হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_১২

0
850

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১২

“চোখ মুখের এই‌ অবস্থা কেন তোর?”

ভাইয়ের কথা শুনে জারা চমকে‌‌ উঠে। কি‌ বলবে এখন ভাইকে? সবাইকে তো বলে দিয়েছে যে গত রাতে ঘুম হয় নি বলে চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে। কিন্তু ভাই কি তার এই‌ কথা বিশ্বাস করবে। ভাই যে তার বড্ড চালাক। বোনকে চুপ‌ থাকতে দেখে জাহিন পুনরায় বলে।

“কি হল কিছু জিঙ্গেস করছি তো আমি?”

“আসলে ভাইয়া গতকাল রাত্রে ভাল ঘুম হয় নি তো তাই এমন দেখাচ্ছে।”

জাহিন সন্দিহান গলায় বলে, “শুধু ঘুম হয় নি বলে‌ চোখ মুখের এই অবস্থা নাকি…..।”

“ভাই আমি সব কিছু গুছিয়ে গাড়িতে‌ তুলে‌ দিয়েছি।”

জাহিনের কথার মাঝে নুহাশ এসে কথাটা বলে। জারাও এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বলে, “ভাইয়া আমি দেখে আসি ভাবি কেন এখনও আসছে না।”

জারা কথাটা বলেই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। নুহাশ জারাকে এভাবে দৌঁড়ে চলে যেতে দেখে জাহিনকে বলে, “কি হয়েছে জারা এভাবে চলে গেল কেন?”

জাহিন প্যান্টর পকেটে হাত গুজে বলে, “আমার প্রশ্নের উত্তর যাতে না দিতে হয় তার জন্য।”

“কি উত্তর?”

“চোখ মুখের এই‌ অবস্থা কেন তা জিঙ্গেস করেছিলাম। মনে হচ্ছিল কোনো কারণে হয়তো বোনটা আমার কান্না করেছে।”

নুহাশ আতংকে উঠে এই‌ কথাটা শুনে। জারা কান্না করেছে কিন্তু কেন? আচ্ছা কান্না করার কারণটা সে নয় তো আবার। মেয়েটাকে কি সে একটু বেশিই‌ কষ্ট দিয়ে ফেলছে। আচ্ছা জারার ভালোবাসার ডাকে এক বারের জন্য সাঁড়া দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। হয়তো হবে নয়তো হবে না। হুট করে নুহাশ নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। কি ভাবছিল সে এতক্ষণ এসব? এটা সম্ভব নয় কিছুতেই সম্ভব না? কোথায় জারা আর কোথায় ও? মানানসইয়ের তো একটা ব্যাপার আছে। জাহিন নুহাশের ভাবাবেশ চেহারা দেখে বলে।

“কি ভাবছিস তুই?”

নুহাশ স্মিত হেসে বলে, “কিছু না চলো আমি গাড়ি পার্ক করে রেখেছি।”

জাহিন আর নুহাশ চলে যায়। জারা অয়ন্তির‌ কাছে এসে বলে, “ভাবি হয়েছে তোমার?”

অয়ন্তি মাথায় ঘোমটা দিতে দিতে বলে, “হুম হয়ে গেছে।”

“ঠিক আছে তাহলে চলো।”

“জারা আমাদের‌ সাথে গেলে হতো না তাহলে‌ ঘুরে আসতে‌ পারতে।”

জারা মুচকি‌ হেসে বলে, “না ভাবি আমি‌‌‌ যদি যাই তোমাদের‌‌ সাথে তাহলে আহানও বায়না ধরবে আমাদের সাথে যেতে। আর আহানের আর কয়েকদিন পরেই‌ বার্ষিক‌‌ পরীক্ষা। আর তার উপরে আমার‌ প্রি-টেস্ট পরীক্ষা‌ সামনে।”

অয়ন্তি মুখ কালো করে‌ বলে, “আচ্ছা।”

“রাগ করছো‌ কেন আমাদের‌ পরীক্ষার পর তোমাদের বাড়িতে গিয়ে এক মাস থেকে‌ আসব।”

অয়ন্তি হেসে বলে, “ভবিষতে দেখা‌ যাবে তোমার কথার কত টুকু দাম।”

“হুম এবার চলো‌ না হলে আমার মা জননী আবার চেঁচামেচি করা‌ শুরু করে‌ দিবে।”

অয়ন্তি নিচে নেমে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায় নিজের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে। জাহিন ড্রাইভ করছে আর তার পাশেই অয়ন্তি বসে আছে বাইরের দিকে মুখ করে। খুব টেনশনে আছে গ্রামে গেলে গ্রামের মানুষরা কটু কথা তো বলবেই আর তার উপরে জাহিন বলেছে ওকে রেখে কিছুক্ষণ ওখানে থেকে চলে আসবে। এতে তো গ্রামের মানুষরা আরো কটু কথা বলবে। কি করে অয়ন্তি জাহিনের চলে আসাটা আটকাবে? সেই ভাবনাতেই ডুবে আছে অয়ন্তি। হঠাৎ করেই জাহিনের গাড়ির সামনে একটা লোক চলে আসে আর জাহিন জলদি করে গাড়ি সাইড করে জোরে গাড়ি ব্রেক কষে তাতে ভাবুক অয়ন্তি নিজের টাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে হেলে পড়তে নিলে জাহিন তাৎক্ষণিক অয়ন্তির হাতটা জাপটে ধরে নিজের দিকে অয়ন্তিকে ঘুরিয়ে আনে। অয়ন্তি ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। জাহিন যদি তার হাতটা না ধরত তাহলে হয়তো এতক্ষণে মাথা ফেটে যেত। জাহিন হতবাক হয়ে গেছে, দু দুইটা দুর্ঘটনার হাত থেকে সে এই মুহূর্তে বাঁচল। জাহিন উদগ্রীব কন্ঠে অয়ন্তিকে বলে।

“আপনি ঠিক আছেন?”

অয়ন্তি ঢোক গিলে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে, “হুম ঠিক আছি আমি।”

জাহিন অয়ন্তির হাত ছেড়ে দিয়ে লক্ষ্য করে অয়ন্তি সিট বেল্ট লাগায় নি। জাহিন চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে অনামিকা আঙ্গুল দ্বারা বা চোখের ভ্রুটা চুলকিয়ে অয়ন্তির দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে রাশভারি গলায় বলে।

“সিট বেল্ট লাগাননি কেন আপনি?”

অয়ন্তি বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সিট বেল্ট লাগানোর কথা। তার উপরে সিট বেল্ট কি করে লাগাতে হয় সেটাও ঠিক ভাবে জানে না সে। এই‌ প্রথম বার গাড়ির সামনে বসেছে সে। অয়ন্তি নিচের দিকে তাকিয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে।

“আসলে আমি জানি না কি করে সিট বেল্ট লাগাতে হয়।”

জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “আপনি এটা আমাকে আগে বলেন নি কেন? যদি আগে বলতেন তাহলে তো এমনটা হতো না। আর আমিও খেয়াল করে নি যদি খেয়াল করতাম তাহলে এমনটা হতো না।”

জাহিনের গলায় স্পষ্ট রাগ টের পাচ্ছে অয়ন্তি। এই প্রথমবার জাহিন অয়ন্তির সাথে রাগী স্বরে কথা বলল। আর রাগ করাটাও যুক্তিসংগত। আজ তার হটকারিতার জন্য বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। অয়ন্তি অপরাধীদের মতো নিচের ঠোঁট কামড়ে থুতনি চিবুক অব্দি ঠেকিয়ে রেখেছে। জাহিন এক পলক অয়ন্তির মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সিট বেল্ট খুলে অয়ন্তির কাছে আসে সিট বেল্ট লাগানোর জন্য। আকস্মিক জাহিনকে নিজের কাছে আসতে দেখে অয়ন্তি টানটান হয়ে বসে পড়ে ধম আটকে রেখে। অয়ন্তির কাছে আসতেই আবারো সেই মিষ্টি গন্ধের সুবাস এসে নাকে ধাক্কা দিল‌ জাহিনের নাকে। কেমন যেন মাদকতায় ভরা এই মিষ্টি ঘ্রাণে, ইচ্ছে হয় এই মিষ্টি ঘ্রাণটা নিজের সারা অঙ্গে মেখে নিতে। জাহিন ঝট জলদি‌ হাত বাড়িয়ে অয়ন্তির সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজের স্থানে এসে বসে শুকনো ঢোক গিলে নিজের সিট বেল্ট বেঁধে ড্রাইভ করায় মনযোগ দেয়।

__________

হিয়া রাগের বশে দাঁতে দাঁত চেপে হাতে কলম নিয়ে খাতার সাদা কাগজে কলমের দাগ বসাচ্ছে খুব গভীর ভাবে যার দরুন খাতার পাতা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আলেয়া বেগম রুমে ঢুকে মেয়েকে এমন করতে দেখে ব্যগ্র গলায় বলে।

“এসব কি করছিস হিয়া?”

মায়ের গলায় স্বর শুনে হিয়া আরো‌ রেগে গিয়ে আরো জোরে জোরে কলম দিয়ে দাগ কাটতে থাকে। এবার আলেয়া বেগম মেয়ের পাশে গিয়ে চাপা গলায় বলে, “কি হয়েছে?”

হিয়া ডুকরে কেঁদে উঠে মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা গলায় বলে, “মা আমি জাহিন ভাইয়ের পাশে ওই মেয়েটাকে সহ্য করতে পারছি না। আমি আজকেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাই। আমি শত চেষ্টা করলেও এবার কিছু হবে না কারণ জাহিন ভাই যে এখন বিবাহিত। আর ভালোবাসা জোর করে পাওয়া যায় না। আমি না হয় জাহিন ভাইকে দূর থেকে ভালোবেসে যাব। জানি মেনে নিতে কষ্ট হবে কিন্তু ধীরে ধীরে সবটা সয়ে যাবে। আর অয়ন্তি ওর তো কোনো দোষ নেই। বিয়ে হওয়ার তো কথা ছিল রিহানের সাথে কিন্তু রিহান পালিয়ে যাওয়াতে জাহিন ভাই বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছে। আর জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে। হয়তো আল্লাহ আমার জন্য আরো ভালো কিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছেন।”

আলেয়া বেগম মেয়ের মাথা স্নেহের হাত বুলিয়ে বলে, “শান্ত হ মা। এভাবে কান্না করিস না তাহলে যে শরীর খারাপ করবে।”

হিয়া মায়ের কাছ থেকে সরে এসে বসা থেকে উঠে ব্যাগ নিয়ে কাপড় গুজাতে গুজাতে বলে, “চলো আমরা আজকেই চলে যাই আমাদের বাসায়। এখানে থাকলে আমি অসুস্থ হয়ে যাব।”

আলেয়া বেগম অবাক চোখে তাকিয়ে‌‌ মেয়েকে দেখছে। রাত পর্যন্ত প্রতিশোধ নিবে প্রতিশোধ নিবে অয়ন্তির কাছ থেকে বলে বেরিয়েছে। হঠাৎ করে মেয়েটার হল কি? অবশ্য হিয়া যথেষ্ট ম্যাচিওর তাই হয়তো রাগের বশে আগে এসব আগে বলে ফেলেছে। হিয়া কাপড় একা নিজেই গুজিয়ে‌ বলে।

“চলো মা।”

কথাটা বলেই লাগেজ টানতে টানতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। হিয়া লাগেজ নিয়ে‌ ড্রয়িং রুমে আসে। ড্রয়িং রুমে বসে আযহার শেখ‌‌ খবরের কাগজ পড়ছিলেন। ভাগনীকে এভাবে দেখে বসা থেকে উঠে বলে।

“একি হিয়া তুমি ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”

“ছোট মামা বাড়ি চলে যাচ্ছি।”

“এতো তাড়াতাড়ি কেন?”

“এমনি মামা ভাল লাগছে না।”

আযহার শেখ ভাগনীর কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে‌ বলে, “যা হওয়ার‌ হয়ে গেছে মামা‌ এটা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। তোমার বাকি জীবনটা পড়ে রয়েছে‌ সেটা‌ উপভোগ করো। আবেগের বশে ছোটখাটো ভুল হতেই পারে তাতে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে‌ চলবে।”

হিয়া কান্না আটকে বলে, “ভেঙ্গে পড়ি‌ নি‌ মামা।”

জারা সবে মাত্র গোসল করে নিচে নেমেছে চুল থেকে এখন টপটপ করে পানি পড়ছে। হিয়াকে ব্যাগ সমেত দেখে বলে, “একি হিয়া আপু ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”

আহান খাবার টেবিল থেকে বলে, “হিয়া আপু চলে যাচ্ছে আমাদের বাসা নাকি আর ভালো লাগছে না হিয়া আপুর।”

জারা কিছু বলে না বুঝতে পারে কেন চলে যেতে চাইছে হিয়া। এক তরফা ভালোবাসা জিনিসটা বড্ড যন্ত্রণাদায়ক যে যন্ত্রণায় সে প্রতিনিয়ত সইছে। জোহরা বেগম আর রুনা আক্তার অনেক জোরাজুরি করলো কিন্তু লাভ হল না। এমন কি আজমল শেখকেও ফোন করে বোনের চলে যাওয়ার কথা বলল। কিন্তু বড় মামার কথাও মানল না হিয়া। হিয়া নিজের সিদ্ধান্তে অনড়।‌ সে আজকেই শেখ বাড়ি‌ ছেড়ে চলে যাবে। কাউকে তো আর জোর করে আটকে রাখা যায় না তাই আর কেউ আটকায় নি হিয়াকে। হিয়া আর আলেয়া বেগম সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খাওয়া দাওয়া না করেই চলে যায়।

জারা ফুফু আর হিয়াকে বিদায় জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলেই‌ মুখোমুখি হয় নুহাশের। নুহাশ জারাকে দেখে থমকে যায়। এই দশ দিনে যেন জারা অনেকটা বড় হয়ে গেছে চোখের পলকে। দিন দিন যেন‌ একজন পূর্ণবয়স্ক নারীতে পরিণত হচ্ছে তার চোখের সামনে থাকা সেই ছোট্ট জারা। যেই জারার জন্ম দেখেছে নুহাশ সেই ছোট্ট জারা কি না তাকে মন দিয়ে বসেছে। মাঝে মাঝে নুহাশের বড্ড হাসি পায় জারার এমন পাগলামো দেখে। তার বয়স থেকে গুনে গুনে দশ বছরের একটা প্রাপ্ত বয়স্ক একটা ছেলেকে মন দিয়ে বসল মেয়েটা। নুহাশের হাসি দেখে জারার গা জ্বলে যাচ্ছে। মন চাইছে নুহাশের কপাল ফাটিয়ে দিতে যেভাবে ছোট বেলায় একবার ফাটিয়েছিল রাগের বশে ব্যাট দিয়ে। সেই কপাল ফাটার দাগটা এখনও জ্বলজ্বল করছে নুহাশের কপালের বা সাইডে। জারা রেগে বলে।

“তুমি এমন ক্যাবলার‌ মতো হাসছো কেন?”

নুহাশ থতমত খেয়ে যায় জারার কথা‌ শুনে। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, “না এমনি।”

মুহূর্তের মাঝে জারার গলার স্বর নরম হয়ে এলো‌, “খুব মজা পাচ্ছো না।”

“মানে।”

জারা নিঃশব্দে হেসে বলে, “কিচ্ছু না।‌ আর মানেটা বুঝাতে আমি হয়তো অক্ষম। যে বুঝেও না বুঝার ভান ধরে তাকে হাজার চেষ্টা করলেও বুঝানো যায় না।”

কথাটা বলে জারা সিঁড়ি বেয়ে বড় বড় পা ফেলে নিজের ঘরে চলে যায়। নুহাশ জারার চলে যাওয়ার পথে নির্নিমেষ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। সত্যিই সে বুঝেও না বুঝার ভান ধরে। যে পরিবার তাকে আশ্রয় দিয়েছে, পরিবারের একজন সদস্য বানিয়েছে, সেই পরিবারের আদরের মেয়ের দিকে কি করে নজর দিবে সে?

_________

প্রায় তিন ঘন্টা জার্নি করে‌ অয়ন্তি নিজের বাবার নীড়ে এসে পৌঁছায়। আগে থেকে বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছিল ওদের জন্য। আর তার সাথে আছে প্রতিবেশীরা। অয়ন্তি গাড়ি থেকে নামতেই ফাইজ দৌঁড়ে এসে বোনের কোমর জড়িয়ে ধরে। ফাতেমা আক্তার মেয়ের কাছে এসে কোমল গলায় বলে।

“কেমন আছিস মা?”

অয়ন্তি মিষ্টি হেসে বলে, “ভালো‌ আছি মামনি।”

অন্যদিকে জাহিন উঠোনের এক সাইডে গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে নামতেই হামিদ খন্দকার এগিয়ে আসেন। জাহিন শশুর মশাইকে দেখে সালাম দেয়। হামিদ খন্দকার সালামের উত্তর দিয়ে জাহিনকে বলেন।

“চলো বাবা ঘরে চলো অনেকটা জায়গা জার্নি করে এসেছো।”

জাহিন পা বাড়ায় ঘরের দিকে। তখনই কানে ভেসে আসে ফিসফিসিয়ে বলা কথা গুলা “জামাই প্রথম বার শশুর বাড়িতে আসল আর কিছু নিয়ে আসল না, এ কেমন জামাই রে বাবা?” আরেক জন বলে “আরে এই ছেলেটা কি অয়ন্তির জামাই হওয়ার কথা ছিল নাকি, কথা ছিল তো ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার। আমার মনে হয় ছেলেটা মন থেকে অয়ন্তিকে মেনে নেয় নি তাই রেগে মিষ্টি টিষ্টি আর আনে নি।” জাহিন হাঁটা থামিয়ে শশুর মশাইকে বলে।

“মিষ্টির প্যাকেট গুলা নামাতে হবে।”

জাহিন কথাটা বলেই গাড়ির ডিকি খুলে এক এক করে মিষ্টির প্যাকটে গুলা নামাতে। এত মিষ্টির প্যাকেট দেখে প্রতিবেশীদের চোখ চড়কগাছ। জাহিনের মনে ছি নাগাড়ি থেকে মিষ্টি নামানোর কথা মনে। এত মিষ্টির প্যাকেট দেখে হামিদ খন্দকার বলেন।

“এত মিষ্টি কেন বাবা?”

জাহিন এক নজর প্রতিবেশীদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, “প্রথম বার শশুর বাড়ি এসেছি খালি হাতে তো আর আসা যায় না।”

“ঠিক আছে বাবা তুমি ঘরে যাও আমি এগুলা নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

জাহিন ঘরে আসতেই অয়ন্তি তাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। জাহিন এই রুমে এই নিয়ে দু বার আসল। প্রথম বার এসেছিল বিয়ের দিন আর এখন। অয়ন্তি লাগেজ থেকে জাহিনের পোশাক বের করে বলল।

“ফ্রেশ হয়ে নিন।”

জাহিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে অয়ন্তির দিকে। অয়ন্তি ভয়ে ভয়ে বলে, “কি হয়েছে? আপনি কি এখনও আমার উপরে রেগে আছেন ওই ঘটনাটার জন্য। আমি সত্যি বুঝতে পারে নি এমনটা হবে।”

জাহিন কিছু না বলে অয়ন্তির কাছ থেকে নিজের জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অয়ন্তির মনটা খারাপ হয়ে যায়। জাহিন নিশ্চয়ই তার উপরে রেগে আছে। এমন সময় ফাতেমা আক্তার চেঁচিয়ে বলেন “অয়ন্তি তোর চাচিরা তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।”

অয়ন্তি বসার ঘরে আসতেই একজন মহিলা বলে উঠেন, “কিরে অয়ন্তি কেমন আছিস? আর জামাই কোথায়?”

“ওনি ফ্রেশ হতে গেছেন।”

“তা বলচ্ছিলাম জামাই মেনে নিয়েছে তো তোকে? এভাবে বিয়ে শাদী হলে তো আবার ছেলেরা মেনে নেয়।”

ফাতেমা আক্তার বলেন, “না না জাহিন এমন ছেলে নয়।”

আরেকজন ঠাট্টার ছলে বলে, “সে তো আমরা আর ভেতরে ঢুকে দেখে নি কার মনে কি আছে?”

আরো নানা রকমের কথা বার্তা বলেন তারা। অয়ন্তি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সে জানতো এমন পরিস্থির মুখোমুখি হতে হবে তাকে। এর কিছুক্ষণ পরেই জাহিন অয়ন্তির খুঁজে বসার ঘরে আসে। জাহিনকে দেখেই একজন মহিলা বলেন, “এইতো আমাদের জামাই চলে এসেছে। তা জামাই ভালো আছো?”

জাহিন মুচকি হেসে বলে, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

“তা বসো একটু আমাদের সাথে কথাবার্তা বলি।”

জাহিন অয়ন্তির দিকে তাকায়। অয়ন্তির‌ চেহারা দেখে বুঝতে পারল এখানে নিশ্চয়ই এই‌ মহিলার কিছু বলেছেন যার জন্য মেয়েটা এভাবে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর গ্রামের মহিলারা তো কথা বলতে ওস্তাদ। জাহিন গিয়ে সোফায় বসতেই ফাতেমা আক্তার বলেন, “তোমরা কথা বলো‌ আমি চা নিয়ে আসি।”

ফাতেমা আক্তার চলে যেতে বলা শুরু করল‌, “তা আমাদের মেয়েকে কেমন লাগল তোমার বাবা? পছন্দ টছন্দ হয়েছে তো? যেভাবে তোমাদের বিয়েটা হয়েছে তাতে তো এক্কেবারে গ্রামে হিড়িক পড়ে গেছে। সবাই এক কথাই বলছে হামিদ মাস্টারের মেয়ের এমন ভাবে বিয়ে হয়েছে যা গ্রামে আগে কখন ঘটে নি।‌‌ আর ঘটবেই বা কি করে সবার কপাল তো আর ওর মত নয়।”

জাহিন নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলে, “আপনি একটু আগে আমাকে প্রশ্নে করেছিলেন যে অয়ন্তিকে‌ আমার কেমন লেগেছে তাই তো। তো তার উত্তরটা আমি দেই।”

অয়ন্তির প্রতিবেশী চাচিরা জাহিনের কথায় কিছুটা অবাক হয়। জাহিন ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে।

“বিশ্বাস করুন অয়ন্তিকে আমার কাছে এক্কেবারে নরম মোমের মতো লেগেছে। যাকে স্পর্শ করলেই আমার উত্তাপ পেয়ে গলে যায়। এখন বলুন সেই নরম মোমের মতো মেয়েকে কি পছন্দ না করে থাকা যায়? আর তার উপরে তিন কবুল পড়ে বিয়ে করেছি। সেই তিন কবুলের তো একটু মর্যাদা দিতে হবে তাই না। তাই বলছি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে এত মাথা ঘামাতে হবে না‌ আপনাদের বুঝলেন।”

অয়ন্তি হা করে জাহিনের দিকে তাকিয়ে‌ আছে। এই লোক কি বলছে এসব সবার সাথে? লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে নাকি? আর স্পর্শ করলে ওনার উত্তাপ পেয়ে গলে যায় মানে? এখনও তো ঠিক মতো স্পর্শই করে নি তাকে গলে যাওয়া তো দূরের কথা।

#চলবে________

নুসরাত জাহান বৃষ্টির গল্পকথা —গ্রুপ সবাই জয়েন হয়ে নিবেন। আর সুন্দর সুন্দর পোস্ট করবেন।

Nusrat Jahan —আইডি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here