#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
সকালে মুখের ওপর হালকা পানি পড়তেই চোখ খুললো মুখর। চোখ খুলে তার বিহঙ্গিনীকে কালো শাড়িতে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল সে। চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। আর তার বিহঙ্গিনী এক হাত দিয়ে চুল মুচছে ইশশ কি নিদারুন দৃশ্য। চুল মুছতে মুছতে মেহবিনের নজর পড়লো মুখরের দিকে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে মুখর। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“উঠে পরেছেন আমি এখনি আপনাকে ডাকতাম!
মুখর হেঁসে বলল,,
“না ডেকেই ভালো করেছো । তুমি ডাকলে কি আর এই চুল মুছার নিদারুণ দৃশ্য দেখতে পেতাম। আবার ডাকলেও আলাদা এক দৃশ্য হতো চোখ খুলতেই তোমার মুখটা একদম কাছ থেকে দেখতে পেতাম। দুটোই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তবে এর আলাদা আলাদা বিশেষত্ব আছে। ”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“কি সকাল সকাল শুরু করে দিলেন তো? শুনুন পছন্দের মানুষটার সবকিছুই সুন্দর মনোমুগ্ধকর লাগে আমাদের। শুধু তার সঙ্গটা প্রয়োজন ব্যস।”
“তা আমার এই ঘুম থেকে উঠার দৃশ্যটা কি তোমার মনোমুগ্ধকর লাগছে বিহঙ্গিনী?”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“হুম অনেক হয়েছে এবার ফরজ গোসলটা সেরে ফেলুন। সূর্য মামা উঠে পরেছে বেশ খানিকটা আগেই । ফজরের নামাজ কাযা হয়ে গেছে।”
“কথা ঘুরাচ্ছো তুমি।”
“হ্যা ঘুরাচ্ছি এই যে টাওয়াল যান গোসলে যান। আমি অপেক্ষা করছি একসাথে ফজরের কাযা সালাত আদায় করবো।”
“নামাজ পরতে হবে বলে এই যাত্রায় বেঁচে গেলে।”
বলেই মুখর মেহবিনের থেকে টাওয়াল নিয়ে চলে গেল। মেহবিন আয়নায় নিজেকে দেখলো। কাল ওদের দুজনের ভালোবাসাময় একটা রাত গেছে। এতক্ষন যাবৎ নিজেকে অনেকটাই সামলে রেখেছে মেহবিন কিন্তু মুলত তার লজ্জা লাগছে মুখরের দিকে তাকাতে। মুখর গোসল শেষ করে পায়জামা পাঞ্জাবি পরে আসতেই দেখলো মেহবিন জায়নামাজ বিছিয়ে হাতে মুখরের টুপি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখর গিয়ে মুচকি হেঁসে মেহবিনের কপালে ছোট্ট প্রেমের পরশ দিল তারপর হাত থেকে টুপি নিয়ে নামাজে দাঁড়ালো। দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করে নিল । মেহবিন রান্না ঘরে গেল রান্না করবে বলে। কাপড়ে একটু সমস্যা হচ্ছে দেখে ও আঁচলটা কোমরে গুঁজে নিল। চুল ভেজা থাকলেও খোঁপা করে নিল। এই দৃশ্যটা মুখর দেখলো আর এই দৃশ্যটা ওর অন্যরকম সুন্দর লাগলো। কারন এইরকম দৃশ্য সে আজ প্রথম দেখলো। মেহবিন পেঁয়াজ মরিচ কাটতে লাগল ফ্রিজে মাংস ছিল সেটা সে আগেই বের করে ভিজিয়ে রেখেছিল। রুটি বানাবে আর কষা মাংস রান্না করবে সে। কাটাকাটি শেষ করে কড়াইতে তেল দিল একটু গরম হতেই তখন মুখর পেছন দিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,
“এই রকম দৃশ্য দেখতে যে কতোদিন অপেক্ষায় ছিলাম তা বলার মতো না। কোমরে কাপড় গুঁজে হাতখোপা করে রান্না করা।ইশশ কি নিদারুন দৃশ্য!
“হুম অনেক হয়েছে এখন ছাড়ুন। তেল গরম হয়ে গেছে।”
“হুম সরো সরো আজ রান্না আমি করবো।”
বলেই মেহবিনকে সরিয়ে সে দাঁড়ালো। মুখর রান্না জানে। সে পেঁয়াজ আর মরিচ তেলের ভেতরে দিয়ে দিল। তারপর বলল,,
“দেখবে তোমার জামাই আজ কি রকম রান্না করে।”
“হুম তা তো দেখবোই। তবে সে এই রান্নাটা করতে পারলেও, সে কি রুটি গোল করতে পারবে হুম?”
“তুমি রুটি বানাতে চেয়েছিলে?”
“হুম গরম গরম রুটি আর কষা মাংস ইশশ কি দারুন খেতে। যদিও চালের আটা হতো তাহলে আরো বেস্ট হতো।”
“আরো দুই টা রুটি দেই তোমায়? দেখো কি স্বাদ।”
মুখরের এমন কথায় মেহবিন হাসলো। আর বলল,,
“হুম অনেক হয়েছে আপনি মাংস রান্না করুন আর আমি রুটি করছি।”
“হুম কাজকাম ভাগ করে করলে ভালোবাসা বাড়ে।”
মেহবিন হেঁসে ময়দা নিল । মুখর মাংস রান্না করছে আর মেহবিন রুটি বানাচ্ছে দুজন খুনসুটিও করছে। মুখর আর মেহবিনের মুখে তৃপ্তির হাঁসি। রান্না করা শেষ হলো দু’জনে খেতে বসলো। মুখর মেহবিনকে খায়িয়ে দিল। মুখর আজ পুলিশ স্টেশনে যাবে। মুখর বলল,,
“তোমার তো আজ ও ছুটি কারন শুক্রবার। তো তোমায় বাড়ি নামিয়ে দিয়ে যাবো?”
“না আমি মামাবাড়িতে যাবো। বাজপাখি আর ফুল ওখানে। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে আসবো।”
“আচ্ছা তা সেদিন তো তোমার মামাবাড়ি থেকে কেউ এলো না?”
“এসেছিল কিন্তু ওখানে যায় নি। যাই হোক আগেরবার পরার জন্য কিছু ছিল না দেখে পাঁচটা শাড়ি আর দুইটা বোরকা এনে রেখেছেন যা দেখে আই এম ইমপ্রেজড।”
“তো আমার বউ মাঝে মাঝে আসবে সবসময় কি আমার জিনিস পরবে নাকি।”
“কেন আপনার টা পড়াতে আপনার সমস্যা হয় নাকি।”
“তা হবে কেন? তবে আমি আমার বউকে শাড়িতেই দেখতে বেশি পছন্দ করি।”
“হুম এখন রেডি হোন আমিও হবো। মামা স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে বলেছে।”
দু’জনেই রেডি হলো। মেহবিন কালো শাড়ির ওপরে বোরকা আর হিজাব বাঁধলো শুধু। মুখর মেহবিন কে মুগ্ধ চোখে দেখছিল তা আয়নায় দেখতে পেয়ে মেহবিন মাথা উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো,,
“কি?”
মুখর হেঁসে মেহবিনের পাশে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল,,
“সবাই বলে স্থানের দূরত্ব নাকি মনের দূরত্ব বাড়ায়। অথচ আমি বলি তার দূরত্বের জন্য অপেক্ষাটা আমার মুগ্ধতা বাড়ায়। চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল নয়। সে তো সবসময় মনেই থাকে তাহলে দূরত্ব তৈরি হবে কোথা থেকে।”
মেহবিন মুচকি হাসলো । তা দেখে মুখর আবার বলল,,
“তার এই মুচকি হাসির কারন আমি এইটা ভেবেই বুকে প্রশান্তি ছেয়ে যায়।”
মেহবিন মুখরের দিকে ঘুরলো। মুখর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘তাকে প্রথমবার দেখি মনে আনন্দ হয় এরপর বারবার দেখি মনটা আনন্দে নেচে উঠে। মনে হয় শুধু তাকে দেখতেই থাকি দেখতেই থাকি,,,
মেহবিন মুখরের ঠোঁটে আঙুল রেখে বলল,,
“অনেক হয়েছে এখন বন্ধ করুন কাব্য।”
মুখর মুচকি হেঁসে আঙ্গুল সরিয়ে বলল,,
“তোমায় নিয়ে বললে শেষ করতেই ইচ্ছে করে না। যেমনভাবে ভালোবাসা শুরু কর,,
এবার মেহবিন মুখরের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো। তা দেখে মুখর হাসলো। আর মেহবিন কে জড়িয়ে ধরলো। মেহবিন ও মুখরের বুকে লুকালো। মুখর বলল,,
“কালকের মতো দিন আর রাত আমাদের জীবনে বারবার আসুক বিহঙ্গিনী!”
মেহবিন কিছু বললো না। সে মুখরকে ছেড়ে রেডি হয়ে নিল। মুখর মেহবিন কে স্টেশনে নামিয়ে দিতেই দেখলো মেহবিনের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। মেহবিন হেঁসে আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেল।
_______________
“আজ কিন্তু আমি ঘুম থেকে উঠেই আসিনি ফুলের মামাতো ভাই। আজ আমি ফ্রেশ হয়ে ভালোভাবে এসেছি।”
প্রতিদিনের মতো আজ ও মিহির ফুল গাছে পানি দিচ্ছিল। মিশুর কথায় ও সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কাল রাতেই মিশু আর আরবাজ এসেছে। মেহরব চৌধুরী আরবাজের ওপর একটু রেগে থাকলেও মেহবিনের কথায় সব ভুলে ভাগ্নে কে আপন করে নিয়েছে। কাল রাতে মিহিরের সাথে ওদের দেখা হয় নি। কারন মিহিরের অফিস থেকে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেছিল। মিহির অবাক হয়ে বলল,,
“তুমি এখানে কিভাবে? মেহু এসেছে নাকি? কই আমায় তো কেউ কিছু বললো না।”
মিশু হেঁসে বলল,,
“না ফুল আসেনি আমি আর আমার ভাই এসেছি আমাদের মামাবাড়ি।”
“তারমানে তুমি জেনে গেছো এটা তোমার ও মামাবাড়ি?”
“হুম সেই সাথে আরো অনেক কিছু জেনেছি। আচ্ছা তোমার চোখ কি এটা পরে লাগিয়েছো?
মিশুর কথায় মিহির অবাক হয়ে যায়। ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“চোখ আবার পরে লাগায় কিভাবে? চোখ তো সবার জন্ম থেকেই থাকে।”
“তাহলে কি মুখ পাল্টিয়েছো?”
এবার মিহির থমকে গেল। ও প্রসঙ্গ বদলে বলল,,
“এতো সকাল সকাল তুমি এখানে কি কর?”
“তুমি জানো আমার অনুরও ফুল গাছ খুব পছন্দের ছিল। সেও প্রতিদিন নিয়ম করে তার ফুল গাছে পানি দিতো।”
“তোমার অনু এখন কোথায়?”
“ঐ যে তোমার চোখে!”
মিহির ফট করে মিশুর দিকে তাকালো। মিশু হেঁসে বলল,,
“তোমার চোখদুটো একদম আমার অনুর মতো।”
মিহির অন্য দিকে ঘুরে গেল। তখন আরবাজ এলো। আরবাজ এগিয়ে গিয়ে মিহিরের সাথে কুশল বিনিময় করলো। আরবাজের সাথে আদর ও এসেছে ও গিয়ে মিশুর হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল। মিহির অবশ্য আড় চোখে সবটাই দেখলো। ওঁরাও নিচে এলো ব্রেকফাস্ট করার সময় হয়ে গেছে। মেহরব চৌধুরী তার ভাগ্নে ভাগনির জন্য এলাহী আয়োজন করেছে। মেহরব চৌধুরী বললেন,,
“মিশুমনি আজ তো ফুল নেই আর বাবাও নেই আজ আমি তোমায় খায়িয়ে দিই।”
মিশু হেঁসে বলল,,
“আমাকে খায়িয়ে দিলে তোমার ছেলেমেয়েরা আবার রাগ করবে না তো মামা।”
তখন মাইশা বলল,,
“না মিশু আপু রাগ করবো না কারন তোমার সাথে আমিও খাবো বাবার হাতে।”
তখন আরবাজ আর মিহির বলল,,
“তাহলে আমরা দুজন বাদ যাবো কেন শুনি?”
সবার কথা শুনে মেহরব চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,
“ঠিক আছে চারজন কেই খায়িয়ে দেব।”
তখন আদর বলল,,
“এই যে তোমরা চারজন কি কুট্টি বাবু নাকি যে তোমাদের খায়িয়ে দিতে হবে।”
তখন মেহরব চৌধুরী হেঁসে বললেন,,
“বাবা মায়ের কাছে তার ছেলে মেয়েরা কখনো বড় হয় না।”
“আচ্ছা তাহলে আমায় খায়িয়ে দেবে কে?”
মিশু আদরকে নিজের কাছে নিয়ে বলল,,
“আজ মনি তোমায় খায়িয়ে দেবে আদর?”
“তুমি পারবে সিওর তো!”
“হুম সিওর পারবো।”
“তাহলে ঠিক আছে।”
মেহরব চৌধুরী চারজন নিয়ে নিচে বসলেন মিসেস মেহরব চৌধুরী পাটি বিছিয়ে দিলেন। তিনিও তাদের সাথে বসলেন মেহরব চৌধুরী চারজনকে খাওয়ালেন আর মিশু আদরকে খায়িয়ে দিল। মেহরব চৌধুরী আর মিসেস চৌধুরী সবার পরে একসাথে খেলেন। সবাই বেশ খুশি তবে যারা কাজের লোক গার্ডস ছিল তারা সবাই অবাক হয়েছে একজন মন্ত্রী হয়েও কোন অহংকার নেই। তার ভাগনে ভাগনি আর ছেলে মেয়েদের জন্য সে মেঝেতেই পাটি বিছিয়ে বসেছে। আজ মিহির আর মাইশার অফিস বন্ধ। তারা কেউ অফিস যাবে না।
ঘন্টাখানেক পর মেহবিন আসলো। মেহবিনকে দেখে আদর দৌড়ে তার কোলে উঠলো। মেহবিন সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। মিশু এসে মেহবিন কে জরিয়ে ধরলো। মেহবিন আড় চোখে একবার আরবাজের দিকে তাকালো। তারপর নিজের বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো আরবাজ হাঁটু গেড়ে বসে এক হাত দিয়ে কান ধরে রয়েছে আরেক হাতে বড় এক বক্স চকলেট ধরে রয়েছে। মেহবিন মুচকি হেঁসে সেদিকে এগিয়ে গেল আরবাজ কান ধরে বলল,,
“সরি আমার মিষ্টি বোনটি!”
মেহবিন হেঁসে আরবাজকে উঠিয়ে ওর হাত থেকে চকলেট নিয়ে বলল,,
“ইটস্ ওকে!”
“সরি বললাম তো একবার জড়িয়ে ধরবি না।”
মেহবিন হেঁসে আরবাজ কে জড়িয়ে ধরলো। তখন পেছন থেকে কেউ বলল,,
“এই যে দুই ভাইবোন আমিও কিন্তু আছি।”
আরবাজ হেঁসে এক হাত বাড়িয়ে দিল। মিশু দৌড়ে এসে আরবাজ কে জড়িয়ে ধরলো। তিন ভাইবোন একসাথে হেঁসে ফেলল। তিন ভাইবোন মিলে কিছুক্ষণ খুনসুটি করলো। দুপুর হয়ে এলে সবাই একসাথে খাবার খেল। মেহবিন এক ফাঁকে মিশু কে নিয়ে নিজের রুমে গেল। তারপর মিশুর কোলে শুয়ে বলল,,
“আজ আমি মিশুমনি আর অনুভবের কাহিনী শুনতে চাই।”
“এই জন্যই কি মামারবাড়ি আসার প্ল্যান করেছিস?”
“কিছুটা এখন ওসব বাদ দিয়ে বলো তো! মিশু তার অনুভবের সাথে কোথায় কিভাবে পরিচয় হলো। আর তাদের শেষই বা কোথায় হলো।”
মিশু মেহবিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে শুরু করলো,,
“অনুভব ছিল আমার তিন বছরের সিনিয়র। নতুন ভার্সিটিতে উঠে প্রথমদিনই সিনিয়রদের র্যাগিং এর স্বীকার হলাম। আর তখন অনুভব এসে আমায় বাঁচিয়ে নিল সাথে যারা র্যাগ দেওয়া সিনিয়রদের ও অপমান করলো। সে ছিল ভার্সিটির পরিচিত মুখ। প্রথমদিনই তার ওপর মুগ্ধ হলাম। এভাবেই দিন চলতে লাগলো। বছর দুয়েক পার হয়ে গেল। মাঝখানে কতোবার চোখাচোখি হলো কতোবার কথা হলো কতোবার আমায় সাহায্য করলো। তার ব্যক্তিত্ব সবার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো আমায় সবসময় মুগ্ধ করতো।এভাবেই একটা সময় দু’জনেই দুজনের প্রতি কিছু ফিল করলাম। কিন্তু কেউ কাউকে নিজের অনুভূতি জানালাম না। অনুভবের মাস্টার্স শেষ হলো ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করে একটা চাকরি ও পেয়ে গেল। সে একজন মেয়েকে ভার্সিটিতে ভর্তি করার জন্য নিয়ে এসেছিল । তার সাথে একটা মেয়েকে দেখে ভাবলাম হয়তো অনুভবের কাছের কেউ রাগে দুঃখে আমি কেঁদেই ফেললাম আর সরাসরি তাকে গিয়ে বললাম আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।
মেহবিন মনোযোগ দিয়ে শুনছিল হুট করে বোনের এতো সাহস দেখে ও অবাক হয়ে বলল,,
“তুমি মেয়ে হয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য প্রপোজ করলে?’
‘তো মেয়ে হয়েছি তো কি হয়েছে তাদের কি আগে ফিলিংস শেয়ার করার অধিকার নেই। তাছাড়া আমি কি হারাম রিলেশনশিপ এ জড়াবো নাকি তাই তো হালাল ভাবে পাওয়ার জন্য বিয়ের প্রপোজাল দিলাম।”বিয়ের ক্ষেত্রে নারী নিজেই পুরুষকে বিয়ে প্রস্তাব দেয়া বা আগ্রহ প্রকাশ করা একটি সুন্নাত কাজ। কারণ উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ ও উত্তম চরিত্রের অধিকার। তাঁর আখলাক ও দ্বীনদারী দেখেই হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,
“বিয়ের ক্ষেত্রে নারী নিজেই পুরুষকে প্রস্তাব দেয়া সুন্নত.!
তাই একসাথে দুই কাজ করেছি সুন্নত ও আদায় করলাম আবার মানুষটাকে জানালাম ও।”
“হুম হুম বুঝেছি তারপর ?
“আমি বিয়ের প্রস্তাব দিলাম দেখে তার কি যে লজ্জা। এদিকে সে তখন রাজি ছিল না। আমায় সবার থেকে আলাদা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বলল এসব কি পাগলামি। সে আমায় নাকচ করলো আমি কারন জানতে চাইলে সে বলল সে বিয়ে করবে না। আমি তবুও কারন জানতে চাইছিলাম কারন তার চোখ স্পষ্ট বলছিল সে আমায় পছন্দ করে। বেশ জোরাজুরির পর সে জানালো তার পৃথিবীতে কেউ নেই। এরকম একটা ছেলের সাথে কেউ মেয়ে দেবে না। ব্যস বাবাকে কল লাগালাম বললাম তার মেয়ের জামাই পেয়ে গেছি। পরে বাবা আর বাজপাখির সাথে দেখা করালাম।বাবা আলাদা নিয়ে কি কি জানি বলল তারপর আমাদের বিয়ে ফাইনাল। হয়তো বাবা ছেলে পরখ করছিল। আমাদের বিয়ে ঘরুয়া ভাবে হয়ে গেল। বাবা ওকে আমাদের হাসপাতালের ডাক্তার না হওয়া সত্ত্বেও এম ডি বানালেন। আমাদের বাড়িতেই থাকতো সে। আমাকে খুব ভালোবাসতো অনুভব এই ভাবেই ভালোবাসাময় ছয় মাস পেরিয়ে গেল। আমি আর অনুভব গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে বের হলাম।তখন,,
এইটুকু বলতেই ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো,,
অতীত,,
“অনুভব তুমি এই রাত করে এতোদূর কেন এলে বলো তো?”
অনুভব মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তোমায় কিছু বলার ছিল মিশুমনি তাই এতো দূর আসা।”
‘কি বলবে যে যার জন্য এতো দূর আনলে? আমার জন্য সারপ্রাইজ বুঝি।”
তখন অনুভবের মুখটা করুন দেখালো। আমি ওর মুখে হাত দিতেই ও বলল,,
‘আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি মিশুমনি। আমি তোমায় কষ্ট দিতে চাই না।”
বলেই ও গাড়ি থেকে নেমে গেল। গাড়িটা একটা ব্রিজ এ থামিয়েছিল। অনুভব ব্রিজের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালো। ওকে নামতে দেখে মিশুও নামলো। মিশু অনুভবের কাঁধে হাত রেখে বলল,,
“কি হয়েছে অনু?”
অনুভব বলল,,
“যদি কোনদিন জানতে পারো তোমার মাকে তোমার আপনজনই কেউ মেরে ফেলেছে। তাহলে তুমি কি করবে মিশুমনি?”
কথাটা শুনে মিশু থমকে গেল ওর চোখ ছলছল করে উঠলো।ও দুই পা পিছিয়ে গেল। ও কিছু বলবে তার আগে অনুভবের বুকে কেউ গুলি করলো। আর রক্ত এসে লাগলো মিশুর মুখে। মিশু তাড়াতাড়ি করে অনুভবের কাছে যেতে চাইলো তখন কতো গুলো মুখোশধারী লোক ওকে ধরে ফেললো। আর কিছুজন অনুভব কে ধরলো। আর অনুভবকে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো। একজন বলল,,
“তোর খুব কৌতুহল না শেখ বাড়ির রহস্য জানার। এখন তো জেনে গেছিস এখন মৃত্যকে আলিঙ্গন কর।”
এদিকে মিশু চিৎকার করছে অনুভব কে ছেড়ে দিতে।নিজেও ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। অনুভব কে মারতে মারতে আধ মরা করে ফেলেছে। তখনি একটা গাড়ি এলো আর লোকটা অনুভব কে সেই গাড়ির সামনে ফেলে দিল। মুহুর্তেই অনুভবের রক্ত দ্বারা রাস্তা ভিজে উঠলো। তখন মিশুকে ছেড়ে দিল। মিশু দৌড়ে গিয়ে অনুভবকে জড়িয়ে ধরলো আর চিৎকার করতে লাগলো। সাহায্যের জন্য বলতে লাগলো। আর বলল,,
‘কেউ আছেন অনুকে হাসপাতালে নিতে হবে। অনেক রক্ত পরছে ওর শরীর থেকে। প্লিজ সাহায্য করুন। কেউ আছেন।”
তখনি কেউ হাসতে হাসতে মিশুর পেছনে দাঁড়ালো। আর মিশুর মাথায় রড দিয়ে খুব জোরে আঘাত করলো। মিশু রাস্তায় পরে গেল। ওর মুখে তখনো একটাই কথা ।
‘কেউ আছো আমার অনুকে কেউ বাঁচাও। ওর শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। কেউ আমার অনুকে বাঁচাও।”
বলতে বলতেই মিশু সামনে তাকাতেই দেখলো। কতো গুলো লোক অনুভব কে ওদের গাড়ি তে উঠাচ্ছে। ওকে গাড়িতে উঠিয়ে অনুভবের পা গিয়ারে আর হাতে স্টেয়ারিং এ রেখে “হ্যাপি জার্নি” বলে গাড়ি স্টার্ট করে দিল। অনুভবের জ্ঞান নেই। গাড়ি চলতে শুরু করলো কিছু দূর যেতেই ব্যালেন্স হাড়িয়ে গাড়িটা খাদে পরে গেল। মিশু অনু বলে চিৎকার করে উঠলো। আর কিছুক্ষণ পর সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গেল।
বর্তমান,,
মিশুর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। মেহবিন ওকে জরিয়ে ধরলো। মিশু মেহবিনকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর বলল,,
“আমি অনুকে খুব ভালোবাসি ফুল। আমি তো ওকে হারাতে চাই নি তাহলে এমন কেন হলো ফুল? আমরা তো একসাথে কতোকিছু করার প্ল্যান করেছিলাম।তাহলে আমাদের সাথে এরকম কেন হলো?
মেহবিন বলল,
“অনুভব ভাইয়া নিশ্চয়ই এমন কিছু জানতে পেরেছিল তার জন্য তাকে প্রান দিতে হলো। আপু একদম কাঁদবে না তুমি। এখন যে তাদের শাস্তি দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। তোমার এক্সিডেন্ট এর পর তুমি এক জায়গাতেই থেমে ছিলে তখন বাড়ির কেউ তোমায় ঠিক না হওয়ার ওষুধ দিতো। এর জন্যই তুমি ঠিক হওনি । এর শাস্তি তো পেতেই হবে আর মাত্র কয়েকটা দিন।”
মেহবিন মিশুকে শান্ত করলো। তখন মিহির আর আদর এলো। মিহিরের হাতে অনেকগুলো হাওয়ার মিঠাই। মিহির এসে বলল,,
‘এই যে ফুল আর ফুলের বোন এই যে দেখো তোমাদের জন্য অনেকগুলো ভালোবাসা নিয়ে এসেছি। নাও নাও ভালোবাসা খেয়ে একটু হাসো দেখি।”
মিহির এমন ভঙ্গিতে বলল যে সবাই হেঁসে উঠলো। মিশু বলল,,
‘এই হাওয়ার মিঠাইকে শুধু আমি ভালোবাসা বলি। তুমি তোমাদের কেন বললে ফুলের মামাতো ভাই?
‘ভুল হয়ে গেছে ফুলের বোন আমায় ক্ষমা করুন। আর আপনার ভালোবাসা গ্ৰহন করুন।”
মিহিরের কথা শুনে মিশু হেঁসে উঠলো। মেহবিন একবার মিশু আরেকবার মিহিরের দিকে তাকালো। তারপর সে নিজেও হাসলো। তখন আরবাজ আর মাইশা এলো। সবাই মিলে একসাথে হাওয়ার মিঠাই খেলো। বিকেল হওয়াতে এখন মেহবিন বাড়ি ফিরবে সবাই থেকে যেতে বললেও মেহবিন থাকলো না। মিহিরকে যেতে বললেও মেহবিন বলল ড্রাইভার দিয়ে আসবে এতো কষ্ট করে মিহিরের যেতে হবে না। অতঃপর ড্রাইভারের সাথে মেহবিন ফিরলো। গাড়িতে উঠতেই মেহবিনের ফোন বেজে উঠল ফোনটা মুখরের। ও কানে নিতেই শুনলো,,
‘অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে বিহঙ্গিনী। অতঃপর কাব্য ও তার বিহঙ্গিনী তাদের সাময়িক বিচ্ছেদ কাটিয়ে পূর্নতা পেতে চলেছে।”
~চলবে,,