#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৮
রাজনৈতিক দলের ভিআইপি গাড়ি একের পর এক মেইন গেট দিয়ে শেখ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করছে। আর তার সাথে শেখ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করছে আজমল শেখের শিল্পপতি বন্ধুরা। জাহিন তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছে। এমন সময় শারাফ এসে জাহিনের কানে কানে বলে।
“ভাই এবার তো চলো। আর কতক্ষণ একা একা ভাবি ছবি তুলবে। কয়েকটা তো কাপল পিকও তোলা দরকার।”
জাহিন ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে, “তুই যা আমি আসছি।”
শারাফ চলে যায়। জাহিন আর কিছুক্ষণ থেকে, বসা থেকে উঠে পড়ে। উদ্দেশ্যে তার বাগানের ডান পাশটায় যাওয়া। সেখানে স্টেজ করা হয়েছে ফটোসেশান করার জন্য। জাহিন স্টেজের কাছে আসতেই থমকে যায় অয়ন্তিকে দেখে, আটকে যায় চোখ জোড়া সামনে থাকা তার স্ত্রীর দিকে। মেয়েটার মুখে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে আছে। বিয়ের আগ থেকে কিংবা পর থেকে যত বার অয়ন্তিকে দেখেছে সবসময় অয়ন্তির মুখটা পানসে দেখে এসেছে জাহিন। এই প্রথম বারের মতো অয়ন্তিকে হাসতে দেখেছে জাহিন। যদিও আগে কয়েক মুহূর্ত আগে অয়ন্তির হাসির আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। কিন্তু এবার স্বচোক্ষে দেখছে। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইলো অয়ন্তির হাস্যজ্জল চেহারা দিকে। অজান্তে জাহিনের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখে ফুটে উঠে অয়ন্তির হাসিমুখ খানা দেখে। জারা জাহিনকে দেখে বলে।
“এই তো ভাইয়া চলে এসেছে।”
অয়ন্তি চোখ তুলে সামনের দিকে তাকায়। জাহিনের পড়নে সাদা পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো, পাঞ্জাবির উপরে মেরুন কালারের কারুকাজ করা কটি পড়েছে, চুল গুলা খাড়া করে রেখেছে, মুখে হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। অয়ন্তি এক নজর জাহিনের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। বুকের ভেতরের ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে, বার বার গলা শুকিয়ে আসছে। এতক্ষণ তো সব ঠিকঠাকেই ছিল কিন্তু জাহিন আসার সাথে সাথে অয়ন্তির বুকের ভেতরের সব রকমের অস্থিরতা কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। এখনই এই অবস্থা না জানি বাসর ঘরে কি হবে? এটা ভেবে অয়ন্তি শুকনো ঢোক গিলে।
জাহিন স্টেজে উঠতে যাবে সাথে সাথে জারা চিৎকার করে বলে, “ভাইয়া দাঁড়াও।”
জাহিন অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে, “কেন? কি হয়েছে?”
জারা দুষ্টু হাসি হেসে বলে, “তুমি আর ভাবি এক সাথে স্টেজে উঠবে দুজন দুজনের হাত ধরে আর সেই অতি মনোরম সুন্দর মুহূর্তটা ভিডিও করা হবে।”
জাহিন অয়ন্তির মুখ পানে তাকায়। বোঝার চেষ্টা করে অয়ন্তির মনোভাব। অয়ন্তিরও তো একটা ইচ্ছে অনিচ্ছার ব্যাপার আছে। সব কিছু তো আর চাপিয়ে দেওয়া যায় না তার উপরে। জাহিন বোনের দিকে তাকিয়ে বলে, “জারা এসব করার কোনো দরকার নেই।”
জারা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “উফফ ভাই এসব করা লাগবে। একটা মেয়ের সারা জীবনের স্বপ্ন থাকে এমন একটা মুহূর্তকে ঘিরে তুমি জানো সেটা।”
জাহিন স্মিত হেসে অয়ন্তির দিকে দৃষ্টি ফেলে কোমল গলায় বলে, “তাই বুঝি।”
জারা মাথা নাড়িয়ে বলে, “হুম হুম।”
জারা অয়ন্তিকে এনে জাহিনের পাশে দাঁড় করায়। অয়ন্তি মাথা নিচু করে আছে। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার এত লজ্জা লাগার কি কোনো মানে আছে? না কোনো মানে নেই? জারা পুনরায় বলল।
“ভাইয়া এবার হাতটা বাড়িয়ে দাও ভাবির দিকে।”
জাহিন পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে সরাসরি অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে বাম হাতটা বাড়িয়ে দিল। অয়ন্তি জাহিনের দিকে তাকায় জাহিন চোখের ইশারায় বলে তার হাতটা ধরার জন্য। অয়ন্তি জাহিনের দিকে থেকে নজর সরিয়ে ধীরে ধীরে জাহিনের হাতের উপরে নিজের মেহেদি রাঙা ডান হাতটা রাখল। জাহিন অয়ন্তির ছোট হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ধীর গলায় বলে।
“আপনি ঠিক আছেন তো অয়ন্তি?”
অয়ন্তি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মাথা উপর নিচ করে বোঝায় যে সে ঠিক আছে। জাহিন অয়ন্তিকে নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে স্টেজের উপরে উঠে হাতটা ছেড়ে দেয়। কিন্তু এবার জারা যা বলে তাতে অয়ন্তির কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা শুরু হয়ে গেছে।
“এবার ভাইয়া তুমি ভাবির কোমড়টা ধরে সুন্দর সুন্দর পোজ দাও।”
জাহিন কিছু বলতে গেলে জারা থামিয়ে বলে, “একদম না! বিয়ে মানুষের একবারেই হয় আর এই সুন্দর মুহূর্তগুলা ফ্রেম বন্দি করে রাখা ভাল ভবিষতে যেন দেখতে পারো।”
জাহিন বাধ্য হয়ে অয়ন্তির উনমুক্ত কোমড়ে হাত রাখল। জাহিনের শীতল হাতের ছোঁয়া পেয়ে অয়ন্তির সমস্ত কায়া কিঞ্চিত রুপে কেঁপে উঠে। অয়ন্তির লজ্জায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু তারপরও মুখ বুঝে সবটা সহ্য করে গেল।
দু তালার বেলকনি থেকে সবটা দেখছে হিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। চোখে মুখে রয়েছে ক্রোধের আভাস। বার বার নাক ফুলাচ্ছে, চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। দু হাত দ্বারা রেলিং শক্ত করে ধরে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“যত পারিস তত করে নে আনন্দ ফুর্তি তবে তোর বাসর রাতটা পরিণত হবে বাথরুম রাতে। তোকে আজকে রাতে যদি আমি বাথরুমে না কাটাতে বাধ্য করেছি তাহলে আমার না রাইফা হিয়া নয়। আমার জাহিন ভাইয়ের সাথে বাসর করবি তো করাচ্ছি তোকে বাসর। এমন বাসর করাব যে সারা জীবন মনে রাখবি।”
কথাটা বলেই বেলকনি থেকে প্রস্থান করে হিয়া। আর সহ্য করতে পারছে না এই দৃশ্যটা।
_______
শেখ বাড়ির সকল সদস্যদের পরিবারিক একটা ফটো তোলা হল কিন্তু সেই ফটোতে দুটো মানুষ মিসিং এক রিহান আর এক নুহাশ। কিন্তু কিছু করার নেই বর্তমান পরিস্থিতিটাই এমন কেউ একজন নিজে থেকে মিসিং হয়েছে, আরেক জন কাজের জন্য মিসিং হয়েছে। নুহাশ এই পরিবারের রক্তের সম্পর্কের কেউ নয় কিন্তু নুহাশকে এই পরিবারের একজনেই মানা হয়। ছোট থেকেই নুহাশ এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের সাথে থেকে বেড়ে উঠেছে। তাই নুহাশও শেখ পরিবারেরই একটা অংশ। যে অংশটা ছাড়া শেখ পরিবার পরিপূর্ণ নয়। ফটোসেশানের কার্যক্রম শেষ হলে আজমল শেখ আসা সকল ভিআইপি গেস্ট আর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে বড় ছেলের বউয়ের পরিচয় করিয়ে দেন।
একে একে সব আত্মীয়-স্বজন চলে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান প্রায় শেষ হওয়ার দিকে। হামিদ খন্দকার মেয়ের কাছে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন।
“এখন আসি আমরা মা। তুই সাবধানে থাকবি।”
অয়ন্তি মন খারাপ করে বলে, “হুম। কিন্তু মামনি আসল না কেন?
“মন করিস না। আগমীকাল তো যাবেই বাড়িতে তখন না হয় মামনিকে প্রাণ ভরে দেখে আসবি।”
“হুম।”
ফাইজ হাসিমুখে বলে, “আপু তুমি কিন্তু একদম দুষ্টুমি করবে না সবার সাথে মিলেমিশে থাকবা।”
ফাইজের কথা শুনে বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকায় অয়ন্তি। হামিদ খন্দকার চোখের ইশারায় বোঝায় ছেলেকে বোঝ দিয়েই আনা হয়েছে তাই এই কথা বলছে। অয়ন্তি কোমড় বাঁকিয়ে ফাইজের কপালে চুমু এঁকে বলে।
“আচ্ছা দুষ্টুমি করব না। সবার সাথে মিলেমিশে থাকব। যদি দুষ্টুমি করি তাহলে তোমার কাছে নালিশ যাবে তখন আমাকে তুমি পানিশমেন্ট দিও কেমন।”
ফাইজ বোনের কথা শুনে মুচকি হাসে। ফাইজ আর হামিদ খন্দকার চলে যান। লিজা বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ভাল থাকিস। আর আজকের রাতটা জন্য অভিনন্দন রইল।”
অয়ন্তি বান্ধবীর পেটে গুঁতো মেরে বলে, “খালি বাজে কথা মুখে তাই না।”
লিজা অয়ন্তির কাছ থেকে দূরে সরে এসে অয়ন্তির গালে হাত রেখে বলে, “কোনটা বাজে কথা? প্রত্যেকটা মেয়ের জন্যই প্রথমটা রাতটা একটা স্পেশাল রাত বুঝলি।”
অয়ন্তি লাজুক হেসে বলে, “হুম বুঝলাম ম্যাডাম।”
“এবার আসি। ভাল থাকিস।”
লিজা সদর দরজা পেরিয়ে অর্ধেক রাস্তা আসতেই শারাফ এসে হাজির হয় লিজার সামনে। লিজা ভ্রু কুঁচকে শারাফের দিকে তাকায়। শারাফ মোহনীয় হাসি দিয়ে বলল।
“কি মিস বালিকা চলে যাচ্ছেন?”
লিজা কন্ঠে খানিকটা তেজ রেখে বলে, “হ্যাঁ! চলে যাচ্ছি দেখতে পাচ্ছেন না কানা নাকি।”
“কানা হতে যাব কেন? কানা তো আপনি মিস ভিজা।”
লিজা ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি বললেন আপনি? আমি ভিজা।”
“হুম আপনি আমার এত সুন্দর নামটা শারাফ থেকে খারাফ করেছেন তাই আপনাকে লিজা থেকে ভিজা বললাম।”
লিজা কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। এই লোকের সাথে কথা বললে কথা বাড়বে তাই আর কথা না বাড়ানোই ভাল। আর ওই দিকে তার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। তাই লিজা শারাফের পাশ কেটে চলে যেতে নিলে শারাফ বলে।
“এই যে মিস ভিজা বালিকা আমার শার্টটা কিন্তু ফেরত চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”
লিজা রাগ দেখিয়ে বলে, “দিয়ে দিব আপনার শার্ট সেটাও খুব জলদি। আপনার শার্ট আমার কাছে রাখার কোনো ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা কোনাটাই নেই। যত্তসব, আজাইরা মানুষ।”
কথাটা বলেই লিজা হনহনিয়ে চলে যায়। শারাফ লিজার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে রহস্যময় হাসি দেয়। মেয়েটাকে জ্বালাতে শারাফের আরো মন চাইছে কিন্তু সেটা তো আর হওয়ার নয়। আবার কবে দেখে হবে তাদের? দেখা হবে নাকি এটাই তাদের শেষ দেখা। যদি নসিবে লেখা থাকে তাহলে নিশ্চয়ই দেখা হবে দুজনের খুব শীঘ্রই। এমন সময় শারাফের পাশ থেকে কেউ ভরাট কন্ঠে বলে উঠে।
“কি রে তুই এমন হাবার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?”
শারাফ পাশ ফিরে নুহাশকে দেখে বলে, “আরে নুহাশ পল্লী যে চলে এসেছি তুই।”
নুহাশ শারাফের পেটে ঘুষি মেরে বলে, “তোকে কতবার বলব আমাকে নুহাশ পল্লী বলে ডাকবি না।”
শারাফ মৃদু চেঁচিয়ে পেটে হাত রেখে বলে, “কত সুন্দর নামটা নুহাশ পল্লী আর সেটা তুই ডাকতে না করচ্ছিস। তোর রুচি খুব বাজে।”
“থাক তোকে আর লেকচার দিতে হবে না ভেতরে চল।”
শারাফ বন্ধুর কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে, “বিয়েতে থাকলি না খুব মিস করেছি তোকে।”
“সবেই কপাল বুঝলি।”
বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই জাহিনের দেখা পায় নুহাশ। সোফায় বসে পায়ের পা তুলে জাহিন ফোনে কিছু একটা মনযোগ দিয়ে দেখছে। আহান নুহাশকে দেখার সাথে সাথে দৌঁড়ে আসতে আসতে বলে।
“নুহাশ ভাইয়া চলে এসেছে।”
জাহিন চোখ তুলে তাকিয়ে নুহাশকে দেখে উঠে দাঁড়ায়। এদিকে আহান নুহাশের কাছে এসে নুহাশের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে, “নুহাশ ভাইয়া আমার জন্য চিপস, চকলেট এগুলা মনে করে এনেছো তো? না আনলে কিন্তু তোমার সাথে আড়ি করে দিব বলে ছিলাম।”
নুহাশ লাগেজের উপরে থাকা ব্যাগটা আহানের হাত ধরিয়ে বলে, “এর ভেতরে সব আছে।”
আহান ব্যাগটা হাত নিয়ে নাচতে নাচতে সোফাতে গিয়ে বসে। জাহিন নুহাশের কাছে এসে বলে, “ওই দিকের সব কিছু কমপ্লিট করে এসেছিস তো।”
“হ্যাঁ ভাই সবকিছু সেট করেই এসেছি।”
“ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নেয় অনেকটা জায়গা জার্নি করে এসেছিস।”
নুহাশ উপরে চলে যায়। জারার ঘর থেকে জারার কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। নুহাশ যে এসেছে সেটা হয়তো মেয়েটা এখনও টের পায় নি যদি টের পেত তাহলে একটা বার হলেও তাকে দেখা দিত। ভালোই হয়েছে এখনও জানে নি যে নুহাশ এসেছে। জানলেই সব আনন্দ মাটি হয়ে যাবে মেয়েটার। নুহাশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
________
জারা আর তার অন্যান্য দূর সম্পর্কের কাজিনরা মিলে অয়ন্তির সাজটা আরেকটু পরিপাটি করে দিচ্ছে। আর অয়ন্তিকে নানান রকম কথা বলে লজ্জায় ফেলছে। অয়ন্তি না পারছে সইতে আর না পারছে কিছু বলতে। এমনিতেই নার্ভাস হয়ে আছে আর তার পাশে থাকা দুষ্টু মেয়েগুলা আরো দিছে তাকে নার্ভাস করে। আর তার মধ্যে আছে গুটি কয়েকজন বিবাহিত মেয়ে তারা তো এক্কেবারে মুখে যা আসছে তাই বলছে সেটাও আবার শালীনতা বজায় রেখে।
এদিকে হিয়া বসার ঘরে বসে আছে অধীর আগ্রহ নিয়ে কখন জারা উপর থেকে নামবে আর এসে বোমাটা ফাটাবে। কিন্তু জারার আসার কোনো নামেই নেই। তবে কি তার দেওয়া ঔষধটা কাজ করে নি নাকি মেয়েটার উপরে, নাকি এখন শরবতটা খায় নি। উপরে গিয়ে দেখতেও পারছে না অয়ন্তি শরবতটা খেয়েছে নাকি খায় নি। চোখে মুখে ফুটে উঠেছে বিরক্তের ছাপ। এমন সময় রুনা আক্তার হিয়াকে ডাকতে ডাকতে আসে। ছোট মামিকে এভাবে ডাকতে দেখে হিয়া বলে।
“কি হয়েছে ছোট মামি।”
“তোমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন হিয়া। তুমি জলদি আসো।”
হিয়া তাড়াতাড়ি করে রুমে এসে মাকে দেখতে না পেয়ে ছোট মামিকে বলে, “কোথায় মা?”
“ওয়াশরুমে গেছেন।”
আলেয়া বেগম ওয়াশরুম থেকে বের হোন ক্লান্ত শরীর নিয়ে। হিয়ার মায়ের এমন করুন অবস্থা দেখে বলে, “মা কি হয়েছে তোমার?”
আলেয়া বেগম ক্লান্ত গলায় বলেন, “বুঝতে পারছি না রে মা হঠাৎ করে কি হয়ে গেল আমার।”
কথাটা বলে শেষ করতে পারল না আলেয়া বেগম এর মাঝে পেট মোচর দিয়ে উঠেছে। পেট মোচর দেওয়ার সাথে সাথে আলেয়া বেগম জলদি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েন। হিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তবে কি তার মা শরবতটা খেয়ে নিয়েছে তার জন্য এই অবস্থা। রুনা আক্তার বলেন।
“তুমি থাকো এখানে আমি স্যালাইন নিয়ে আসি আপার জন্য। হঠাৎ করে কি হয়ে গেল?”
কথাটা বলে রুনা আক্তার চলে গেলেন। হিয়া মাথায় হাত দিয়ে ধপাস করে বিছানাতে বসে পড়ে। কি থেকে কি হয়ে গেল? এমন হাল করতে চেয়েছিল কার আর হয়ে গেল কার? কিন্তু এটা হলো কি করে? আলেয়া বেগম বের হতেই হিয়া বলে।
“মা তুমি কি খেয়েছো?”
আলেয়া বেগম ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে, “আর বলিস না শরবতটা খাওয়ার সাথে সাথেই আমার এমন অবস্থা হয়ে গেছে।”
হিয়া চিৎকার করে বলে, “তার মানে পেট খারাপ করার ঔষধ মেশানোর শরবতটা তুমি খেয়ে ফেলেছো।”
আলেয়া বেগম চোখ বড় বড় করে বলেন, “কি… কি বললি? পেট খারাপের ঔষধ মানে।”
“মানেটা হলো এই শরবতটা আমি ওই অয়ন্তি মেয়েটার জন্য বানিয়ে ছিলাম। যাতে ওর এই অবস্থা হয়। কিন্তু তুমি কি করে খেলে এই শরবত? আমি তো আহানকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম শরবতটা।”
“আহান আমার কাছে শরবতটা দিয়ে বলেছিল অয়ন্তিকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি শরবতটা অয়ন্তিকে না দিয়ে নিজেই খেয়ে ফেলি।”
হিয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ভাল হয়েছে এখন বুঝো ঠ্যালা।”
“তুই আগে থেকে জানিয়ে রাখিস নি কেন? তাহলে তো এমনটা হত না।”
বলতে বলতে আবারো মোচর দিয়ে উঠে পেট। আলেয়া বেগম আবারো দৌঁড় লাগায় ওয়াশরুমে। হিয়া রাগে দুঃখে চেয়ারে লাথি মেরে বলে।
“ধুর।”
#চলবে