#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“আপনি কি এই দাওয়াতটাও রাখবেন না ডাক্তার?”
শেখ শাহনাওয়াজ এর কথায় মেহবিন মুচকি হাসলো আর বলল,,
“যদি না রাখি তো?’
‘এবার তো কোন অসুবিধা নেই।”
‘আমি যদি যাই তাহলে এবার আপনার অসুবিধা হবে না তো চেয়ারম্যান সাহেব?”
মেহবিনের হুট করে করা প্রশ্নটায় শেখ শাহনাওয়াজ থমকে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন মেহবিন কি ইঙ্গিত করেছে তাই উনি বললেন,,
“আপনি দাওয়াতটা গ্ৰহন করলে খুশি হব আমি। কিছু খান আর না খান আপনি উপস্থিত থাকুন এটাই চাইছি।”
“দাওয়াতে যদি যাই না খেয়ে বাড়ি আসতে বলেন নাকি। দাওয়াত রক্ষা করে মানুষ খাওয়ার জন্য আর আপনি আমাকে না খেয়েই আসতে বলছেন।”
একথায় শেখ শাহনাওয়াজ একটু লজ্জিত হলেন তবুও তিনি বললেন,,
‘না আপনি তো খান না যদি এই কারনে দাওয়াত না রাখেন তাই আর কি?”
‘এইবার যাবো।’
কথাটা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,
‘শুকরিয়া দাওয়াতটা গ্ৰহন করার জন্য। এইবার আমি আসি।’
বলেই তিনি ঘুরে হাঁটবেন এমন সময় মেহবিন বলল,,
‘শেখ বাড়ির পুরোনো অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছি আমি চেয়ারম্যান সাহেব।”
হুট করে মেহবিনের এমন কথায় তার পা থেমে গেল। তিনি ঘুরে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
‘মানে কি বুঝাতে চাইছেন?”
‘আপনার ছেলের ভবিষ্যত আমি আপনার মতো দেখতে পাচ্ছি।”
‘মানে ?”
‘কিছু না তবে এটা বলতে পারি আপনারা শেখ পরিবারের পুরুষ গুলো খুব স্বার্থপর। কে জানে ভবিষ্যতে আপনার স্বার্থপরতার জন্য আপনিই আপনার অতীত ছেলের মাধ্যমে আবার পুনরাবৃত্তি করলেন।”
“আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ডাক্তার।”
“কিছু না আপনি বাড়ি যান ছেলের এঙ্গেজমেন্ট এর প্রস্তুতি নিন। হাজার হোক সাবেক চেয়ারম্যান শেখ শাহেনশাহ এর একমাত্র নাতি এবং চেয়ারম্যান শেখ শাহনাওয়াজ এর একমাত্র ছেলের এঙ্গেজমেন্ট বলে কথা কিছু ধামাকা তো হতেই হবে। তাছাড়া আপনারা উচ্চ বংশীয় লোক আপনাদের মর্যাদা কতো ওপরে সবাইকে দেখাতে হবে না। আমার কথা ভাববেন না আমি ঠিক সময় পৌঁছে যাবো।”
বলেই মেহবিন ঘরের ভেতর ঢুকে পরলো। শেখ শাহনাওয়াজ কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেলেন। আরবাজের এঙ্গেজমেন্ট এর সাতদিন বাকি আজ সকালে এসেছিলেন মেহবিন কে দাওয়াত দিতে। প্রতিবারের মতো এবার আর মেহবিন না করেনি সে রেখেছে তার দাওয়াত।
__________________
“আসসালামু আলাইকুম!’
‘ওয়ালাইকুমুস সালাম!”
‘তুমি কি যাবে আরবাজের এঙ্গেজমেন্ট এর অনুষ্ঠানে?”
‘না যাওয়ার তো কারন দেখছি না।”
‘আমাদের ফ্যামিলির সবাই কিন্তু থাকবে।”
‘তো আমি কি ভয় পাই নাকি কাউকে দেখে নাকি আপনাদের জন্য আমার আলাদা কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। মাইশা আপুর পার্টিতে যেমন ছিলাম তেমনটাই যাবো। আমি শুধু ভাবছি আপনার দাদিজান কি রিয়াক্ট করবে?”
মেহবিনের কথায় মুখর হেঁসে উঠলো আর বলল,,
‘চেহারাটা এক্কেরে চাঁদের মতো উজ্জ্বল হইয়া যাইবো।”
‘ফাজলামি বন্ধ করেন কাব্য।”
“আমি আবার কি করলাম?”
‘কিছু না রাখছি।”
‘আরে দাঁড়াও রাখো কেন? সেদিন কিন্তু তুমি শুভ্র রঙের গাউন পরবে।”
“আমি আনিনি কোন গাউন এখানে।”
‘সমস্যা নেই আজকেই তোমার গাউন পৌঁছে যাবে।”
‘মানে আপনি অর্ডার করেছিলেন নাকি?”
‘না আমি নিজ হাতে কিনেছি তোমার জন্য শুভ্র গাউন সোনালী রঙের হিজাব আর শুভ্র রঙের নিকাব। আর আমার জন্য সাদা রঙের পাঞ্জাবি ওপরে সোনালী রঙের কোটি।”
মুখরের বাচ্চামো দেখে মেহবিন হাসলো এই লোকটাও না সবসময় ম্যাচিং করে জামাকাপড় পরতে চায়। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
‘আপনি কি টিনেজার নাকি যে টিনেজারদের মতো ম্যাচিং ড্রেস পরতে চাইছেন।”
“উঁহু টিনেজার হতে যাবো কেন? এটাও অদ্ভুত একটা শখ বলতে পারো। শুধু আমার না বেশি সংখ্যক কাপলদের দেখবে এরা ম্যাচিং করে ড্রেস পরতে চায় কিন্তু অনেকে মুখ ফুটে বলে না। কিছু সংখ্যক বলে আমার মতো।”
“হুম বুঝলাম।”
‘কি?”
‘এই যে কাপলরা ম্যাচিং করে ড্রেস পরতে চায়। কিন্তু আমরা তো এখানে কাপল হয়ে যাচ্ছি না।”
‘তো কি হয়েছে আমরা কাপল তো সবার সামনে হই আর আড়ালে।”
“আচ্ছা বেশ পরবো হ্যাপি।”
‘আমি হ্যাপি না তো খুশি।”
“এতো ফাউ কথা পান কোথায়?”
‘তোমার কাছে আসলেই কেন যেন এইগুলো কোথা থেকে আসে।”
‘হয়েছে রাখছি এখন নেত্রীকে পড়াচ্ছি আমি।”
‘নেত্রীর কাছে দাও তো একটু।”
মেহবিন তাজেলের কাছে ফোন দিল। তাজেল সালাম দিল ,,
‘আসসালামু আলাইকুম পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। তা নেত্রী তোমার দেশের কি অবস্থা সবকিছু ঠিক ঠাক আছে তো?”
‘আর অবস্থা ধুরু এই পড়াশোনারে কেরা বানাইছিল তারে সামনে পাইলে মনে হয় আমি কিছু করতাম।”
তাজেলের কথায় মেহবিন ওর দিকে তাকালো আর মুখর হাসলো। তখন মেহবিন বলল,,
“নেত্রী তার মানে সত্যিই তোমার পড়াশোনা ভালো লাগে না। আর তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলে পড়াশোনা শুরু করছো।”
তাজেল জ্বিভ কেটে দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“আরে না আমি তো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালার সাথে মজা করতে ছিলাম। আর পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি আমার পড়ার সময় ফোন দিবা না। তোমার জন্য আমি ফ্যাসাদে পইরা যাই শান্তিতে মজাও করতে পারি না।”
এ কথা শুনে মুখর হাসলো মেহবিন ও বুঝতে পারল তার নেত্রী কথা কাটাচ্ছে। মুখর বলল,,
“তা হুট করে পড়াশোনা নেত্রীর এতো কঠিন কেন লাগছে?”
“আর কইয়ো না ছোট হাতের b লেখবার যাইয়া হয় d … আর d হইয়া যায় b আবার p খালি q হইয়া যায় আর q খালি p হইয়া যায়। এইডা ঠিক হইতেছেই না এই জন্য ডাক্তার আমারে এই গুলা বিশবার কইরা লেখবার দিছে।”
সব শুনে মুখর হাসলো মেহবিন ও হাসলো বেচারির দুঃখের কথা শুনে মেহবিন আর মুখরের হাঁসি পাচ্ছে। মুখর বলল,,
“আরে এই ব্যাপার ছোটবেলায় আমারও এরকম কতো হতো এটা ব্যাপার না। তুমি এক কথা শুনো যখন তোমাকে বি লিখতে বলবে তখন তুমি মনে মনে ডি ভাববা তারপর লিখে দিবা দেখবে বি হয়ে গেছে এই ভাবেই ঠিক হয়ে যাবে।”
“এই যে বিদ্যাধর মুখর শাহরিয়ার বাচ্চাকে ভালোভাবে না শেখাতে পারলে শেখাবেন না তবুও ফাউল শেখাবেন না। এখানে বি লিখতে বললে ডি ভাবতে বললেন এমনটা ভাবতে ভাবতে একদিন নেত্রী পরবেও বি কে ডি তখন কি করবেন। এতে আরো ঝামেলা হবে আসছে পড়াইতে।”
“আরে এটা তো আমি ভেবেই দেখিনি।”
“আপনি ভবিষ্যৎ ভাবেন কখন ? বর্তমান নিয়েই অলওয়েজ লাফালাফি করেন।”
“তুমি কি কোন ভাবে আমাকে খোঁচা মারছো?’
“না এখন ফোন রাখেন আমাদের ডিসটার্ভ হচ্ছে।”
“নেত্রীকে পড়াচ্ছো বলে কিছু বললাম না নাহলে,,
“নাহলেও কিছু করতে পারতেন না। আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই মেহবিন ফোন কেটে দিল। এদিকে ওদের দুজনের ভাব দেখে তাজেল হাসলে। তাজেল বলল,,
‘পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তো ভালো বুদ্ধিই দিছিলো।”
“হ মেলা ভালো বুদ্ধি দিছিল যাতে তুমি ভুল পড়। হুম অনেক হইছে কথাবার্তা এখন লেখ।”
“এইবার ভুল হইলে আমার দোষ নাই কিন্তু কইয়া দিলাম।”
“আজ সবগুলো ঠিক না করে কোথাও যেতে পারবা না।”
“আমার স্কুল আছে তো তোমারও হাসপাতাল আছে। কাইলক্যা বাড়ি থেইকা আনমুনি এহন আসি।”
মেহবিন তাজেলের হাত ধরে বলল,,
“না নেত্রী আজ থেকেই সব শেষ করবে।’
“আমারে ছাইড়া দেও ডাক্তার আইজক্যা। আমি আর পরুম না আইজক্যা।”
“না আজ পরতেই হবে সবসময় ব্যাগ নিয়ে পালালে হবে।”
“আজকের মতো মাফ করো ডাক্তার আবার কাইল আসমুনি।”
“মাফ করলাম না।”
“আমার সোনা ডাক্তার ওমবা কইরো না আইজ আমি আর পরুম না। আমার ভাললাগতাছে না।”
কথাটা শুনে মেহবিনের কেন যেন খুব হাঁসি পেল। ও বুঝতে পারল তাজেল আজ বি ডি নিয়ে খুবই বিরক্ত। তাই ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,,
“ওকে আজ ছেড়ে দিলাম কাল ঠিক না হলে স্কুলে যেতে দেব না।”
তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“তোমারে সোনা ডাক্তার কইলাম দেইহা ছাইড়া দিলা
কাইল আইসাই সোনা ডাক্তার কমু। তাইলে আর ধরবা না।
বলেই তাজেল এক দৌড়। তাজেলের কান্ডে মেহবিন হাসলো। এই মেয়েটাও না।
_______________
অতঃপর আজ শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ এবং নাফিয়া মাহফুজ শাহরিয়ার এর এঙ্গেজমেন্ট। রাত আটটায় তাদের আংটিবদল হবে। মেহবিন কে বিকেলেই মিশু গিয়ে নিয়ে এসেছে। সন্ধ্যা গড়ালো একটু আগেই এখনো শাহরিয়ার পরিবার এসে পৌঁছায় নি। তবে জিনিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে পরেছে অর্থ্যাৎ আহমেদ পরিবার আজ শিলার হাজবেন্ড ও বাদ যায় নি। সবাই এসেছে হয়তো মেহবিন কে দেখতে। মেহবিন মিশুর হিজাব বেঁধে দিচ্ছে। মিশুও একটা হালকা গোলাপি রঙের গাউন পরেছে আর শুভ্র রঙের হিজাব। ওর সবকিছু শেষ হলে মিশু বলল,,
“এই ফুল আজ আমি তোকে হিজাব বেঁধে সাজিয়ে দিই।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“ঠিক আছে।”
অতঃপর মিশু মেহবিন কে সুন্দর করে শুভ্র রঙের গাউনের সাথে সোনালী রঙের হিজাব বেঁধে দিল হালকা সাজিয়েও দিল। কিন্তু নিকাব দিল না তা দেখে মেহবিন বলল,,
“নিকাব কেন দিলে না?”
“এমনিই এখন নিচে চল সবাই এসে পরেছে।”
“ফুল এটা কিন্তু ঠিক না।”
“আর একটা কথা বললে আমি কিন্তু নিচে যাবো না।”
“এই তোমার অহেতুক অধিকার খাটানো কিন্তু আমার পছন্দ নয়।”
“অধিকার আর খাটাতে পারলাম কই তার আগেই তো।”
মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“হুম চলো এখন নিচে যাই।”
“এই এঙ্গেজমেন্ট এ কিন্তু আমার মামাবাড়ি থেকেও লোক আসবে।”
“জানি আমি।”
বলেই মেহবিন হাঁটা ধরলো তা দেখে মিশুও দৌড়ে মেহবিনের হাত ধরলো। মেহবিন আর মিশুকে একইরকম অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। দুজনে হেঁসে কথা বলতে বলতে আর সিঁড়ি দিয়ে নামছে সবার নজর যেন ওদের দিকেই। ওদের একসাথে দেখে দুই জন মানুষের চোখ ছলছল করে উঠলো। তারা মাশাআল্লাহ বলল। এদিকে মেহবিন কে এখানে এভাবে দেখে শাহরিয়ার পরিবার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একটু আগেই তারা এসেছে। মেহবিন তাদের দেখেও ইগনোর করে মিশুর হাত ধরে অন্য জায়গায় চলে গেল। মিশু সোজা গিয়ে মুখরের সামনে দাঁড়ালো। মুখর আগে থাকতেই হেঁসে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মেহবিনের চোখ পরতেই ও হাত দিয়ে মাথা উঁচু করলো তা দেখে মেহবিন হাসলো। মিশু বলল,,
‘পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি দেখো তো আমাদের কেমন লাগছে?”
মুখর হেঁসে বলল,,
“মাশাআল্লাহ দুইজনকেই অনেক সুন্দর লাগছে।”
“আমার থেকেও ফুলকে বেশি সুন্দর লাগছে তাই না।”
“সত্যি বলবো মিশু তোমার ফুলের থেকে তোমাকেই বেশি সুন্দর লাগছে।”
“আরে তুমি তো আমার দিকে তাকাচ্ছোই না তুমি দেখলে কিভাবে আমাকে বেশি সুন্দর লাগছে?”
এ কথা শুনে মুখর ভরকে গেল ও তাড়াতাড়ি করে মেহবিনের থেকে নজর সরালো তা দেখে মেহবিন হাসলো। মেহবিন বলল,,
“তোমার বাজপাখির বউয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেবে না।”
“হ্যা দেব তো।”
মিশু হেঁসে নাফিয়ার সামনে গিয়ে বলল,,
“এই যে ফুল ও হলো বাজপাখির বউ টুনিপাখি।”
মিশুর মুখে টুনি পাখি শুনে নাফিয়া ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। আর যারা শুনেছে মিশুর কথা শুনেছে সবাই অবাক হয়ে গেল। তখন আরবাজ এসে বলল,,
“এই মিশু তুই এটা কি বললি?”
“কি বললাম আমি তো বললাম ও বাজপাখির বউ টুনি পাখি। আরে তোমায় আমি বাজপাখি বলি এখন তোমার বউকেও তো কোন পাখি বলতে হবে। তোমার বউতো টুনি পাখির মতো এইটুকুনি আর কতো কিউট তাই আমি ওর নাম দিয়েছি টুনিপাখি। ফুল সুন্দর লাগছে না নামটা।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“হুম অনেক সুন্দর লাগছে। দারুন জুটি বাজপাখি আর টুনিপাখি।”
মেহবিনের কথায় নাফিয়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তা দেখে মেহবিন ফিস ফিস করে নাফিয়ার কানে কানে বলল,,
“হইছে আপু আর লজ্জা পেতে হবে না। তবে ফুলের নাম সিলেক্ট কিন্তু দারুন।”
তখন মুনিয়া মাইক নিয়ে বলল,,
“অ্যাটেনশন এভ্রিওয়ান। আরবাজ ভাইয়া ও নাফিয়া আপু সরি ভাবির আংটিবদল অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। যাই হোক গান বাজনা হারাম এই জন্য এখানে কোন গানবাজনা হবে না তবে তাই বলে কি আমরা অনুষ্ঠানটা পানসে যেতে দেব নাকি। তাই আমরা ইয়াংস্টাররা অনুভুতি প্রকাশের জন্য ছোট্ট একটা ফাংশন রেখেছি। এখানে কিছু মানুষ কে ডাকা হবে তাদের সম্পর্কে বা তাদের কিছু অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করবে।”
সবাই স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল অনুষ্ঠানটি খুব বড়ও না আবার ছোটও না সব আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে। সবকিছু শেখ বাড়ির ড্রয়িংরুমেই করা হয়েছে। মুনিয়ার কথায় সবার আকর্ষণ ওর দিকেই । মুনিয়া প্রথমেই বলল,,
“তো এখন সবার আগে আমাদের সবার বড় দাদুভাই অরফে শেখ শাহেনশাহ কে দিয়েই শুরু করি। দাদুভাই এখানে চলে এসো।
শেখ শাহেনশাহ ওখানে গেল তখন মুনিয়া বলল,,
“তো দাদুভাই বলো তোমার কাছে সবথেকে প্রিয় কি ?”
শেখ শাহেনশাহ বললেন,,,
“আমার বংশের সম্মান ও তার গৌরব।”
কথাটা শুনে মেহবিনের হাঁসি পেল কেন যেন তবুও সে হাসলো না। তবে সে হাত তালি দিল সাথে মিশু ও দিল আর সবাই দিল তারপর তখন মেহবিন বলল,,
“মাশাআল্লাহ অনেক ভালো উত্তর সাবেক চেয়ারম্যান সাহেব। আপনার কথা শুনে মনে হলো আপনি আপনার বংশের সম্মান আর গৌরব ধরে রাখতে যে কোন কিছু পার করতে পারেন। কোন এক সময় আপনি তা করেছনও মনে হয়।”
মেহবিনের কথায় তিনি ওর দিকে তাকালেন। কিন্তু কিছু বললেন না। উনি নেমে এলেন দেখে কেউ কিছু বললো না তবে সবাই অবাক হয়েছে এই মেয়েটার কথায়। মুনিয়া মাইক নিয়ে বলল,,
“এরপর আসি জিনিয়া আপু তোমার কাছে। তো তুমি বলো নতুন বিয়ে হলে সবার প্রথমে মেয়েদের কি বদলায়?”
জিনিয়া মুচকি হেসে বলল,,
“অনেক বছরের পুরোনো অভ্যাস।”
এই ছোট্ট কথাটায় কি ছিল জানা নেই তবে কিছু একটা তো ছিল। মুনিয়া ওকে আর কিছু বললো না। এরপর মুনিয়া বলল,,
“মুখর ভাইয়া এবার তুমি। একটু হলেও তোমায় চিনি তো তাই।”
মুখর হেঁসে মুনিয়ার কাছে গেল মুনিয়া বলল,,
“তোমার কাছে সবথেকে সুন্দর মুহুর্ত কি?”
মুখর মুচকি হেসে বলল,,
“একজনের সাথে হাসিখুশিভাবে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত।”
মুখরের কথা শুনে ইয়াংস্টাররা সবাই হইহই করে উঠলো। মেহবিন মুচকি হাসলো মুখর যে তাকেই বলেছে এটা ও বুঝতে পারলো। তখন মুনিয়া বলল,,
“আর পূর্নতা?”
“সে তো অপেক্ষা!”
আর,,
“হয়েছে অলরেডি দু’টো করেছো সবাইকে একটা করে করেছো। ”
বলেই মুখর সরে এলো। এবার ডাক পড়লো আরবাজের । আরবাজ গেল তখন মুনিয়া বলল,,
“তোমার কাছে প্রাপ্তি কি?”
আরবাজ মুচকি হেঁসে বলল,,
“আপাতত নাফিয়া মাহফুজ শাহরিয়ার।”
ব্যস আর লাগে কি চারদিকেই বেশ হই হই পরে গেল। আর নাফিয়া বেচারি পরে গেল লজ্জায়। মেহবিন খুশি হলো সেই সাথে অন্যকিছুও মাথায় হানা দিল। তখন মিশু বলল,,
“এখন বন্ধু যাবে মুনি ?”
“ঠিক আছে মিশু আপু। মেহবিন আপু এখানে আসো।”
মেহবিন প্রথমে না যেতে চাইলেও মিশুর জন্য গেল। মেহবিন যেতেই সবাই ওর দিকে তাকালো কারন ও সবার কাছে এ যাবৎ ধাঁধা। তখন মুনিয়া বলল,,
“তো মেহবিন আপু তুমি এমন একটা মানুষ যাকে জানার জন্য সবার মনেই একটা কৌতুহল আছে। এবার কি তুমি তোমার সম্পর্কে কিছু বলবে?”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“আমার সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই।”
“তবেও বলো না আপু।”
মেহবিন আবার ও মুচকি হাসলো সবার দিকে তাকাতেই দেখলো সবাই উৎসুক জনতার মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথমে সে আছিয়া খাতুন এর দিকে তাকালো তারপর তার পরিবার। এরপর আরবাজ মিশু আর রাইফার দিকে। সবার শেষে শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
‘আমার সম্পর্কে যদি কিছু বলি তাহলে বলবো ‘
আমি একা আমার কেউ নেই কোনদিন ছিলোও না। সবাই এটা বলে অনুভবে কিন্তু আমি বলছি অভিমানে। কারন আমি এমন একজন মানুষ যার সাথে সম্পর্ক তো অনেক মানুষের আছে কিন্তু হাত ধরে কেউ জনসম্মুখে বলতে পারবে না তার সাথে আমার কি সম্পর্ক। উঁহু তার মানে এই নয় হয়তো অবৈধ সম্পর্ক আছে দেখে।না কোন অবৈধ সম্পর্ক নেই সব বৈধ সম্পর্ক। তবুও আমার ওপরেই যতো বাধ্যবাধকতা। সবশেষে যদি বলি তাহলে আমার কেউ নেই কোনদিন ছিলোও না।
কথাটা শুনে অনেকের চোখ ছলছল করে উঠলো। সেখানে থাকা নতুন মানুষগুলোরও। মুখরের ভেতরটা যেন জ্বলে যাচ্ছে সেই সাথে আরো কয়েকজনেরও। আছিয়া খাতুনের আজ বড় অনুশোচনা হচ্ছে। তিনি এগিয়ে যেতে নিলেন তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“সত্যিই কি কেউ নেই আপনার?”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“আছে একজন আমার নেত্রী তার নাম শেখ তাজেল। সেই একমাত্র ব্যক্তি যার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাকে সবসময় প্রশান্তিতে ভরিয়ে রাখে।”
“তাহলে একটু আগে যে বললেন?”
“এক মুহুর্তের জন্য এতো স্বার্থপর মানুষের মাঝে আমি তাকে ভুলে গিয়েছিলাম। ওগুলো কিছু স্বার্থপর মানুষের জন্য ছিল। কিন্তু দিনশেষে আমার নেত্রী আমার। আমার ভালোবাসা আমার হাসির অন্যতম প্রধান কারন।
বলেই মেহবিন ওখান থেকে নেমে দরজার দিকে গিয়ে দাঁড়ালো। মিশু ওর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল,,
“টেনে মারবো এক থাপ্পড় তুই আমার ফুল ।”
মেহবিন ওকে ছাড়িয়ে বলল,,
“তাহলে চলো স্টেজ এ গিয়ে আমার হাত ধরে বলো আমি তোমার কে হই? পাগল হলে বলতে পারতে কিন্তু সুস্থ দেখে কোথাও গিয়ে বাঁধলো তাই না। এই জন্য মাঝে মাঝে পাগলরাই ভালো তাই না ফুল।
মিশু একবার মেহবিনের দিকে তাকালো। আজ তার পাগল নিয়ে কোন সমস্যা নেই। মিশু আবার মাথা নিচু করে রইল তখন মেহবিন মুচকি হেঁসে মিশুর কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,
“সত্যি তো এটাই আমি মরহুম মেহেরুননিসা এর মেয়ে।আর মেহেরুননিসার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমার সব সম্পর্কের ইতি ঘটেছে। কালের বিবর্তনে আবার কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ হয়েছে তাই বলে এটা নয় পুরোনো সম্পর্ক একদম জুড়ে গেছে।’
মেহবিনের কথায় মিশুর চোখ ছল ছল করে উঠলো।ও বলে উঠলো,,
‘ফুল!”
“কি সত্যি বললাম তো।”
মিশু এবার কেঁদেই দিলো আর বলল,,
“তুই খুব খারাপ ফুল তুই খুব খারাপ।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“এই জন্যই তো আমায় তার সাথে কেউ রাখে না। যেমন আমার বাবা সেই কিন্তু আমাকে প্রথমে ছেড়েছিল।”
মিশুকে কাঁদতে দেখে সবাই উৎসুক জনতার মতো ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যেখানে মিশু কাঁদছে আর মেহবিন না থামিয়ে হাসছে। যেখানে কিনা ওর কাদা উচিত। অতঃপর মেহবিন এবার মিশুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,
“তবে এর মাঝে সব থেকে সত্যি কথা কি জানো যে তোমার ফুল তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”
কথাটা শুনে মিশুর আপনাআপনি কান্না থেমে হাঁসি ফুটে উঠল। ও হাঁসি মুখেই বলল,,
“আমিও তোকে খুব ভালোবাসি।”
‘হুম হুম এখন ভালোবাসা উতলে পরছে।”
মিশু এবার খিলখিল করে হাসতে লাগলো। এদিকে ওরা কি বলেছে দূরে দেখে কেউই শুনতে পায়নি। তবে যারা মেহবিন কে কাছ থেকে চেনে তারা সবাই ভাবছে মেয়েটা এমন কেন। মুহুর্তেই কাউকে কাঁদাতে পারে আবার মুহুর্তেই হাসি ফোটাতে পারে।
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। চলে এলাম সকাল সকাল আপনাদের জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে। আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। আর আজ আরেকটা পর্ব আসবে বিকালে অথবা সন্ধ্যায়।