#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৩
জাহিনের মুখে এমন কথা শুনে একজন আরেকজনের মুখের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। জাহিনের কথাটা ঠিক তাদের বোধগম্য হচ্ছে না। একটা ছেলে যে তার পছন্দের কথা এভাবে প্রকাশ করতে পারে তারা সেটা জানত না। জাহিন ঠোঁট টিপে হেসে গলা ঝেড়ে বলে।
“আর কি কোনো কথাবার্তা বলবেন আপনারা আমার সাথে? আমার আবার কথাবার্তা বলতে ভালোই লাগে। আসলে কি বলুন তো রাজনীতি করি তো রাজনীতির মাঠে ভাষণ দেওয়া আর কথা বলাটা আমি খুব ভালো করেই জানি। সে যেই ধরণের কথা হোক আমি সব কথাতেই একশোতে একশো।”
একজন মাহিলা হতভম্ব হয়ে বলে, “না বাবা আর কোনো কথাবার্তা নেই তোমার সাথে।”
জাহিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “ঠিক আছে তাহলে আমি ভেতরে যাই। আর আমি যাওয়ার পর আপনার পুনরায় আলাপ আলোচনা শুরু করতে পারেন আমাকে নিয়ে। আমি এতে কিচ্ছু মনে করব না।”
মাহিলা তিন জন আরো হতবাক হয় জাহিনের কথা শুনে। জাহিন দু কদম এগিয়ে অয়ন্তির দিকে ফিরে বলে, “অয়ন্তি একটু রুমে আসুন।”
অয়ন্তি রোবটের মতো জাহিনের পেছন পেছন চলে যায়। জাহিন আর অয়ন্তি চলে যেতেই একজন মহিলা বলে উঠেন, “আরে এই ছেলে তো দেখি বড্ড মুখ পাতলা মানুষ।”
আরেকজন বলে উঠেন, “হুম একদম ঠিক বলেছো এই ছেলের সামনে বেফাঁস কোনো কথা বললেই নিজেদেরই সম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে।”
ফাতেমা আক্তার চায়ের ট্রে নিয়ে এসে টেবিলের উপরে রেখে ভাবিদের মুখের এমন হতবিহ্বল অবস্থা দেখে বলেন, “কি হয়েছে?”
“কি আর হবে তোমার মেয়ের জামাই একশোতে একশো।”
ফাতেমা আক্তার মুচকি হাসি দিয়ে চা এগিয়ে দেয়। বুঝতে পেরেছে জাহিন নিশ্চয়ই এক্কেবারে ওদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে।
________
অয়ন্তি রুমের ভেতরে ঢুকে নিচু গলায় বলে, “কেন ডেকেছেন?”
জাহিন ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করতে করতে বলে, “এমনি ডেকেছি।”
অয়ন্তি ক্ষীণ গলায় বলে, “এমনি কেউ ডাকে?”
জাহিন অয়ন্তির দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “আমি ডাকি। আর আপনাকে এখানে নিয়ে আসার মূল কারণ হল ওখানে যাতে আর অস্বস্তিতে না পড়তে হয় তার জন্য। মুখ ফুটে তো কিছু বলতে পারবেন না ওনাদেরকে তাই এখানে নিয়ে আসলাম।”
অয়ন্তি অভিভূত হয়ে জাহিনের দিকে তাকাল। জাহিন তাকে নিয়ে এতটা ভাবে। তাদের তো মাত্র কয়েকদিন হল পরিচয় হল আর তাতেই জাহিনের এত চিন্তা তাকে নিয়ে। জাহিন ল্যাপটপ হাতে নিয়ে টেবিলের উপরে রেখে চেয়ারে বসে। অয়ন্তির নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। কিন্তু আদৌ কি জাহিন তার মতো একটা মেয়েকে ডির্জাভ করে? তাদের মাঝে তো আকাশ পাতাল তফাৎ। অয়ন্তি এসব চিন্তা করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।
“খাবেন না।”
জাহিন কাজ করতে করতে বলে, “একটু পরে খাব।”
“কিন্তু বেলা তো গড়িয়ে যাচ্ছে একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে।”
“আপনি যান আমি আসছি।”
অয়ন্তি চলে যেতে নিলে আবরো ফিরে আসে। জাহিন অয়ন্তিকে আবারো আসতে দেখে বলে, “কিছু বলবেন?”
“আসলে বলছিলাম আপনি কি চলে যাবেন খাওয়া দাওয়া করে?”
“জাহিন ল্যাপটপের দিকে নজর রেখে বলে, “কি মনে হয় আপনার?”
“প্লিজ আজকের রাতটা থেকে যান। যদি এভাবে চলে যান তাহলে বাবা আর মামনি খুব কষ্ট পাবে।”
জাহিন ঘাড় বাঁকিয়ে অয়ন্তির দিকে ফিরে শীতল গলায় বলে, “আপনি কষ্ট পাবেন না অয়ন্তি?”
অয়ন্তি হকচকিয়ে উঠল জাহিনের মুখে আকস্মিক এমন কথা শুনে। কি উত্তর দিবে জাহিনের প্রশ্নে এবার সে? আর সত্যি কথা বলতে অয়ন্তি ভীষণ কষ্ট পাবে জাহিন যদি এভাবে চলে যায়। কিন্তু অয়ন্তি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। জাহিন পুনরায় বলে।
“কি হল বলুন আপনি কষ্ট পাবেন না আমি চলে গেলে?”
অয়ন্তি মাথা নিচু করে ঠোঁটে কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে আস্তে করে বলে, “হুম কষ্ট পাবো।”
জাহিন জিহ্বা দ্বারা ওষ্টদ্বয় ভিজিয়ে অধরকোণে হাসি রেখে বলে, “তাহলে তো যাওয়া সম্ভব নয়। যেই কাজটা স্বামী করলে স্ত্রী কষ্ট পাবে সেই কাজটা স্বামী কি করতে পারে বলুন? যাব না আমি, আজকে রাতটা এখানেই থাকব। তাই এতো চিন্তা করে মাথায় প্রেসার ক্রিয়েট করবেন না।”
অয়ন্তি জাহিনের কথা শুনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল জাহিনের পানে। এই লোকটা এতো ভালো কেন? তাকে এত্ত কেয়ার করে কেন? জাহিন পুনরায় বলে।
“আপনি গিয়ে খাবার সার্ভ করেন আমি আসছি।”
অয়ন্তি “হুম” বলে চলে যায়। অয়ন্তি চলে যেতেই জাহিন হাতের কনুই টেবিলের উপরে রেখে চার আঙুল ঠোঁটের উপরে রেখে সশব্দ হেসে উঠে। অয়ন্তি এসে দেখে যারা এসেছিল তারা চলে গেছেন। হামিদ খন্দকার বাজারে গেছেন আরো কিছু জিনিস কিনে আনার জন্য। আর ফাইজ গ্রামের ছেলেদের সাথে খেলায় মগ্ন। অয়ন্তি রান্নাঘরে গিয়ে দেখে ফাতেমা আক্তার তরকারি গরম করছেন মাটির চুলোয়। অয়ন্তি মামনির কাছে এসে বলে।
“মামনি খাবার দিয়ে ফেলো।”
“দাঁড়া মা গোশতের তরকারিটা গরম হয়ে গেছে। তোরা আসতে এত দেরি করলি যে সব খাবার ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
“ঠিক আছে তরকারিটা তুমি গরম দিয়ে নিয়ে আসো আমি বরং প্লেট গুলা বের করি।”
অয়ন্তি রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দেখে লিজা আসছে হাতে একটা ব্যাগ। লিজা অয়ন্তিকে দেখার সাথে সাথে দৌঁড়ে এসে অয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বলে।
“কেমন আছিস বান্ধবী?”
অয়ন্তি লিজাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দু হাত বুকে বেঁধে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “এতক্ষণে আসার সময় হল তোর!”
লিজা অনুরাগী গলায় বলে, “রাগ করচ্ছিস কেন বিবাহিত মহিলা? তোর দেবরের শার্ট ঠিক করার চক্করে দেরি হয়ে গেছে।”
অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “শার্ট! কিসের শার্ট?”
“আরে ওই যে শারাফ ছেলেটার শার্টটা।”
“ও।”
“বোতাম গুলা লাগিয়ে দিয়েছি কিন্তু লিপস্টিকের দাগটা উঠে নি তাই সুতো দিয়ে একটা ডিজাইন করে দিলাম।”
“দেখি কেমন ডিজাইন করেছিস?”
লিজা বের করে অয়ন্তির হাতে শার্টটা দেয়। অয়ন্তি কারুকাজটা দেখে ছোট ছোট চোখ করে লিজার দিকে তাকায়। লিজা অয়ন্তির তাকানো দেখে আমতা আমতা করে বলে।
“এভাবে তাকাছিস কেন তুই?”
“লাভ আকৃতির ডিজাইন বাবা।”
“আরে এছাড়া কোনো ডিজাইন মাথায় আসে নি তাই এটা দিয়েছে। আর দেখতে কিন্তু সুন্দর লাগছে তাই না।”
“হুম বুঝলাম বুঝলাম।”
“আচ্ছা বাদ দে এসব কথা। আগে বল গতকাল রাত্রে কি হল?”
কথাটা বলে লিজা নিজের কাঁধ দ্বারা অয়ন্তিকে ধাক্কা দেয়। অয়ন্তি উদাস গলায় বলে, “কি হবে? কিচ্ছু হয় নি।”
“হবে হবে ঠিক হবে একটু ধৈর্য ধরো বালিকা।”
“হয়েছে এবার চল।”
বলেই দুজনে ঘরে চলে গেল।
__________
গৌধুলি বেলা। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। আর কিছুক্ষণ পরেই শহরটা রাতের আঁধারে ডুবে যাবে। তার মাঝ দিয়ে রিহান হুটি আর মুখে মাক্স পড়ে হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে আপন মনে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে যাওয়াতে রিহানের হাত থেকে খাবারের প্যাকেট গিয়ে পড়ে পাশে থাকা ড্রেনের মাঝে। রিহান রেগে ফায়ার হয়ে বলে।
“এটা কি করলেন আপনি? দেখে চল…।”
থেমে যায় রিহানের বুলি। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে গৌর বর্ণের এক যুবতী কন্যা। মেয়েটির চোখে মুখে ফুটে আছে ভয়ের ছাপ আর জোরে জোরে ক্রমাগত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রিহানকে চুপ মেরে যেতে দেখে মেয়েটি চিকন গলায় বলে।
“সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নি। আসলে আমার হোস্টেলে আর বিশ মিনিট পরেই তালা দিয়ে দিবে তো তাই এভাবে দৌঁড়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু প্রতিমুখে যে আপনার সাথে এভাবে আমার ধাক্কা লেগে যাবে এটা বুঝতে পারি নি।”
রিহান হা করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে যেমন সুন্দরী ঠিক তেমনই গলার স্বরটাও এক্কেবারে অপূর্ব মনে হচ্ছে মেয়েটির গলা দিয়ে মধু বের হচ্ছে। এই মেয়েটিকে তো রিহানের চাই চাই অন্তত প্রতি প্রহরে এমন মধুময় গলার স্বর শুনার জন্য। রিহান আনমনে ডান হাত দিয়ে বুকের বা পাশটা ধরে আস্তে করে বলে।
“ইস।”
মেয়েটি বলল, “কিছু বললেন? বিশ্বাস করুন আমি সত্যি দুঃখিত।”
রিহান নিজের ঘোর থেকে বের হয়ে আসে। আশা পাশটা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে গম্ভীর গলায় বলে, “সরি বললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এখানে জানেন কত টাকার খাবার ছিল?”
মেয়েটি দ্রুত গলায় বলে, “কত টাকার খাবার ছিল এখানে একশো টাকার খাবার হবে নিশ্চয়ই। আমি যেহেতু আপনার ক্ষতি করেছি তাহলে আমি এর ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি দাঁড়ান।”
বলেই তাড়াহুড়ো হাতে ব্যাগের চেইন খুলতে লাগল। রিহান আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা কি বলল? এখানে একশো টাকার খাবার আছে। মানে তাকে দেখে কি এমন মনে হয় সে একশো টাকা দিয়ে ডাল ভাত খাওয়ার মত লোক। রিহান নিজের সাজপোশাকের দিকে তাকায়। না সাজপোশাক তো ঠিকেই আছে তাহলে! মেয়েটি রিহানের দিকে একশো টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে বলে।
“এই নিন আপনার ক্ষতিপূরণ।”
রিহান হতবাক হয়ে বলে, “আচ্ছা আপনার কি মনে হয় এখানে একশো টাকার খাবার ছিল।”
“তাহলে কত টাকার খাবার ছিল?”
“মোট আটশো টাকার খাবার ছিল।”
মেয়েটি চোখ বড় বড় করে বলে, “কি আটশো টাকার খাবার!”
“জি! আমি আপনার কাছে টাকা চাইতাম না কিন্তু আপনি টাকার গরম দেখালেন আমাকে তো এই মুহূর্তে আমাকে আটশো টাকা ফেরত দেন।”
“মানে এখন।”
“জি এখন।”
“কিন্তু আমার কাছে তো এত টাকা নেই এই মুহূর্তে। আমি অন্য দিন দেই টাকাটা।”
“হুম আমাকে বোকা পেয়েছেন আপনাকে আমি ছেড়ে দেই আর আপনি এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন যাতে পরে আর টাকাটা দিতে না হয়।”
“বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে আমার কাছে এত টাকা নেই।”
রিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নাড়িয়ে বলে, “ওকে আমার ফোন নাম্বারটা নিন পরে যখন টাকা যোগার হবে তখন ফোন করে জানিয়ে দিবেন।”
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি নাম্বারটা বলুন আপনার।”
মেয়েটি ফোন বের করে রিহানের নাম্বারটা তুলে। রিহান দু ভ্রু উপরে তুলে বলে, “একটা মিসড কল দিন আমাকে যাতে পরে চিনতে পারি আপনাকে আমায় কল দিলে।”
মেয়েটির বোকার মতো রিহানকে মিসড কল দেয়। রিহান কুটিল হেসে বলে, “ওকে তাহলে টাকা যোগার হলে আমাকে ফোন দিয়েন। আচ্ছা বাই দ্যা ওয়ে আপনার নামটা কি?”
মেয়েটি কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে বলে, “পাপড়ি! পাপড়ি আমার নাম।”
“পাপড়ি। নাইস নেইম। আর আমার নাম রিহান। নাম্বারটা সেইভ করে রাখবেন ফোনে। পারলে আমার নামটা আপনার হৃদয়ও সেইভ করে রাখতে পারেন।”
লাস্ট কথাটা বিড়বিড় করে বলে রিহান। পাপড়ি আর এক মুহূর্ত না থেকে দ্রুত হাঁটা ধরে। রিহান পাপড়ি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বা হাত দিয়ে ঘাড় চুলকিয়ে মুচকি হাসে।
_________
জারা পড়ার টেবিলে বসে আছে। কিন্তু পড়ায় মনযোগ নেই। সে আছে তার প্রিয় মানুষটির নামে চিঠি লিখতে ব্যস্ত।
“প্রিয় নুহাশ ভাই, তুমি এতোটা কঠিন হৃদয়ের মানব কি করে হতে পারো? এতোটা নির্দয় কেন তুমি? তোমার কি একটুও করুণা হয় না আমার জন্য? তুমি কি কিচ্ছু বোঝো না, নাকি সব বোঝেও না বোঝার ভান ধরো কোনটা? কখনও তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় তুমি আমাকে নিজের সর্বস্ব টুকু দিয়ে ভালোবাসো কিন্তু আবার কখনও মনে হয় তুমি আমাকে এক ফোটাও ভালোবাসো না। কেন মনে হয় আমার এমনটা বলবে? আমি চাইলেও তোমাকে আমার মস্তিষ্ক থেকে সরাতে পারি না। তুমি আমার সামনে আসলেই আপনাআপনি আমার চোখ দুটো তোমার দিকে চলে যায় চাইলেও আটকাতে পারি না। এখন বলো, এটা কি আমার দোষ না আমার কোনো দোষ নেই সম্পূর্ণ দোষ তোমার কারণ তুমি আমাকে তোমার দিকে টানো চম্বুকের মতো টানো। আমি জানি তুমি যদি আমাকে এক মুহূর্তের জন্য ভালোবেসে থাকো তাহলে সেটা কোনো দিন প্রকাশ করবে না আমার পরিবারের জন্য। কিন্তু আমি আমার এই হৃদয়ে কঠিন হৃদয়ের মানবটির নাম লিখে নিয়েছি এখন অন্য কোনো পুরুষের নাম এই হৃদয়ে আর লিখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। কারণ আমি এই কঠিন হৃদয়ের মানবটাকে যে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি বড্ড।”
এতটুকু লিখেই জারা কালো রঙের ডাইরিটা বন্ধ করে ডাইরির উপরে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে। এমন শত শত চিঠি ডাইরির ভাজে থাকা শুভ্র রঙের পাতায় কলমের কালো কালি দিয়ে লিখে যাচ্ছে জারা। কিন্তু সেই চিঠি গুলা নুহাশকে দেওয়ার সাহস পায় না পাছে যদি এই চিঠির কারণে সারা জীবনের জন্য নুহাশকে হারিয়ে ফেলে। যেটা জারা একদমেই চায় না।
_______
অয়ন্তি ফ্লোরে বিছানা করছে। জাহিন শশুর মশাইয়ের সাথে কথা বলে রুমে ঢুকতেই অয়ন্তিকে এমনটা করতে দেখে থমকে যায়। জাহিন দ্রুত পায়ে অয়ন্তির কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে।
“কি করছেন আপনি অয়ন্তি?”
“বিছানা করছি আজকে আমি নিচে থাকব আপনি খাটে থাকবেন।”
জাহিন ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলে, “আপনি নিচে থাকবেন মানে? ”
অয়ন্তি দাঁড়িয়ে বলে, “এখানে তো আরামদায়ক চেয়ার নেই যে আপনি চেয়ারে ঘুমিয়ে যাবেন। তাই আজকে আপনি খাটে থাকুন আমি নিচে থাকব।”
জাহিন চাপা গলায় বলে, “একদম না আপনি বেডে থাকবেন।”
অয়ন্তি অবাক হয়ে বলে, “তাহলে আপনি কোথায় থাকবেন?”
“আমিও বেডে থাকব।”
“কিন্তু গতকাল রাত্রে তো আপনি আমার সাথে থা…..।”
অয়ন্তির কথা সমাপ্ত না হওয়ার আগেই জাহিন বলে, “গতকাল রাত্রে আমি বেডেই থাকতাম কিন্তু কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পায় নি। আর ভোর বেলায় উঠে দেখি চেয়ার ঘুমিয়ে ছিলাম তাই বেডে গিয়ে থাকি নি।”
“ওও।”
“এগুলা জায়গা মতো রেখে চুপচাপ শুয়ে পড়ুন।”
জাহিন কথা বলে বেডের একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে কাঁধ হয়ে। অয়ন্তি জাহিনের কথা মতো সব কিছু জায়গা মতো গুছিয়ে রেখে ঘরের লাইট অফ করে চুপচাপ গিয়ে জাহিনের পাশে গিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে জাহিনের দিকে পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ে। জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। অয়ন্তির বড্ড অস্থিরতা কাজ করছে মনের মাঝে গতকাল রাত্রের থেকে বেশি। হবেই না কেন জাহিন যে তার পাশে। অয়ন্তিও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
_________
ফোনের কর্কশ আওয়াজ শুনে জাহিনের ঘুম ভাঙ্গে। বেড সাইডের টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে নুহাশ কল করছে। সবে ভোরের আলো ফুটেছে। জাহিন শুয়া অবস্থায় কল রিসিভ করে কিন্তু ফোনের ওপর পাশ থেকে নুহাশের বলা কথাটা শুনে জাহিন লাফ দিয়ে উঠে বসে আর জোর গলায় বলে।
“হোয়াট কি করে ঘটলো এসব? আমি এক্ষুণি আসছি।”
অয়ন্তি জাহিনের চিৎকার শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে আর বলে, “কি হয়েছে?”
জাহিন হেংগারে ঝুলে থাকা কালো কোর্টটা গায়ে জড়িয়ে বলে, “অয়ন্তি আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে আপনি এখানে থাকুন আমি পড়ে এসে আপনাকে নিয়ে যাব।”
কথাটা বলেই জাহিন ব্যাগে ল্যাপটপ ঢুকিয়ে নেয়, ফোন, ওয়ালেট আর গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। অয়ন্তি চুপচাপ জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে সাহস পাচ্ছে না কিছু বলার। অয়ন্তি জাহিনের পেছন পেছন যায়। জাহিন নিজেই সদর দরজা খুলে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে। সদর দরজার খুলার শব্দে হামিদ খন্দকার আর ফাতেমা আক্তার উঠে আসেন তারা একটু আগেই নামাজ আদায় করে শুয়েছিলেন। অয়ন্তি সদর দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। জাহিন চলে গেছে যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি ড্রাইভ করে। ফাতেমা আক্তার মেয়ের কাছে গিয়ে বলেন।
“কি হয়েছে অয়ন্তি?”
“জানি না মা একটা কল আসলো আর ওনি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন।”
অয়ন্তি কথাটা বলে এক নজরে উঠোনের মাঝ বরাবর তাকিয়ে আছে। কি এমন হল যে লোকটাকে এভাবে চলে যেতে হল? খুব বড় বিপদ হয়েছে কি?
#চলবে________