#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৯
#মেহরিন_রিম
স্টেজ থেকে নেমে আবারো পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো আদৃত,সম্পূর্ন স্বাভাবিক সে। ক্ষনিক আগের রাগের লেশমাত্র তার মাঝে নেই তার চোখেমুখে। এমনটা হওয়া তার জন্য অস্বাভাবিক। কিছুক্ষন আগে রাগে সবকিছু ভাঙচুর করতে ইচ্ছে হচ্ছিল,সেখানে এখন সে শান্ত। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক, কোনো চিন্তাই যেন তাকে ছুতে পারছে না। এমনটা কি করে হলো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে আদৃত।
ইশার বলা কথাগুলো ভেবেছিলো আদৃত,ইশা চলে যাওয়ার পর একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টায় সফল ও হয়েছে, যার কারণেই স্টেজ এ উঠেছে। ঐটুকু মেয়ের কথার এতটা প্রভাব পড়লো যে নিজের চিরচেনা রূপ থেকেই সরে এলো। শান্ত মস্তিষ্কেই পিছনে হাত গুজে কথাগুলো ভাবছে আদৃত। তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে মনে হতেই ঘুড়ে তাকায় আদৃত। ধারণা সঠিক, কয়েক হাতের ব্যাবধানে ইশা দাঁড়িয়ে আছে। খুব বেশি অবাক হলোনা আদৃত, এমনিতেই তার মনে হচ্ছিল ইশা আসলে আসতেও পারে।
ইশা মাত্রই এসেছিল,আদৃত কে ঘুড়তে দেখে সে কয়েক সেকেন্ড একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর কিছুটা সামনে এগিয়ে বললো,
_আপনি তো বলেছিলেন যাবেন না,তাহলে গেলেন কেনো?
_তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?
গা ছাড়া ভাব নিয়ে কথাটা বললো আদৃত। ইশাও এবার কিছুটা ভাব দেখিয়ে বললো,
_দেখেছেন ইশার কথার কত্ত ইফেক্ট!
আদৃত তাচ্ছিল্যের সুলভ হেসে বললো,
_ওহ হ্যালো, আমি তোমার কথায় গিয়েছি এমনটা ভাবার কোনো কারণ যেই। আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই গিয়েছি দ্যাটস ইট।
ইশা পাশ ফিরে সামান্য ভেংচি কেটে বিরবির করে বললো,
_আপনি যে জীবনেও স্বিকার করবেন না এটা জানা আছে আমার।
_এই,কি বললে?
_ক ক কই? কিছু বলিনি তো। কিন্তু আপনার পারমিশন থাকলে,একটা কথা বলবো?
_সব কথা তো পারমিশন না নিয়েই বলছো।
_তাও অবশ্য ঠিক। কিন্তু কথাটা হচ্ছে গিয়ে, আপনি কাকে দেখে ওভাবে রেগে চলে এসেছিলেন?
_আগেই বলেছি,তোমার এতসব জানার দরকার নেই।
_আপনার আম্মুর সঙ্গে কখনো যদি দেখা হতো,আমি সত্যিই জিজ্ঞেস করতাম জন্মের পর আপনার মুখে মধু দেয়নি কেন? আপনার সঙ্গে তো ভালোভাবে কথাই বলা যায় না,যাই বলিনা কেন তাতেই প্রবলেম।
ইশার কথা শুনে আদৃত আবারো তাচ্ছিল্যের সুরে সামান্য হাসলো। ইশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আপনি হাসছেন? পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি?
ইশার কথায় হাসি সরিয়ে নিলো আদৃত। তবে পরমুহূর্তেই অনাকাঙ্ক্ষিত একটি প্রশ্ন করে বসলো,
_তুমি নিজেও তো পালিয়ে যাচ্ছিলে ঐ ছেলেটাকে দেখে।
আদৃত এর প্রশ্নে ইশার মনে পড়লো কিছুক্ষন আগের কথা। নিরবকে কলেজে আসতে দেখেই সে বন্ধুদের থেকে অন্যদিকে চলে গিয়েছিল,আদৃত সেটাও দেখে ফেলেছে!
_আমি কারোর থেকে পালিয়ে যাইনি।
আদৃত কোন ধরণের কথা বলছে তা ওর মাথাতেই নেই। বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আবারো বললো,
_তাহলে? উবে গেল তোমার সো কলড ভালোবাসা?
ইশা আদৃতের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
_সেটা কি বলেছি আমি?
_তা না হলে ওকে দেখে অন্যদিকে চলে গেলে কেন?
_জানিনা.. আর আপনি আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনি তো অনেক বড় আমার থেকে,তাই আপনার তো এসব বিষয় আরো ভালো জানার কথা।
_কিভাবে?
_কেন? কখনো ভালোবাসেন নি কাউকে?
ইশার প্রশ্নে যেন বাস্তবে ফিরে এলো আদৃত। মনের অজান্তেই কিসব জিজ্ঞেস করছিল! বিভ্রান্তি প্রকাশ না করে আদৃত ছোট করে উত্তর দেয়,
_জানিনা..
_জানেন না মানে? এটা কোনো উত্তর হলো? ভালোবাসতে গেলে না কনফিডেন্স লাগে। আমি কিন্তু ভীষণ কনফিডেন্স ছিলাম শুধু বলতে পারিনি।
আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। ইশা তার দিকে তাকিয়ে বললো,
_সময় থাকতে না বললে আপনিও আমার মতো তাকে হারিয়ে ফেলবেন। একটা সাজেশন দেই,কাউকে ভালোবাসলে সরাসরি গিয়ে বলে দিয়েন,নাহলে পরে পস্তাবেন।
কথাটা বলে একটু পিছনে তাকাতেই দেখলো ফাইজা মাঠের বিভিন্ন জায়গায় তাকে খুজছে। ইশা আদৃতের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
_আপু আমাকে খুজছে, আমি গেলাম। আর হ্যা,আসার জন্য থ্যাংক ইউ নট।
চলে গেলো ইশা,আর আদৃত একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। ধীরেধীরে যেন নিজের অনুভূতিগুলোর মানে বুঝতে পারছে সে। নিজের মনে পুষে রাখা সব প্রশ্নের উত্তরগুলো পাচ্ছে আদৃত। আর তারই সঙ্গে ইশার বলা শেষ কথাগুলো ভেবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে তার। সত্যিই কি তাই? সময় পেড়িয়ে গেলে পস্তাতে হবে!
_____
ফাইজা আর ইশা কলেজ থেকে বেড় হতে যাবে তখন ই সায়ান তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ইশার উদ্দেশ্যে বলে,
_ইশা তুমি মোহনাকে দেখেছো? আসলে আমি অনেক্ষন ধরে খুজে চলেছি,কোথাও পাচ্ছি না। ফোন করলাম,ফোন টাও বন্ধ।
_না ভাইয়া আমি তো..
_হ্যা হ্যা আমি দেখেছি। এইতো কিছুক্ষন আগে,মোহনা বলছিল ওর শরীরটা ভালো লাগছে না তাই বাসায় চলে যাচ্ছে। ইশাকে খুজে পাচ্ছিল না তাই আমাকে বলে গেছে। আর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে হয়তো তাই ফোন ধরতে পারছেনা।
ফাইজার কথা শোনার পর আর এই নিয়ে মাথা ঘামালো না সায়ান। কিন্তু মোহনা তো কখনো এভাবে না বলে চলে যায়না, আরো আজকে সায়ান ওকে বলেছিল একটা জায়গায় ঘুড়তে নিয়ে যাবে। শরীর খারাপ লাগছিলো বলে না জানিয়ে চলে গেলো?
কিছুটা চিন্তা হচ্ছে সায়ান এর। তবে সেটা প্রকাশ না করে ‘আচ্ছা’ বলে চলে গেলো সেখান থেকে। সায়ান চলে যেতেই ফাইজা ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_উনি বোধহয় মোহনা কে আসলেই ভালোবাসে রে ইশা। দেখলি না, মেহু চলে গেছে শুনে মুখটা কেমন কালো হয়ে গেলো?
_আমারো তাই মনে হচ্ছে। কি জানি, যদি তেমনটা হয় তাহলে তো ভালোই। মানুষটা ভালোই আছে, মিস্টার করলা যে এমন বন্ধু কি করে পেলো সেটাই বুঝতে পারি না।
_এই মিস্টার করলা টা কে রে?
_কেন? ঐযে মিস্টার আদৃত, ওনার সাথে এই নামটাই মানায়। কিন্তু ওনার এই দুজন বন্ধু বেশ ভালো, সায়ান ভাইয়া তো বেশ হাসিখুশি।
_আর আরেকজন?
_আর ঐযে পূর্ণ ভাইয়া,তিনিও ভালোই আছেন। কত সুন্দর করে কথা বলে, কি দেখে যে তারা এমন একজন বন্ধু বানিয়েছে?
পূর্ণর কথা শুনে মনে মনে হাসলো ফাইজা। সত্যিই পূর্ণ অনেক সুন্দর করে কথা বলে, পরিস্থিতির সঙ্গে ভালো করে মানিয়ে নিয়ে কথা বলতে পারে, যা তার বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়।
_কোথায় হারিয়ে গেলে আপু? মেহু নাকি চলে গেছে, তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন? বাসায় যাবে না?
_হুম,হ্যা চল।
_____
দুপুর গড়িয়ে রাত হয়েছে,তবে মোহনা সেই যে কলেজ থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেছে তার আর বের হওয়ার কোনো নামগন্ধ ও নেই। দুপুরে কিছু না খেয়েই ঘরে চলে এসেছে। সন্ধ্যা তার মা এসে অনেক্ষন ডেকেছে,মোহনা তবুও ঘর থেকে বেড় হয়নি।
রাতে খাবার সময় হতেই মোহনার বাবা এসে দড়জায় নক করতে লাগলেন।
_মোহনা? মা কি হয়েছে তোর? দুপুরেও নাকি কিছু খাসনি? এতক্ষন তো তুই না খেয়ে থাকতে পারিস না মা, এবার তো শরীর খারাপ করবে।
এর আগে তার মা ও এসে রাতে খাবারের জন্য ডেকে গিয়েছেন। এখন আবার বাবাও এসে খাওয়ার কথা বলতেই মোহনার মেজাজ টা বিগড়ে যায়। রুমের ভিতর থেকেই রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে,
_সমস্যা কি তোমাদের? কখন থেকে খেয়ে নে খেয়ে নে কি শুরু করেছো এসব? একদিন না খেলে তোমার মেয়ে মরে যাবেনা। খাবোনা আমি,কিচ্ছু খাবোনা। চলে যাও তোমরা এখান থেকে।
#চলবে
[রিচেক করা হয়নি,ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
হ্যাপি রিডিং।]