#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩০
#মেহরিন_রিম
আজ দুদিন পড়ে কলেজ এ এসেছে মোহনা। এই দুদিনে সায়ান তাকে কত শত বার কল করেছে তার হিসেব নেই, কিন্তু একটা কল ও রিসিভ করেনি মোহনা। মোটা হওয়ার কারণে জীবনে অনেকের থেকে অনেক কথা শুনেছে সে, ছোট বেলায় কষ্ট পেলেও বড় হওয়ার পর আর এগুলো নিয়ে ভাবে নি,কারোর কথা কানেও নেয়নি। কিন্তু সায়ান তাকে নিয়ে এভাবে হাসছিলো,বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা মোহনা। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজের ওজন কমাবে, ফিট হয়ে দেখিয়ে দেবে সায়ান কে। এই লক্ষ্যে গত দুদিনে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করেনি, বাবা মা জিজ্ঞেস করলেও তাদের কোনো উত্তর দেয়নি।
কলেজে আসার ইচ্ছে না থাকলেও ইশা তাকে জোড় করে নিয়ে এসেছে। তবে মোহনা মনে মনে ভেবেই রেখেছে, সায়ান কোনোভাবে তার সামনে চলে এলে সে স্পষ্ট জানিয়ে দেবে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না রাখতে। সে থাকুক তার জিড়ো ফিগার এর মেয়েদের নিয়ে।
আজ এক পিরিয়ড আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়ায় সবাই মাঠে এসে আড্ডা দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ ক্লাসরুম এ বসে পড়ছে। ইশা আর মোহনার ব্যাচ থাকায় তাড়াও মাঠেই ঘোরাফেরা করছে, কিছুক্ষন পরে এখান থেকেই পড়তে চলে যাবে। ইশা তার অভ্যাস অনুযায়ী বকবক করছে, তবে মোহনা কলেজে আসার পড় থেকে প্রয়োজন ব্যাতীত একটা কথাও বলেনি। অন্যসময় ব্যাগে করে চিপস, চকলেট নিয়ে আসে,আর আজকে একবার পানিও খেতে দেখলোনা মোহনা কে। ইশা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে,কিন্তু মোহনা কোনো উত্তর ই দেয়নি।
একেতো গতকাল রাতে না খাওয়ার মতো করেই সামান্য কিছু খেয়েছিল,তার উপর সকালেও কিছু না খেয়ে কলেজে আসায় প্রচুর দূর্বল লাগছে মোহনার। শরীরে কোনো বল পাচ্ছে না,হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেতেই পাশে থাকা গাছে হাত রেখে নিজেকে সামলে নেয় মোহনা। ইশা দ্রুত তাকে গাছের নিচে বসিয়ে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বেড় করে তার দিকে এগিয়ে দেয়। মোহনা কাপাকাপা হাতে পানিটা নিয়ে খেতেই ইশা বেশ রেগে গিয়ে বলে,
_মেহু তুই যদি এখন না বলিস কি হয়েছে তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।
মোহনা পানির বোতলটা ইশার দিকে এগিয়ে দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো।
_মেহু এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
_আমি কি খুব বেশি মোটা ইশা?
ছলছল চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে মোহনা। ইশা অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। সে সবসময় মোহনাকে মোটা বলে খ্যাপায়, আর মোহনা রেগে যায় তাতে। তবে ইশা কখনো এই নিয়ে আফসোস করতে দেখেনি মোহনাকে। বরং নিজেই সবসময় বলে, “আমি তোদের সবার চেয়ে বেশি কিউট”। সেই মেয়ের মুখে এমন কথা আশা করেনি ইশা। নরম সুরে বলে,
_মেহু, কেউ কিছু বলেছে তোকে?
মোহনা এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা। ইশাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
_আমি মোটা বলে কি আমাকে একটুও ভালোবাসা যায়না ইশা?
ইশা মোহনাকে ছাড়িয়ে সামনে এনে বলে,
_কিসব বলছিস তুই? ওয়েট,সায়ান ভাইয়া কিছু বলেছে?
_আমিতো নিজে থেকে কারোর কাছে ভালোবাসা চাইনি ইশা, তাহলে কেন…
কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো মোহনার। ফোঁপাতে ফোঁপাতেই ইশার কাছে বললো সেদিনের কথা। ইশার এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো,তাই সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
_তুইতো ভুল ও ভাবতে পারিস তাইনা? হয়তো উনি অন্য কিছু নিয়ে হাসছিলেন!
_আমি কিচ্ছু ভুল ভাবিনি ইশা। উনি এতদিন ধরে শুধু আমার ইমোশন নিয়ে খেলছিলেন। আচ্ছা আমি কি দোষ করেছি বলতো, আমিতো যেচে ওনার সাথে কথাও বলতে যাইনি।
ইশা চুপ করে রইলো,সায়ান কে সে যথেষ্ট ভালো মনে করেছিল। কিন্তু মোহনার কথার সঙ্গে তো তার কিছুই মিলছে না।
মোহনা নিজের চোখের জল মুছে বললো,
_তুইতো জানিস ইশা, আমি ডায়েট করার কতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়না,বরং আরো অসুস্থ হয়ে পরি। আমিতো ইচ্ছে করে মোটা হতে চাইনা, হরমোনাল প্রবলেম এর কারণে না চাইতেও মোটা হয়ে যাই। আব্বু আম্মু জোড় করে খাওয়ায় যেন সুস্থ থাকতে পারি,আর আমি কি মোটা বলে কোনো কাজ করতে পারিনা বল? আমিতো সবই করতে পারি, তবুও কেন মানুষ আমাকে অন্যভাবে দেখে? বলতে পারিস আমি কি করবো? কি করলে আর অন্যদের কাছে হাসির পাত্র হতে হবেনা আমায়?
_মেহু আমার এখনো মনে হচ্ছে তুই ভুল ভাবছিস।
_হাহ,ভুল তো আমি এতদিন ভেবে এসেছি। তবে এখন আমি ঠিকটা বুঝতে পারছি। তুই দেখিস ইশা, যে করেই হোক আমি স্লিম হবো,তারপর আর উনি আমায় নিয়ে হাসতে পারবে না।
_পাগল হয়ে গেছিস তুই? এবার আমি বুঝতে পারছি, নিশ্চই দুদিনে খাওয়া দাওয়া করিসনি তাই মাথা ঘুড়ে যাচ্ছে। তুইতো এমন মেয়ে না মেহু, কারোর জন্য নিজেকে চেঞ্জ করার কোনো প্রয়োজন নেই। এসব আজেবাজে চিন্তা করলে কিন্তু আমি আন্টিকে সবকিছু বলে দেবো। এখন চল,ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খাবি আগে।
_আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা ইশা।
_কোনো কথা নয়,চল আমার সাথে।
মোহনা আর কিছু না বলে ইশার সাথে ক্যান্টিনে চলে গেলো, আর কিছুক্ষন না খেয়ে থাকলে সত্যি সত্যি ই সেন্সলেস হয়ে যাবে।
_____
_আসবো?
আদৃত অফিসে নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। কারোর গলার আওয়াজ শুনে দড়জার দিকে তাকাতেই পূর্ণকে দেখে মৃদু হেসে বললো,
_আয়,জিজ্ঞেস করছিস কেন?
পূর্ণ ভিতরে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। আদৃত ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,
_কোথায় ছিলি তুই? ফোন ধরিস না,কোনো খোজ নাই। কোথায় যে উধাও হয়ে যাস তুই সেটাই বুঝতে পারিনা।
পূর্ণ ও হাসলো এবার। পানিটা খেয়ে বললো,
_দুদিনে ফিরতে পেরেছি এটাই অনেক। আর বলিস না, আম্মা কয়েকদিন ধরে এত চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য। একদম কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে, কিছু বলেই বোঝাতে পারতেছি না।
_ভালো তো,বিয়ে করে নিলেই পারিস। তাহলে আন্টিও খুশি হয়ে যাবে।
_হাহ, আমার যে লাইফ। কোনো মেয়ে আমার সাথে থাকবে বলে তুই মনে করিস?
_থাকতো,তবে তুই নিজেই রাখিস নি।
_একটা সত্যি কথা বল তো।
_হুম।
_ফাইজা কে কিছু বলেছিস তুই?
অবাক হওয়ার মতো কথা হলেও আদৃত একটুও অবাক হলোনা। বরং চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বললো,
_বলেছি,তো?
_আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম। কাজটা তুই ঠিক করিস নি আদি।
_আমি যা করি ভেবে চিন্তেই করি,অন্তত তোর থেকে ভালো বুঝতে পারি।
_ওহ রিয়েলি, তাহলে এটাও স্বিকার কর ইশা নামের মেয়েটাকে তুই ভালোবাসিস।
নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো আদৃত। পূর্ণ ও তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের শেষে আদৃত ও নিজের মনকে বুঝতে সক্ষম হয়েছে। ইশা আশেপাশে থাকলে তার ভালো লাগে,ইচ্ছে করে সবসময় তাকে নিজের সামনে বসিয়ে রেখে তার বকবক শুনতে। তার কাজল চোখের মায়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বারংবার, এই সবকিছুর কারণ আবিষ্কার করতে পেরেছে আদৃত। দেড়িতে হলেও মেনে নিয়েছে নিজের অনুভূতিকে।
_তাহলে? আমি বিয়ে করি না করি,তোর বিয়ে খেতে পারছি বল।
আদৃতের হাসি আরো প্রশস্ত হতে দেখে পূর্ণ বললো,
_হাসছিস কেন? তুই যে মেয়েটাকে ভালোবাসিস,বলেছিস ওকে?
_ঐটুকু মেয়েকে আমি প্রপোজ করবো? নো ওয়ে..
_তাহলে,কি করবি?
আদৃত টেবিলে থাকা পেপারমেট টা ঘুরিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠেই বললো,
_জানিনা। যেভাবে চলছে সব সেভাবেই চলুক,ক্ষতি কি?
পূর্ণ মনেমনে হাসলো। আদৃতকে ভালোবাসা প্রকাশ করতে বলছে। যেখানে কিনা সে নিজেই নিজের ভালোবাসার কথা কখনো মুখ ফুটে বলতে পারলো না,হয়তো কখনো পারবেও না। এমনটা হয়তো তার ভাগ্যেই লেখা ছিলো।
#চলবে
[৩০ পর্ব পর্যন্ত কি করে চলে এলাম বুঝতেই পারলাম না। যারা এখনো গল্পটা পড়ছেন,সকলকে ধন্যবাদ। পারলে গল্প সম্পর্কে নিজের মতামত জানিয়ে যাবেন।
গল্পটা যাদের কাছে কিছুটা বোরিং লাগছে,আশা করি পড়ের পর্ব থেকে এতটা বোরিং লাগবে না।
হ্যাপি রিডিং।]