হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_১৫

0
892

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৫

জাহিন নিজের পার্টি অফিসে বসে আছে চোখ দুটো বন্ধ করে চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে। চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। চোখ বন্ধ অবস্থায় বোঝা যাচ্ছে দু চোখের মনি স্থির নয়। নুহাশ নিঃশব্দে কেবিনে প্রবেশ করে হাতে খাবার নিয়ে, কিছুক্ষণ জাহিনের দিকে তাকিয়ে থেকে জিহ্বা দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে।

“ভাই।”

নুহাশের কন্ঠস্বর শুনে জাহিন চোখ মেলে তাকায়। জাহিন সোজা হয়ে বসে বা হাত দ্বারা চোখ দুটো কচলে নেয়। খুব জ্বলছে চোখ দুটো তার। ইচ্ছে করছে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখে ঝাপটা দিতে তাহলে যদি চোখ জ্বালাটা একটু কমে। চোখ কচলাতে কচলাতে জাহিন শান্ত গলায় বলে।

“ঠান্ডা পানি নিয়ে আয় আমার জন্য।”

কথাটা বলে চোখ মেলে তাকায় নুহাশের দিকে। নুহাশের হাতে খাবারের প্যাকেট দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে, “এসব কি?”

নুহাশ ডেস্কের উপরে খাবারের প্যাকেট রেখে বলে, “তোমার খাবার। সকাল থেকে কিছু খাও নি তো তাই নিয়ে আসলাম।”

জাহিন ক্লান্ত গলায় বলে, “আগে ঠান্ডা পানি নিয়ে আমার জন্য।”

“হুম।”

নুহাশ চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতে নিলে কিছু একটা মনে পড়তে থেমে যায়। নুহাশকে থেমে যেতে দেখে জাহিন পুনরায় বলে, “কিছু বলবি?”

“আসলে ভাবি ফোন দিয়েছিল।”

জাহিন ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলে, “ভাবি কার ভাবি?”

“আমাদের ভাবি মানে অয়ন্তি ভাবি।”

অয়ন্তির নামটা শুনে জাহিন বিস্মিত হয়ে বলল, “অয়ন্তি তোকে ফোন করেছিল কখন?”

“একটু আগেই আর ভাবি বলল তোমাকে খাওয়ানোর জন্য। আর একটা মজার বিষয় কি জানো বড় মা ফোন করে তোমার খবর নেওয়ার পরপরেই ভাবির কল আসলো আমার ফোনে।”

“তোর ফোন নাম্বার কোথায় পেলো অয়ন্তি?”

“হয়ত বাড়ির কারো থেকে নিয়েছে। আমি বলেছিলাম ভাবিকে তোমাকে কল করার জন্য কিন্তু হয়ত কোনো জড়তার কারণে তোমাকে কল করতে চাইছে না। ভাবির কথা শুনে বুঝা গেল টেনশন করছে তোমাকে নিয়ে।”

জাহিন কিয়ৎক্ষণ নিরব থেকে বলে, “ঠিক আছে তুই যা পানির বোতলটা নিয়ে আয়।”

নুহাশ চলে যায়। জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে অয়ন্তির নাম্বারটা ভাসায় কল দিবে নাকি দিবে না ভেবে দু টানায় পড়ে যায় জাহিন। কি বলবে ফোন করে? “সে ঠিক আছে” এই‌ কথাটা। মেয়েটা নিশ্চয়ই টেনশন করছে তাকে নিয়ে। জাহিন আকস্মিক ফোনটা অফ করে রেখে দেয়। পরক্ষণে আবারো ফোনটা ওন করে কোনো দিক বেদিক না ভেবে অয়ন্তিকে কল করে। দুই তিন বার রিং হওয়ার পরপরেই ফোনটা পিক হয় কিন্তু কোনো আওয়াজ আসে না, ভেসে আসে কারো প্রগাঢ় শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ। জাহিন ঠোঁট চেপে ধরে ঢোক গিলে ভরাট কন্ঠে ডাক দেয়।

“অয়ন্তি।”

ফোনের ওপাশ থেকে কোনো শব্দ আসল না তবে নাক টানার শব্দ আসল। মেয়েটি কি কান্না করছে? কিন্তু কেন? তার এভাবে চলে আসার জন্য কি কান্না করছে নাকি গ্রামের মানুষরা এই ব্যাপারটা নিয়ে কোনো কটু কথা বলেছে মেয়েটাকে? জাহিন পুনরায় কোমল স্বরে বলে।

“আপনি কি কান্না করছেন অয়ন্তি? দেখুন আমি একদম ঠিক আছি প্লিজ কান্না করবেন না। আপনার চাপা কান্নার শব্দ আমায় খুব পীড়া দিচ্ছে অয়ন্তি।”

জাহিন কথাটা বলে থামে। পুনরায় কিছু বলতে উদ্যত হতে নিলে শব্দ করে ফোনটা শাটডাউন হয়ে পড়ে। জাহিন হতবাক হয়ে পড়ে এই সময় কি তার ফোনটা শাটডাউন হওয়া কি খুব দরকার ছিল। নুহাশও ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে আসে। নুহাশকে দেখার সাথে সাথে জাহিন বলে।

“নুহাশ কাইফকে একটা ফোন কর।”

“কোনো দরকার আছে ওকে?”

“ওকে ফোন করে সন্ধ্যাপুরে(কাল্পনিক নাম) যেতে বল।”

“হঠাৎ সন্ধ্যাপুরে কেন?”

“অয়ন্তিকে আনতে হবে আমি তো‌ যেতে পারব না তাই ও গিয়ে‌ নিয়ে আসুক ওনাকে।”

“কিন্তু কাইফ তো আমার জানা মতে দাদু আর‌ দাদা ভাইকে আনতে গেছে।”

জাহিন হতভম্ব হয়ে বলে, “দাদু আর‌ দাদা ভাইকে আনতে গেছে মানে?”

“বিয়েতে তো আসতে পারি নি দাদা ভাই অসুস্থ থাকার কারণে। আর তার‌ উপরে শুনেছে আজকের এই ঘটনাটা তাই ওনারা আসছে আজকে।”

জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “তাহলে তিয়াশকে সন্ধ্যাপুরে যেতে বল।”

“ঠিক আছে।”

“যাওয়ার আগে আমার ফোনটা একটু চার্জে দিয়ে যা ফোনটা শাটডাউন হয়ে গেছে। আর বাড়িতেও খবরটা জানিয়ে দিস যে অয়ন্তিকে তিয়াশ আনতে গেছে।”

নুহাশ জাহিনের ফোনটা চার্জে লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। জাহিন আগের ন্যায় বসে আছে। ভবিষ্যতে আর কি কি অপেক্ষা করছে তার জন্য? কিন্তু আজকের ঘটনাটা যে খলিল তালুকদার ঘটিয়েছে এটা জাহিন সিউর। আর এর প্রতিশোধও নিবে আজ কালকের ভেতরেই।‌ রাজনীতির নোংরা খেলা! একবার যখন এই নোংরা খেলায় মেতেছে এর শেষ দেখে ছাড়বে জাহিন। কিন্তু এই রাজনীতির নোংরা খেলায় কে জিতবে আর কে হারবে?

_________

অয়ন্তি এক নজরে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনের দিকে। অপেক্ষায় আছে জাহিনের ফোনের অপেক্ষায়। কিন্তু জাহিনের কোনো ফোনকল এলো না। বুকটা ভার হয়ে এলো অয়ন্তির। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁত দ্বারা। এত কষ্ট হচ্ছে কেন তার? দু চোখ নোনা জলে ভরে উঠেছে। চোখের পাতা ফেললেই কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে সেই নোনা জল। হয়তো জাহিনের কোনো ইম্পর্টেন্ট কাজ পড়ে গেছে তাই এভাবে কিছু না বলে কল কেটে দিয়েছে। এমন সময় ফাতেমা আক্তার বলতে বলতে আসেন।

“অয়ন্তি মা কিছু খেয়ে নে আর কতক্ষণ না খেয়ে থাকবি?”

অয়ন্তি সাথে সাথে চোখের জল মুছে নেয়। ফাতেমা আক্তার মেয়েকে চোখের জল মুছতে দেখে থমকে যায়। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মেয়ের পাশে বসে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।

“এভাবে না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে তো। যা হওয়ার হয়ে গেছে এটা নিয়ে এত চিন্তা করলে কি করে হবে? মানুষের জীবনে আরো অনেক খারাপ খারাপ ঘটনা ঘটে যায় কিন্তু তারা ঠিক উঠে দাঁড়ায় তোকেও পারতে হবে। মানুষজনের কটু কথা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। চল কিছু খেয়ে নিবে।”

অয়ন্তি চুপচাপ মামনির প্রত্যকেটা কথা শুনে গেল কিন্তু টু শব্দটাও করল না।

_______

পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া শারাফের মুখোমুখি বসে আছে জাহিন। শারাফ জাহিনের সব কথা শুনে বলে, “তুমি যা বলছো সেটা করা একটু রিস্ক হয়ে যায় ভাই।”

জাহিন শীতল গলায় বলে, “সব কাজেই রিস্ক আছে শারাফ কোনো কাজেই রিস্ক ছাড়া নয়।”

“কিন্তু তার জন্য আগে সার্চ ওয়ারেন্টের পরোয়ানা জারি করতে হবে।”

জাহিন শক্ত গলায় বলে, “যা যা করা লাগে তাই তাই করবি।”

“ঠিক আছে ভাই আমি দেখছি ব্যাপারটা কি করা যায়। আমার এখন থানায় যেতে হবে।”

“হুম যা।”

কথাটা বলে জাহিন ভোর বেলার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজটা আবারো দেখে। এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মুখোশধারী কয়েকজন লোক সিকিউরিটি গার্ড চলে যাওয়ার পরপরেই ফাউন্ডেশনের এরিয়ার ভেতরে ঢুকে। আর খুব সহজে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করে চলে যায়। ফাউন্ডেশনের ভেতরে গ্যাসের সিলিন্ডার থাকার কারণে আগুন লাগাগাটা আরো সহজ হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। জাহিন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। যদি এই লোকদের সামনে পেতো এক মুহূর্তের জন্য তাহলে ওদের জান নিয়ে নিত।

_________

রিহান সবে গোসল করে বেরিয়েছে। রিমোট হাতে নিয়ে টিভি অন করতেই ভেসে উঠে আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া শেখ অরহান ফাউন্ডেশন। রিহান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখকে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। রিহান তরিঘড়ি করে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে মাকে ফোন করে। কিন্তু মা ফোন ধরছে না। তৃতীয়বার ফোন দেওয়ার সময় ধরল। রিহান অধৈর্য গলায় বলে।

“মা এসব এসব কি দেখাচ্ছে টিভিতে ফাউন্ডেশনে আগুন লেগেছে মানে কি?”

“বিরোধি দল আগুন দিয়েছে।”

“মা আমি বাড়ি আসছি এক্ষুণি।”

“একদম না এমনি বাড়ির আবহাওয়া গরম তুই আসলে তোর বাবা আরো উত্তেজিত হয়ে যাবেন।”

“কিন্তু মা এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল আর আমি এখান বসে থাকব, পারব না আমি আমি আসছি।”

জোহরা বেগম ধমকের স্বরে বলেন, “রিহান মায়ের কথা শুন বাবা এখানের পরিস্থিতি একটু বোঝার চেষ্টা কর।”

রিহান ধপ করে নরম বিছানাতে বসে পড়ে আর তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ঠিক আছে এইটাই লাস্ট বার তোমার কথা শুনা এরপর আর কথা শুনব না তোমার।”

বলেই রিহান ফোন কেটে দেয়। জোহরা বেগম পড়েছে দুটানায় ছোট ছেলেকে ছাড়া থাকতে একদম ভাল লাগছে না ওনার কিন্তু আজমল শেখ যে ছেলের উপরে রেগে ফায়ার হয়ে আছেন। যদি ছেলেকে সামনে পায় তাহলে ছেলেকে আর আস্তো রাখবেন না। তাই স্বামীর রাগ পড়ার অপেক্ষায় আছেন।

________

অয়ন্তি অল্প কিছু খেয়ে চুপচাপ বসে আছে দৃষ্টি তার সবুজ শেওলা পড়া পুকুরটার দিকে। পুকুরটা মাঝখানে দুটো সাদা রঙের রাজ হাঁস। রাজ হাঁস দুটো কি সুন্দর করে এক জন আরেক জনের পেছন পেছন যাচ্ছে। কত্ত মহব্বত রাজ হাঁস জোড়া দুটোর মাঝে। অয়ন্তির ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠে। এমন সময় গাড়ি শব্দ ভেসে আসে উঠোন থেকে। অয়ন্তি চকিতে চমকে উঠে সোজা হয়ে বসে। নিশ্চয়ই জাহিন এসেছে তাকে নিতে। অয়ন্তি তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে সদর দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। জাহিনের গাড়ি তো ঠিকেই এসেছে কিন্তু জাহিনের বদলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসল অন্য এক পুরুষ। অচেনা পুরুষ মানুষটিকে দেখে এতক্ষণের উত্তেজনা, আনন্দ নিমিষেই শেষ হয়ে গেল অয়ন্তির।

হামিদ খন্দকার তিয়াশের কাছে এগিয়ে এসে বলেন, “তুমি কে বাবা?”

“আঙ্কেল আমি তিয়াশ জাহিন ভাই আমাকে পাঠাল ভাবিকে নেওয়ার জন্য।”

হামিদ খন্দকার মাথা দুলাতে দুলাতে বলল, “ও আচ্ছা।”

“আসলে ভাই আসতে পারি নি জানেনই তো ওখানের পরিস্থিতি কেমন।”

“হুম কি যে হয়ে গেল? আচ্ছা তুমি ভেতরে এসে বসো।”

“না আঙ্কেল বসব না আপনি ভাবিকে গিয়ে বলুন তৈরি হতে আমি এখানেই অপেক্ষা করছি।”

“তা কি করে হয় তুমি শুকনো মুখে ফিরে যাবে নাকি আমার বাড়ি থেকে।”

“আঙ্কেল বিশ্বাস করুন একদম খেতে ইচ্ছে করছে না আমার।

“ইচ্ছে যখন করছে না আর জোর করলাম না।”

হামিদ খন্দকার সদর দরজার পাশে মেয়েকে দেখে বলেন, “তৈরি হয়ে নে জামাই গাড়ি পাঠিয়েছে তোকে নেওয়ার জন্য।”

অয়ন্তি চুপচাপ তৈরি হতে চলে যায়। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমায় শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রায় সন্ধ্যার দিকে শেখ বাড়িতে এসে পৌঁছায় অয়ন্তি। অয়ন্তিকে দেখার সাথে সাথে জারা দৌঁড়ে এসে অয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বলে।

“কেমন আছো ভাবি?”

অয়ন্তি স্মিত হেসে বলে, “ভালো আছি।”

“উম দেখে তো মনে হচ্ছে না।”

এমন সময় জোহরা বেগম ছেলের বউকে দেখে বলেন, “এই তো আমার বউ মা চলে এসেছে। অয়ন্তি আসো তোমার দাদা শশুর আর দাদি শাশুড়ি এসেছেন এতক্ষণ তোমার জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন তারা।”

অয়ন্তি সোফার দিকে তাকিয়ে দেখে দুজন বয়স্ক পুরুষ আর মহিলা বসে আছেন। দুজনের ঠোঁট জোড়া লাল হয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে তারা খুব পানখোর। বয়স্ক পুরুষ মানুষটি এক্কেবারে জাহিনের ফটোকপি। অয়ন্তি ঢোক গিলে মাথার ঘোমটা ঠিক করে এগিয়ে যায় দাদা শশুর আর দাদি শাশুড়ির দিকে। জোহরা বেগম চোখের ইশারায় অয়ন্তিকে বলে তাদেরকে সালাম করার জন্য। অয়ন্তি দাদির পা ধরে সালাম করতেই রোকেয়া বানু বিরস গলায় বলে উঠেন।

“হয়েছে হয়েছে সালাম করতে হবে না সুখে থাকো।”

অয়ন্তির মুখটা শুকনো হয়ে গেল এমন ধরণের কথা শুনে। বুঝতে পারল দাদি শাশুড়ি খুব একটা সুবিধার হবেন না। অয়ন্তি দাদা শশুরকে সালাম করতে নিলে শেখ রেজাউল সাহেব অয়ন্তির হাতটা ধরে ফেলে আর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অয়ন্তির মাথায় হাত দিয়ে স্নেহভরা গলায় বলেন।

“পা ধরে সালাম করতে হবে না। আমার নাতিকে নিয়ে সারা জীবন সুখে শান্তিতে থাকো এই দোয়াই প্রাণ ভরে করি তোমাকে।”

অয়ন্তি বিনিময়ে মুচকি হাসি দিল। রোকেয়া বানু আদেশের স্বরে অয়ন্তিকে বলেন, “এই মেয়ে আমার কাছে এসে বসো তো দেখি একটু।”

অয়ন্তি শাশুরি মায়ের দিকে তাকায়। জোহরা বেগম চোখের ইশারায় বসতে বললেন। অয়ন্তি রোকেয়া বানুর কাছে বসতেই অয়ন্তির দু হাতে দুটো সোনার বালা পড়িয়ে দিয়ে বলেন।

“নাত বউয়ের মুখ দেখলাম প্রথম বারের মতো তার উপহার দিলাম তোমায় আমি মেয়ে সাবধানে রেখো বালা জোড়া।”

অয়ন্তি মাথায় হেলিয়ে সায় দেয়। রোকেয়া বানু এবার এক তিক্তময় কথা বলে উঠেন, “তা মেয়ে এই বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই আমার নাতির সর্বনাশ ঘটিয়ে দিলে। কি অপয়া মেয়ে গো তুমি।”

অয়ন্তি চমকে উঠে। বুকের ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে কথাটা শুনে। এখানে এসেও তাকে অপয়া কথাটা শুনতে হল। হয়তো এখান থেকেই শুরু হল তার এই বাড়িতে অপয়া ডাকটা। বসার ঘরে সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে অয়ন্তির দিকে। জোহরা বেগম শাশুড়ি মাকে বলেন।

“মা কি বলছেন আপনি এসব?”

“ঠিকেই তো বলছি আর ওর তো বিয়ের হওয়ার কথা ছিল রিহান দাদু ভাইয়ের সাথে কিন্তু হয়ে গেল জাহিন দাদু ভাইয়ের সাথে।”

আজমল শেখ বলেন, “মা এখন কি এই কথাগুলা না বললে নয়।”

শেখ রেজাউল সাহেব স্ত্রীকে ধমকের স্বরে বলেন, “আহ রোকেয়া তুমি চুপ করবে।”

জোহরা বেগম জারাকে বলে, “জারা অয়ন্তিকে নিয়ে উপরে যা অনেকটা পথ জার্নি করে‌ এসেছে।”

“হ্যাঁ মা, ভাবি চলো।”

অয়ন্তি ঘোমটার আড়ালে চোখের নোনা জলটা মুছে নেয়। জারা অয়ন্তিকে নিয়ে উপরে চলে‌ যায়। ননদ আর ভাবি করিডোর দিয়ে যাচ্ছে এমন সময় জারা বলে।

“ভাবি দাদুর কথায় কিছু মনে করো‌ না দাদু এমনেই। কিন্তু যাকে এক বার ভালবেসে ফেলে তাকে এক্কেবারে উজার করে ভালবাসে।”

অয়ন্তি নিচু গলায় বলে, “না না ওনার কথায় আমি কিছু মনে করে নি।”

এমন সময় আহান নিজের ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করে বলে, “ভাবি তুমি চলে এসেছো।”

আহান দৌঁড়ে এসে অয়ন্তির কোমর জড়িয়ে ধরে। অয়ন্তি মুচকি হেসে আহানের গাল ধরে বলে, “কেমন আছো তুমি আহান?”

আহান অভিমানি গলায় বলে, “একটুও ভালো নেই তুমি চলে গেছো বলে খুব মন খারাপ হয়েছিল।”

“আর মন খারাপ করতে হবে না আমি তো চলেই এসেছি।”

জারা পাশ থেকে আহানকে বলে, “আহান ভাই আমার পড়তে বস গিয়ে তোর না আর কয়েকদিন পরে বার্ষিক পরীক্ষা।”

আহান দু হাত নিজের কোমরে রেখে রেগে বলে, “একবার খালি আমার পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপর আমি তোমাকে এই কথাটা সারা দিন বলব।”

কথাটা বলে মুখ ভেংচি কেটে আহান নিজের ঘরে চলে যায়। জারা ভাবিকে বলে, “ভাবি তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আর টেনশন করার মতো কিছু হয় নি বুঝলে। এমন দুর্ঘটনা অনেক ঘটেছে আমাদের সাথে। কিন্তু তুমি নতুন তো তাই হয়তো খারাপ লাগছে। আরেকটা কথা ভাইয়া হয়তো আজকে অনেকটা রাত করেই ফিরবে তাই খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়বে।”

কথাটা বলে জারা নিজের ঘরে চলে যায়। অয়ন্তি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের ঘরে চলে যায়।

_________

প্রায় রাত সাড়ে বারোটার দিকে জাহিন আর নুহাশ বাড়িতে ফিরে। নিজেদের কাছে বাড়ির চাবি থাকার কারণে বাড়ির কাউকে আর বিরক্ত করে নি। জাহিনের চোখে মুখে স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ, চুল উসকো খুসকো হয়ে আছে, সকালের পোশাকটা এখনো গায়ে। জাহিন নিজের ঘরে প্রবেশ করতেই থমকে যায় অয়ন্তিকে দেখে। অয়ন্তি সোফায় ঘুমিয়ে আছে। এই‌ মেয়ে সোফায় ঘুমাচ্ছে কেন এত বড় বেড থাকতে? জারা ভাবিকে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে না করলেও অয়ন্তি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছিল কিন্তু কখন যে সোফায় ঘুমিয়ে গিয়েছে ক্লান্তিতে টের‌ পায় নি। জাহিন ল্যাপটপ ব্যাগ আর কোর্ট’টা চেয়ারের উপরে রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় অয়ন্তির দিকে। জাহিন সেন্টার টেবিলের উপরে আস্তে করে বসে অয়ন্তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কত্তটা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা কিন্তু আদৌ কি নিশ্চিন্তে‌ ঘুমাচ্ছে অয়ন্তি। জাহিন ঢোক গিলে হাত বাড়িয়ে অয়ন্তির কপালের উপরে পড়ে থাকা চুল গুলা আলতো হাতে সরিয়ে দেয়। জাহিনের কি হলো কে জানে নিজের মুখটা এগিয়ে নেয় অয়ন্তির ললাটের দিকে। অয়ন্তির ললাটে নিজের ওষ্ট ছুতে যাবে তখনই থেমে যায় জাহিন। চোখ বন্ধ করে চোয়াল শক্ত করে নিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ফিরে‌ আসে অয়ন্তির নিকট থেকে। জাহিন কিছুক্ষণ তব্দা মেরে বসে রইল অয়ন্তির সম্মুখে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে জাহিন নিজের কোমর বাঁকিয়ে আস্তে করে অয়ন্তিকে পাঁজাকোলা তুলে নেয়। ঘুমন্ত অয়ন্তির মাথা গিয়ে ঠেকে‌ জাহিনের প্রশস্ত বুকে। জাহিন এক পলক ঘুমন্ত অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে অগ্রসর হয় বেডের দিকে।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here