মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৫০

0
347

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৫০
___________________

আরুহী বাড়িতে এসেছে প্রায় আধ ঘন্টা! সেই যে আসার পর থেকে দরজা লাগিয়েছে এখন ও খুলে নি, দরজা লাগিয়ে বসে থাকা মানে আরুহী কোন কারণে বেজায় চটে আছে তাই ভয়ে কেউ আগ বাড়িয়ে ডাকতে ও যায় নি, এই মেয়ের তো মুখ থেকে বেশি হাত চলে ডাকতে গেলে কখন জানি আবার ঠাস করে ঘুষি মেরে ঠুস করে অজ্ঞান করে ফেলে! বলা তো যায় না!

বাহিরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি যেন এই মূহুর্তে আকাশ ভেঙে সকল জলরাশি নেমে আসবে ধরনীর বুকে। আকাশ টা বেজায় কালো করে ছে, মৃদু ঠান্ডা বাতাস শা শা করে ঢুকছে আরুহীর রুমের খোলা জানলা দিয়ে। সাথে ফোটা ফোটা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে পাথরের তৈরি মসৃণ মেঝেকে। জানালার এক পাশে হেলান দিয়ে সেই দৃশ্য ই এক মনে অবলোকন করছে আরুহী। মন টা আজ বেজায় খারাপ কিন্তু মন খারাপের কারণ খুজে পাচ্ছে না তাই মন টা আরোও খারাপ হচ্ছে। সময়টা তখন বিকেল আর দুপুরের মাঝামাঝি সময় তবুও আকাশের কালো ভাবের কারণে বোঝার উপায় নেই আসলেই কি দুপুর নাকি প্রায় রাত হবে হবে।

পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার হয়ে আছে, হঠাৎ রুমের দরজা খোলার আওয়াজে আরুহী নড়েচড়ে উঠলো, পুরো রুম জুড়ে পরিচিত কড়া পারফিউম এর ঘ্রান ছড়িয়ে পড়লো তৎক্ষনাৎ। কাঁধে কারো থুতনির স্পর্শ পেয়ে খানিকটা নড়েচড়ে উঠলো সে। আরুশের ঘন নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে আরুহীর কাধে, শরীরের লোম কুপ কাটা দিয়ে উঠলো তৎক্ষনাৎ। তবুও আরুহীর কোন ভাবাবেগ হলো বলে মনে হলো না, মেয়েটা এতো শক্ত আর ফিলিংলেস!

” কি ব্যাপার মহারানী? মন খারাপ কেন? কিছু হয়েছে? ”

আরুহী মুচকি হেসে বলল,

” কিছু হয়নি ”

আরুশ ভ্রু কুঁচকালো,

” হুুমম কিছু তো একটা হয়েছে ই, কি হয়েছে বলো তো জানপাখি! আমার ভালোবাসার বউটার মন খারাপ কেন জানতে পারি?”

আরুহী পিছনে ঘুরে তাকালো, আরুশের দুই কাঁধে দুই হাত ঝুলিয়ে বলল,

” কিছু হয়নি তো মহারাজ, আপনার ভালেবাসার বউ একদম ফাইন আছে! ”

আরুশ আরুহীকে ঘুরিয়ে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,

” ভালোবাসার বউ!”

” জি বলেন ”

” চলেন ছাঁদে যাই, আজ দুজন বৃষ্টি বিলাশ করবো ”

আরুহী মানা করলো না, সেও চায় আজ না হয় এই যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছু টা স্বস্তি! বড্ড হাপিয়ে গেছে এসবে । আরুহীর হাতের আঙুল মুঠোই পুরে আরুশ সিড়ি ভাঙিয়ে ছাদে উঠে এলো, আরুহী ছাদে প্রবেশ করতেই আরুশ পিছনে থেকে ছাদের দরজা লক করে সামনে এগুলো। আরুহীর বরাবর ই ছাদটা বেশ পছন্দের তার অন্যতম কারণ হলো ছাদের চারপাশে প্রচুর রঙ বেরঙের কাঠগোলাপ গাছ আর আশ্চর্য জনক হলেও সারা বছর গাছে ফুল থাকে। আরুশ আরুহীর হাত মুঠোয় নিয়ে দোলনার দিকে এগিয়ে গেলো, নিজে বসে আরুহীর বসার জায়গা দেখিয়ে ইশারা করলো বসতে। আরুহী আরুশের পাশে বসতেই আরুশ আরুহীকে ঘুরিয়ে আরুহীর পিঠের সাথে সেঁটে বসে দোলনার হাতলে হেলান দিলো।

আরুহী এক পলক আকাশের দিকে তাকাতে চাইলো কিন্তু বৃষ্টির তুমুল বর্ষনের কারণে তা আর সম্ভব হয়ে উঠলো না। আরুহীর পিঠ আরুশের বুকের সাথে সেঁটে আছে! আরুহী আরেকটু চেপে বসে পুরো ভর ছেড়ে দিলো আরুশের উপর। মনের মধ্যে এক দলা প্রশান্তি বয়ে গেলো তার। সময় টা এখানেই থেমে যেতো তবে জীবনে আর কিছু ই চাওয়ার থাকতো না তার।

তবে সব ইচ্ছে যে পূরণ হয় না, জীবনের অপ্রিয় সত্যি মেনে নিতেই হয়। আরুহীর হাতে যে সময় ভীষণ অল্প! এই জীবনের স্বল্প যতটুকু সময় ই আছে ততটাই তার ভালোবাসার মানুষ টাকে দিতে চায় সে। ভীষণ ভালোবাসে যে মানুষ টাকে। তাকে ছেড়ে যেতে হবে কথাটা ভাবলেই কেমন যেন কলিজা কামড়ে উঠে!

তবুও আরুহী চায় জীবনের যতটুকু সময় সে আছে ততটুকুতেই যেন ভীষণ মিষ্টি স্মৃতি জমাতে পারে সে। আর তো মাত্র দুয়েক টা দিন তারপর এই শক্ত খোলস থেকে চিরতরে মুক্তি নিবে সে! তারপরের সবটুকু সময় তার ভালোবাসার মানুষটার। এতো টা পাষাণ সে কখনোই ছিলো না আর না আছে। প্রতিনিয়তই অভিনয় করে গেছে শক্ত হবার! কতটুকু পেরেছে সে!

তবে একটা কথা সত্যি, আমরা শক্ত হতে গিয়ে ফিলিংলেস হয়ে পড়ি।

আরুহী কাঁদছে। চোখ থেকে টপটপ করে ঝড়ছে পানি তবে বোঝার উপায় কি! বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি যে মিলেমিশে একাকার।

” আরু! ”

আরুহী নড়েচড়ে উঠলো,

” হুমম? ”

” আমাকে ছেড়ে যাস না আরু! আমি মরে যাবো ট্রাস্ট মি! সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমি তোকে ভালোবাসি, যখন ভালেবাসা শব্দ টায় কি জানতাম না ঠিক তখন থেকে ভালোবাসি, আমৃত্যু ভালোবাসবো তোকে! যদি আরেক জনম আমি পাই সে জনমেও আমি আমার করে তোকেই চাইবো! মানছি আমার রাগ বেশি, রেগে অনেক কথায় বলি তোকে তবুও তুই আমার। তোকে বকি, মারি, ভালোবাসি, আদর করি যা কিছু ই করি না কেন, তবুও তুই আমার। আমার প্রতি রাগ হলে আমাকে তুই যা শাস্তি দিবি তা আমি সহাস্যে মাথা পেতে নিবো কিন্তু আমাকে তুই ছেড়ে যাবি দুনিয়া ধ্বংস করে হলেও তোকে আমার চাই, তুই আমার। তোর নাক, মুখ, চোখ, হৃৎপিণ্ড, আত্না সব আমার তুই পুরোটাই আরুশের। আমি কিন্তু দেবদাস নই যে নিজের ভালোবাসা কে অন্যজনের হাতে তুলে দিয়ে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো, আমার ভালোবাসা মহাদেবের মতো যে নিজের স্ত্রীকে বাঁচাতে তাকে পাওয়ার জন্য পুরো বিশ্ব ধ্বংসাস্তুপে পরিনত করতে পারে।

আমি আর সবার মতো বলব না তুই আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তোকে ভালোবাসবো, আমি ভালোবাসি মানে তোকে ও আমাকেই ভালোবাসতে হবে এবং কোন অপশন ছাড়া ই ভালোবাসতে হবে। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববি তো মেরে মমি বানিয়ে শো কেসে সাজিয়ে রাখবো, মাইন্ড ইট! ”

প্রথম কথা গুলো নরম গলায় বললেও শেষের বাক্য গুলো শক্ত কন্ঠে ই আউরালো আরুশ। আরুহী এক মনে কথা গুলো শুনলো কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া ও করলো না, শুধু ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো,

” মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি একমাত্র তোমাকেই ভালোবাসবো আরুশ ভাই, পরের জনম বলে যদি কিছু থাকে তাহলে সে জনমেও আমি তোমাকেই চাইবো ”

আরুহী মুচকি হেসে আরুহীর মাথায় ঠোঁট ছোয়ালো, প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,

” আরুহী বহু দিন তুই কোন গান গাস না, আজ না হয় এই অধম টাকে একটা গান শোনা, অন্তর টা জুরিয়ে নেই তোর সু মধুর কন্ঠ দিয়ে”

আরুহী নড়েচড়ে বসলো, বাকা কন্ঠে বলল,

” বিদ্রুপ করছো! গানের গলা ভালো না বলে! ”

” এমা না না, কে বলল এই কথা! তোর গানের গলা খারাপ কে বলল? আয়ু মায়ের মতো একজন প্রোফেশনাল শিল্পীর মেয়ের কন্ঠ খারাপ! এটা শোনার আগে আমি কান কেন বন্ধ করলাম না! হায় খোদা! ”

আরুহী ঘাড় বাঁকিয়ে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,

” শেষ? শেষ হয়েছে তোমার ফাজলামি? ”

আরুশ মিটমিটিয়ে হেঁসে বলল,

” হুমম, আচ্ছা সরি। একটা গান গা না! ”

আরুহী চোখ বন্ধ করলো,

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাব, কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

যুথি বনে ওই হাওয়া
করে শুধু আসা-যাওয়া।
হায় হায়রে, দিন যায়রে
ভরে আঁধারে ভুবন
কাছে যাব, কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাব, কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

শুধু ঝরে ঝর ঝর
আজ বারি সারাদিন
আজ যেন মেঘে মেঘে
হল মন যে উদাসীন

আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কী যে ভাবি আনমনে
তুমি আসবে, ওগো হাসবে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাব, কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাব, কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

” যখনি পড়েছে নজর আমি যে হয়ে গেছি তোর”

আরুহী গানের মাঝে ই বেসুরা কন্ঠে গানের লাইন টা বলে উঠলো আরুশ, আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

” এর যে কাকের কা কা ই সুন্দর! ভুলেও ওই বেসুরা গলায় গান গাইবে না তুমি! গান কে পুরোপুরি গণ ধ*র্ষ*ন করে ছেড়ে দিলে। ছেহ! ”

আরুশ থতমত দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” শোধ তুললি! দেখে নিবো তোকে

আরুহী মিটমিটিয়ে হাসলো।

চলবে…

[ নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য গল্প দিতে দেরি হচ্ছে, কেউ অপেক্ষা করে থাকবেন না। লেখা শেষ হলেই দিয়ে দিবো আর আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ আর গঠন গত মন্তব্য করবেন কিন্তু]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here