#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩৭+৩৮
#মেহরিন_রিম
ইশার কথা শুনে রিফাত যেন আকাশ থেকে পরলো। ইশা চোখের ইশারায় তাকে হাতের দিকে তাকাতে বলল। রিফাত ইশার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার অনামিকা আঙুলে হালকা গোলাপি রঙের স্টোন বসানো আংটি। রিফাত শুকনো ঢোক গিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_ত ত তুই এনগেইজড কি করে হলি? আমি তো কিছুই জানতাম না।
_জানবে কি করে! আসলে আব্বু আম্মু এখনো কাউকেই জানায়নি বিষয়টা আর আমিও জানাইনি। আব্বুর এক বন্ধুর ছেলের সাথে আরো চার বছর আগেই আমার এনগেইজমেন্ট হয়ে আছে,যদিও সেটা ভার্চুয়াল। বিদেশে থাকে তো তাই, এমনকি আমি ওনাকে এখন পর্যন্ত দেখিও নি জানো।
এবার ইশা কিছুটা লজ্জা পাওয়ার ভাব নিয়ে বলে,
_তবে না দেখলে কি হয়েছে,আমিতো মনে মনে তাকে বর হিসেবে মেনেও নিয়েছি।
রিফাত হতাশ হয়ে বললো,
_তুই সত্যিই এনগেইজড?
_হ্যা গো,নাহলে তোমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে কেউ রিজেক্ট জরতে পারে বলো?
রিফাতকে হতাশ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা আবারো বললো,
_থাক ভাইয়া,তুমি মন খারাপ করোনা। আমি বরং তোমার সাথে আমার এক ফ্রেন্ড এর কথা বলিয়ে দেবো,ভীষণ সন্দরি জানো তো!
রিফাত কিছুটা খুশি হয়ে বলে,
_সত্যি?
_হ্যা হ্যা সত্যি।
রিফাত আচ্ছা বলে ইশার থেকে ফুলটা নিতে চাইলে ইশা বাধা দিয়ে বলে,
_সুন্দর তো ফুলটা। থাক আমার কাছে।
রিফাত সেখান থেকে চলে যেতেই ইশা মোহনার দিকে তাকিয়ে দেখে সে অতি কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে। রিফাত কিছুটা দূরে চলে যেতেই সে উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলে,
_মনে মনে বর বানিয়ে ফেলেছো তাইনা?
_একদম…
ইশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
_দেড়ি হয়ে গেলো রে, অন্য একদিন দেখা করাবো আন্টিমনির সাথে। আজ বাসায় যাই বরং।
মোহনা হাসি থামাতে চেষ্টা করে বললো,
_চল।
বলেই বাসার দিকে হাটা শুরু করলো ইশা এবং মোহনা। এদিকে আদৃতের মাথা ভনভন করে ঘুরছে। কি বলে এই মেয়ে! ও আবার এনগেইজড হলো কবে?
রিফাত এর চিন্তা মাথা থেকে নেমে গেলেও এবার তার চেয়ে আরো বড় চিন্তা মাথায় চলে এলো। কার সাথে এনগেইজমেন্ট হয়েছে ইশার!
ইশা আর মোহনা কিছুদূর চলে যেতেই আদৃত বাইকের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর এত প্রশ্নের উত্তর একজনই দিতে পারবে। আর অপেক্ষা করতে পারলো না আদৃত, ফোন বের করে ফাইজার নম্বরে ডায়েল করলো। দুটো রিং হতেই কলটা রিসিভ করলো ভাইয়া।
_হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম। ফাইজা আমি আদৃত..
_হ্যা ভাইয়া বলুন,কোনো দরকার?
_ইশা কি এনগেইজড?
ফাইজা অবাক হয়ে বলে,
_মানে! ও এনগেইজড হতে যাবে কেনো?
আদৃত এবার ফাইজাকে কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা খুলে বললো। সবটা শুনে ফাইজা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো। ফাইজার হাসির শব্দ শুনে আদৃত ভ্রু কুঁচকে বলে,
_আরে তুমি হাসছো কেন?
_হাসবো না আবার? আপনি ভেবে নিয়েছেন ইশা সত্যি সত্যি এনগেইজড?
_তো ও নিজেই তো রিফাতকে বললো।
_আরে ভাইয়া, ওর হাতে যে রিংটা আছে ওটা আমার ভাইয়ের দেওয়া। ভাইয়া আমাদের দুজনকেই সেইম রিং কিনে দিয়েছিল, আর এই আইডিয়া টাও ভাইয়ার ই দেওয়া। কেউ প্রপোজ করলে তাকে বলে দেবো আমি এনগেইজড,তাহলে আর সে কখনো বিরক্ত করবেনা। সেই আইডিয়া ফলো করেই ইশা এই কাজ করে, স্কুল এ থাকতেও ওকে কয়েকজন প্রপোজ করেছিল। তখন ও একই কথা বলেছে,যে আমি এনগেইজড।
ফাইজার কথা শুনে আদৃত হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ফাইজা নিজের হাসি থামিয়ে বললো,
_এত চাপ নিয়েন না ভাইয়া,আপনার লাইন এখন পর্যন্ত ক্লিয়ার আছে।
কথাটা বলে আবারো হাসতে লাগলো ফাইজা। আদৃত অন্যহাতে মাথা চুলকিয়ে বলে,
_আমি এখন রাখছি হ্যা।
_ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলো আদৃত। আর ফাইজা ফোনটা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে পূর্ণকে কল দিলো, মজার কথাটা তাকেও জানানো উচিৎ।
____
এরই মাঝে আরো বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে। আদৃত অনেক চিন্তা করেছে কিভাবে ইশার সাথে বন্ধুত্ব করা যায় কিন্তু কিছুই তার মাথায় আসছেনা। অবশেষে একটা বুদ্ধি আসে তার মাথায়,সেই অনুযায়ী ই কাজ করবে সে।
ফাইজা পূর্ণর ব্যাপারে এখনো ইশাকে কিছুই বলেনি, কিছুটা লজ্জাই পাচ্ছে বলতে। ইশা ওকে ফোনে কথা বলতে কয়েকবার দেখেও নিয়েছিল,তবে অত বেশি কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি।
কলেজ শেষে বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো ইশা আর মোহনা। তখনি তাদের সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ইশা চেনে এই গাড়িটা,এটা আদৃতের গাড়ি এটা ধরতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। ড্রাইভিং সিটের পাশে জানালা খোলা থাকায় আদৃতকে ভালো করেই দেখা যাচ্ছিল। তবে মোহনার নজর ঠিকই পিছনের সিটের দিকে যায়,সেখানে সায়ান বসে বসে ফোনে কোনো একটা গেইমস খেলছে। গাড়ি থামার পরই সায়ান গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে মোহনার সামনে এসে দাঁড়ায়। মোহনা অবাক হয়ে বলে,
_আপনি এখানে কি করছেন?
_আমি নিজেও জানিনা।
_জানেন না মানে?
আদৃত এবার গাড়ি থেকে নেমে ইশার সামনে দাঁড়ায়, সে মাস্ক পড়া থাকায় আশেপাশে থাকা লোকজন খুব বেশি খেয়াল করেনি। আদৃত মোহনার উদ্দেশ্যে বলে,
_আমি নিয়ে এসেছি, আর এখন তোমরাও যাবে আমার সঙ্গে।
ইশা অবাক হয়ে বলে,
_কোথায় যাবো? এই আপনি কি আমাদের কিডন্যাপ করার প্ল্যান করছেন নাকি? আমি কোথাও যাবোনা আপনার সঙ্গে।
_না গেলে সারপ্রাইজ ও মিস করবে।
সায়ান এবার আদৃতের দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুই আমাকেও বললি সারপ্রাইজ,কিন্তু কি সারপ্রাইজ সেটাই তো বুঝলাম না।
_মেইন সারপ্রাইজ ই তোদের দুজনের জন্য। (সায়ান আর ইশাকে উদ্দেশ্যে করে)
_আমি যাবোনা..
আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_লাস্ট বার বলছি, যেতে পারো.. যারা যাবি গাড়িতে উঠে বস(সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে)
আদৃত গাড়িতে উঠে বসার পর সায়ান আর মোহনাও গাড়িতে উঠতে যায়। ইশা হতভম্ব হয়ে বলে,
_মেহু তুইও যাবি!
মোহনা মেকি হেসে বলে,
_যাই না,সারপ্রাইজ পেতে কার না ভালো লাগে!
মোহনাও সায়ান এর সাথে পিছনে গিয়ে বসে পড়লো। ইশা এবার বাধ্য হয়ে আদৃত এর পাশে সিটে উঠে বসে পড়লো। সারপ্রাইজ এর কথা শুনে যেতেও ইচ্ছে করছে বটে,তবে সেটা প্রকাশ করা যাবেনা।
আদৃত মাক্স এর আড়ালে মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
____
কোনো একটা পার্কের সামনে এসে গাড়ি থামালো আদৃত। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো সায়ান,মোহনা,ইশা। আদৃত ও নামলো গাড়ি থেকে। সবাই একসঙ্গে অবাক হয়ে আদৃতের দিকে তাকালো। আদৃত চোখে থাকা সানগ্লাসটা খুলে সবাইকে চোখের ইশারায় একটু সামনে বামপাশে থাকা বেঞ্চের দিকে তাকাতে বললো।
আদৃতের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালো সবাই। সঙ্গে সঙ্গেই তাদের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। কারণ বেঞ্চে ফাইজা আর পূর্ণ পাশাপাশি বসে হেসেহেসে কথা বলছে। ইশা আর সায়ান ধীর পায়ে হেটে যথাক্রমে ফাইজা আর পূর্ণর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
পূর্ন,ফাইজার মধ্যে কেউই ওদের এখানে আশা করেনি। দুজনে একসঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকায় আরেকবার একে অপরের দিকে তাকায়।
ইশা কিছুক্ষন হা করে দুজনের দিকে তাকিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,
_নেহি… নেহি…নেহি…
ওর দেখাদেখি সায়ান ও একই কাজ করে। আশেপাশের মানুষ ওদের দিকে অবাক হয়ে দাঁড়ায়। পূর্ণ কটমট চোখে সায়ান এর দিকে তাকায় বলে,
_এমন করতেছিস কেন?
_তাহলে কেমন করবো ভাই? তুমি তলে তলে টেম্পো চালাবা আর আমরা জানতেও পারবো না?
ইশাও ফাইজার দিকে তাকিয়ে ঠোট উল্টে বলে,
_তোমার থেকে এটা আশা করিনাই আপু।
মোহনা এসে পূর্ণ আর ফাইজার দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে,
_ও মাই গড ও মাই গড! নতুন একটা কাপল!
ফাইজা ইশার হাত ধরে বলে,
_আমি না তোকে আজকেই জানাতে চেয়েছিলাম বোন..
পূর্ণ সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_কিন্তু তোরা এখানে কি করে এলি,তাও একসাথে?
সায়ান উত্তর দেওয়ার আগেই মোহনা বলে,
_আরে আমাদের তো আদৃত ভাইয়া নিয়ে এসেছে, বললো আমাদের সারপ্রাইজ দেবে।
ইশা ফাইজার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলে,
_তুমি এটা ঠিক করোনি আপু,আমি তোমাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো না।
ফাইজা একনজর পূর্ণর দিকে তাকায়। পূর্ণ এবার ইশার উদ্দেশ্যে বলে,
_কেন ইশা? আমাকে কি তোমার আপুর পাশে মানায় না?
ইশা পূর্ণকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করে বলে,
_ঠিক তা নয়,ভালোই মানিয়েছে।
_তাহলে আর সমস্যা কোথায়? আচ্ছা,জেনেই যখন গেছো তখন একটা ট্রিট তো তোমার পাওয়া উচিৎ তাইনা? ঠিক আছে,আমি আজকে সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াচ্ছি।
ইশা আর সায়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে বলে ওঠে,
_তাহলে ঠিক আছে।
এবার সবাই একসঙ্গে হেসে উঠলো। ইশা যে এত সহজে রাগ কমিয়ে নেবে এটা ফাইজা আশা করেনি,তবে এখন সে খুশিই হয়েছে।
পূর্ণ সায়ান কে নিয়ে সবার জন্য আইসক্রিম আনতে চলে গেলো। মোহনা তখনি ফাইজার সামনে এসে উৎসাহ নিয়ে বললো,
_জানো আপু,আরেকটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছে আজকে।
_কি ঘটনা?
_নিরব ভাইয়া ইশাকে প্রপোজ করেছে!
ফাইজা অবাক হয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুই এক্সেপ্ট করলি?
ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে বলে,
_হ্যা, কালই কাজি অফিসে গিয়ে আমরা বিয়ে করে নিচ্ছি। তোমরা সবাই ইনভাইটেড।
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩৮
#মেহরিন_রিম
গাড়ি থেকে নামার পর অনেকগুলো মেয়ে আদৃতকে দেখতে পেয়ে ওর সঙ্গে ছবি তুলতে চলে এসেছিল। তাই তাদের সঙ্গে ছবি তোলা শেষ করে আসতে একটু দেড়িই হয়েছে আদৃতের। গাড়িতে থাকা পানির বোতলটা খুলে পানি খেতে খেতে ফাইজা,পূর্ন যেই বেঞ্চে বসে ছিল সেদিকে আসছিল আদৃত। ঠিক তখনি ইশার মুখে বিয়ের কথা শুনতে পেয়ে বিষম খেয়ে যায়। বিস্ফোরিত চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে কাশতে শুরু করে সে।
ফাইজা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
_কি হলো ভাইয়া? ঠিক আছেন আপনি?
আদৃত নিজের কাশি থামানোর চেষ্টা করে হাত নাড়িয়ে বোঝায় সে ঠিক আছে। ফাইজা তার হুট করে বিষম খাওয়ার কারণটা ঠিকই ধরতে পেরেছে,তাই ইশার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে,
_কিসব আজেবাজে কথা বলছিস তুই? কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করবি মানে?
ইশা সরু চোখে তাকিয়ে বুকে হাত গুজে বলে,
_তো তুমি আজেবাজে প্রশ্ন করলে আমিও তো তেমন উত্তর ই দিবো তাইনা! তুমি ভাবলে কি করে আমি নিরব ভাইয়ার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে নেবো? ইশা এত সস্তা নয় বুঝলে?
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদৃত। এই মেয়ের কথায় কবে যে স্ট্রোক করে বসে তাই নিয়েই সন্দেহ। ইশা আবারো বললো,
_আমিতো এনগেইজড আপু,তাহলে কি করে এক্সেপ্ট করি বলো?
ইশার কথা শুনে এবার ফাইজা,মোহনা সহ ইশা নিজেও হাসতে শুরু করলো। এরই মাঝে পূর্ণ আর সায়ান আইসক্রিম নিয়েও চলে এসেছে। সবাইকে হাসতে দেখে পূর্ণ বললো,
_কি নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে এখানে?
ইশা বেঞ্চ থেকে উঠে পূর্ণর সামনে এসে হাত নাড়িয়ে বললো,
_হাসির কারণ না খুজে ছেলে খোঁজ জিজু।
_মানে?
_মানে আমার জন্য একটা কিউট এন্ড হ্যান্ডসাম ছেলে খুজে আনো। এইযে আমার দুদিকে(মোহনা আর ফাইজাকে দেখিয়ে) দুজন মিঙ্গেল মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মাঝখানে আমিই শুধু সিঙ্গেল রয়ে গেলাম। এখন জলদি আমার জন্য ছেলে খুজে আনো। শোনো,আমাকে যেই ছেলে পাবে তার জীবন একদম ধন্য হয়ে যাবে।
আপুও(ফাইজা) অনেক ভালো মেয়ে,তুমিও জিতছো ওকে পেয়ে। বাট আই এম দা বেস্ট,তাই আমার পার্টনার ও হবে লাখে একটা। বুঝলে?
পূর্ণ একনজর আদৃতের দিকে তাকিয়ে আবারো ইশার দিকে তাকায়। মাথা ঝুকিয়ে বলে,
_যথা আজ্ঞা শালিকা।
সবাই এবার একসঙ্গে আইসক্রিম খাওয়া শুরু করলো। ফাইজা-পূর্ন একসঙ্গে, সায়ান-মোহনাও একসঙ্গে পার্কে হাটছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। তবে ইশার এখন ওদেরকে দেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই, তাই সে বেঞ্চে বসে তাদের দেখছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। আদৃত এর ঠাণ্ডার সমস্যা থাকায় সে আইসক্রিম খায়না, পাশেই একটা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রোল করার ভান করছে আর তার মাঝেই ইশার দিকে তাকাচ্ছে।
আদৃত খেয়াল করলো ইশা কিছুক্ষন ধরে তার দিকে তাকয়ে আছে। আদৃত এর কারণ ধরতে পারলো না, ইশা আইসক্রিম এর কাঠিটা ফেলে দিয়ে আদৃত এর সামনে এসে গম্ভীর মুখ নিয়ে দাঁড়ালো।
আদৃত ফোন থেকে চোখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
_কি?
ইশা কিছুটা চিন্তা করে বললো,
_আপনি তো এখন আমার এনিয়াই হয়ে গেলেন।
_এনিয়াই! এটা আবার কি?
_একদিকে আপনি আমার এনিমি আর অন্যদিকে বেয়াই। তাই দুটো মিলিয়ে হলো তো এনিয়াই। এই নামেই ডাকবো আপনাকে?
_হোয়াট! একদম না। এসব অদ্ভুত নাম তোমার মাথায় কি করে আসে? (কিছুটা রাগী সুরে বললো কথাটা)
_দেখুন আপনি কিন্তু এখন দুদিক থেকে আমার আত্মীয়। আমার তুই জিজুর ই বন্ধু আপনি, তাই এখন থেকে আমার সাথে একদম ঝগড়া করবেন না।
আদৃত ফোনটা পকেটে রেখে বলে,
_তুমিই তো আমাকে এনিমি বানিয়ে দিলে,তাহলে ঝগড়া করবো না কেন?
_আত্মীয় দের সাথে শত্রুতা রাখা উচিৎ নয়।
আদৃত এবার মনেমনে হেসে ইশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
_দেন, ফ্রেন্ডস?
ইশা কিছুক্ষন আদৃতের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো, এরপর হাত কয়েকবার হাত মেলাতে গিয়েও পিছিয়ে নিলো। অত:পর সবশেষে হাত মিলিয়ে বললো,
_ওকে,ফ্রেন্ডস।
মোহনা আর সায়ান দূর থেকে ওদেরকে দেখছিল। মোহনা ওদের দিকে তাকিয়ে দু গালে হাত দিয়ে বলে,
_হায়য়য়… কি সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে তাইনা?
_হুম,ভালোই মানিয়েছে।
_____
কেটে গেছে আরো কয়েক মাস। ইশার ফার্স্ট ইয়ার এর এক্সাম শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে। ফায়াজ ও এক সপ্তাহ আগে দেশে ফিরেছে। তার একটা কারণ ও আছে বটে, পূর্ণ আর ফাইজার সম্পর্কের ব্যাপারে দুই পরিবার ই জানে। ফাইজার বাবা মাও আর আপত্তি জানায়নি। তাই খুব দ্রুতই তাদের বিয়ের চিন্তা করছে দুই পরিবার। পূর্ণর বাবা মা আজকে ফাইজাকে দেখতে এসেছে,সঙ্গে এসেছে আদৃত আর সায়ান।
আপাতত আকদ সেরে রাখার কথা বলেছেন পূর্ণর বাবা মা। শহরে তাদের বাড়ির কাজ চলছে, কাজ শেষ হলেই বিয়ের অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। তাদের প্রস্তাবে সকলেই রাজি হয়েছে।
সোফায় বসে আছে ফাইজা,আর তার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ইশা। মাঝেমধ্যে ফাইজার কানেকানে এসে কয়েকটা কথাও বলে যাচ্ছে। ঠিক অপর পাশের সোফায় পূর্ণ মাঝখানে,আদৃত আর সায়ান দুই পাশে বসে আছে।
ফাইজার পাশেই পূর্ণর মা বসে ছিল। আগামী শুক্রবার বিয়ের দিন ঠিক করার পর তিনি নিজের ব্যাগ থেকে একটা আংটির বাক্স বের করলেন। তারপর সেখান থেকে আংটি বের করে ফাইজার উদ্দেশ্যে বললেন,
_মা তোমার হাতটা দাও তো।
ফাইজা হাত দিতে যাবে তখন ই পিছন থেকে ইশা অবাক হয়ে বলে ওঠে,
_আন্টি আপনি আপুকে বিয়ে করবেন?
ইশার কথা শুনে উপস্থিত সবার চোখ খুলে হাতে চলে আসার মতো অবস্থা। রুকসানা পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে ইশার পাশে এসে বলে,
_এই কি বলছিস তুই এসব?
ইশা স্বাভাবিক ভাবেই বলে ওঠে,
_কি বললাম আম্মু? আন্টি আংটি পরাচ্ছেন তাই বললাম। উনি তো বিয়ে করবে না, পূর্ণ ভাইয়া বিয়ে করবে। তাই আংটি টা তো পূর্ণ ভাইয়ার ই পড়ানো উচিৎ তাইনা?
রুকসানা পূর্ণর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
_কিছু মনে করবেন না আপা। ও আসলে..
_আরে না না, ও তো ঠিক ই বলেছে। এই পূর্ণ, এদিকে আয় ফাইজা কে আংটি টা পড়িয়ে দে।
পূর্ণ মনে মনে খুশি হয়ে ফাইজার পাশে এসে বসে পড়ে। ইশাও খুশি হয়ে অপর পাশে আদৃত এর পিছনে দাঁড়িয়ে ফোন এর ক্যামেরা অন করে বলে,
_আপু,জিজু এদিকে তাকাও।
ফাইজার হাতটা নিয়ে আংটিটা পড়িয়ে দেয় পূর্ণ। সবাই তখন একসঙ্গে হাততালি দিয়ে ওঠে। পূর্ণ ফাইজার হাতের দিকে তাকিয়েই আস্তে আস্তে বলে,
_হ্যাপি তুমি?
ফাইজাও নিচের দিকে তাকিয়েই বলে,
_আগেই বলেছিলাম,আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে হবো যখন তুমি আমার পাশে থাকবে।
_নিজ ইচ্ছেতেই চিন্তাময় জীবন গ্রহণ করছো?
_করছি।
দুজনেই মুচকি হাসে। শুরুটা কষ্টের হলেও তাদের পরিণতি হয়তো এভাবেই লেখা ছিল।
দুপুরের খাবার না খেয়ে রুকসানা কাউকে বাড়ি থেকে যেতে দেবেনা। তাই আংটি পড়ানোর পরই সকলে খেতে বসেছে। ফাহমিদা আর রুকসানা মিলে তাদের আপ্যায়ন এ কোনো ত্রুটি রাখছে না। ইশা আগে থেকেই সোফায় বসে ছিল। খাওয়া শেষে পূর্ণ,আদৃত,সায়ান ও এসে অপর পাশে সোফায় বসে পড়ে। বাকিদের এখনো খাওয়া শেষ হয়নি।
ফাহমিদা টেবিলে কিছু লাগবে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখছেন। রুকসানা পূর্নদের সামনে এসে ইশার উদ্দেশ্যে বলে,
_ইশা,ওদের জন্য কোক নিয়ে আয় তো। টেবিলে দেওয়া হয়নি বোধ হয়।
_যাচ্ছি।
ইশা কোক আনতে যাওয়ার পর রুকসানা পাশের সোফায় বসে সায়ান আর আদৃত এর উদ্দেশ্যে বলে,
_তোমাদের বন্ধু তো বিয়ে করে নিচ্ছে, তা তোমরা কবে বিয়ে করছো?
সায়ান সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে,
_আমিতো এক্ষুনি বিয়ে করতে প্রস্তুত আন্টি। কিন্তু ফিউচার শশুর শাশুড়ি তো তাদের মেয়েকে পড়াশোনা না শেষ করিয়ে বিয়েই দেবেন না।
সায়ান এর কথায় হাসলো রুকসানা। ইশাও তিনগ্লাস কোক নিয়ে এসে টি টেবিল এর উপর রেখে সোফায় বসে পড়ে। রুকসানা আদৃত এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_আর তুমি?
_ওনাকে কে বিয়ে…
কথা শেষ করতে পারেনা ইশা। আদৃতের তাকানো দেখে চুপ করে যায় সে। আদৃত রুকসানার দিকে তাকিয়ে পূনরায় ইশার দিকে তাকায়। মৃদু হেসে বলে,
_আমি যাকে বিয়ে করবো তার এখনো বিয়ের বয়স ই হয়নি আন্টি।
আদৃতের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালো ইশা। এই লোক তাহলে প্রেম ও করে! কে প্রেম করে ওনার সঙ্গে? অতি দয়ালু ইশার সেই মেয়ের কথা ভেবে খারাপ ও লাগে। মনে মনে বলে,
_মেয়েটার ভাগ্যই খারাপ..
#চলবে
[বোনাস পর্ব পেতে চাইলে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করতে হবে। নাইস,নেক্সট ব্যাতীত।
হ্যাপি রিডিং।]