তবে জন্মদিনের নিয়তে খাওয়া যাবে না। তোমার জীবনের সবকিছুই তোমার নিয়তের ওপর নির্ভর করে। তুমি এমনে কেক খাও সবাইকে খাওয়াও তাতে সমস্যা নেই।”
“ধূরু আমি কিছুই বুঝি না তো।”
‘তুমি কেক খেতে চাও তাই না চলো আমি আর তুমি আজ কেক খাবো। তবে এটা জন্মদিনের জন্য না কেক খেতে ইচ্ছে হয়েছে তাই খাবো ঠিক আছে।”
‘হ ঠিক আছে। ট্যাহা কিন্তু আমি দিমু কারন আমি খাইতে চাইছি।”
‘না আজ টাকা আমি দেব আমি এখনি অর্ডার করছি।”
মেহবিন ফুড পান্ডায় একটা কেক অর্ডার দিল। ও দেখেছে এখান দিয়ে ফুড পান্ডার একটা ইউনিট আছে। মেহবিন ওকে নিয়ে বাড়িতে গেল। বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হলো। হাত ঠিক হয়ে গেছে ওর। তাজেল আর মেহবিন গল্প করলো এই কয়দিনের সব কিছু তাজেল বলছে ঘন্টাখানেক এর মধ্যে ওদের কেক এলো। মেহবিন তাজেলকে বলল কেক কেটে খেতে। তাজেল কাটলো অনেকগুলো পিচ করলো ওর ভালো লাগছে। মেহবিন একটা প্লেটে একটু উঠিয়ে রেখে বাকিটা তাজেল কে বলল খেতে। ও তাদের খেতে গিয়ে ক্রিম দিয়ে মুখ মেখে গেল। তা দেখে মেহবিন হাসলো তাজেলের হাত ও পুরোটা কেকের ক্রীম দিয়ে মেখে গেছে। মেহবিন ওর সামনে একটা আয়না ধরলো নিজের মুখ দেখে সে নিজেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আর বলল,,
“ডাক্তার দেহো আমারে ভুতের লাগান লাগতেছে।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“হ দেখতাছি তো?”
“তুমি দেহি আমার মতো কথা কইতেছো?”
‘হ তাই তো দেখতাছি!”
তাজেল খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। মেহবিনের ওপর রাগ কখন ভুলে গেছে ও নিজেও জানে না। মেহবিন বাকি কেকটুকো ফ্রিজে রেখে দিল। তাজেলের হাত মুখ ধুয়ে দিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই তাজেল খুশিমনে বাড়ি চলে গেল। তখন শেখ শাহনাওয়াজ এর ফোন এলো শেখ শাহেনশাহর কি যেন হয়েছে। উনি অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে। এই মুহুর্তে কোন ডাক্তার বাড়িতে নেই। তাই ওকে ফোন দিয়েছে। মেহবিন চেয়ারম্যান বাড়িতে গেল । মেহবিন চেক আপ করে দেখলো প্রেসার অনেকটাই হাই প্রেসারের ওষুধ খান না কয়েকদিন ধরে নিয়মিত তারসাথে উনি বোধহয় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। মিসেস আমজাদ ছেলের চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরেছে তাই এখন সে হাসপাতালে যার জন্য শেখ আমজাদ মুনিয়া দুজনেই ওখানে। এখন আরিফা জামান তার ভাইয়ের বউ, নিসা,মিশু,আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ বাড়িতে। সবাইকে দেখে মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘উনি কয়েকদিন যাবৎ ওনার কোন ওষুধ খাচ্ছেন না। যার জন্য প্রেসার অনেকটাই হাই এমনকি নিয়মিত খাবার খাচ্ছেন না। মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা এই জন্য আজ আর শরীর উনার সাথে পেরে উঠেন নি।
মিসেস আরিফ বললেন,,
“বাড়ির যে অবস্থা এই সময় কি খাওয়া দাওয়া ঠিক থাকে। ”
“ঘরটা খালি করার ব্যবস্থা করুন। ওনার একটু আবহাওয়ার দরকার এখন। আর হ্যা কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুন।”
মেহবিনের কথা শুনে সবাই বেরিয়ে গেল শুধু রইলো শেখ শাহনাওয়াজ আর মেহবিন। সবাই বের হতেই বলল,,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনি একজন ডক্টর। এর পরেও আপনার আমায় ডাকার প্রয়োজন কেন পড়লো বুঝলাম না।”
মেহবিনের কথায় শেখ শাহেনশাহ ওর দিকে তাকালেন ঐ চোখে প্রশ্ন মেহবিন কিভাবে সব জানলো। তিনি বললেন,,
“তুমি কেমনে জানলা?”
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে তো চেয়ারম্যান সাহেব আপনি বলুন?”
“আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছি সেই উনিশ বছর আগেই?’
“কেন?”
শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের দিকে তাকালো। আর বলল,,
“কিছু পার্সোনাল কাজের জন্য?”
“কাউকে না বাঁচাতে পারার আক্ষেপ থেকে নাকি?”
শেখ শাহনাওয়াজ আর শেখ শাহেনশাহ দুজনেই বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকালো। মেহবিন হেঁসে বলল,
“যাই হোক যেভাবেই ছাড়ুন ওসব বাদ। তো শেখ শাহেনশাহ আপনাকে সেদিন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার সবথেকে প্রিয় জিনিস কি? আপনি বলেছিলেন আপনার বংশের সম্মান ও গৌরব। তা আপনার বাড়ির সম্মান আর গৌরব দেখছি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।”
শেখ শাহেনশাহ মাথা নিচু করলেন। তা দেখে মেহবিন হেঁসে বলল,,
“এই বংশের সম্মান আর গৌরব এর জন্য কত কি না করেছেন। আপনার ছেলেকে কেউ যেন নিঃসন্তান না বলে নিজের বংশের প্রদীপ জ্বালানোর জন্য অন্যকাউকে স্বার্থের জন্য এবাড়িতে নতুন করে জড়িয়েছেন। আবার স্বার্থ শেষ হয়ে গেছে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন।আর এমনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন যে পৃথিবী ছেড়েই চলে গেছে।”
শেখ শাহেনশাহ বড় বড় চোখ করে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
‘কে তুমি এতকিছু জানলে কিভাবে?”
‘তারমানে আপনিও একজন যে মেহেরুন নিসা কে মারার প্ল্যানে যুক্ত ছিলেন।”
শেখ শাহেনশাহ এবার উঠার চেষ্টা করলেন আর বললেন,,
“এই কে তুমি এতকিছু কিভাবে জানো?”
মেহবিন একটু উঠে গেল তারপর তার সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,,
‘আমি সে যাকে মেহেরুন নিসার সাথে এই পৃথিবী থেকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। মুসকান আমি শেখ শাহনাওয়াজ এর ছোট মেয়ে মেহবিন মুসকান শাহনাওয়াজ।”
এইটুকু শুনেই শেখ শাহেন শাহ ছটফট করতে লাগলেন। তার মুখ বাকা হয়ে যাচ্ছিল হাত ও কেমন যেন করছিলেন। শেখ শাহনাওয়াজ ও অদ্ভুত ভাবে দেখলেন উঠে আসতেই শেখ শাহেনশাহ অজ্ঞান হয়ে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ বাবা বলে তাকে তাড়াতাড়ি করে ধরলেন। তিনি বুঝতে পারলেন স্ট্রোক করেছে। এখন তিনি নিজেই উনিশ বছর পর ডাক্তারি চিকিৎসা করলেন তাও প্রাথমিকভাবে। শেখ শাহনাওয়াজ এর চিৎকার এ শেখ বাড়ির সকলে ঘরে এলো। মেহবিন চুপ করে একপাশে শেখ শাহেনশাহ এর দিকে তাকিয়ে রইল। শেখ শাহনাওয়াজ আর আরবাজ মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। মেহবিন ও গেল। ওখানে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করার পর ডাক্তার জানালো এক তিনি স্ট্রোক করেছিলেন যার জন্য তার দেহের ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে। মুখটাও বাকা হয়ে গেছে তার জন্য উনি কথা বললেও কিছু বুঝতে পারবে না কি বলছে। শেখ বাড়ির সকল মহিলারা কেঁদে উঠলো। আরিফা জামান কেঁদে উঠলো তিনি বললেন কার নজর লেগেছে যে এসব হচ্ছে। এমনিতেও বাড়ির এই অবস্থা এখন আবার এসব। শেখ শাহনাওয়াজ করিডরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেহবিন পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মেহবিনের অস্তিত্ব টের পেয়ে শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“আল্লাহ তায়ালা কিছু কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই প্রদান করেন। তিনি কতোই না উত্তম কর্মবিধায়ক।
আপনি নিজেকে ছোট ভাববেন না আপনার জন্য কিছু হয় নি। আপনি তো শুধু কিছু সত্যি বলছিলেন এটা তার ব্রেন সহ্য করতে পারেনি তাই আজ এই অবস্থা।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“এসবের জন্য নিজেকে নিয়ে কিছুই ভাবছি না আমি। এটা নিয়ে আমার অনুশোচনাও নেই।তবে আমি জানতাম এই অবস্থায় তিনি এগুলো সহ্য করতে পারবেন না। তবে,,
“তবে কি?”
“আপনি কষ্ট পাচ্ছেন?”
‘আপনার কষ্টের কাছে এগুলো কিছুই না। আমার বাবা তো একেবারে মারা যায় নি তবুও ভেতরটা কতটা হাহাকার করছে আর আপনি তো তখন বাচ্চা ছিলেন তাও সব সামলে নিয়েছেন। আমাকে ক্ষমা করবেন আমি জানতাম আপনার মাকে মারার সাথে উনিও ছিলেন তবে উনি মারতে বলেন নি। উনি শুধু জানতেন মারা হবে। কিভাবে কে মারবে এসব কিছুই জানতেন না।তবে উনি একবার বলেছিলেন না মারলে হয় না। কিন্তু তারা তার কথা কানেই নেয় নি। আপনি বলেছিলেন না আমি বাবার বিষয়ে সব জেনেও কেন চুপ করে থাকি। ঠিক এই কারনে কারন তিনি ছিলেন না সেই কাজে শুধু জানতেন। কিন্তু এর মেইন মাথা কে সেটাও তিনি জানেন না। আমি যেভাবে আপনার চোখের দিকে তাকাতে পারিনা ঠিক তেমনভাবেই সেও আমার চোখে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। অদ্ভুত অনুশোচনা তার। ”
মেহবিন অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমাদের জীবন অনেক অদ্ভুত চেয়ারম্যান সাহেব। আমরা যেটাকে জটিল ভাবি সেটা কখনো কখনো অনেক সহজ হয়ে যায় আর যেটাকে সহজ ভাবি সেটা আমাদের ভাবনার তুলনায় কঠিন হয়ে পরে। যাই হোক আসছি আমি! আল্লাহ হাফেজ।
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ দিয়ে দিলাম বোনাস। এবার ঠিক আছে তো। আচ্ছা তাড়াতাড়ি রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে কি গল্পের সৌন্দর্য কিছুটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সব চরিত্রকে ঠিক ভাবে আনতেও পারছি না বোধহয়। তাইনা। যাই হোক ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।