#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১০
মধ্যরাত! ঘড়ির কাটা আপাতত এখন সাড়ে বারোটার ঘরে। পুরো শহরটা ঘুমিয়ে আছে। মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসছে কু’কু’র ডাকার প্রতিধ্বনি। তার সাথে আবার ভেসে আসছে “উৎসর্গ” গানের সুর। হয়তো বাড়িতে থাকা গার্ডদের মাঝে কোনো গার্ড গান শুনছে তাও আবার বিরহের গান। তাদের নেতা সাহেবের আজকে বাসর রাত আর তারা শুনছে বিরহের গান কোথায় রোমান্টিক গান ছাড়বে তা না করে বিরহের গান প্লে করেছে। মনে হয় বড়োসড়ো ধরণের ছ্যাকা খেয়েছে মানুষটা। আহারে বেচারা মনে কত্ত কষ্ট!
জাহিন আর অয়ন্তি তাদের রুমে আসে। অয়ন্তি রুমে ঢুকে বিছানার পাশের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। জাহিন দরজা সিটকারি লাগিয়ে অয়ন্তির দিকে ফিরে বলে।
“আপনি ফ্রেশ হবেন?”
অয়ন্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়। জাহিন পুনরায় বলে, “তাহলে আপনি আগে ওয়াশরুমে যান পরে আমি যাব।”
অয়ন্তি তড়িৎ বেগে বলে, “না না আপনি আগে যান। কারণ আমার এসব গয়নাগুলা আগে খুলতে হবে।”
“ওও আচ্ছা।”
জাহিন আলমারি খুলে টি-শার্ট, ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অয়ন্তি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে দোপাট্টা খুলে একে একে সব গয়নাগুলা খুলে রাখে। হাতের চুড়িগুলাও একে একে খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলা কোমরের কোমর বন্দনী খুলতে গিয়ে। হাজার চেষ্টা করেও কোমর বন্দনীর প্যাচটা খুলতে পারছে না অয়ন্তি। তার উপরে শাড়ির সুতো আটকে গেছে কোমর বন্দনীর আংটাটার মাঝে যার জন্য খুলাটা আরো জটিল হয়ে গেছে অয়ন্তির কাছে। জাহিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অয়ন্তির কোমর বন্দনীর সাথে যুদ্ধ করা দেখেও কিছু বলে নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অয়ন্তিকে সাহায্য করা দরকার না হলে এই মেয়ে সারা রাতেও খুলতে পারবে না এই কোমর বন্দনী।
জাহিন ধীর পায়ে হেঁটে অনেকটা দূরত্ব রেখে অয়ন্তির পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। অয়ন্তি আয়নাতে জাহিনের প্রতিবিম্ব দেখে থেমে যায়। জাহিন গলা ঝেড়ে বলল।
“আমি সাহায্য করব।”
অয়ন্তি আস্তে করে বলে, “আচ্ছা।”
জাহিন অয়ন্তির কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে এগিয়ে যায় অয়ন্তির দিকে। অয়ন্তি নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেছে। জাহিন অয়ন্তির কোমরে পরিহিত কোমর বন্দনীতে হাত রাখল। জাহিনের শীতল হাতের স্পর্শ অয়ন্তির উন্মুক্ত কোমরে ছুঁতেই অয়ন্তি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। সারা শরীরের এক অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। যেটা অয়ন্তির কাছে এক্কেবারে নতুন অনুভূতি। জাহিন শত চেষ্টা করেও খুলতে পারল না? চোখে মুখে ফুটে উঠেছে বিরক্তির ছাপ। এত শক্ত কেন এই জিনিসটা? জাহিন হাল ছেড়ে দিল হাত দিয়ে এটা কোনো মতে খুলা সম্ভব নয় উল্টা হাতে ব্যথা পাবে। জাহিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই থমকে যায় অয়ন্তি লজ্জা রাঙা মুখখানা দেখে। জাহিন মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইলো অয়ন্তির দিকে ঘোর লাগা চোখে। নারীদের লজ্জা পেলে কি এতটাই অপূর্ব লাগে নাকি অয়ন্তির ক্ষেত্রেই এটা। সেটা জাহিনের অজানা। হয়ত প্রত্যেক পুরুষের কাছে তার একান্ত নারীর সব কিছুই ভাল লাগে। জাহিনের সাড়া শব্দ না পেয়ে অয়ন্তি চোখ মেলে তাকায়। আয়নায় পড়ে থাকা জাহিনের প্রতিবিম্ব দেখে অয়ন্তি হকচকিয়ে উঠল। অয়ন্তি নজর সরিয়ে নিয়ে নিচু গলায় বলে।
“খুলতে পারেন নি?”
জাহিনের ঘোর কাটল। নিজের স্থান পরির্বতন করে বলল, “আসলে চৌকারটা খুব শক্ত তাই খুলতে পারে নি।”
অয়ন্তি ক্ষীণ গলায় বলে, “তাহলে কি করব এবার?”
জাহিন আচমকা অয়ন্তির বাহু ধরে টেনে অয়ন্তুিকে একটা চেয়ারের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে, “এখানে দাঁড়ান আমি পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে খুলে দিচ্ছে।”
অয়ন্তি অবাক চোখে জাহিনের দিকে তাকায়। যেই লোক এতক্ষণ সময় নিয়ে খুলতে পারল না সেই লোক এখন বলছে পাঁচ সেকেন্ডর মধ্যে খুলে দিবে কি করে? জাহিন সোজা চেয়ারে গিয়ে বসে আর বলে।
“কোমর বন্দনীর প্যাচটা শাড়ীর উপরে আনুন।”
অয়ন্তি নির্বিকার ভঙ্গিতে জাহিনের দিকে তাকায়। জাহিন কি বলছে কিচ্ছু বুঝতে পারচ্ছে না আর কি করতেই বা চাইছে? জাহিন অয়ন্তির চেহারা দেখে বলে।
“থাক আপনাকে কিছু করতে হবে না।”
কথাটা বলেই জাহিন আবারো হাত দিল বন্দনীটার উপরে। অয়ন্তি নিজের ভাবনায় ডুবে আছে এটা ভেবে হয়তো জাহিন কোমর বাঁকিয়ে এতক্ষণ বন্দনীটা খুলার চেষ্টা করাতে মনে হয় জাহিনের কোমর ধরে গেছে তাই হয়তো চেয়ারে বসে এখন খুলার চেষ্টা করবে। কিন্তু হঠাৎ অয়ন্তি অনুভব করতে পারল জাহিনের নরম ভেজা ঠোঁটের স্পর্শ তার উনমুক্ত কোমরে। অয়ন্তির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে, চোখের পাতা বন্ধ করে দু হাত দিয়ে খামছে ধরে শাড়ির অংশ। জাহিন দাঁত দিয়ে চৌকারটা খুলে কোমর থেকে বন্দনীটা খুলে নিয়ে বলে।
“হয়ে গেছে।”
অয়ন্তি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। আর এদিক সেদিক না তাকিয়ে কোনো মতে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। জাহিন হতভম্ব হয়ে চেয়ারে বসে থেকে অয়ন্তির কার্যক্রম গুলা দেখল। হঠাৎ করে মেয়েটার হল কি এতক্ষণ তো ঠিকেই ছিল। কিন্তু পরক্ষণে বুঝতে পারল অয়ন্তির এমন অদ্ভুত আচরণের মূল কারণ। না চাইতেই জাহিনের ঠোঁটের কোণা প্রশস্ত হয়ে উঠল।
অয়ন্তি ওয়াশরুমে ঢুকে বুকের মাঝে হাত চেপে ধরে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছাড়ল। বুকটা এখনও ধুকপুক ধুকপুক করছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হাত পা অবশ হয়ে আসছে তার। অয়ন্তি কাঁপা হাতে জাহিনের ঠোঁট ছুঁয়ে যাওয়া জায়গাতে হাত রাখে। এখনও মনে হচ্ছে কোমরে হালকা ভেজা ভেজা উষ্ণতা মিশে আছে। এখন জাহিনের নরম ঠোঁটের ছোঁয়া অনুভব করতে পারছে অয়ন্তি। প্রথম বারের মতো কোনো পুরুষের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়েছে অয়ন্তি তাই এতটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।
প্রায় বিশ মিনিট সময় লাগিয়ে অয়ন্তি ওয়াশরুম থেকে বের হল। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই জাহিনের দিকে নজর পারল অয়ন্তির। আগের জায়গাতেই জাহিন বসে আছে তবে কোলের উপরে ল্যাপটপ নিয়ে। জাহিন অয়ন্তির উপস্থিতি টের পেয়ে ল্যাপটপের উপরে নজর রেখে বলে।
“শুয়ে পড়ুন অয়ন্তি অনেক দখল গেছে আপনার উপর দিয়ে আজকে।”
অয়ন্তি নিচু গলায় বলে, “আপনি ঘুমাবেন না। আপনার উপর দিয়েও তো অনেক দখল গেছে।”
“একটু পরে ঘুমাবো আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।”
অয়ন্তির বড্ড অস্থিরতা কাজ করছে মনের ভেতরে। এই ফুল দিয়ে সাজানো খাঠে তার ঘুম হবে না এটা সে সিউর। আর তার উপরে জাহিন এই ঘরে। অয়ন্তি চুপচাপ গিয়ে বিছানাতে বসে। কিন্তু না শুয়ে বিছানায় বসে থেকে পা দুটো দুলাতে থাকে। দৃষ্টি তার এলোমেলা বার বার জাহিনের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। জাহিনও আড় চোখে অয়ন্তির দিকে তাকাল। সম্পূর্ণ মেকআপ বিহীন মুখ, কোমর পর্যন্ত চুল গুলা ছেড়ে দিয়েছে। অয়ন্তির এমন রুপ দেখে জাহিনের বুকটা ধ্বক করে উঠে। মেয়েদের তো এভাবে সুন্দর লাগে তাহলে কেন এসব হাবিজাবি মুখে লাগাতে যায়। আগের তুলনায় জাহিনের কাছে মনে হচ্ছে অয়ন্তিকে এখন বেশি সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে। জাহিন অয়ন্তির অস্থিরতা কারণ বুঝতে পেরে গলা খাকারি দিয়ে বলে।
“ভয় পাওয়ার মতো কিছু হবে না আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান।”
অয়ন্তি জাহিনের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল আর বলল, “মানে!”
জাহিন এবার সরাসরি অয়ন্তির দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে, “দেখুন অয়ন্তি আপনি যথেষ্ট ম্যাচিওর একজন মেয়ে এতটুকু বুঝতে পেরেছি আমি এই দুই দিনে। তাই আমি আপনাকে সরাসরি কথাটা বলছি আমাদের ভবিষতের কথা চিন্তা করে। আমি জানি আমাদের বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়েছে। কিন্তু এই বিয়েটা আমি মন থেকে মেনে নিয়েছি তবে আমার… ।”
জাহিন থামে। অয়ন্তির আগ্রহের সহিত জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে জাহিনের পরবর্তী কথাটা শোনার জন্য। জাহিন আবারো বলে।
“আমার মনে হয় আমাদের দুজন দুজনকে সময় দেওয়া দরকার। অনেক গুলা বসন্ত পাড় করার ইচ্ছে আছে আমার আপনার সঙ্গে। কিন্তু তার আগে না হয় এই পবিত্র সম্পর্কটাতে প্রণয়ের সূচনা ঘটুক তারপর না হয় পূর্ণতা পাক।”
অয়ন্তি মাথা নিচু করে নেয় থুতনি গিয়ে ঠেকে চিবুক বরাবর। জাহিনের কথাটা শুনে এতক্ষণে মনের ভেতরে যত সংকোচ, ভয়, অস্থিরতা, জড়তা ছিল তা একটু হলেও কমে অয়ন্তির। জাহিন পুনরায় বলে।
“শুয়ে পড়ুন অনেক রাত হয়েছে।”
অয়ন্তি বিছানার উপরে পা তুলে শাড়িটা ভালো করে ঠিকঠাক করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। জাহিনও নিজের কাজে মনযোগ দেয়। সকাল সাড়ে দশটার দিকে একটা মিটিং আছে নির্বাচন অফিসে তারেই সব ডকুমেন্টস চেক করছে। সারা দিন এত কিছুর মাঝে কাজ করার সুযোগেই পায় নি তাই এখন করতে হচ্ছে।
__________
রাতের আঁধার কেটে ধরনীর বুকে আলো ফুটেছে। অয়ন্তি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। কিন্তু কিছু একটা মনে পড়তেই শুয়া থেকে এক প্রকার লাফিয়ে উঠে বসে পুরো ঘরটা নজর বুলিয়ে নেয় কিন্তু জাহিনের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায় না। অয়ন্তি বিছানার পাশটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে জাহিন রাতে বিছানায় শুইনি সারা রাত চেয়ারের বসেই কাটিয়ে দিয়েছে। অয়ন্তির খারাপ লাগল তার জন্য সারা রাত জাহিন এতটা কষ্ট ভোগ করছে। অয়ন্তি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবে মাত্র সাড়ে সাতটা বাজে। এত সকাল বেলা লোকটা গেল কোথায়? এমন সময় দরজায় কড়া নেড়ে জারা বলে।
“ভাবি উঠেছো?”
অয়ন্তি তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে বলে, “হ্যাঁ জারা উঠেছি।”
জারা দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে হাতে একটা শাড়ি নিয়ে আর বলে, “ভাবি এই শাড়িটা পড়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
“শাড়ি তো আমার কাছে অনেক আছে এখন আবার কেন?”
“এত কিছু তো জানি না মা আমাকে দিয়ে পাঠালো।”
অয়ন্তি জারার কাছ থেকে শাড়িটা নিয়ে বলে, “ওও আচ্ছা! বলছিলাম…।”
অয়ন্তি কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায়। জারা ভ্রু কুঁচকে বলে, “কিছু বলবে?”
“আসলে তোমার ভাইয়া কোথায়?”
“ওও ভাইয়া জগিং করতে বেরিয়েছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি একটু পর আবার এসে তোমাকে নিচে নিয়ে যাব।”
“আচ্ছা।”
জারা চলে যায়। কিন্তু অয়ন্তি ভাবনায় পড়ে যায় এখন কি শাওয়ার নিবে নাকি শুধু হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিবে। শাওয়ার নেওয়ার মতো তো কিছু হয়নি রাতে। কিন্তু বাইরের মানুষ তো আর সেটা জানে না। তাই অয়ন্তি সিদ্ধান্ত নিল সে এক্কেবারে শাওয়ার নিয়েই বের হবে। কিন্তু তার আগে বিছানাটা পরিস্কার করতে হবে। অয়ন্তি ফুলসহ চাদরটা তুলে নতুন একটা চাদর বিছিয়ে দিল। কিন্তু রুমের ভেতরে কোনো ঝাড়ু না পাওয়াতে রুমটা আর ঝাড়ু দিতে পারল না। তাই অয়ন্তি শুধু চাদরটা বিছিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
ভেজা চুলগুলা ঝাড়তে ঝাড়তে অয়ন্তি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকাতেই অয়ন্তি চমকে যায় জাহিনকে দেখে। জাহিন সোফায় বসে আছে আর তার দিকে মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জাহিনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে জগিং করার জন্য। অয়ন্তি লজ্জা পেয়ে আয়নার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে নেয় তার বড্ড লজ্জা লাগছে জাহিনের এমন চাওনি দেখে। এমন ভাবে তাকায় কেন লোকটা? জাহিনের তাকানোর মাঝেই কেন জানি একটা অন্য রকম শীতলতা অনুভব করে অয়ন্তি আর সারা শরীরে বয়ে যায় এক নাম না জানা শিহরণ। জাহিন শুকনো ঢোক গিলে। আনমনেই নিজের ডান হাতটা বুকের বা পাশে এনে রাখে। অনুভব করে হার্টের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এভাবে লাফাচ্ছে কেন হার্টটা? এতক্ষণ তো স্বাভাবিকেই ছিল তবে কি অয়ন্তিকে এমন আবেদনময়ী অবস্থায় দেখে তার হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে গেল। সে কি প্রেম পড়ে যাচ্ছে অয়ন্তির কিন্তু এত জলদি কি করে একটা মেয়ের প্রেম পড়ে যেতে পারে একজন পুরুষ সেই ব্যাপারটা জাহিন বুঝতে পারছে না? জাহিন জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে বসা থেকে উঠে টাওয়াল নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।
জাহিন চলে যেতেই এতক্ষণ আটকে রাখা শ্বাসটা অয়ন্তি ছাড়ে। নিজ সত্ত্বাকে স্বাভাবিক করে নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে যত দ্রুত সম্ভব এই ঘর থেকে বের হতে হবে। না হলে আবারো এই রকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তাকে যেটা অয়ন্তিকে বড্ড পীড়া দেয়।
_______
জারা আসে নি নতুন বউকে নিতে বরং এসেছেন রুনা আক্তার অয়ন্তিকে নিতে। জারা আসবে কি করে সে তো শকের মাঝে আছে যখন জানতে পেরেছে নুহাশ এসেছে গতকাল রাত্রে। জারা গতকাল রাত্রে দেখেছিল নুহাশের ঘরে বাতি জ্বালছিল কিন্তু বাতি জ্বালা দেখে ভেবেছিল শারাফ যেহেতু আজকে রাত্রে এখানে থাকবে তাই হয়তো লাইট জ্বলছিল কিন্তু শারাফের মুখে যখন নুহাশের আসার কথাটা শুনল তখন জারা স্তম্ভিত হয়ে যায়। প্রায় দশ দিন হয়ে গেছে নুহাশকে দেখে নি এমন কি গলায় স্বরও শুনে নি। সেই মানুষটা গত কাল রাত্রে এসেছে আর সে টেরও পায় নি। শারাফ জারাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে।
“কি জারা নুহাশ পল্লী যে গতকাল রাত্রে এসেছে সেটা কি তুমি জানতে না যে এখন এভাবে রিয়েক্ট করলে।”
জারা কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় বসে থেকে সিঁড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করে রেখেছে। এমন সময় অয়ন্তিকে নিয়ে নিচে নামেন রুনা আক্তার। অয়ন্তিকে নিয়ে সোজা কিচেনে চলে যান। জোহরা বেগম অয়ন্তিকে দেখে বলেন।
“বাহ খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে আমার বউ মাকে।”
রুনা আক্তার মজার ছলে বলেন, “দেখতে হবে না কার পছন্দ?”
জোহরা বেগম হেসে ফেলেন আর অয়ন্তিকে বলেন, “এখান কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো তোমার মা?”
“না মা কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।”
“অসুবিধা হলে নির্দ্বিধায় আমাকে বলবে আমি সেটা সমাধান করার চেষ্টা করব।”
অয়ন্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়। জোহরা বেগম পুনরায় বলেন, “আমাদের বাড়িতে একটা নিয়ম আছে অয়ন্তি। বাড়ির নতুন বউ বাসর রাতের পরের দিন সকালে নিজের হাতে সবার পাতে খাবার পরিবেশন করবে কিন্তু তুমি শুধু পায়েসটা পরিবেশন করবে, পারবে না এটা করতে?”
“পারব মা।”
__________
প্রায় দশ মিনিট পরে নুহাশ নিচে নামে। জারাকে সোফায় বসা দেখে থমকে যায়। আজ দশ দিন পর মেয়েটিকে চোখের দেখা দেখতে পেয়েছে নুহাশ। এত দিন বুকের ভেতরে যে শূণ্যতাটা অনুভব করে এসেছিল সেটা যেন নিমিষেই পূর্ণ হয়ে গেল। এদিকে জারাও নির্নিমেষ ভঙ্গিতে নুহাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে থাকা মানুষটা কেন তাকে এভাবে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে? তার একটুও মায়া জন্মায় না জারার প্রতি? এতটা কঠিন হৃদয়ের মানুষ কেন লোকটি? জারা এসব ভেবে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে, চোখ দুটো টলমল করছে জলে। চোখের পলক ফেললেই হয়তো গড়িয়ে পড়বে নোনা জলটুকু। শারাফ এক বার নুহাশের দিকে তো আরেক বার জারার দিকে তাকায়। শারাফ পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু বলতে নিবে তখনই জারা বসা থেকে উঠে এক প্রকার দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। নুহাশ চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে। জারার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল বিরহের যন্ত্রণা, কিন্তু নুহাশ অসহায় চাইলেও সে কিচ্ছু করতে পারবে না। এই বিরহের যন্ত্রণা সে শুধু চোখের দেখা দেখে যেতে পারবে কমাতে পারবে না। শারাফ নুহাশের কাছে এসে নুহাশের কাঁধে হাত রেখে সরল গলায় বলে।
“আর কত দিন নিজেকে ধরে রাখবি নুহাশ? জারাকে এভাবে কষ্ট না দিলে কি হয় না। ও তোকে সত্যি মন থেকে ভালবাসে।”
নুহাশ আস্তে করে বলে, “হুম জানি।”
“তাহলে কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস মেয়েটাকে? নিজের করে নে ওকে নুহাশ। ভবিষ্যতে কি হবে এটা নিয়ে পড়ে থাকলে বর্তমানটা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
“কি ধ্বংস হয়ে যাবে?”
জাহিনের গম্ভীর গলার স্বর শুনে শারাফ আর নুহাশ চমকে উঠে। একে অন্যের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায় এটা ভেবে জাহিন কিছু শুনে ফেলে নি তো। দুজনকে চুপ থাকতে দেখে জাহিন আবার বলে।
“কি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা বলছিলি তোরা?”
শারাফ মেকি হেসে বলে, “আর বলো না ভাইয়া আসলে ওকে বোঝাচ্ছিলাম যে শুধু রাজনীতি নিয়ে পড়ে থেকে জীবনটা ধ্বংস করে দিস না একটু এন্টারটেইনমেন্টও লাগে জীবনে।”
জাহিন সন্দেহের নজরে তাকিয়ে বলে, “তাই বুঝি।”
“হুম।”
জাহিন আর ভেতরে না গিয়ে বলে, “আচ্ছা যাই হোক নুহাশ ব্রেকফাস্ট করে নে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে আমাদের।”
এমন সময় জোহরা বেগম বলেন, “কোথায় যাওয়ার কথা বলছিস তুই জাহিন।”
জাহিন সোফায় বসতে বসতে বলে, “নির্বাচন অফিসে একটা মিটিং আছে মা।”
“আজকে কোনো মিটিং ফিটিং এ যেতে হবে না। আজকে বউমাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাবি।”
“সমস্যা নেই ওনাকে ওনার বাড়িতে দিয়ে আসব আমি।”
জোহরা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “দিয়ে আসবি মানে। তুই থাকবি না ওখানে?”
“সিউর বলতে পারছি না কাজ আছে আমার।”
“তোর কাজ টাজ আজকের জন্য বন্ধ। পারলে এসব রাজনীতি করাই বন্ধ করে দে। যেই কাজের জন্য নিজের স্ত্রীকে সময় দিতে পারবি না সেই কাজ না করাই উত্তম। আজকে ওই বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকবি এটাই শেষ কথা আমার।”
জাহিন কথা বাড়াতে চায় না মায়ের সাথে তাই বলে, “ঠিক আছে সময় আসুক দেখা যাবে। এবার নাস্তা দাও দেরি হচ্ছে আমাদের।”
“হুম দিচ্ছি।”
জোহরা বেগম কিচেনে চলে যান। আড়াল থেকে অয়ন্তি জাহিনের বলা প্রত্যেকটা কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায়। জাহিন যদি ওখানে গিয়ে রাতে না থাকে তাহলে তো মানুষ জন খুব খারাপ ভাববে। গ্রামের মানুষ তো তিলকে তাল বানাতে একটুও সময় নিবে না। কি করে অয়ন্তি জাহিনকে রাজি করাবে ওখানে রাতটা থাকার জন্য?
#চলবে
বানান ভুল হলে একটু মানিয়ে নিয়েন।