#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৯
“একি তুই এখনও এখানে বসে আছিস কেন জাহিন?”
জাহিনকে সকলের সাথে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে কপট রাগ দেখিয়ে কথাটা বলেন জোহরা বেগম। জাহিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
“মা ফুফু ঠিক আছে এখন।”
“হুম তোর ফুফু ঠিক আছে। তুই ঘরে যা অনেক রাত হয়েছে।”
“হুম যাব একটু পরে।”
“একটু পরে না এক্ষুণি যা।”
কথাটা বলে জোহরা বেগম চলে যান। বসার করে মুরুব্বীরা মানে জাহিনের বাবা, চাচা আর অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরা জাহিনের অস্বস্তি বুঝতে পেরে চোখ মুখ স্বাভাবিক রেখে আস্তে আস্তে যে যার ঘরে চলে যান।
জাহিনও ধীর পায়ে দু তলায় আসে কিন্তু নিজের ঘরে না গিয়ে চলে যায় নুহাশের ঘরে। নিজের ঘরে যেতে জাহিন বড্ড বিভ্রান্ত বোধ করছে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই যেতে তো হবেই তাকে।
_______
জারা আর অন্যান্য কাজিনরা মিলে অয়ন্তিকে নিয়ে জাহিনের রুমে আসল। অয়ন্তি অবাক চোখে রুমের চারিপাশ নজর বুলাচ্ছে। সারা রুমটা নাম না জানা বাহারি রঙের তাজা ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ঘরের চারিপাশ ফুলের গন্ধে মঁ মঁ করছে। জারা অয়ন্তিকে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানাতে বসিয়ে বলে।
“আজ থেকে এটা হল তোমার নিজস্ব ঘর আর এই ঘরের মালিকটাও তোমার নিজের একান্ত পুরুষ। ঘর আর মালিক দুজনকে শক্ত করে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখবে যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তোমার কাছ থেকে বুঝলে ভাবি।”
অয়ন্তি চমকে জারার দিকে তাকায়। জারার কথা ঠিক অয়ন্তির বোধগম্য হচ্ছে না। জারা অয়ন্তির মনোভাব বুঝতে পেরে হেসে হেসে বলে।
“এবার আমরা আসি। তোমাকে তোমার ঠিকানাতে দিয়ে গেলাম এবার আমাদের মেইন কাজ হল ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা কামানো।”
এক এক করে সবাই রুম থেকে চলে যায়, রয়ে গেল নিস্তব্ধ কক্ষে একা অয়ন্তি। একা রুমে থাকার কারণে বুকের ভেতরের ধুকপুক ধুকপুক করা শুরু হয়ে গেছে অয়ন্তির। মনের মাঝে অজানা সকল ভয় একে একে এসে ঘিরে ধরছে অয়ন্তিকে আষ্টেপিষ্টে। অয়ন্তির চোখ যায় শুভ্র রঙের দেয়ালটাতে যেখানে একটা ছবি বাঁধাই করা আছে। ছবিটাতে জাহিন রিহানকে কিছু একটা বলছে আর রিহান সেটা মনযোগ দিয়ে শুনছে। তখনই হয়ত কেউ এই মুহূর্তটা ক্যামেরা বন্দি করে নেয়। দুই ভাইয়ের ড্রেসআপ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছবিটা কয়েকদিন আগের তোলা। এই ড্রেসআপেই অয়ন্তিকে দেখতে এসেছিল কয়েকদিন আগে তারা। অয়ন্তির এখনও সেই দিনের ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে।
অয়ন্তি বসে আছে জোহরা বেগম, জারা, রিহান আর জাহিনের সামনে। বলতে গেলে জাহিনকে এক প্রকার জোর করে এনেছেন জোহরা বেগম। জাহিন মাথা নিচু করে ফোন টিপছে জাস্ট এক বার শুধু অয়ন্তির দিকে তাকিয়েছে এরপর আর এক মুহূর্তের জন্য তাকাইনি। হামিদ খন্দকার জোহরা বেগমকে বলেন।
“বলচ্ছিলাম ছেলে আর মেয়েকে আলাদা একটু কথা বলতে দিলে ভাল হয় না। ওদেরও তো একটা মতামত আছে তাই না। বাবা মার মতামত তো আর ছাপিয়ে দেওয়া যায় না ওদের উপরে সবসময়।”
জোহরা বেগম হাসি হাসি মুখে বলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন ভাই ওদেরও একটু কথা বলা দরকার। জাহিন যা তো বাবা।”
মায়ের মুখে নিজের নামটা শুনে জাহিন ভ্রু কঁচকে মায়ের দিকে তাকায়। জোহরা বেগম মেকি হাসি দিয়ে বলেন, “না মানে রিহান।”
তারপর জোহরা বেগম ছোট ছেলের দিকে ফিরে বলেন, “রিহান যা তো বাবা তোর হবু বউয়ের সাথে একটু কথা বার্তা বল গিয়ে।”
এবার অয়ন্তি চমকে যায় হবু শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে। সে তো এতক্ষণ ভেবে এসেছিল জাহিন হয়ত পাত্র কিন্তু এখন শুনছেন রিহান পাত্র। অয়ন্তির ভাবনাটা স্বাভাবিক প্রথমে অবশ্যই বড় ভাইয়ের আগে বিয়ে হয় কিন্তু এখানে পুরো উল্টা হয়ে গেল ছোট ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে আগে। অয়ন্তি নিজের ভাবনার জন্য নিজেকে বকে যাচ্ছে মনে মনে। যদি আগে থেকে বাবা কিংবা মামনির কাছ থেকে পাত্রের ডিটেলস জেনে রাখত তাহল এই ভুলটা হত না। হামিদ খন্দকার কোমল গলায় মেয়েক বলনে।
“অয়ন্তি মা রিহান বাবাকে নিয়ে ছাদে যাও।”
অয়ন্তি বাবার কথা মতো ছাদের যাওয়ার পথে হাঁটা ধরে। রিহান মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে অয়ন্তির পেছন পেছন চলে যায় পকেটে দু হাত গুজে।
অয়ন্তি আর রিহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ছাদের উপরে। অয়ন্তিদের বাড়িটা এক তালা বিশিষ্ট আর কিছুটা পুরাতনও বড্ডে। রিহান গলা খাকারি দিয়ে বলে।
“জানের আমার জাহিন ভাইয়া না খুব ভাল মনের মানুষ। ভাইয়ার মতো মানুষ হয় না এই জগতে। জানেন ভাইয়া জীবনে কখন প্রেম টেম করে নি। নিজের সবটা ভালবাসা তার একমাত্র প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য তুলে রেখেছে বুকের গভীরে অতি স্বযত্নে। কিন্তু ভাইয়া বিয়ে করতে চায় না। তাই তো ভাইয়ার পরিবর্তে আমার আগে বিয়ে করতে হচ্ছে। মা কত্ত বার ভাইয়াকে বুঝিয়েছে বিয়ে করার জন্য কিন্তু ভাইয়ার ওই এক কথা বিয়ে করবে না। বুঝি না ভাইয়ার বিয়ে করাতে কি এলার্জি!”
রিহান থেমে আবারো বলা শুরু করে, “জানেন ভাইয়া খুব শান্ত স্বভাবের এক্কেবারে শান্ত নদীর মতো কিন্তু যখন জোয়ার আসে তখন এক্কেবারে সব ভেঙ্গেচুরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ভাইয়ার স্বভাবটাই এমন।”
অয়ন্তি অবাক চোখে রিহানের দিকে তাকায়। মানে কথা বলতে এসেছে তারা দুজনে এখানে বড় ভাইয়ের বিষয়ে কথা কেন বলছে লোকটা সেটা বুঝতে পারছে না অয়ন্তি। রিহান মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে।
“চলুন এবার আমরা নিচে যাই বেশিক্ষণ এখানে থাকাটা ঠিক দেখায় না।”
কথাটা বলেই রিহান চলে যায়। অয়ন্তি রিহানের যাওয়ার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। কি বলে গেল তাকে এসব? মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। রিহানের সব কথা কেমন দলা পাকিয়ে গেল তার!
বাইরের চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে অয়ন্তির ধ্যান ভাঙ্গে ফিরে আসে অতিত থেকে বর্তমানে। চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে অয়ন্তি বুঝতে পারল জাহিন এসেছে। যাকে সে প্রথমে নিজের ভবিষ্যৎ স্বামী ভেবে ভুল করেছিল ঘুরে ফিরে সেই তার স্বামী আজকে। আর এখন সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর কিছুক্ষণ পরেই হয়ত এই ঘরে থাকবে তার সাথে। জাহিনের পুরুষালী গলার স্বর শুনে অয়ন্তির বুকটা ধ্বক করে উঠে। সবাই মিলে জাহিনের কাছে টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে দিবে না। জাহিনও কম না সে বলে।
“ঠিক আছে আমি তোদের টাকাও দিব না আর আমার রুমের ভেতরে যাওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই।”
জারা ভাইয়ের কথায় শুনে হতভম্ব হয়ে বলে, “ভাইয়া কি বলছো তুমি এসব? টাকা দেওয়ার ভয়ে তুমি ঘরে যাবে না।”
“এত টাকা আমি দিতে পারব না।”
“এত কিপটুস তুমি ভাইয়া সেটা আগে বুঝতে পারি নি। ঠিক আছে অন্তত বিশ হাজার টাকা দাও।”
“তোর কি মনে হয় আমি বিশ হাজার টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরছি।”
জারা ভ্রু নাচিয়ে বলে, “বিশ হাজার টাকা পকেটে ক্যাশ নেই তো কি হয়েছে? তোমার ক্রেডিট কার্ড তো আছে মানিব্যাগে। ক্রেডিট কার্ডটা দিয়ে দাও আমাদের।”
জাহিন চোখ ছোট ছোট করে বলে, “বড্ড চালাক তুই জারা।”
“একটু চালাক না হলে দুনিয়াতে ঠিকা যায় না।”
জাহিন মানিব্যাগ বের করে ক্রেডিট কার্ডটা বোনের হাত ধরিয়ে দিল। জারা তো ভীষণ খুশি ক্রেডিট কার্ডে যত টাকা আছে সব তার। কিন্তু জাহিন একটু পর যা বলল তাতে জারার সব খুশি হাওয়া।
“লিমিট করে রাখা বেশি খরচ করার কোনো চান্স নেই। তাই বুঝে শুনে খরচ করিও বোন আমার।”
কি আর করার জারা হাসিমুখে সবটা মেনে সবাইকে নিয়ে চলে যায় রয়ে গেল একা জাহিন। জাহিন দুটানায় পড়ে গেছে ভেতরে ঢুকবে নাকি ঢুকবে না ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল জাহিন। অন্যদিকে অয়ন্তি শ্বাস আটকে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। খানিকক্ষণ বাদেই দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল জাহিন। জাহিনের চোখে চোখ পড়তেই অয়ন্তি নজর সরিয়ে নেয়। জাহিন দরজা সিটকারি লাগিয়ে দেয়। অয়ন্তি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সাদা টাইলসের দিকে তাকিয়ে আছে। জাহিন গায়ে পরিহিত কাটিটা খুলে সোফার উপরে রেখে আলমারির দিকে এগিয়ে এসে আলমারি খুলে একটা প্যাকেট বের করে অয়ন্তির কাছে এসে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে প্যাকেটটা অয়ন্তির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
“এটা আপনার।”
অয়ন্তি নিচু গলায় বলে, “কি আছে এতে?”
“খুলে দেখুন কি আছে?”
অয়ন্তি হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে প্যাকেটটা খুলে দেখে ভেতরে টাকার বান্ডিল। অয়ন্তি অবাক চোখে জাহিনের দিকে তাকিয়ে বলে।
“এত টাকা।”
“আপনার দেনমহরের সমস্ত টাকা পরিশোধ করে দিলাম।”
“কিন্তু আমি এত টাকা নিয়ে কি করব?”
জাহিন হেসে বলে, “সেটা তো আমি জানি না কি করবেন আপনি? আপনার টাকা আপনি যা খুশি করতে পারেন।”
অয়ন্তি চুপ হয়ে যায়। কারো মুখে কোনো কথা নেই। এক সময় জাহিন গলা খাকারি দিয়ে বলে, “আপনি নাকি আমার কোন একটা জিনিস দেখার জন্য ছাদে যেতে চেয়েছিলেন আজকে সকালে।”
অয়ন্তি চমকে জাহিনের দিকে তাকায়। নিশ্চয়ই আহান কথাটা বলে দিয়েছি জাহিনকে। অয়ন্তি জাহিনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে, “না মানে আমি আসলে।”
জাহিন সাবলীল গলায় বলে, “চলুন।”
অয়ন্তি হকচকালো জাহিনের মুখে “চলুন” কথাটা শুনে পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে, “কোথায়?”
“কেন ছাদে আমার জিনিসটা আপনাকে দেখানোর জন্য। সকাল বেলা তো দেখার সুযোগ পান নি আমার জন্য আমি এসে বাধা দিয়ে দিলাম। তাই এখন না হয় আপনাকে দেখিয়ে আনি আমার জিনিসটা।”
“কিন্তু এত রাতে কেউ যদি…।”
জাহিন অয়ন্তির কথার মাঝে বলে, “সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ জানবে না।”
“ঠিক আছে তাহলে চলুন।”
জাহিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “টাকা গুলা আলমারিতে রেখে দিন।”
অয়ন্তি আলমারিতে টাকা গুলা রেখে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে জাহিনের পাশে এসে দাঁড়ায়। জাহিন দরজা খুলে চারপাশটা নজর বুলিয়ে অয়ন্তিকে বলে, “আসুন।”
জাহিনের পেছন পেছন ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে অয়ন্তি। অয়ন্তির ধীর গতির হাঁটা দেখে জাহিন নিজের হাঁটার গতি কিছুটা কমিয়ে আনল।
_________
দুজনে ছাদের মাঝ বরাবর এসে থামল। অয়ন্তি ছাদের চারিপাশটায় নজর বুলাচ্ছে। ছাদের চারিপাশে ফুল গাছের ছড়াছড়ি মনে হচ্ছে কোনো ফুলের রাজ্যে এসে উপস্থিত হয়েছে অয়ন্তি। অনেক সুন্দর করে ছাদের চারিপাশটা লাইটিং করা। যার জন্য রাতের বেলাও ফুলের সৌন্দর্যটা আরো বেশি ফুটে উঠেছে। অয়ন্তি মুগ্ধ নয়নে সবটা দেখছে। জাহিনও ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। ছাদের এক সাইডে অনেকটা জায়গা নিয়ে একটা ঘর বানানো আর ঘরের জায়গাটাও কিছুটা অন্ধকার। অয়ন্তি নিজের কৌতূহল আটকে রাখতে না পেরে বলে।
“ওই ঘরটাতে কি আছে?”
জাহিন ঘরটার উপরে দৃষ্টি ফেলে বলে, “ওই ঘরটার মধ্যেই আমার জিনিসটা আছে।”
অয়ন্তি এবার অধৈর্য হয়ে উঠল। সকাল থেকে শুনে আসছে একটা জিনিস একটা জিনিস কিন্তু জিনিসটা আসলে কি? জাহিন হঠাৎ করেই শিস বাজায়। আকস্মিক জাহিনকে এভাবে শিস বাজাতে দেখে অয়ন্তি চমকে উঠে। কিন্তু কিয়ৎক্ষণ পরেই ঘরটা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে আসে সাদা রঙের কবুতর। হঠাৎ করে এমনটা হওয়াতে অয়ন্তি ভয় পেয়ে জাহিনের পেছনে গিয়ে লুকায়। কবুতর গুলা একে একে ছাদের রেলিং এর উপরে সারিবদ্ধ হয়ে বসে ডাকতে থাকে। অয়ন্তি আস্তে আস্তে জাহিনের আড়াল থেকে বের হয়ে আসে। জাহিন মুচকি হেসে বলে।
“এই কবুতর গুলা হল আমার জিনিস। যেগুলা দেখানোর জন্য আহান আপনাকে ছাদে আনতে চেয়েছিল।”
অয়ন্তি আচ্ছন্ন গলায় বলে, “এত্ত কবুতর।”
জাহিন দুর্বল গলায় বলে, “হুম এগুলা আমার শখের জিনিস। আমার প্রিয় একজন মানুষের কাছে কবুতর পাখি ছিল খুব শখের। তাই তার শখের জিনিসটাকে আমি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
অয়ন্তি সরাসরি জাহিনের দিকে দৃষ্টি ফেলে বলে, “আপনার প্রিয় মানুষ কে সে?”
জাহিন নিঃশব্দে হেসে নিচের দিকে দৃষ্টি ফেলে বলে, “এত জলদি আমার সম্পর্কে সব কিছু জানার কোনো প্রয়োজন নেই। আস্তে ধীরে জানুন ভবিষ্যতে অনেকগুলা দিন, মাস, বছর পড়ে রয়েছে আমার সম্পর্কে সব কিছু জানার জন্য।”
কথাটা বলে জাহিন কিয়ৎক্ষণ থেমে আবারো বলে, “আপনি আবার এটা ভাববেন না যেন আমার প্রিয় মানুষটি একজন নারী। আমার জীবনে প্রথম নারীটি আপনি যে বিনা আমন্ত্রণে আমার জীবনে এসেছেন আর সেটা আমি নিজে থেকে গ্রহণ করেছি।”
অয়ন্তি হতবাক হয়ে জাহিনের দিকে তাকায়। এই লোক দুই লাইন বেশি বুঝে কেন? সে কি একবারও বলেছে তার প্রিয় মানুষটি একজন নারী। নারী ছাড়া কি অন্য কেউ প্রিয়জন হয়ে উঠতে পারে না একজন পুরুষ মানুষের জীবনে।
অয়ন্তি কিছু না বলে জাহিনের দিকে নজর সরিয়ে নিয়ে দূর আকাশের চাঁদের দিকে নজর দেয়। কবুতর গুলা একে একে নিজের বাসভবনে ফিরে যাচ্ছে। হিম বাতাস বইছে চারিপাশে। অয়ন্তি ঠান্ডায় দু হাত বেঁধে নেয়। জাহিন তা লক্ষ্য করে বলে।
“ঠান্ডা লাগছে আপনার?”
“একটু একটু।”
“তাহলে ভেতরে চলুন আর থাকতে হবে না ছাদে অনেক রাত হয়েছে।”
অয়ন্তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে জাহিনের পেছন পেছন অয়ন্তি ধীরে পায়ে হেঁটে যায়। কিন্তু অয়ন্তির মনে আবারো শুরু হল চৈত্র মাসের ঝড় এটা ভেবে রুমে ভেতরে গেলে কি হবে?
#চলবে