#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৭
মেয়র খলিল তালুকদারের বাড়িতে পুলিশ এসেছে। সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এই কথাটা মুহূর্তের মাঝে। সবার মুখে মুখে এক কথা বয়ে বেড়াচ্ছে “মেয়র খলিল তালুকদারের বাড়িতে পুলিশ এসেছে।” তালুকদার ম্যানশনের সামনে মানুষের ভীড় জমে আছে। সবাই উৎসুক নয়নে বাড়ির ভেতরে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে পুলিশ কেন এসেছে? খলিল তালুকদার শারাফের কাছে এসে প্রশ্ন করেন।
“কি ব্যাপার এসআই হঠাৎ তোমার ফোর্স নিয়ে আমার বাড়িতে হানা?”
শারাফ গম্ভীর গলায় বলে, “আপনার বাড়ি সার্চ করা হবে স্যার।”
খলিল তালুকদার ভ্রু কুঁচকে বলেন, “মানে।”
“মানেটা হল আমাদের কাছে খবর আছে আপনার বাড়িতে বেআইনি কাগজপত্র আর অবৈধ মালামাল আছে।”
“খবরদাতাটা কে জানতে পারি?”
“সরি স্যার তার পরিচয় আমরা আপনাকে দিতে পারব না।”
“কিন্তু এভাবে তো কারো বাড়ি সার্চ করা যায় না এসআই। তার জন্য সার্চ ওয়া…।”
শারাফ খলিল তালুকদারকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “প্রায় দুই বছর হতে চলল এই পেশায় আছি। তাই আইনটা আমি খুব ভাল করেই জানি স্যার।”
শারাফ হাতে থাকা সার্চ ওয়ারেন্টের কাগজটা খলিল তালুকদারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “এই যে সার্চ ওয়ারেন্টের কাগজ আপনি চেক করে নিতে পারেন।”
কথাটা বলে ফোর্সদের ইশারা করে বলে পুরো বাড়ি তল্লাশী করার জন্য। খলিল তালুকদার চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসেন পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে। ওনার পাশে ওনার স্ত্রী লিপা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। লিপা বেগমের চোখে মুখে আতংকের ছাপ। সাদিক বাড়িতে নেই। কিছু কাজের জন্য শহরের বাইরে গেছে। খলিল তালুকদার শারাফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন।
“এসআইয়ের জন্য এক কাপ করতে বলি।”
“না স্যার তার কোনো প্রয়োজন নেই আর আমি আপনার বাড়িতে চা পান করতে আসি নি কাজে এসেছি।”
খলিল তালুকদার মুখ দিয়ে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলেন, “ঠিক আছে অন্য দিন না হয় চা পান করার জন্য এসো।”
এমন সময় কনস্টেবল হান্নান করিম এসে শারাফের কানে কানে বলেন, “স্যার কোনো কিছু পেলাম না তো।”
শারাফ ভ্রু কুঁচকে বলে, “সব জায়গা ভাল করে সার্চ করেছেন?”
“জি স্যার। শুধু একটা ঘর বাদে।”
“একটা ঘর বাদে কেন?”
“ওই ঘরটায় তালা দেওয়া স্যার।”
“ঠিক আছে।”
শারাফ খলিল তালুকদারকে উদ্দেশ্য করে বলে, “স্যার তালাবদ্ধ ঘরটা খুলে দিতে হবে।”
খলিল তালুকদার কিছু মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে মাথা ঝাকিয়ে বলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই! আসলে ওই ঘরটা আমার স্টাডি ঘর।”
কথাটা বলে খলিল তালুকদার বসা থেকে উঠে অন্য ঘরে গিয়ে চাবি এনে তালা খুলে দেয়। এই ঘরটাও সার্চ করা হয় কিন্তু আশানুরুপ কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না শুধু বই ছাড়া। কিন্তু শারাফের মনে সন্দেহের বীজ বপন হচ্ছে সামান্য একটা স্টাডি রুম তালাবদ্ধ করে রাখার মানে কি? খলিল তালুকদার উৎকণ্ঠা গলায় বলেন।
“তো এসআই কিছু কি পাওয়া গেল তল্লাশি করে? আর পাবেই বা কি করে এই বাড়িতে তো এমন কিছুই নেই।”
শারাফ শীতল চোখে খলিল তালুকদারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “এই সামান্য রুমে তালা দেওয়ার কারণটা কি জানতে পারি আমি স্যার?”
খলিল তালুকদার বাঁকা হেসে জবাব দেয়, “এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পত্র আছে আমার তাই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বলা তো যায় না যদি চুরি হয়ে যায় কিছু।”
শারাফ ভ্রু উঁচু করে বলে, “ওওও। শুধু কি চুরের ভয়ে তালা দেওয়া হয়?”
“হুম।”
“চুরের কি এতই ক্ষমতা যে একজন মেয়রের বাড়িতে প্রাণের ঝঁকি নিয়ে এসে সে চুরি করবে।”
খলিল তালুকদার নিঃশব্দে হেসে বলেন, “কথায় আছে সাবধানের মার নেই। তাই আমিও সাবধানে থাকি বলা তো যায় না কখন কি হয়ে যায়?”
“সাবধানে থাকা ভাল কিন্তু মাঝে মাঝে এই সাবধানতার ফাঁক দিয়েও কিছু অসাবধানতার কাজ ঘটে যায়।”
খলিল তালুকদার ম্লান হেসে বলেন, “একদম ঠিক বলেছো তুমি। কিন্তু এবার তোমাকে আমি একটা সাজেশন দেই কারো অবান্তর কথায় নিজেদের সময় নষ্ট করবে না বুঝলে। সময় বড্ড দামি একটা জিনিস চলে গেলে কিন্তু পরে আফসোস করতে হবে।”
“আমাদের পেশাটাই এ রকম। কোনো ধরণের কেস হাতে পেলে সেটা পর্যবেক্ষণ করা সেটা অবান্তর হোক কিংবা সত্যি।”
শারাফ কথাটা বলে তালুকদার ম্যানশন থেকে বেরিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। কিছু রাস্তা দূরে যেতেই শারাফ জাহিনকে ফোন দেয়।
জাহিন এতক্ষণ শারাফের কলের অপেক্ষায় ছিল। জাহিন কল পিক করে বলে, “হ্যাঁ শারাফ কি খবর?”
“ভাই কিচ্ছু খুঁজে পাওয়া গেল না।”
জাহিন উত্তেজিত গলায় বলে, “এটা কি করে সম্ভব? এই তালুকদার ম্যানশনে সব কিছু থাকার কথা।”
“কিন্তু ভাই সব জায়গা তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে কিন্তু কিচ্ছু পাওয়া যায় নি।”
জাহিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “ঠিক আছে রাখছি তাহলে।”
জাহিন ফোনটা ডেস্কের উপরে শব্দ করে রেখে দু হাতের তালু একসাথে শক্ত করে ধরে বলে, “কোন খেলায় মেতে উঠেছেন মেয়র সাহেব আপনি। প্রতি পথে আমায় মাত দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু আমি কিচ্ছু করতে পারছি না কিচ্ছু না। এর পরের বার কি করবেন আপনি আমার বিরুদ্ধে কি চাল দিবেন মেয়র সাহেব?”
জাহিনের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ। কি হতে চলেছে ভবিষতে? আদৌ কি সে রাজনীতির পথে থাকতে পারবে নাকি নোংরা কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হতে চলেছে। যে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে হবে বাধ্য হয়ে।
______
খলিল তালুকদার স্টাডি রুমের দরজাটা বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে শব্দে করে হেসে উঠে আর বলেন, “এত সহজে তো আমাকে ধরা যাবে না জাহিন। আমি জানি এই চালটা তুমি দিয়েছো আমার বিরুদ্ধে। তোমার চালা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আমি বুঝতে পারি কিন্তু তুমি আমার পদক্ষেপগুলা ধরতে পারবে না জাহিন। তুমি নিতান্তই একটা বাচ্চা ছেলে জাহিন। লড়াই হয় সমানে সমানে কিন্তু তুমি এখনও আমার সমতুল্য হতে পারো নি।”
কথাটা বলে এগিয়ে যায় বড় একটা বুকসেল্ফের দিকে। বুকসেল্ফের একটা বইয়ের আড়ালে থাকা সুইচে চাপ দিতে বুকসেল্ফটা আস্তে করে সরে যায় আর ভেসে উঠে একটা গোপন কক্ষ। খলিল তালুকদার রুমের ভেতরে প্রবেশ করে বুকসেল্ফের পেছেন থাকা সুইচে চাপ দিতেই বুকসেল্ফটা নিচের জায়গা চলে যায়। এখানে যে একটা গোপন রুম আছে সেটা একমাত্র খলিল তালুকদার ছাড়া আর কেউ জানে না। আর বাইরে থেকে বোঝার কোনো ক্ষমতা নেই যে ভেতরে কোনো রুম আছে। রুমের ভেতরে রয়েছে নানা রকমের দলিল আরো অনেক অবৈধ জিনিস পত্র। খলিল তালুকদার এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে আর বলে।
“জাহিন এবার তোমার বিরুদ্ধে যেই অস্ত্রটা নিক্ষেপ করতে চলেছি তাতে তোমায় মেয়র পদে দাঁড়ানো তো দূরে থাক তোমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে দিবে নির্বাচন অফিস থেকে। আর রইল তোমার অতিপ্রিয় জনগণদের কথা তারা তোমাকে দেখলে তেড়ে আসবে। সবাই তোমার মুখে থুতু দিবে। সবাই এটা বলবে এই ভালো মানুষীর মুখোশের আড়ালে একটা নিকৃষ্ট মানুষ লুকিয়ে ছিল। তোমার যত বিরোধী দল আছে সবাই যে এক জোট হয়ে গেছে জাহিন। কি করে এই শক্তিশালী দল থেকে নিজেকে সেইফ করবে কি করে?”
বলেই কুটিল হেসে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন করে।
______
রিহান বসে আছে ফোন হাতে নিয়ে। পাপড়ি নামের মেয়েটিকে রিহান কল দিচ্ছে কিন্তু ধরছে না। মেয়েটি কল একবার ধরে হ্যালো বলে রিহানের পরিচয় জানার পর টাস করে তার মুখের উপরে কল কেটে দেয়। এরপর রিহান অনেক বার কল দেয় কিন্তু পাপড়ি ধরে নি। রিহানের বড্ড ইগোতে লাগছে তাকে এভাবে উপেক্ষা করল মেয়েটি, এত্ত বড় সাহস। আজ বিকালে যদি মেয়েটিকে হাতে নাতে না ধরেছে তাহলে তার নাম রিহান নয়।
_______
দুপুরের দিকে জাহিন বাড়ি ফিরে আসে। ছেলেকে এত জলদি ফিরে আসতে দেখে জোহরা বেগম বলেন, “জাহিন বাবা আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে সব ঠিক আছে তো বাবা।”
জাহিন স্মিত হেসে বলে, “হ্যাঁ মা সব ঠিক আছে।”
জোহরা বেগম নরম গলায় বলে, “রাজনীতি করা ছেড়ে দে বাবা।এসব ছেড়ে ব্যবসায় জয়েন হয়ে যা।”
জাহিন মাথা নাড়িয়ে বলে, “রাজনীতি ছাড়তে পারব না মা। এই কথাটা আর বলো না আমাকে যেই কথাটা আমি রাখতে পারব না।”
“তুই কেন বুঝতে চাইছিস না কত্তটা দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় আমাকে জানিস। যদি অরহানের মতো তোকেও হারাতে হয় তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারব না। পরিবারের কেউ সহ্য করতে পারবে না। আর অয়ন্তি অয়ন্তির কথা ভাব একটু।”
জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ভাগ্যে আমার যা আছে তাই হবে মা তাই এসব নিয়ে চিন্তা করো না।”
কথাটা বলেই জাহিন উপরে চলে যায়। জোহরা বেগম ছেলের যাওয়ার পানে হতাশ হয়ে তাকিয়ে রইল। জাহিন শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে রুমের ভেতরে ঢুকতেই হকচকিয়ে উঠে চোখ বড় বড় করে হা হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন্তি কোমরে শাড়ির আঁচল গুজে, চুল খোপা করে কাঠের চেয়ারে উপরে ছোট একটা টুল রেখে তার উপরে দাঁড়িয়ে সিলিং ফ্যান পরিস্কার করছে। জাহিন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে। মানে এই মেয়ের মাথায় কি কোনো সমস্যা আছে নাকি মনে কোনো ডর ভয় নেই। যদি পড়ে যায় এখান থেকে তখন কি হবে? জাহিন দু কদম এগিয়ে এসে অবিশ্বাস্য গলায় বলে।
“অয়ন্তি কি করছেন আপনি এসব?”
অয়ন্তি জাহিনকে দেখে অবাক হয়। ভেবেছিল জাহিনের আসতে দেরি হবে কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে আসল। অয়ন্তি ইতস্তত গলায় বলে, “ফ্যান পরিস্কার করছি কত ময়লা জমেছে এতে।”
“আপনি কি পাগল অয়ন্তি। ময়লা জমেছে বুঝতে পারলাম তাই বলে আপনি পরিস্কার করবেন। বাড়িতে এতগুলা কাজের লোক আছে তাদের কোনো একজনকে বলতে পারতেন। যদি পড়ে যান তখন কি হবে?”
“কিছু হবে না এগুলা করে আমার অভ্যাস আছে। বাড়িতে তো আমিই এসব পরিস্কার করতাম।”
জাহিন কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “আর একটাও কথা নয় চুপচাপ আপনি নিচে নামুন।”
“পরিস্কার করা শেষ আরেকটু জায়গা আছে।”
“ওইটা কাজের লোক করে নিবে।”
অয়ন্তি জেদ ধরে বলল, “না না আমি যখন শুরু করেছি আমিই শেষ করব।”
জাহিন হার মানলাম। মেয়ে জাতি বড্ড জেদি জাতি যেটা নিজে ভাল মনে করবে সেটাই করবে। জাহিনও আর কিছু বলল না চুপচাপ দাঁড়িয়ে অয়ন্তির কার্যক্রম গুলা দেখছে। অয়ন্তির ফ্যান পরিস্কার শেষ হল। জাহিন তা দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে অন্য দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু অয়ন্তি আস্তে আস্তে করে নামতে নিলে শাড়ির সাথে পা আটকে পড়ে যেতে নিলে চিৎকার করে উঠে। জাহিন অয়ন্তির চিৎকার শুনে চোখ বড় বড় করে অয়ন্তির দিকে ফিরে দ্রুত গিয়ে অয়ন্তিকে ধরে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না নিচে টাইলসের উপরে পানি পড়ে থাকার কারণে জাহিন পা স্লিপ কেটে অয়ন্তিকে নিয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। অয়ন্তিও চোখ বন্ধ রেখে ভয়ের জোটে জাহিনের খুলে রাখা শার্টটা আঁকড়ে ধরে। অয়ন্তির মাথা গিয়ে ঠেকেছে জাহিনের প্রশস্থ বুকে। জাহিন দু হাত দিয়ে অয়ন্তির বাহু শক্ত করে ধরে রেখেছে। জাহিন জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। কোমরে হয়ত লেগেছে বেচারার। অয়ন্তি আস্তে আস্তে করে জাহিনের বুক থেকে মাথা তুলে জাহিনের দিকে ফিরে তাকায়। জাহিনের চোখে মুখে অয়ন্তির চুল পড়ে রয়েছে। জাহিন এক হাত দিয়ে নিজের মুখের উপর থেকে চুল গুলা সরিয়ে অয়ন্তির দিকে শান্ত চোখে তাকায়। অয়ন্তি স্তব্ধ হয়ে গেছে। কি হলো এটা এই মুহূর্তে? জাহিন ভরাট গলায় বলে।
“আমার উপর থেকে কি উঠবেন নাকি এভাবেই শুয়ে থাকার ইচ্ছে আছে আপনার আজীবন?”
অয়ন্তি তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। লজ্জায় মাথা নিচু রেখে ঠোঁট ঠোঁট চেপে বসে রইল। জাহিনও আস্তে আস্তে উঠে বসে অয়ন্তির নিচু করে রাখা মুখটার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে আহত গলায় বলে।
“আপনাকে আমি একজন শান্তশিষ্ট মেয়ে ভেবেছিলাম অয়ন্তি কিন্তু না আপনি আমার ধারণাটাকে পুরো উল্টে দিলেন আজকের এই উদ্ভট কান্ড ঘটিয়ে।”
অয়ন্তি হতবাক হয়ে মুখ তুলে জাহিনের দিকে তাকায়। কি এমন উদ্ভট কাজ করল সে যে জাহিনের ধারণা পুরো পাল্টে গেল। জাহিন আর কিচ্ছু না বলে টাওয়ালটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অয়ন্তি থম মেরে বসে রইল। জাহিনের ভাষ্যমতে তাহলে কি ফ্যান পরিস্কার করা কাজটা একটা উদ্ভট কাজ। কিন্তু সে তো ভালোর জন্য করছিলি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা তো ইমানের অঙ্গ। কিন্তু এখন যা ঘটেছে সবটা জাহিনের জন্য। জাহিন যদি এখন না আসত তাহলে অয়ন্তি সুন্দর করে কাজটা শেষ করতে পারত কিন্তু জাহিন এসে সব উল্টে দিল সব। অয়ন্তি বসা থেকে উঠে ঘরটা পরিস্কার করে নিচে চলে যায়। জাহিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঘরের চারিপাশ নজর বুলায়। আগের তুলনায় ঘরটা আরো বেশি গুছানো মনে হচ্ছে জাহিনের কাছে। ঘরের ভেতরে কিছুটা পরিবর্তনও এসেছে। যেমন অয়ন্তির সাজগোজের জিনিস আর বইপত্র। কিছু দিন আগে ছিল এই ঘর শুধু মাত্র একজন পুরুষ মানুষের আর এখন পুরুষ মানুষটার সাথে একজন নারীরও হয়ে গেল ঘরটা। সময়ের সাথে মানুষের জীবন কিভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। জাহিন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে অয়েন্টমেন্ট বের করে কোমরে লাগিয়ে নেয় যাতে ব্যথা না আসে। খুব একটা বেশি ব্যথা পায় নি কিন্তু তারপরও সাবধানে থাকা ভাল।
_____
জাহিন নিচে নেমে দেখে অয়ন্তি সবার হাতে হাতে কাজ করছে। এ যেন এক পাক্কা ঘরণী। দুদিন হল এসেছে আর এসেই কাজে লেগে পারল। জাহিনকে আসতে দেখে শেখ রেজাউল সাহেব মজা করে বলেন।
“কি দাদাভাই কি দেখো?”
জাহিন বিহ্বল হয়ে দাদাভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে বলে, “কিছু না দাদাভাই? আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভাল আছে।”
“একদম পারফেক্ট তোমাদের মত জোয়ান পোলাপানদের সাথে ইচ্ছে করলে ফুটবল খেলতে পারব।”
জাহিন প্রতিউত্তরে হেসে অয়ন্তি দিকে তাকাল। মেয়েটা তার চোখের সামনে থাকলে কেন জানি আপনাআপনি চোখ চলে যায়। হাজার চেষ্টা করলেও চোখ ফেরানো যায়। এদিকে অয়ন্তি একবার রান্না করে যাচ্ছে তো আবার ডাইনিং টেবিলের কাছে আসছে। জাহিনের বড্ড বিরক্ত লাগছে অয়ন্তির এই দৌড়াদৌড়ি দেখে। কিন্তু এতে সে বিরক্ত হচ্ছে কেন? তার মানে কি প্রেম পড়ে যাচ্ছে সে তার বিবাহিত স্ত্রীয়ের। হয়ত তিন বার বলা কবুলের জোরেই তাকে তার স্ত্রী প্রেমে পড়তে বাধ্য করছে। জাহিনের চাওনি অনুসরণ করে শেখ রেজাউল সাহেব তাকাল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গলা খাকারি দিয়ে কৌতুকের গলায় বলে।
“তা দাদাভাই বাড়িতে এত জলদি চলে আসার কারণ কি এটা? তুমি তো এত জলদি আসো না বাড়িতে।”
জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে কি কারণ?”
“এই যে নতুন বউকে চোখে হারাচ্ছ।”
জাহিন মুচকি হেসে বলে, “তেমনি কিছু নয় দাদাভাই।”
“আরে এমনই হয়। আমি যখন নতুন নতুন বিয়ে করেছি তখন তো তোমার দাদুকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দিতাম না। তোমার দাদুকে বলতাম সবসময় আমার চোখের সামনে থাকবে। আর তোমার দাদু যে কি বিরক্ত হত। কিন্তু এই বিরক্তের মাঝে একটা লাজুক লাজুক ভাব ছিল তোমার দাদুর মুখে। তখন তোমার দাদুর লাজুক মুখখানার দিকে সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করত।”
জাহিন মজার ছলে বলে, “তো দাদাভাই এখন দাদুকে চোখের সামনে থাকতে বলেন না?”
শেখ রেজাউল সাহেব চারপাশটাও নজর বুলিয়ে গলায় স্বর নিচু করে বলেন, “এখন তোমার দাদু চোখের সামনে না থাকাই ভাল বুঝলে। সামনে থাকলেই আমার সর্বনাশ।”
জাহিন হাসল দাদা ভাইয়ের কথায়। কিন্তু তার দাদার বয়সে যাওয়ার আগেই যে মনে হচ্ছে তার সর্বনাশ ঘটে গেছে। “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের” একটা উক্তি আছে না____
❝প্রহর শেষ আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস।
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।❞
কিন্তু এখন তো চৈত্র মাস নয় বরং অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে। চৈত্র মাস আসার আগেই যে তার সর্বনাশ ঘটে গেল। আর চোখের সামনেই তার সর্বনাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে সর্বনাশের মাঝে চাইলেই ডুব দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এত জলদি ডুব দিতে চায় না জাহিন আরেকটু সর্বনাশ হোক তার, তারপর না হয় সর্বশান্ত হয়ে আজীবনের জন্য ডুব দিবে।
#চলছে________
হয়ত পর্বটা একটু এলোমেলো লাগতে পারে। তেমন গুছিয়ে লিখতে পারি নি আজকের পর্বটা। তাই ভুল হলে ক্ষমাসরূপ দেখবেন।