রণরঙ্গিণী_প্রেমরঙ্গা |৬৬| #ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

0
675

#রণরঙ্গিণী_প্রেমরঙ্গা |৬৬|
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

আয়নার সামনে।দাঁড়িয়ে নিজেকে পরখ করছে প্রলয়। আজ সে পার্টি অফিসে যাবে। তারপর সেখান থেকে একটা কলেজে যাবে৷ আজ শহীদ মিনার উদ্ভোদন করার রয়েছে। আজও প্রলয় সাদা পাঞ্জাবি তার উপর কালো কোটি পরিধান করেছে৷ হাতে একটা দামি ঘড়ি। এই ঘড়িটা মেহরাব শিকদার তাকে উপহার দিয়েছিলাম৷ ব্যক্তিগত ভাবে ঘড়িটা প্রলয়ের ভীষণ পছন্দের৷ যখনই কোথাও গুরুত্বপূর্ণ কাজে গেলেই এই ঘড়িয়ে পড়ে যায়৷

“ভাই আমাদের উচিত নিষিদ্ধ জায়গাগুলোতে গিয়ে ভূমির খোঁজ করা৷”

রাগ তড়তড় করে মাথায় চড়াও হলো৷ প্রলয় ক্ষিপ্রবেগে এসে অর্পণের কলার চেপে ধরল। চেঁচিয়ে বলে উঠল‚

“তোর সাহস কী করে হলো এমন কথা বলার? আমি তো স্বপ্ন ওসব জায়গার কথা ভাবতে পারিনা আর তুই কিনা বুকের উপর বলে দিলি?”

“ভাই ব্যবহার করো কথাটা তো একবার শুনবে।”

“কিছুই শোনার নেই আমার। যা বুঝার আমি বুঝে নিয়েছি।”

“তুমি কিছুই বুঝলে না উল্টো আমাকে ভুল বুঝলে।”

“আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইছি। তুই এখন এখান থেকে যা। পরে যখন দরকার পড়বে‚ আমি তোকে ডেকে নেব।”

আর কিছু বললে না অর্পণ। প্রলয়ের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সরাসরি না বললেও অর্পণ আপনার বাবাকে সন্দেহ করছে। তাই তার বাবার ফোন নাম্বার ট্র‍্যাকিং করেছিল। এরপর মেহরাব শিকদারের ফোন নাম্বার একটা নিষিদ্ধ জায়গায় দেখা গিয়েছে। অর্পণের সন্দেহ রয়েছে যে‚ তার বাবা ভূমিকে সেখানেই রেখেছে। ইনিয়েবিনিয়ে প্রলয়কে কথাটা বলারও চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু হলো তার উল্টো। চলে থাকে ভুল বুঝেছে। মন খারাপ হলো অর্পণের। তার ভাই তাকে ভুল বুঝল। সত্যিটা এবার সে প্রমাণ করেই ছাড়বে। সে যে করেই হোক। হসপিটাল যাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল অর্পণ।

বিকেলে…

রূপালি গাড়িটা একটা জায়গায় এসে থেমেছে। মিনিট দুয়েক হলো গাড়িটা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভূমি বুঝতে পারল না এ কোথায় এসেছে? আদতে কী হসপিটালে পৌঁছে গেছে? জানালার কাঁচ তুলে রাখা৷ ভূমিকে এভাবে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিংকি বলে উঠল‚

“এত খারাপের মাঝে একটু কিছু ভালো হোক। এই সভ্য সমাজে তো মন্দ লোকের অভাব নেই৷”

পিংকির কথা বোধগম্য হলো না ভুমির। এবার জানালার কাঁচ নামিয়ে রাখা। বাহিরের দিকে চোখ পরতেই বুঝতে পারল জায়গাটা ভীষণ চেনা। চেনা চেনা মনে হতেই গভীর দৃষ্টিতে জায়গাটাকে পরখ করতে শুভ করল। এটা তো তাদেরই এলাকা। মনে মনে খুবই খুশি হল সে। চোখ মুখে প্রবল উচ্ছ্বাস। পিংকি এবার ভূমির কাছে পানি বোতল চাইল। অতি উৎসাহের সঙ্গে পানির বোতলটা এগিয়ে দিল ভূমি। সে জানে এ পানিতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেওয়া রয়েছে৷ এক নিঃশ্বাসে অনেকটা পানি পান করেছেন পিংকি। ভূমি মনে মনে অপেক্ষার প্রহর বলতে শুরু করল। যেই পিংকি ঘুমিয়ে পড়বে অমনি সে এখান থেকে পালিয়ে যাবে। সোজা মালঞ্চ নীড়ে গিয়ে পৌঁছাবে। যত দ্রুত সম্ভব পালানোর চেষ্টা করবে। এখান থেকে প্রায় দশ মিনিটের রাস্তা। প্রলয়ের সঙ্গে বহুবার ঘুরতে যাওয়ার দরুন জায়গাগুলো বেশ ভালোই চেনা হয়েছে তার। কিছু কিছু জায়গা প্রলয় নিজে চিনিয়েছে। ভূমি এতক্ষণ ধরে বাহিরের দিকে একদৃষ্টে গিয়েছিল তা দেখে পিংকি মুচকি হেসে বললেন‚

“সেদিন আমি তোমার আর মেহরাব শিকদারের কথা সব শুনেছিলাম। আমি জানতাম না যে‚ মেহরাব শিকদার তোমার জন্মদাতা পিতা।”

‘পিতা’ শব্দটা কর্ণগোচর হতেই তীব্র রাগ শরীরের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছলকে উঠল। অত্যন্ত তেজি স্বরে বলে উঠল‚ “ওই নোংরা লোক আমার কিছুই হয় না৷”

আর কিছু বলার সুযোগ পেলেন না পিংকি। চোখ দুটো মুদে আসছে। ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। ভূমি উনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মহিলা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে রেখেছে। তাকিয়ে থাকতে পারছেন না বিধায় চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছেন। ভুল বুঝতে পারল না যে‚ পিংকি জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন সুযোগ হবে গাড়ি থেকে নামার‚ এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার? আর মাত্র কয়েক কদম— তারপরই ভূমি প্রলয় আবারও মিলিত হবে। এভাবেই আরও মিনিট পাঁচেক সময় অতিবাহিত হলো। গাড়িতে ড্রাইভার নেই। ভূমি এবার হাত দিয়ে পিংকির মুখের উপর নাড়াচাড়া করতে শুরু করল। বোঝার চেষ্টা করছে পিংকি ঘুমিয়ে গেছে কিনা। না! পিংকি এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন৷ কাগজ দুটো হাতে শক্ত করে ধরে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো ভূমি। এই বুঝি সকল অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলল।

অন্যদিকে…

মাধুরীর ঘরে বসে রয়েছেন ফিরোজা৷ অন্য সময় সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিলেও আজ তা হলো না। মাধুরী নিজেই ডেকে এনেছে ফিরোজাকে৷ একা একা ভালো লাগছিল না উনার। পূর্ণতা পুষ্পিতা এখনও কলেজে। তাদের ফিরতে আজ কিছুটা দেরি হবে৷ মাধুরী আর ফিরোজা দুজনেই বিছানার উপর বসে রয়েছে।

“ভূমি কোথায় আছে‚ কেমন আছে— কে জানে! আল্লাহ ওকে ভালো রাখুক। এমনিতেই মেয়েটার মনে অবস্থা ভালো না। সদ্য সে তার মাকে হারিয়েছে। তারউপর পরিবারের থেকে দূরে৷ মানসিক ভাবে হয়তো বড্ড ভেঙে পড়েছে মেয়েটা।”

“একটিবার চিন্তা করেছিস আমার ছেলেটার কী অবস্থা হয়েছে এতে? মেয়েটা গেল তো গেল আমার ছেলের কাছ থেকে সমস্ত সুখ শান্তি নিংড়ে নিয়ে গেল।”

“এভাবে কেন বলছ ভাবি? একবার নিজেকে ভূমির জায়গায় চিন্তা করে দেখ! ভূমিও তো তোমার মেয়ে সমতূল্য। ওকে মেয়ে হিসেবে আপন করে নিতে এত কেন বাধাবিঘ্ন? তুমি হয়তো জানো না— মেয়েটা তোমার কাছ থেকে একটু ভালোবাসা‚ একটু স্নেহ পাবে বলে তোমার সমস্ত অবহেলা মুখ বুঝে সহ্য করে। আমি বুঝি মেয়েটার মনের অবস্থা। মা তো— কী করব বল।”

ফিরোজার সমস্ত কথা চুপটি করে শুনলেন মাধুরী। টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না তিনি। ফিরোজা আবারও বললেন‚ “মেয়েটাকে কী একটুও ভালোবাসা যেত না ভাবি?”

“যাকে তাকে আমি ভালোবাসতে যাব কেন?”

“তোমাকে একটা কথা বলি ভাবি! তুমি প্রচণ্ড স্বার্থপর। আল্লাহ না করুন‚ ভূমির জীবনের মতো যদি আমাদের পূর্ণতা পুষ্পিতার জীবনটাও হয়ে যায়?”

সমস্ত রাগ গিয়ে চড়াও হলো ফিরোজার উপর৷ মাধুরী এবার চেঁচিয়ে বলে উঠলেন‚ “আজকেই বলেছিস— বলেছিস। এমন কথা তোর মুখে আমি দ্বিতীয়বার শুনতে চাই না৷”

এরই মাঝে কলিং বেল বেজে উঠল৷ বাড়িতে এখন মাধুরী‚ ফিরোজা আর সাবিনকে ছাড়া আর কেউ নেই। নিচতলায় মাধুরীর ঘর থেকে আগে বেরিয়ে এলেন ফিরোজার। উনার পেছন পেছন মাধুরীও ছুটে এলো৷ এদিকে সদর দরজা খোলায় উদ্যত হলো সাবিনা। সে এতক্ষণ টিভি দেখছিল৷ একটা কষ্টের মুভি দেখছিল। সে একটু বেশিই আবেগী৷ একটু কষ্টের সিন দেখালেই কান্নায় সব ভাসিয়ে দেয়৷ কলিং বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গেই টিভি বন্ধ করে দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে৷ এভাবে টিভি দেখার মাঝেই কলিং বেল বাজায় বিছুটা বিরক্ত সে। মুভির কাহিনিতে মাত্রই টুইস্ট শুরু হয়েছিল। সব শেষ! মনে মনে হাজার খানেক বকা দিয়ে সদর দরজা খুলেই ফেলল সাবিনা৷ বিষ্ময়কর দৃষ্টি সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে৷

চলবে?…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here