#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৪০
#মেহরিন_রিম
_বসলাম তো। এবার বল কি খেলবি?
ইশা টি টেবিল থেকে অনেকগুলো চিরকুট হাতে নিয়ে বললো,
_এইযে এগুলোর মধ্যে একেকটা টাস্ক লেখা আছে। যার ভাগ্যে যেটা পড়বে তাকে সেটাই করতে হবে।
আদৃত বিরক্ত হয়ে বলে,
_এসব বাচ্চাদের খেলায় আমি নেই।
ইশা ভেংচি কেটে ভাব দেখিয়ে বলে,
_কেউ আগে থেকেই পালিয়ে যেতে চাইলে সমস্যা নেই।
_ওহ হ্যালো,আমি পালিয়ে যাচ্ছি না ওকে। ঠিক আছে খেলবো আমিও।
মোহনা এবার বলে ওঠে,
_ঠিক আছে ফার্স্ট এ ফায়াজ ভাইয়া। বড় থেকেই শুরু হোক।
ফায়াজ একটা চিরকুট তুললো। ইশা সেটা নিয়ে জোড়ে জোড়ে পড়লো,
_এখানে লেখা আছে সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াও। ভাইয়া, এবার আমাদের আইসক্রিম খাওয়াতে হবে। হি হি..
_এটা কিন্তু ঠিক নয়।
মোহনা বললো,
_কেন ঠিক নয় হ্যা? লেখা আছে যখন খাওয়াতেই হবে।
_আচ্ছা বাবা কালকে খাওয়াবো। এখন আমি বাইরে যেতে পারবো না।
সবাই রাজি হলো। এবার চিরকুট ওঠাবে ইশা। ইশা চোখ বন্ধ করে একটা চিরকুট তুললো। আদৃত সেটা ওর হাত থেকে নিয়ে পড়তে লাগলো,
_ড্যান্স করতে হবে।
ইশা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,
_এটাতো আমার জন্য কোনো ব্যাপার ই না।
মোহনা হতাশ হয়ে বললো,
_তুই এত সহজ টা পেয়ে গেলি।
আদৃত ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_সিঙ্গেল নয় ডুয়েট ড্যান্স।
সায়ান পাশ থেকে বলে ওঠে,
_ওমা ইশা, এবার তোমার পার্টনার কে হবে?
ইশা মুচকি হেসে বললো,
_এক মিনিট ওয়েট করো।
কথাটা বলেই ইশা ওর ঘড়ে গিয়ে ওর সাইজের একটা টেডি নিয়ে এসে বললো,
_এইযে আমার টিংটিং..আমার পার্টনার।
সবাই একসঙ্গে বললো,
_এটা!
_হ্যা..তোমরা শুধু দেখতে থাকো।
কথাটা বলে ইশা টেডিটা সোফার উপর রেখে ওড়না কোমড়ে বেধে নাচার জন্য উদ্যত হলো। ফোন হাতে নিয়ে
“আমি যে তোমার,শুধু যে তোমার” গানটা চালিয়ে দিয়ে টেডির সঙ্গে নাচতে লাগলো।
সবাই ওর নাচ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। টেডিকে পার্টনার বানিয়ে এত সুন্দর করে কি করে নাচছে ইশা!
ইশার নাচ শেষে সবাই হাততালি দিলো। সায়ান অবাক হয়ে বললো,
_তুমি কি আগে থেকে প্রাকটিস করে এসেছিলে নাকি?
ফায়াজ হাসতে হাসতে বলে,
_ও তো ঘরে বসে এই কাজই করে।
_ভাইয়া…
সবাই হাসতে লাগলো এবার। ইশা সোফায় বসে চিরকুটগুলো আদৃত এর দিকে এগিয়ে দিলো। আদৃত এবার একটা হাতে নিয়ে নিজে থেকে ইশার দিকে দিলো। ইশা সেটা হাতে নিয়ে পড়ে,
_প্রেমিক/প্রেমিকাকে কিভাবে প্রপোজ করেছো বা করবে?
সায়ান বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে,
_একদম পারফেক্ট। আদি অ্যাকটিং করে দেখা এবার।
আদৃত ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
_আমি কখনো কাউকে প্রপোজ করিনি আর করবো ও না।
ইশা অবাক হয়ে বলে,
_কেন?
আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলে,
_কারণ আমি যাকে ভালোবাসি তাকে সরাসরি বিয়ে করবো। সো, এই টাস্ক বাদ।
সায়ান আফসোস এর সুরে বলে,
_বাদ দাও ইশা,ওকে দিয়ে এসব হবেনা।
ইশাসহ উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করে। আদৃত একদৃষ্টিতে ইশার সেই মনভোলানো হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষণেই আদৃতের ঠোঁটে থাকা হাসিটা মিলিয়ে যায়। ইশার ঠোঁটের এই হাসিটাও হয়তো আর খুব বেশি সময় থাকবে না, কাল সকালে যা হবে তারপর হয়তো এই হাসিটা দীর্ঘসময় ধরে তার মুখে দেখা যাবে না। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আদৃত, ইশার কষ্ট হলেও সত্যিটা তাকে জানতে হবে।
_____
সকলে একসাথে সকালে নাস্তা শেষ করেছে। ছেলেরা সকলে সোফায় বসে আছে আর মেয়েরা কেউ কেউ রান্নাঘরে আর কেউ কেউ ডাইনিং টেবিলে বসে গল্প করছে।
পূর্ণ একনজর আদৃতের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করে। আদৃত ও তাতে হ্যা সূচক জবাব দেয়। পূর্ণ এবার উঠে দাঁড়িয়ে রান্নাঘর এর দিকে এগিয়ে বলে,
_আম্মু,কাকি একটু ড্রইং রুমে আসবেন প্লিজ। ইশা,ফাইজা তোমরাও এসো।
পূর্ণর সঙ্গে সবাই ড্রইং রুমে এসে দাঁড়ালো। জাফর,জহির আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রুকসানা পূর্ণর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো,
_কি হয়েছে পূর্ণ? সবাইকে এক যায়গায় জড়ো করলে যে? কিছু বলবে?
_জি কাকি,ফাইজা তুমি এদিকে এসো।
ফাইজা এসে পূর্ণর পাশে দাঁড়ায়। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় পূর্ণর দিকে তবে সে তাকায়নি। পূর্ণ আদৃতের দিকে তাকাতেই আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে কাউকে কল করে বলে,
_নিয়ে এসো ওকে।
সবাই অবাক হয়ে ওদের কাজ দেখছে। দু মিনিটের মধ্যেই আদৃতদের বয়সী একটা ছেলে আরেকটা ছেলের ঘাড় ধরে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। পূর্ণ ওকে সামনে এনে বলে,
_ও হচ্ছে রিয়াজ, এখন পর্যন্ত পাঁচবার জেল খেটে বেড়িয়েছে।
ছেলেটা ফাহমিদার দিকে একনজর তাকায়। ফাহমিদা কাপাকাপা গলায় পূর্ণর উদ্দেশ্যে বলে,
_ও ও এখানে কি করছে?
_কেন আম্মু,চেনেন নাকি ওকে?
ইশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিল। তা দেখে আদৃত বলে,
_ইশা,তুমি চেনো ওকে?
_বোধ হয় রাস্তায় অনেকবার দেখেছি।
পূর্ন এবার ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_দেখার ই কথা,এতদিন ধরে ফলো করছে তোমায়।
জহির আতঙ্কিত হয়ে বলে,
_ফলো করছে মানে? ও ইশাকে কেন ফলো করবে?
_নিজে থেকে নয়,কারোর কথায়। (আদৃত)
জাফর এবার ওদের মাঝে বলে,
_তোমরা কি বলছো একটু স্পষ্টভাবে বলবে?
_সেটা হয়তোবা অন্য কেউ ভালো বলতে পারবে। (পূর্ণ)
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফাহমিদা আতঙ্কিত স্বরে বলে ওঠে,
_আমি চিনিনা ওকে,চিনিনা।
পূর্ণ বাঁকা হেসে বলে,
_আমি কি বলেছি আপনি ওকে চেনেন?
উপস্থিত কারোর মাথায় এইসব কিছুই ঢুকছে না। রিয়াজ নামের ছেলেটা পূর্ণ কাছে গিয়ে হাত জোড় করে বলতে থাকে,
_আমি কিছু করিনি স্যার, এই (মাহমিদা) মহিলা আমাকে যা করতে বলেছে আমি তাই করছিলাম শুধু।
_কি করতে বলেছে উনি তোমায়? (আদৃত)
_উনি বলেছে এই মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে কোথাও গুম করে ফেলতে যেন কেউ খুজে না পায়। তাই জন্যই তো ও কোথায় কোথায় যায় সেগুলো ফলো করেছি।
সকলে বিস্ফোরিত চোখে ফাহমিদার দিকে তাকায়। ফাহমিদা মাথা নিচু করে নিজের নজর লুকোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। রুকসানা চোখ বড়বড় করে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ভাবী ও কি বলছে এসব?
পূর্ণ এবার কিছুটা কড়া গলায় বলে,
_আপনি কি সবটা বলবেন আম্মু নাকি আমি বলবো?
ফাহমিদা কটমট চোখে পূর্ণর দিকে তাকায়,তবে কোনো উত্তর দেয়না। পুর্ণ এবার বলে,
_বেশ উনি যখন বলবেন ই না তখন আমিই বলছি। ওনার ইচ্ছে ছিলো ফায়াজ ভাইয়ার সঙ্গে ইশার বিয়ে দেবেন, ফলে কাকার সব সম্পত্তি দিনশেষে ফায়াজ এর ই হয়ে যাবে। কিন্তু ওনার পরিকল্পনা সফল হয়নি, যার ফলে ওনার মাথায় চিন্তা ঢুকে যায়। কাকার যেহেতু কোনো ছেলে নেই,তাই তার সম্পত্তির কিছু ভাগ ফায়াজের এমনিতেই পাওয়ার কথা। কিন্তু ওনার তাতে চলবেনা ওনার চাই সবটা। তাই উনি ইশাকেই সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেন।
ফাহমিদা পূর্ণর কথা মাঝে বলে ওঠে,
_হ্যা হ্যা বেশ করেছি। একটা বাইরের মেয়ে কেনো সবকিছু পেয়ে যাবে?
ইশা বড়বড় চোখে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ব বাইরের মেয়ে মানে?
_হ্যা বাইরের মেয়ে। ইশা তো আমাদের পরিবার এর ই কেউ নয়। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে ও, আর ও কিনা এত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে?
রুকসানা আতঙ্কিত চোখে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ভ ভাবী আপনি কিসব আজেবাজে কথা বলছেন? ভ ভাইয়া আপনি ভাবিকে নিয়ে যান এখান থেকে।
_সত্যি কথা তো আমি বলবোই। নিজের কখনো সন্তান হবেনা বলেই তো রাস্তা থেকে এই মেয়েকে তুলে এনেছিলে।
_ভাইয়া আপনি দয়া করে ভাবীকে এখান থেকে নিয়ে যান…আমি আপনার পায়ে পরছি।
জাফর কড়া চোখে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে তাকে নিয়ে ঘড়ে চলে যায়।
আদৃত এতক্ষন কেবলই ইশার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এত বড় একটা সত্যি কি ও সহ্য করতে পারবে? আদৃত চোখ সরিয়ে নেয়,ইশার দিকে এই মুহূর্তে তাকিয়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
ইশা রুকসানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে,
_আম্মু,কাকি এগুলো কি বলে গেলো?
রুকসানা ইশার গায়ে হাত বুলিয়ে বলে,
_ওসব কথায় কান দিসনা মা। ত তুই আমার মেয়ে, আমার মেয়ে তুই।
ইশা রুকসানার হাতটা নিজের মাথার উপর রেখে বলে,
_সত্যিটা বলো আম্মু। আমি কি তোমাদের মেয়ে নই?
রুকসানা এবার মুখ চেপে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। ইশার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। তবে তার চোখে একফোঁটা ও পানি নেই। ফাইজা নিজেও এতক্ষনে কাঁদতে শুরু করেছে। পূর্ণ তাকে চোখের ইশারায় কিছু বোঝাতেই সে ইশার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_এসব কথা মনে রাখিস না বোন। তুই ছোট আম্মু আর ছোট আব্বুর ই মেয়ে।
ইশা ফাইজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পাথর এর ন্যায় জহির সাহেব এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
_বাবাই, আমার আসল বাবা মা কে?
জহির সাহেব নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন। ইশা এবার কিছুটা উচ্চস্বরে বলো,
_বলছো না কেন? বলো আমার আসল বাবা মা কে?
রুকসানা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলে,
_আমরা জানিনা মা। আমরা শুধু এইটুকুই জানি তুই আমাদের মেয়ে।
চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পরে ইশার। তার নিজের বাবা মা কে তা সে জানেনা। এতবছর ধরে যাদের নিজের বাবা মা বলে জেনে এসেছে তারা ওর নিজের মা বাবা নয়। বিষয়টা মেনে নেওয়া কি খুব সহজ?
কয়েক সেকেন্ড সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ইশা। এরপর ছুটে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। ফাইজা ওকে আটকাতে গেলে আদৃত বাধা দিয়ে বলে,
_যেওনা ফাইজা, ইশার এখন কিছুক্ষন একা থাকা প্রয়োজন।
পূর্ণ এই বিষয়টা আগে থেকে জানতো না। তবে আদৃত কে দেখে মনে হলো সে এসব আগে থেকেই জানে, কিন্তু কি করে?
#চলবে
[বড় একটা পর্ব দিলাম। আশা করি সকলে নিজেদের মন্তব্য জানাবেন।
গল্পের আর ৩-৪ পর্ব বাকি আছে। তাই শেষের পর্বগুলো সুন্দরকরে সাজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
হ্যাপি রিডিং]