#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৮
[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]
রিহান চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে মুখে মাস্ক পড়ে। অপেক্ষা করছে পাপড়ি নামের মেয়েটির জন্য। প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেছে রিহান পাপড়ির জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু পাপড়ির দেখা নেই। মেয়েটি কি আজকে আসে নি? কিন্তু সে তো অনেক আগেই এসেছে নাকি মেয়েটা চলে গেছে তার আসার আগেই। রিহানের চোখে ফুটে উঠেছে বিরক্তের ছাপ। হঠাৎ করেই নজর পড়ে পাপড়ির দিকে পাপড়ি আসছে আর সাথে একটি মেয়ে। পাপড়ি মেয়েটির সাথে কথা বলছে আর হাসছে। পাপড়ির প্রাণ খোলা হাসির দিকে এক পলকে তাকিয়ে রইছে রিহান। এতক্ষণের সকল বিরক্ত যেন নিমিষের মাঝে উবে গেছে। পাপড়ি কাছে আসতেই রিহান বলে।
“এই যে মিস পাপড়ি।”
না পাপড়ির কোনো সাড়া নেই সে মনের আনন্দে হেসেখুুুুদে হেঁটে যাচ্ছে। রিহান এবার পাপড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “এই যে আমি আপনাকে কিছু বলছি।”
পাপড়ি ভ্রু কুঁচকে রিহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কে আপনি?”
রিহান তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘাড় বাঁকিয়ে চারিপাশটা নজর বুলিয়ে বলে, “আপনার ব্রেইন এত উইক কেন?”
পাপড়ি কথাটা শুনে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, এক্সকিউজ মি আপনি জানেন আমি পড়ালেখায় কত্ত ভাল। সবসময় ফাস্ট হয়ে এসেছি আমি।”
“ক্লাসে ফাস্ট হলেই যে ব্রেইন স্ট্রং হয় এমনটাও নয়। দুই দিন আগের ঘটনাটাই আপনার স্ট্রং ব্রেইন থেকে চলে গেল মিস পাপড়ি এই আপনার স্ট্রং ব্রেইন।”
রিহানের মুখে পাপড়ি নামটা শুনে পাপড়ি বুঝতে পারল ছেলেটা কে? পাপড়ি কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে মেকি হেসে বলে, “ও আপনি রিহান আগে বলবেন তো নামটা।”
“যাক মনে পড়ল তাহলে আমাকে।”
“হুম।”
পাপড়ির পাশে দাঁড়ানো মেয়েটি কানে কানে বলে, “দোস্ত ওই ছেলেটা নাকি যার খাবার ফেলে দিয়েছিলি তুই।”
“হুম।”
“দোস্ত ছেলেটা দেখতে হেব্বি সুন্দর।”
পাপড়ি দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “তুই চুপ করবি ইভা।”
ইভা মুখ ছোট করে চুপ মেরে যায়। রিহান মুখ থেকে মাস্কটা খুলে বলে, “মুখটা ভাল করে দেখে নেন আমার। পরের বার যেন আমাকে চিনতে ভুল না হয় আপনার। আর বাই দ্যা ওয়ে আজকে আমার কল কেটে দিলেন কেন সকাল বেলা?”
“ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছিল আমার ফোনের।”
“কলটা আমি করেছিলাম আপনাকে তাই আপনার ফোনের ব্যালেন্স কি করে শেষ হয়?”
পাপড়ি ধরা পড়ে যাওয়ার ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে, “ওও আচ্ছা আচ্ছা আপনিই তো কল করেছিলেন আমাকে। তাহলে হয়ত আমার কানে লেগে কল কেটে গিয়েছিল আর আমি ভেবেছি আপনি হয়ত কল কেটে দিয়েছেন।”
রিহান চোখ ছোট ছোট করে বলে, “আপনি তো নাকে মুখে মিথ্যা কথা বলেন।”
পাপড়ি থম মেরে যায় আসলেই সে নাকে মুখে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে। রিহান পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে, “আমার টাকাটা কবে দিবেন মিস পাপড়ি?”
পাপড়ি কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে ইভা বলে উঠে, “কে পাপড়ি?”
পাপড়ি চোখ বড় বড় করে নিয়ে রিহানের তাকিয়ে রিহানকে কিছু বলতে না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলে, “দিয়ে দিব খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দিব।”
“তাড়াতাড়িটা কবে?”
“দিয়ে দিব আর আপনি এমন করেছেন কেন মাত্র আটশো টাকার জন্য। দেখে তো মনে হচ্ছে খুব বড় লোকের ছেলে তাহলে এই আটশো টাকার জন্য আমার পেছনে পড়ে আছেন কেন?”
“আপনি তো নিজের মুখেই বলেন বড় লোকের ছেলে তাহলে আমি বড় লোক কি করে হলাম? বড় লোক তো আমার বাপ। আর বড় লোকের ছেলে বাপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে এসেছে তাই তো এই আটশো টাকার জন্য আপনার পেছনে পড়ে আছি।”
“ঠিক আছে দিয়ে দিব আপনার আটশো টাকা এবার সরুন।”
“আর একটা কথা ফোন দিলে ফোনটা ধরবেন?”
“কেন?”
“কেন মানে আমার আটশো টাকার খবর নেওয়ার জন্য। আর যদি না ধরেন তাহলে কি করব জানেন?”
“কি করবেন পুলিশে দিবেন নাকি?”
“উহু! আমি এতটাও নির্দয় নই যে আপনার মতো সুন্দরী একটা মেয়েকে পুলিশে দিয়ে দিব। আমি সোজা আপনার হোস্টেলের সামনে গিয়ে আপনার নাম ধরে চিৎকার করব।”
পাপড়ি চোখ বড় বড় করে হতবাক হয়ে বলে, “আপনি! আপনি আমার হোস্টেলের খোঁজ পেলেন কি করে?”
পাপড়ির আতকে উঠা মুখটা দেখে রিহান মনে মনে হাসল। রিহান পাপড়িকে ভয় দেখানোর জন্য জাস্ট এই হোস্টেল চিনার কথাটা বলেছে। সে তো পাপড়ির হোস্টেল কোথায় সেটা জানেই না। রিহান নিজেকে সামলে নিয়ে কবি কবি ভাব নিয়ে বলে।
“মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায়। আমি এখন আসি রাতে ফোন দিব ভদ্র মেয়ের মতো কলটা ধরবেন। যদি না ধরেন তাহলে খবর আছে।”
রিহান কথাটা বলে চলে যায়। পাপড়ি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এ কোথায় ফেঁসে গেল ও? ইভা হতবাক হয়ে বলে।
“এই অবন্তি তোর নাম পাপড়ি হল কবে থেকে?”
অবন্তি সরল গলায় বলে, “দুই দিন আগে হল।”
“তার মানে তুই ছেলেটাকে মিথ্যে নাম বলেছিস।”
“হুম।”
“পরিচয় গোপন করে আবার নিজের ফোন নাম্বার তো ঠিকই দিয়ে দিলে।”
“আরে তখন মাথা কাজ করছিল না তাই কিভাবে কিভাবে যেন নাম্বারটা দিয়ে ফেলেছি ছেলেটাকে।”
“অবন্তি তুই ফেঁসে গেছিস রে? এই ছেলে তোর পিছু ছাড়বে না মনে হচ্ছে।”
অবন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে।”
“ছেলেটা মনে হয় তোকে পছন্দ করে।”
অবন্তি তাচ্ছিল্যময় হেসে বলে, “বাজে কথা। দুই দিন আগে জাস্ট একটা ধাক্কা খেলাম আর ছেলেটা আমাকে পছন্দ করে ফেলল।”
“তুই মিলিয়ে নিস আমার কথাটা।”
“আচ্ছা মিলিয়ে নিব এখন চল না হলে হোস্টেলের গেট বন্ধ করে দিব।”
হাঁটা ধরল দু বান্ধবী। ইভা হাঁটার মাঝে মজা করে বলে, “কিন্তু তুই যাই বলিস দোস্ত ছেলেটা হেব্বি দেখতে আর তোর সাথে মানাবেও খুব। পুরাই চকলেট বয়।”
“তোর মুখটা বন্ধ করে চুপচাপ হাঁট।”
কিন্তু অবন্তি খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। এভাবে পরিচয় নিয়ে মিথ্যা কথা বলাটা ঠিক হয় নি তার। ছেলেটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার টাকা তাকে বুঝিয়ে দিয়ে এই ভার থেকে নিস্তার পেতে হবে।
________
রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে ঘড়িতে। আকাশে গোল তালার মতো চাঁদ উঠেছে। তার সাথে আকাশ জুড়ে তারার মেলা বসেছে।অয়ন্তি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ নিচে থাকা জাহিনের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু এখন এক নজরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর বার বার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ছে। অন্যদিকে জাহিন বাগানের মধ্যবর্তী স্থানে রঙিন টিন দিয়ে বানানো ছাউনির নিচে বসে আছে আর তার আশে পাশে কয়েকজন মানুষ বসে আছে। হয়ত কিছু ব্যাপার নিয়ে মিটিং চলছে তাদের মাঝে। এক সময় মিটিং শেষ হল একে একে সবাই চলে যায়। কিন্তু জাহিন ঠাঁই বসে রয়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নুহাশ বলে।
“ভাই ভেতরে যাবে না?”
জাহিন আস্তে করে বলে, “তুই যা আমি আসছি একটু পর।”
“বেশিক্ষণ থেকো না ঠান্ডা লাগবে।”
“হুম। তুই যা।”
নুহাশ মাথা নাড়িয়ে ভেতরে চলে আসে। ভেতরে আসতেই শিরিন খালাকে বলে, “খালা এক মগ কফি বানিয়ে দিতে পারবে আমাকে।”
“আইচ্ছা আমি কফি করে নিয়া আইতাছি।”
নুহাশ উপরে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই জারা নামে নিচে খালি ওয়াটারের বোতল নিয়ে। শিরিন খালাকে দেখে বলে, “খালা আমার বোতালে পানি ভরে দাও তো।”
শিরিন খালা বলেন, “আমি নুহাশ ভাইকে কফিটা দিয়ে আসি পরে তোমার বোতলে পানি ভরে দিতাছি।”
জারা থম মেরে যায় শিরিন খালার কথাটা শুনে। শিরিন খালা কফিটা নিয়ে চলে যেতে নিলে জারা কিছু একটা ভেবে অধৈর্য গলায় বলে, “খালা আগে তুমি আমার বোতলে পানি ভরে দাও পরে নুহাশ ভাইকে কফিটা দিয়ে আসো।”
“আমি যাবো আর আসব।”
জারা জেদ ধরে বলে, “না না তুমি আগে আমার কাজটা করে দাও।”
কথাটা বলে নিজেই শিরিন খালার কাছ থেকে কফির মগটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপরে কফির মগটা রেখে শিরিন খালার হাতে ওয়াটার বোতলটা দিয়ে বলে, “আগে বোতলটা ভরে দাও পরে অন্য কাজ।”
“ঠিক আছে।”
শিরিন খালা কিচেনে চলে যেতেই জারা বাঁকা হেসে বলে, “আজকে আমাকে ভয় দেখিয়েছো তুমি তাই না। তোমাকে যদি নুনে পোড়া কফি না খাইয়েছি আজকে আমি।”
জারা তাড়াতাড়ি করে ডাইনিং টেবিলের মাঝখানে রাখা লবণের পাত্রটা এনে এক খবলা লবণ নিয়ে কফির মগে দিয়ে চামচ দিয়ে নাড়তে থাকে। চোখ মুখে ফুটে আছে পৈশাচিক এক আনন্দ। শিরিন খালার আসার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে লবণের পত্রটা যথাস্থানে রেখে ভাল মানুষের মত দাঁড়িয়ে রইল জারা। শিরিন খালা জারাকে বোতলটা দিয়ে বলে।
“এই যে নাও তোমার বোতলটা।”
জারা বোতলটা নিয়ে বলে, “ঠিক আছে এবার তুমি কফিটা দিয়ে আসো নুহাশ ভাইকে তাড়াতাড়ি গিয়ে না হলে আবার ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন খেতে মজা লাগবে না।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাইতাছি।”
শিরিন খালা চলে যেতেই জারা বিড়বিড় করে বলে, “এই মজাটা তো মিস করা যাবে না।”
বলেই দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে গিয়ে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে নুহাশের ঘরের দিকে তাকিয়ে রইল। শিরিন খালা নুহাশকে কফি দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু না অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে নুহাশের কোনো আহাজারির আওয়াজ শুনা গেল না। জারা ভ্রু কুঁচকে বলে।
“কি হল ব্যাপারটা কোনো সাড়া শব্দ আসছে না কেন?”
জারা ঘর থেকে বেরিয়ে পা টিপে টিপে নুহাশের ঘরের সামনে গিয়ে কান পেতে দাঁড়িয়ে রইল। না নুহাশের কোনো সাড়া শব্দ নেই। জারা এবার আস্তে করে পর্দাটা সরিয়ে ভেতরে তাকাতেই যা দেখল তাতে জারার চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় হয়ে যায়। নিজের দু চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে কি ভুল দেখছে নাকি? জারা নিজের দু হাত দিয়ে দু চোখ কচলিয়ে নিল। না সে ঠিকেই দেখছে নুহাশ লবণ মেশানো কফিটা তৃপ্তি ভরে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন অমৃত খাচ্ছে। জারার মাথা ঘুরছে এটা দেখে। একজন স্বাভাবিক মানুষ কি করে নুনে পোড়া কফিটা এত তৃপ্তি করে খেতে পারে? জারা চোখ মুখ বিকৃতি করে মনে মনে বলে।
“এ তো মানুষ নয় এ তো স্বয়ং সমুদ্রে বাস করা সামুদ্রিক প্রাণী। এই লোক কেন নোনা জল থেকে স্থলে চলে আসল?”
জারা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এখানে আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে মাথা ঘুরে নিশ্চিত পড়ে যাবে। জারা আস্তে করে সরে আসে। এলোমেলো পায়ে হেঁটে নিজের ঘরে এসে ধপ করে বেডে বসে পড়ল। বেডের উপরে রাখা ওয়াটার বোতলটা নিয়ে ক্যাপ খুলে টকটক করে পানি খেতে শুরু করে। পানি খেয়ে জারা অবিশ্বাস্য গলায় বলে।
“এটা কি করে সম্ভব? নুহাশ ভাই কি করে এই লবণ মেশানো কফি খেলো। নাকি আমি লবণের জায়াগতে চিনি মিশিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পাত্রটা তো লবণের পাত্র ছিল চিনির পাত্র তো কিচেনে থাকে তাহলে?”
জারা কথাটা বলেই ঠোঁট কামড়ে ধরে তব্দা মেরে বসে রইল। আজকে আর তার সারা রাত্র ঘুম হবে না এই চিন্তায়।
_________
জাহিন প্রায় পনেরো মিনিট বসে রইল এক জায়গাতে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা দাঁড়ল বাড়ির ভেতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। জাহিন কিছু একটা মনে করে উপরের দিকে তাকাতেই অয়ন্তিকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে যায়। এই মেয়ে ঠান্ডা বাতাসের মাঝে এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? তাও আবার গরম কাপড় ছাড়া। জাহিন দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের ঘরে এসে আলমারি থেকে একটা শাল বের করে বেলকনিতে এসে অয়ন্তির গায়ে শালটা পেঁচিয়ে দিয়ে বলে।
“এভাবে ঠান্ডার মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন কেন অয়ন্তি?”
আকস্মিক নিজের গায়ে শাল আর জাহিনের কন্ঠ স্বর শুনে অয়ন্তি চমকে গিয়ে জাহিনের দিকে তাকায়। জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “কোনো সমস্যা?”
অয়ন্তি শালটা নিজের গায়ে ভাল করে ছড়িয়ে নিয়ে মাথা নাড়িয়ে নিচু গলায় বলে, “না কোনো সমস্যা নেই।”
“তাহলে এভাবে ঠান্ডার মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
অয়ন্তি আকাশের দিকে পুনরায় নজর রেখে বলে, “আচ্ছা প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা কি কখন ভুলে যাওয়া যায় না?”
অয়ন্তির মুখে আকস্মিক এমন কথা শুনে জাহিন বড্ড অবাক হয়। জাহিনের উত্তরের অপেক্ষা না করেই অয়ন্তি কোমল স্বরে বলে, “দূর আকাশের ওই চাঁদটার পাশে যে দুইটা তারা ঝলমল করছে ওই তারা দুটোকে আমি কি ভাবি জানেন?”
জাহিন আকাশের দিকে তাকিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল, “কি ভাবেন?”
“একটা আমার মা আর ঠিক তার পাশেরটা আমার দাদু। যখনই তাদের কথা আমার খুব মনে পড়ে তখনই আমি আকাশের শত শত তারাদের ভিড়ের মাঝে তাদেরকে খুঁজে বেড়াই।”
কথাটা বলতে বলতে অয়ন্তির কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে চোখের নোনা জল। অন্য দিকে জাহিনের দু চোখ ভরে উঠেছে নোনা জলে চোখের পলক ফেললেই গড়িয়ে পড়বে সেই নোনা জল। জাহিন ঢোক গিলে ধরা গলায় বলে।
“যারা আমাদের ছেড়ে চলে যায় আজীবনের জন্য তারা কি সত্যি আকাশের তারা হয়ে যায়?”
“জানি না কিন্তু আমার বিশ্বাস আমার মা আর দাদু আকাশের তারা হয়ে আমাকে সবসময় দেখছে।”
জাহিন আহত গলায় বলে, “তাহলে কি ভাইয়াও আমাকে দেখছে আকাশের তারা হয়ে?”
“হয়ত।”
জাহিন কিছু একটা ভেবে চোখের জল মুছে নিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে অন্য দিকে ফিরে। পুরুষ মানুষদের এভাবে মেয়ে মানুষের মত চোখের জল ফেলতে নেই। তাদের মনের ভেতরের শত শত যন্ত্রণাকে মাটি চাপা দিয়ে সবসময় শক্ত থেকে মেয়েদের চোখের জল মুছে দিতে হয় এটাই প্রকৃতির নিয়ম। জাহিন অয়ন্তির দিকে ফিরে তাকায়। মেয়েটা নিঃশব্দে অবিশ্রান্ত ধারায় কান্না করে যাচ্ছে। মেয়েটাকে একটু শান্ত্বনা দেয় উচিত তার। জাহিন দু হাত বাড়িয়ে অয়ন্তির ছোট্ট মুখখানা নিজের দু হাত দ্বারা আগলে নেয়। অয়ন্তি অশ্রুসিক্ত নয়নে জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। জাহিন অয়ন্তির চোখের জল মুছে দু হাত অয়ন্তির গালের উপরে রেখেই নরম গলায় বলে।
“যারা আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় মানুষ হয় তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা একটু বেশি তাড়াতাড়িই আমাদের সকলের কাছে থেকে কেড়ে নেয়। তাই এটা নিয়ে কষ্ট না পেয়ে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত আমাদের তাই না।”
অয়ন্তি জাহিনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় কিন্তু কিছু বলে না জাহিনের কথা শুনে। অয়ন্তির কান্না থেমেছে কিন্তু ফুঁপানো কমে নি। কান্না করার কারণে অয়ন্তির চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। বিশেষ করে নাকের ডগা লালচে হয়ে আছে। লাল ঠোঁট জোড়া কান্না করার জন্য তিরতির করে কাঁপছে। জোসনার আলোতে অয়ন্তিকে অপূর্ব লাগছে জাহিনের চোখে। জাহিন শুকনো ঢোক গিলে। তাকে অয়ন্তির দিকে অন্য দিন গুলার তুলনায় আজকে বড্ড টানছে। মনের সকল অবাধ্য অনুভূতিরা যেন জেগে উঠছে ধীরে ধীরে। বুকের ভেতরে থাকা হৃদপিণ্ডটা এভাবে লাফাচ্ছে কেন মনে হচ্ছে যেন এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে? বড্ড অধৈর্য দেখা গেল জাহিনকে। কিন্তু নিজের টাল হারল না। আজকে না হয় নিজের মনের ভেতরে সুপ্ত হয়ে থাকা ইচ্ছে গুলাকে একটু প্রাধান্য দেওয়াই যেতেই পারে। জাহিন কিছুক্ষণ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রেখে প্রগাঢ় গলায় বলে।
“অয়ন্তি।”
অয়ন্তি চোখ তুলে তাকায় জাহিনের পানে। জাহিনের শান্ত চোখের গভীর চাওনি দেখে অয়ন্তির বুকটা ধ্বক করে উঠে। জাহিনের আজকের এই চাওনি বড্ড অন্য রকম লাগছে অয়ন্তির কাছে। সেটা মেয়ে হয়ে সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে জাহিনের চোখের ভাষা। অয়ন্তি ঢোক গিলল। জাহিন পুনরায় বলে উঠল।
“একটা কথা বলব রাখবেন?”
অয়ন্তি নিচু গলায় বলে, “কি কথা?”
জাহিন ঘোর লাগা কন্ঠ বলে, “আপনায় যদি আজকে একটু গভীর ভাবে ছুয়ে দেই তাহলে কি আমি খুব বেশি অপরাধী হয়ে যাব আপনার চোখে?”
জাহিনের মুখে এমন কথা শুনে অয়ন্তির দম আটকে যায়। কি বলবে সে জাহিনকে? এমন ভাবে আবদার করলে কি ফিরিয়ে দেওয়া যায়। যায় না তো আর সেখানে যদি হয় তার স্বামী। অয়ন্তি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিয়ে অপেক্ষা করে নতুন এক স্পর্শের। জাহিন অয়ন্তির বন্ধ চোখের পাতা দেখে বুঝতে পারল অয়ন্তি তাকে অনুমতি দিয়েছে। জাহিন আস্তে করে ঝুঁকে আসে অয়ন্তির মুখের দিকে। জাহিনের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে অয়ন্তির মুখে। জাহিন অয়ন্তির লাল হয়ে থাকা নাকের ডগায় নিজের পুরুষালী ঠোঁট ছোঁয়ায়। প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে অয়ন্তি মুচড়ে উঠে। শিরদাঁড়া বেয়ে চলে যায় এক নাম না জানা এক অনুভূতি। সমস্ত কায়া কেপে উঠে তার। শরীর যেন অসাড় হয়ে আসছে তার কিন্তু তারপরও ঠাঁই হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জাহিন নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নেয় অয়ন্তির কাঁপতে থাকা ওষ্টদ্বয়ের দিকে। জাহিন ভারী নিঃশ্বাস ফেলে ছুঁয়ে দেয় অয়ন্তির ওষ্টদ্বয়। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে এক নাম জানা অনুভূতি। নিজের অজান্তেই নিজের হাত দ্বারা জাহিনের হাত শক্ত করে খামচে ধরে। জাহিনের এত কোনো হুস নেই সে আছে অন্য এক মত্তে। কিন্তু হঠাৎ করেই জাহিন অয়ন্তির কাছ থেকে ছিটকে দূরে আসে। দু জনেই জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। অয়ন্তি লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। জাহিন নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে। অয়ন্তি আর এক মুহূর্ত এখানে না দাঁড়িয়ে থেকে দৌঁড়ে রুমে ভেতরে চলে যায়। জাহিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কি করে বসল আবেগের বশে এটা সে? অয়ন্তি কি ভাববে এবার? এত জলদি এমনটা করতে চায় নি সে আস্তে ধীরে এগোতে চেয়েছিল কিন্তু সবটা যেন চোখের পলকে ঘটে গেল। জাহিন এলোমেলা পায়ে গিয়ে বেলকনিতে রাখা দোলনায় বসে পড়ে। এবার অয়ন্তির সামনে যাবে কি করে সে? বড্ড অস্বস্তি বোধ হবে তার হয়ত অয়ন্তিরও এমনটা হবে। জাহিন চোখ বন্ধ করে হাটুর উপর কনুই রেখে দু হাত দ্বারা মাথার চুল শক্ত করে খামচে ধরে।
এদিকে অয়ন্তি গায়ে মাথায় কম্বল ছড়িয়ে নিয়ে শুয়ে আছে। কি করে সে এবার জাহিনের সামনে যাবে। সে তো লজ্জায় মরেই যাবে। অয়ন্তি নিজের ঠোঁটের উপর হাত রেখে লাজুক হাসল। ভেসে উঠে চোখের সামনে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া সুন্দর মুহূর্তটা। আজকে আর দু চোখের পাতায় হয়ত ঘুম এসে ধরা দিবে না। এই চিন্তায় হয়ত সারা রাত বিভোর থাকবে।
#চলবে_____
যারা আমার গল্প পছন্দ করেন না তার ইগনোর করবেন। আমি জানি আমি এতটাও ভাল লিখতে পারি না অন্যান্য লেখক লেখিকাদের মত। তাই অযথা আমার গল্প পড়ে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না প্লিজ।
প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/830411019098697/?app=fbl