তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৩২ #মেহরিন_রিম

0
222

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩২
#মেহরিন_রিম
দ্বিতীয় ক্লাস করার কথা থাকলেও মোহনার আর আজকে কলেজে যেতে ইচ্ছে করেনি। সায়ান কে বলেছে আজকে সে ঘুড়তে যাবে। সায়ানও আর মানা করেনি, এই কদিনে মোহনার সঙ্গে কথা না বলতে পারায় সে নিজেও অস্থির হয়্ব উঠেছিল। তাই আজ তাড়া ঘুরবে ফিরবে মজা করবে। মোহনার একটু চিন্তা হচ্ছিল,যদি পরিবারের কেউ দেখে ফেলে? পড়ে ভাবলো তার বাবা অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছেন,আর মা বাসা ফাকা রেখে কোথাও বের হবেনা। তাই চিন্তার তেমন কোনো কারণ নেই।
অত:পর যেই ভাবা সেই কাজ,দুজনে মিলে কলেজ শেষ হওয়ার সময় পর্যন্ত ঘুরবে।

ইশা মোহনারকে ইচ্ছে করেই বলেছিল সে আজ কলেজে যাবেনা। তবে এমন কিছুই নয়, ইশা দিব্যি সুস্থ এবং নাচতে নাচতে কলেজে এসেছে। রাতে অনেক চিন্তা ভাবনার পড়ে সায়ান কে ফোন দেওয়ার চিন্তা করেছিল ইশা। কিন্তু সায়ান এর নম্বর না থাকায় বহু কষ্টে আদৃত এর নম্বর খুজে বের করে তাকে কল দেয়,আর তার কাছ থেকে সায়ান এর নম্বর কালেক্ট করে।
সায়ানের সাথে কথা বলার পর ইশা বুঝতে পারে তার ধারণাই ঠিক ছিলো। মোহনা পুড়ো কথা না শুনেই সায়ান কে ভুল বুঝেছে। তখন ই ইশা প্ল্যান করে আজকে মোহনাকে একা একা কলেজে পাঠাবে,আর তখনই সায়ান এসে ওকে নিয়ে গিয়ে সব সত্যিটা খুলে বলবে।

একদিক থেকে খুশি হলেও একা একা ক্লাস করতে মোটেই ভালো লাগছে না ইশার। সে যথেষ্ট মিশুক হলেও মোহনা ছাড়া কারোর সাথেই খুব বেশি কথা বলেনা। ক্লাসমেট হিসেবে যতটা বলার ততটাই বলে, আর কলেজে তো আগের ফ্রেন্ডদের ও পাচ্ছেনা। তাই পুড়ো ক্লাস চুপচাপ বসে ক্লাস করতে হয়েছে ইশাকে।

ছুটির পরও ভালো লাগছে না ইশার,আজকে আর কোনো ব্যাচ নেই। তাই এখান থেকেই বাসায় যাবে,মোহনা যেহেতু আসেনি তাই তাকে একা একাই যেতে হবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইশা। কলেজের বাইরে বের হতেই বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো আদৃত কে। ইশা ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
_এই লোকের কি কোনো কাজ নেই?

_তোমার চেয়ে বেশি কাজ আছে আমার।

ইশা পাশ ফিরতেই দেখতে পেলো আদৃত বুকে হাত গুজে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এত আস্তে বললো কথাটা তাও আদৃত শুনে ফেললো! আর উনি তো এখন ই বাইকের পাশে ছিলো,এখানে এলো কি করে?
হা করে তাকিয়ে এসব ভাবতে লাগলো ইশা। আদৃত মনে মনে হেসে ইশার মুখের সামনে তুড়ি বাজাতেই তার চিন্তা ভঙ্গ হলো। সঙ্গে সঙ্গে ইশা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।

আদৃত চোখে থাকা সানগ্লাস টা খুলে বললো,
_এবার বলো, রাত বারোটার সময় আমার ঘুম নষ্ট করলে কেন?

ইশা কপাল কুঁচকে বলে,
_এই যুগে রাগ বারোটার সময় কোন ব্যাক্তি ঘুমায়?

_সায়ান এর নম্বর নিয়েছিলে কেন?

_আপনার বন্ধুকেই জিজ্ঞেস করে নেবেন।

কথাটা বলেই পায়ের কদম ফেলে সামনে এগোতে থাকে ইশা। আদৃত তার সঙ্গে যেতে যেতে বলে,
_তোমার কি মনে হয় আমি না জেনে এসেছি?

_সব জানতে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?

_ঘটকালি করা আবার কবে থেকে শুরু করলে তুমি?

ইশা হাঁটা থামিয়ে আদৃতের দিকে তাকিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
_ঘটকালি কোথায় করলাম আমি?

_এইযে মিলিয়ে দিলে দুজনকে,ঘটকালি ই তো করলে।

_মোটেই না। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে, একটা ভুল ধারণার জন্য ওরা আলাদা হয়ে যাবে এটা তো হতে পারেনা তাইনা!

_তুমি এতো সিওর হচ্ছো কি করে যে ওরা আসলেই একে অপরকে ভালোবাসে?

_মোহনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,তাই ওর দিকটা তো আমি বুঝতে পারবোই। আর সায়ান ভাইয়াকে দেখেও আমার তেমনটাই মনে হয়েছে।

_দেখেই বুঝে গেলে ও মোহনাকে ভালোবাসে?

_এগুলো বোঝা যায়,কিন্তু আপনি বুঝবেন না।

মুখ ঘুরিয়ে মুচকি হাসলো আদৃত। তার হাসি দেখে ইশা সন্দিহান চোখে তাকালো। আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন ই তার পিছন থেকে একটা ছেলে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
_ইশা না?

ইশা ঘাড় বাঁকিয়ে আদৃত এর পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো সেখানে হাস্যজ্জল মুখে দাঁড়িয়ে আছে রিফাত। ইশা তাকে দেখে অবাক হয়ে তাকালো। আদৃত ও ইশার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো রিফাতের দিকে। রিফাত এতক্ষনে ইশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
_কিরে? চিনতে পারিসনি আমাকে?

ইশা এবার হেসে বলে,
_আরে কি বলো! চিনবোনা কেনো? কিন্তু তুমি না ক্যানাডা ছিলে,দেশে কবে আসলে?

_এসেছি দুদিন হলো, আমার কাজিন এই কলেজেই পড়ে। ওকেই নিতে এসেছিলাম, কিন্তু তোর সাথেও দেখা হয়ে গেলো। কেমন আছিস বল..

_আমি তো অলওয়েজ ভালোই থাকি ভাইয়া।

_বাসায় আসিস না কেনো? আগে তো আমাদের বাসায় এসেই বসে থাকতি।

_সময় হয়না আসলে,পড়াশোনা নিয়্র একটু ব্যাস্ত থাকি তো তাই।

আদৃত বিস্ফোরিত চোখে ইশার দিকে তাকালো, এই মেয়ে কিনা পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে! এটাও বিশ্বাস করতে হবে? ইশা একবার আড়চোখে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। রিফাত এখনো আদৃত কে তেমনভাবে খেয়াল ই করেনি। রিফাত তার হাসি চওড়া করে বলল,
_আমিতো তোকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারিনি, কত বড় হয়ে গেছিস। তবে হ্যা,এখন কিন্তু তুই আগের চেয়েও বেশি সুন্দর হয়ে গেছিস।

_আগে অসুন্দর ছিলাম বুঝি?

_তা কখন বললাম,তুইতো ছোট থেকেই অনেক কিউট।

ইশা নিজের বিনুনি ঝাপটা মেড়ে ভাব নিয়ে বললো,
_আই নো আই এম সো কিউট..

আদৃত ছোটছোট চোখে রিফাত এর দিকে তাকিয়ে আছে, তার কথাবার্তা আদৃত এর কাছে কেমন যেনো অসহ্য লাগছে। এত প্রশংসা করার কি আছে আজব!

রিফাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
_ছুটি হয়ে গেছে তাইনা? আচ্ছা আমি যাই হ্যা, বাসায় আসিস কিন্তু।

_তুমিও এসো,আম্মু খুশি হবে।

রিফাত বিরবির করে বললো,
_মনে হচ্ছে যেতেই হবে।

_কিছু বললে?

_নাহ তো,আচ্ছা যাবো।

রিফাত ইশার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে চলে গেলো কলেজের ভিতরে। রিফাত এর বলা কথাটা ইশার কর্ণগোচর না হলেও আদৃত তা স্পষ্টভাবেই শুনতে পেরেছে। রিফাত চলে যেতেই আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_কে ও?

_আমাদের প্রতিবেশী,ভাইয়া অনেকদিন পর ক্যানাডা থেকে ফিরেছে। ওয়েট,আপনি জিজ্ঞেস করছেন কেন?

আদৃত কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই ইশা কথা ঘুরিয়ে বললো,
_আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন এখানে?

_রাস্তাটা তোমার কেনা নয়।

ইশা মুখ ফুলিয়ে বললো,
_আচ্ছা থাকুন আপনি এখানে দাঁড়িয়ে।

কথাটা বলেই ইশা ভেঙচি কেটে চলে গেলো সেখান থেকে। আদৃত মাথা চেপে ধরে বিরক্তিসূচক ‘চ’ উচ্চারণ করলো। বেশ ভালো মেজাজে এসেছিল, আর এখন মেজাজ টা একদমই বিগড়ে গেলো। আর দাঁড়িয়ে রইলো না আদৃত, বাইকে উঠে নিজের ফ্লাটে চলে এলো।

____
অনেকদিন পড়ে কাজ থেকে একটু ছুটি পেয়েছে পূর্ণ। নিজের ফ্লাটে বসে সেদিনের সেই বইটা উল্টেপাল্টে দেখছে সে,তবে পড়াটা ঠিক হয়ে উঠছে না।
ফোনটা বেজে উঠতে পাশ ফিরে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায় পুর্ন। আননোন নম্বর দেখে কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থেকে ফোনটা রিসিভ করলো সে।
অপর পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো,
_হ্যালো..

_জি কে বলছেন?

_আমি.. ফাইজা।

পূর্ণ ফোনটা আবার সামনে এনে চেক করলো। না এটাতো ফাইজার নম্বর নয়। পূর্ন ফোনটা কানে ধরতেই ফাইজা বললো,
_এটা আগের নম্বর নয়,নতুন নম্বর। ভাবলাম আগের নম্বর ব্লক করে রেখেছো কিনা।

_কোনো দরকার?

ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_ঐ বইটা দিতে পারবে আমাকে? অনেক খুজেছি,কিন্তু পাইনি কোথাও।

_কোথা থেকে নেবে বলো।

_তুমি বলো,আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। কখন ফ্রি টাইম পাবে..

_আজকে আমি ফ্রি ই আছি। আমি লোকেশন সেন্ড করে দেবো,বিকেলে চলে এসো সেই জায়গায়। এমনিতে আমারো তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে।

_ঠিক আছে।

ফোনটা কেটে দিলো ফাইজা। পুর্ন বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফাইজার সঙ্গে কথা বলাটা আসলেই প্রয়োজন,ভীষণ প্রয়োজন।

#চলবে

[রিচেক করা হয়েনি,ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here