#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৬
জাহিনের গাড়ি পার্টি অফিসের সামনে এসে থামল। গেটের বাইরে থেকে বুঝতে পারছে ভেতরের পরিবেশ বড্ড রমরমা হয়ে আছে। এত গাড়ি এত মানুষ এখানে কেন সেটা বুঝতে পারছে না জাহিন। দারোয়ান জাহিনের গাড়ি দেখে গেট খুলে দেওয়ার সাথে সাথে জাহিন ভেতরে প্রবেশ করে। পার্টি অফিসের খোলা জায়গার চারিদিক বাউন্ডারি দেওয়া। জাহিন গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়ি গুলা পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারল এই গাড়িগুলা মেয়রের গাড়ি। জাহিনকে দেখে তার দলের ছেলেরা এগিয়ে এলো। ছেলেগুলার মাঝে রাসেল নামের ছেলেটি বলল।
“ভাই মেয়র খলিল তালুকদার এসেছেন।”
জাহিন হাঁটা অবস্থায় চোখে, মুখে কঠিনত্ব রেখে বলে, “হঠাৎ! এখানে আসার কারণ কি?”
“জানি না ভাই।”
“আমাকে আগে ইনফর্ম করিস কেন ওনি যে এখানে এসেছেন?”
মাসুম বলে, “করেছিলাম ভাই কিন্তু আপনি ফোন ধরেন নি।”
জাহিন আর কথা বাড়ায় না। তার ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে ধরতে পারি নি কল। জাহিন পার্টি অফিসের বারান্দায় আসতেই মাসুম বলে, “ভাই আপনার কেবিনে আছেন মেয়র সাহেব।”
জাহিন সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়। কেবিনে ঢুকতেই দেখে খলিল তালুকদার সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে মনের সুখে চা পান করছন। মনে হচ্ছে যেন চা নয় অমৃত পান করছেন। জাহিন খলিল তালুকদারকে দেখে চোয়াল শক্ত করে নেয়। খলিল তালুকদার কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে দরজার দিকে তাকিয়ে জাহিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখে হাসি রেখে বলেন।
“আরে জাহিন যে এসো এসো এতক্ষণ তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।”
খলিল তালুকদারের কথায় মনে হচ্ছে যেন জাহিনের অফিসে ওনি নয় জাহিন ওনার অফিসে এসেছে। জাহিন কিছু না বলে সোজা নিজের ডেস্কে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। খলিল তালুকদার ভেবে ছিলেন হয়ত জাহিন তার সাথে সোফায় বসবে। কিন্তু জাহিনকে এমনটা করতে দেখে খলিল তালুকদার হাসি হাসি মুখে বলেন।
“ও আচ্ছা ওখানে আরাম করে বসবে তাই তো। ঠিক আছে আরাম করে বসো আমি বরং তোমার সামনের চেয়ারে এসে বসছি যেহেতু এটা তোমার অফিস।”
খলিল তালুকদার উঠে চেয়ারে বসতে যাবেন সাথে সাথে জাহিন গম্ভীর গলায় বলে, “এখানে আসার কারণটা জানতে পারি কি?”
খলিল তালুকদার পায়ের উপরে পা তুলে বসে না জানার ভান ধরে বলেন, “নিউজে দেখলাম তোমার নাকি বিয়ে হয়েছে এটা কি সত্যি নাকি গুজব?”
জাহিন বুঝতে পারছে খলিল তালুকদার ইচ্ছে করে তার সাথে এমন আচরণ করছে তাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। জাহিন আগের ন্যায় বলে, “হুম সত্যি আমার বিয়ে হয়েছে।”
খলিল তালুকদার মাথা উপর নিচ করে বলেন, “ও আচ্ছা আচ্ছা।”
“এটা জানার জন্য কি এত দূর থেকে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন।”
“এই না না তোমাকে নতুন জীবনে পা রাখার জন্য অভিনন্দন জানাতে এসেছি।”
এমন সময় খলিল তালুকদারের ফোন বেজে উঠে। ফোনটা কানে ধরে বলেন, “হুম ভেতরে নিয়ে আসো।”
কথাটা বলার সাথে সাথে একটা ছেলে পাঁচ কার্টুন মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ভেতরে ঢুকল। জাহিন সরু চোখে তাকিয়ে খলিল তালুকদারের কার্যকলাপ গুলা দেখছে। ছেলেটা মিষ্টির প্যাকেট গুলা টেবিলের উপরে রেখে চলে যায়। জাহিন মিষ্টির প্যাকেট গুলার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আর ভরাট গলায় বলে।
“এগুলা কি?”
খলিল তালুকদার ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলেন, “মিষ্টি। পাঁচটা প্যাকেটের ভেতরে পাঁচ রকমের মিষ্টি আছে তাও আবার দামি দামি মিষ্টি সবগুলা। তোমার বিয়ের খবর শুনে তো আর খালি হাতে আসা যায় না। আর আবার তো তিন মাস পরে মিষ্টি নিয়ে তোমার কাছে হাজির হতেই হবে।”
জাহিন তীক্ষ্ণ চাউনি দিল খলিল তালুকদারের দিকে আর বলল, “আর তিন মাস পরে কিসের জন্য মিষ্টি নিয়ে আসতে হবে?”
“তিন বারের মত মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ার মিষ্টি।”
জাহিন নিঃশব্দে হেসে পেপার ওয়েটটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে, “এবারের মিষ্টিটা হয়ত আপনি খাওয়াতে পারবেন না মেয়র সাহেব।”
জাহিনের কথাটা শুনে খলিল তালুকদারের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে কিন্তু ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে, “জ্যোতিষী হলে কবে থেকে তুমি জাহিন? এত দিন জেনে এসেছি তুমি নেতা এখন দেখা যাচ্ছে জ্যোতিষীর খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলছো।”
জাহিন পেপার ওয়েট’টা থামিয়ে বাঁকা হেসে বলে, “কিছু ভবিষ্যৎ জ্যোতিষী না হয়েও জানা যায় মানুষের কাজকর্ম দেখে।”
খলিল তালুকদার কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “কাজকর্ম মানে! কি এমন কাজকর্ম দেখলে আমার যে আমি আগামী নির্বাচনে জিততে পারব না বলে দিলে তুমি।”
“সেটা আপনি একা বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করবেন কি কি করেছেন আর কি কি করতে চাইছেন।”
খলিল তুলকদার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় বলেন, “তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো জাহিন।”
“এখানে অপমানের কি দেখলেন আপনি?”
“বেশি উড়ো না জাহিন, পরে তোমার ভাই অরহানের মতো অকালে ঝড়ে পড়ে যাবে মুখ থুবড়ে। আর যদি ভেবে থাকো তুমি মেয়র পদে এই বার প্রথম বারের মত দাঁড়িয়ে জিতে যাবে তাহলে তুমি সেটা ভুল ভবছো। তোমার চাচা আমার সাথে দু দু বার হেরেছে এবার তুমিও হারবে আর সাথে হয়ত তোমার আরেকটা ভাইও হারাতে পারো গতবারের মত।”
জাহিন চুপ করে চোয়াল শক্ত করে রেখে খলিল তালুকদারের প্রত্যেকটা তিক্ততায় ভরা কথাগুলা হজম করে নিল। চাইলে অনেক কিছু বলে দিতে পারত কিন্তু সে চায় না এই শান্ত পরিবেশটা নষ্ট করতে তাই মৌন থাকাটাই শ্রেয় মনে করল। কিছু কিছু জায়গায় নিজের জবান নষ্ট না করাই ভাল তাতে নিজের মান সম্মান দুটোই বাঁচে।
খলিল তালুকদার আবারো বলেন, “জননেতা আছো জননেতা’ই থাকো পৌরসভার মেয়র হতে এসো না জাহিন। সবাইকে সব কিছুতে মানায় না।”
জাহিন মাথাটা নিচু করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে আনমিকা আঙ্গুল দ্বারা বা চোখের ভ্রুটা চুলকিয়ে খলিল তালুকদারের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “কাকে কিসে মানায় আর না মানায় সেটা আপনাকে নিয়ে ভাবতে হবে না মেয়র সাহেব।”
“তার মানে তুমি নির্বাচনে দাঁড়াবে।”
“কেন আপনার কি নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস নেই নাকি? নাকি হেরে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন এবারের নির্বাচনে।”
খলিল তালুকদার জাহিনের দিকে তর্জনী তাক করে বলে, “ঠিক আছে তাহলে নির্বাচনের মাঠেই আমাদের দেখা হবে। ভেবেছিলাম এবারের নির্বাচনে শেখ পরিবারের কারো সাথে নির্বাচনের মাঠে মুখোমুখি হতে হবে না কিন্তু তুমি তা হতে দিলে না জাহিন।”
কথাটা বলে খলিল তালুকদার চলে যেতে নিবে তখনই জাহিন বলে, “আপনার দামি দামি আনা মিষ্টি গুলা নিয়ে যান মেয়ের সাহেব।”
খলিল তালুকদার কিয়ৎক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যান। খলিল তালুকদার চলে যেতেই জাহিন পেপার ওয়েটটা ছুড়ে মারে দোয়ালে। পেপার ওয়েট’টা কাঁচের হওয়াতে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় মুহূর্তের মাঝে। জাহিন খুব ভাল করেই জানে তার ভাইয়ের মৃত্যুর পেছনে খলিল তালুকদারের হাত আছে। কিন্তু সবটা এমন ভাবে সাজিয়েছে যে প্রমাণ করার মত কোনো উপায় রাখে নি যে এই খলিল তালুকদারই এই জঘন্য কাজটা করেছে। তবে জাহিন ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ একদিন ঠিকেই নিবে।
বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রাসেল, মাসুম আর অন্যান্য ছেলেরা কাঁচ ভাঙ্গার বিকট আওয়াজ শুনার পরেও ভেতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না। ভাই যে তাদের ভীষণ রেগে গেছে সেটা খুব ভাল করে টের পাচ্ছে। পাঁচ মিনিট পরে জাহিন নিজে থেকেই মাসুম আর রাসেলকে ডাক দেয়। ওরা ভেতরে ঢুকতেই জাহিন বলে।
“এই মিষ্টি গুলা গরিব দুঃখী মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দে।”
মাসুম ঠোঁট ভিজিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে, “ভাই আমরা খাব না।”
মাসুম কথাটা বলার সাথে সাথেই রাসেল কনুই দিয়ে গুঁতো মারে। এই ছেলের মুখে শুধু খাওয়ার কথা। কখন কোথায় কি যে বলতে হয় সেটা এখনও বুঝল না? জাহিন চোখ তুলে মাসুমের দিকে তাকাতেই মাসুম ম্লান কন্ঠে বলে, “আপনি বললেই খাব ভাই এছাড়া খাব না।”
জাহিন শান্ত গলায় বলে, “যদি মন চায় তোর তাহলে খেতে পারিস।”
মাসুম খুশি হয়ে বলে, “আা ভাই।”
“রিহানের কোনো খোঁজ পেয়েছিস।”
“না ভাই পায় নি এখনও তবে গাড়ির হদিস পাওয়া গেছে যেহেতু রিহান ভাইকেও পেয়ে যাব।”
“ওকে পেয়ে থাকলেও ওর কাছে যাবি না। ওর আশে পাশে থেকে ওকে নজরে রাখবি।”
“জি ভাই।”
“আর ওই বৃদ্ধ মহিলার বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কাজ কতটুকু এগিয়েছে।”
“আগামীকালকের মাঝেই হয়ে যাবে ভাই।”
“ঠিক আছে এবার যা তোরা।”
মাসুম আর রাসেল মিষ্টির প্যাকেট গুলা নিয়ে বের হয়ে যায়। জাহিন চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলিয়ে দেয় চেয়ারে। সত্যি কি গতবারের মত এবারের নির্বাচনেও তাকে কোনো আপনজন হারাতে হবে। কিন্তু না আগের বার যা হওয়ার হয়ে গেছে এবারের নির্বাচনে কোনো রকম গাফিলতি করবে না সে। আগের বার সে যথেষ্ট কাঁচা ছিল এই রাজনীতির জগতে কিন্তু এখন এই রাজনীতির জগতে কে কি করতে পারে একটু হলেও সে ধরতে পারে।
_______
সকল ইম্পরট্যান্ট কাজ শেষ করতে করতে সাড়ে বারোটা বেজে যায় পার্টি অফিস থেকে বের হতে জাহিনের। এদিকে জোহরা বেগম বার বার ছেলেকে ফোন করে তাড়া দিচ্ছেন বাড়িতে আসার জন্য। জাহিন কেবিন থেকে বের হয়ে মিটিং রুমে যায়। সেখানে সবাই আছে জাহিনকে দেখা মাত্রই সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে, জাহিন হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে বসতে। জাহিন তিয়াশকে ডাক দেয়। তিয়াশ জাহিনের কাছে এসে বলে।
“জি ভাই।”
জাহিন গাড়ির চাবিটা তিয়াশের কাছে দিয়ে বলে, “গাড়িটা ড্রাইভ কর তুই আজকে। আর বিকালের দিকে সবাই বাড়িতে চলে যাবি।”
জাহিনের কথা শুনে সবাই একসাথে আচ্ছা বলে।
_______
বউভাতের জন্য অয়ন্তিকে মেরুন কালারের শাড়ি পড়ানো হয়েছে আটপৌরে ভাবে। পার্লার থেকে লোকজন এসেছে অয়ন্তিকে সাজাতে। পার্লার থেকে আসা লোকজনকে অয়ন্তি বার বার বলে যাচ্ছে যেন তাকে ভারী মেকাপ না করায়। ছোট থেকেই তার এসব সাজগোজের প্রতি কোনো রকম আগ্রহ নেই। জারা অয়ন্তিকে বলে।
“ভাবি তুমি শান্ত হয়ে বসো তারা তোমাকে ভারী মেকাপ করবে না। হালকা মেকাপেই করবে তুমি চিন্তা করো না।”
অয়ন্তির কথা মতই অয়ন্তিকে হালকা মেকাপ করানো হল। চুলগুলা খোপা করে তাতে কৃত্রিম লাল গোলাপ ফুল গুজে দিয়েছে। মাথায় লাল রঙের দোপাট্টা দেওয়া। হাতে, গলায় সোনার গয়না, কোমড়ে কোমড় বন্ধনী পড়িয়ে শাড়িটাকে সুন্দর করে সেট করে দিয়েছে। এই হালকা সাজেই অয়ন্তিকে ভারী মিষ্টি লাগছে। বিশেষ করে নাকের ডায়মন্ডের নথটা পড়াতে যেন আরো বেশি সুন্দর লাগছে। জারা অয়ন্তিকে আপাদমস্তক দেখে বলে।
“ভাবি তোমাকে আজকে ভীষণ ভীষণ সুন্দর লাগছে। আর যাই হোক ভাইয়া তোমাকে দেখে প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেই হবে।”
অয়ন্তি লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। মেয়েটা এই এক দিনে এতটা ফ্রি হয়ে যাবে তার সাথে অয়ন্তি ভাবতে পারে নি সেটা। কিন্তু অয়ন্তির এটা ভেবে আরো বেশি লজ্জা লাগছে আজকে রাতে জাহিনের সাথে একই রুমে কি করে থাকবে সে? ভাবতে অয়ন্তির সমস্ত কায়া বার বার কেঁপে উঠছে, গলা শুকিয়ে আসছে। কি অপেক্ষা করছে আজকের রাতটা তার জন্য?
_______
গাড়ি অর্ধেক রাস্তায় আসাতেই জাহিন তিয়াশকে বলে, ” আগে ব্যাংকে চল তারপর বাড়িতে।”
“জি ভাই।”
ব্যাংক থেকে ফিরে বাড়িতে ঢুকতেই আহানের কান্নার শব্দ ভেসে আসে জাহিনের কানে। ছেলেটা এমন ভাবে কান্না করছে যেন মনে হচ্ছে তার কাছ থেকে তার প্রিয় জিনিসটা কেউ নিয়ে গেছে। জাহিন তার চাচিকে উদ্দেশ্য করে বলে।
“চাচি আহান এভাবে কান্না করছে কেন?”
“আর বলো না ওর ক্যামেরার মেমোরি কার্ড নাকি কে চুরি করে নিয়ে গেছে তাই কান্না করছে। সবাই বলছে একটা নতুন মেমোরি কার্ড এনে দিবে কিন্তু তারপরও ছেলের কান্না থামার নাম নেই তার নাকি পুরাতন মেমোরি কার্ডেই লাগবে। এখন তুমিই বলো বাড়িতে এত বড় একটা অনুষ্ঠান আর ও ম’রা কান্না শুরু করে দিয়েছে। এতক্ষণ সবাই মিলে বুঝালেও এখন যে যার কাজে চলে গেছে পড়ে রইলাম আমি।”
জাহিন চাচির কথাটা শুনে জিহ্বায় কামড় দিয়ে মনে মনে বলে, “এই রে মেমোরি কার্ডটা তো আমার কাছে।”
জাহিন মুচকি হেসে আহানের কাছে গিয়ে বলে, “আহান ভাইয়ের সাথে চল ভাই তোকে আগের মেমোরিটা খুজে বের করে দিবে।”
আহান কান্না ভেজা গলায় বলে, “সত্যি দিবে।”
“হুম।”
রুনা আক্তার চলে যান। যেহেতু জাহিন চলে এসেছে এবার আহান ঠান্ডা হবেই। জোহরা বেগম ছেলের কন্ঠ শুনে রান্না ঘর থেকে এসে বলেন, “জাহিন এসেছিস জলদি তৈরি হয়ে নে বাবা।”
“হুম।”
জাহিন আহানকে নিয়ে উপরে চলে যায়। এদিকে জোহরা বেগমের ফোন বেজে উঠে। জোহরা বেগম ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখেন ছোট ছেলে ফোন করেছে। জোহরা বেগম তাড়াতাড়ি নিজের রুমে ঢুকে দরজা লক করে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রিহান আহ্লাদী গলায় বলে।
“মা আমি বাড়ি চলে আসি। আমি একা একা থাকতে পারছি না। এদিকে ভাইয়ার বিয়ে হচ্ছে আর আমি ভাইয়ার এক মাত্র ভাই হয়ে ভাইয়ের বিয়েতে থাকতে পারছি না এই কেমন ভাগ্য আমার।”
জোহরা বেগম ছেলেকে বোঝানোর স্বরে বলে, “এখন তুই যদি আসিসও তোর বাবা তোকে আস্তো রাখবেন না। তাই আর কিছুদিন সহ্য করে নে বাবা।”
“কিছুদিন মানে ঠিক কত দিন সহ্য করতে হবে আমাকে মা?”
এমন সময় ভেসে আসে রুনা আক্তারের গলা, “ভাবি অয়ন্তির বাড়ি থেকে লোকজন চলে এসেছে তুমি তাড়াতাড়ি আসো।”
জোহরা বেগম জা এর কথাটা শুনে ছেলেকে বলে, “তোর সাথে পরে কথা বলি বাবা এদিকে অনেক কাজ পড়ে আছে।”
কথাটা বলেই জোহরা বেগম ফোন কেটে দেয়। রিহান ফোনটা বিছানার ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেও বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আফসোসের স্বরে বলে, “কোন মাইন’কার চিপায় পড়লাম রে আমি। কোন দুঃখে যে মায়ের এই আজাইরা প্ল্যানে সামিল হতে গেলাম। জীবনে আর যাই হোক মায়ের সাথে আর কোনো বিষয়ে লেনদেন করব না। আল্লাহ তোমার এই বান্দার উপর রহমত নাযিল করো যেন খুব তাড়াতাড়ি আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারে। এই লুকোচুরি আর ভাল লাগছে না।”
#চলবে________
পার্টটা তেমন সুন্দর করে সাজাতে পারি নি আজকে। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমাসরুপ দেখবেন প্লিজ।