আমার_তুমি #পর্ব_১৪ #জান্নাত_সুলতানা

0
438

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা কথা টা বলে বুঝতে পারছে লজ্জাহীন কথা বলে ফেলেছে।
তাই একবার সাদনানের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে সাদনান এর কোল হতে উঠতে চাইলো।
তবে সে টা সাদনান হতে দিলো না।
শক্ত করে চেপে ধরলো নিজের উন্মুক্ত বুকে।
নিজের মুখ টা প্রিয়তার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে

-“তাই?
তবে তো বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে।”

প্রিয়তা কিছু টা লজ্জা মরিমরি অবস্থা। মুখ ফোটে কিছু বলতে যাবে
ঠিক তক্ষুনি দরজা কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে নেয়।
বিরক্ত মুখে বউ কে কোল হতে নামি বিছানা হতে টি-শার্ট নিয়ে গায়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করে

-“কে?”

-“ছোট সাহেব আপনেরে দাদাজান ডাকতাছে।”

বাইরে থেকে একজন মহিলা বলে উঠে।
সাদনান বুঝতে পারলো দাদা জান ডাকে তাই বাহিরে থাকা মহিলা টা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“খালা আপনি যান।
আসছি আমি।”

-“আচ্ছা।”

আর কোনো সারা শব্দ হয় না হয়তো চলে গিয়েছে।
সাদনান ট্রাউজারও পড়ে নেয়।
প্রিয়তা ততক্ষণে ব্যালকনিতে ভেজা দুই টা টাওয়াল মেলে দিয়ে আসে।
সাদনান প্রিয়তার দিকে এগিয়ে যায়।
মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠে

-“কাল থেকে আর শাড়ী পড়ে বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
শাড়ী শুধু রুমে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত বাসায় থাকবো ততক্ষণে পড়বে।”

কথা শেষ বউয়ের হাত ধরে রুম হতে বেড়িয়ে আসে। প্রিয়তা কিছু বলে না।
উপর থেকে দেখা যাচ্ছে বাড়ির প্রতি টা সদস্য এখন লিভিং রুমে উপস্থিত আছে।
সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ওর মায়ের কাছে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে জাফর মির্জা বরাবর মফিজুর মির্জা আর রাহাতের পাশে বসে।
আম্বিয়া মির্জা কেমন করে প্রিয়তার দিকে একবার আঁড়চোখে তাকালো।
প্রিয়তা একটু কেমন ভীতু চোখে তাকায় ওনার দিকে।
এখন সন্ধ্যা হয়ে এসছে তাই রান্না ঘরে চলে গেলো সালেহা বেগম সাথে প্রিয়তা আয়নাও গেলো রান্না ঘরে সুফিয়া বেগম আগে থেকে ছিল সেখানে।
প্রিয়তা হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দেয়।
অতঃপর দু কাজের লোকদের বানানো নাস্তা নিয়ে লিভিং রুমে আসে পেছন পেছন সালেহা, সুফিয়াও আসে।
সবাই এটা সেটা নিয়ে আলোচনা করছে।
জাফর মির্জা নাতি কে আজকের সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন করছে।
মফিজুর মির্জা উশখুশ করছে।
কিভাবে কোথা থেকে কথা শুরু করবেন বুঝতে পারছে না।
সাদনান বিষয় টা লক্ষ করে।
বেশ অনেকক্ষণ সময় ধরে।
অতঃপর সাদনান নিজে থেকে জিজ্ঞেস করে

-“বাবাই কিছু বলবে?”

-“হ্যাঁ, না মানে,,,,

সাদনানের এমন প্রশ্নে আর মফিজুর মির্জা এমন তোতলানো দেখে সবার দৃষ্টি এখন তাদের দিকে।সাদনান মুচকি হাসে। সে তবে ঠিক ধরেছে তার বাবাই কিছু বলতে চাচ্ছে। কিন্তু বাবা আর ভাইয়ের ভয়ে বলতে পারছে না।
ভয় যেমন পায় তেমন সম্মানও করে বড় ভাই বাপ কে।

-“তো বলে ফেলো।
এতো ভয় কেন পাচ্ছো?”

-“ভয় পাওয়ার কি আছে?
ও কি চুরি করেছে?”

সাদনানের প্রশ্নের বিপরীতে জাফর মির্জা থমথমে কণ্ঠে বলে উঠে।
মফিজুর মির্জা পরলো বিপাকে।
এই কেমন মুশকিল তাদের সম্মান দিতে গিয়ে এখন তারা তাকে চোর বানিয়ে দিচ্ছে?
কিন্তু তিনি বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে এক টা ঢোক গিলে নেয়।
ভয় পায় না কিন্তু মেয়ে তার ছোট আর এটা নিয়ে কথা বললে কি রিয়েক্ট করতে পারে আজ্জম মির্জা সেটাই ভাবছে।
কারণ একটাই সারা থেকেও বেশি তিনি মাইশা কে স্নেহ করে।
যদিও মফিজুরও সারা কে মাইশার চেয়ে ঢেরবেশি স্নেহ করে।

-“কি হলো বল?”

আজ্জম মির্জা প্রশ্নে তিনি ভাবনা বাদ দিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলতে শুরু করে

-“আমার বন্ধু কালাম খাঁন আছে না?
বিয়েতে এসছে সে দিন ওর মাইশা কে পছন্দ হয়েছে। তাই ওর ছেলের জন্য চেয়েছে।”

মফিজুর মির্জার কথায় মাইশা স্তব্ধ।
অসহায় চোখে সাদনানের দিকে তাকালো।
সাদনান চোখ দিয়ে ভরসা দৃষ্টিতে আশ্বাস দেয়।
এর মধ্যে জাফর মির্জা বলে উঠে

-“ভালো কথা।
মেয়ে যেহেতু হয়েছে বিয়ে তো দিবে এক দিন আগে পরে।
কথা বলে দেখো।”

সবার মাথায় যেনো চক্কর দিয়ে উঠে।
সবার না শুধু পাঁচ জন।
সালেহা, সুফিয়াও খুশি।
আম্বিয়া মির্জা স্বামী সামনে বসে বিধায় কিছু বলতে পারছে না।
তিনিও বেশ খুশি নাতনির বিয়ে হবে ভাবতেই খুশি লাগছে।
শুধু সাদনান নির্লিপ্ত।
রাহাত তার এ-সব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই যেখানে বাপ, চাচা,দাদা জীবিত সেখানে এসব চিন্তা করা ফাউ মনে করলো।
কিন্তু বোন তো একটা দায়িত্ব আছে না সেই সুবাধে বসে আছে।
তার তো এখন বউয়ের সাথে খুব রোমাঞ্চ করতে ইচ্ছে করছে।

-“ইলেকশন আড়াই মাস পর।
এর পর ওর পরীক্ষা।
আর ইলেকশন এর আগে সারা,প্রিয়তারও পরীক্ষা আছে।”

আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে বলে উঠে।
সবাই একটু নড়েচড়ে বসে।
সত্যি সামনে ইলেকশন যদিও প্রিয়তাদের পরীক্ষা আগে তার পর ইলেকশন আর ইলেকশনের পর মাইশার পরীক্ষা শুরু।
কিন্তু এখন কোনো অনুষ্ঠান বা কিছু হলে ওদের পড়া লেখার বারো টা বেজে যাবে।

-“তা ঠিক তবে না হয় ছেলে টার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে রাখা যাক।”

জাফর মির্জা বলে উঠে।
আজ্জম মির্জা শান্ত কন্ঠে বলল

-“হুম।
তুমি ওদের আসতে বলো ভালো একটা দিন দেখে সবাই যখন বাড়ি থাকবে।”

-“বাবাই বলছিলাম কি ছেলে টা কে?”

-“তুই চিনিস তো।
মাইশা দের কলেজ এর প্রফেসর কবির খাঁন।”

সারা,প্রিয়তা চমকে উঠলো।
সাদনান খুব স্বাভাবিক।
যেনো এসব আগেই তার জানা।

-“আচ্ছা আমি বরং মাইশা কে নিয়ে একবার ছেলেটার সাথে দেখা করি?”

-“হ্যাঁ, হ্যাঁ তুমি বরং একবার দেখে আসো দাদু ভাই।”

আম্বিয়া মির্জা বলে উঠে।
সবাই এক মত পোষণ করে।
অতঃপর রাতের খাবার খেতে সবাই ডাইনিং -এ চলে যায়।

———-

-“ভাই তুমি এটা কি বললে?
আমরা কেন দেখা করবো?”

মাইশা লিভিং রুমের সোফায় বসে ছিল।
খাবার শেষ সবাই রুমে চলে গিয়েছে আর মহিলা সব রান্না ঘর আর ডাইনিং এ আছে।
আর সারা তখনো খাবার খাচ্ছে।
সাদনান খাবার শেষ ধপ করে মাইশার পাশে বসে।
বেশ অনেক টা দূরত্ব।
আর মাইশা এই সুযোগে ফিসফিস করে প্রশ্ন গুলো করে।
যা শুনে সাদনানও মাইশার মতো আওয়াজ করে উত্তর দেয়

-“দেখ এখনই বাবাই কে যদি বলি তোর আর আয়ানের বিয়ে হয়ে গেছে।তখন তারা কষ্ট পাবে যদিও বা মেনে নিবে এটা তুই আমি খুব ভালো করে জানি।
সবাই কে কষ্ট দেওয়ার চেয়ে এটাই ভালো হবে আমরা কবির এর সাথে কথা বলে সব মিটমাট করে নেবো।আর আয়ান আর তোর বিয়ে ব্যাপার কেউ জানবে না।এটা আমি সামলে নেবো।
তাছাড়া তোর ফ্রেন্ড তিন্নি না কি জানি নাম ওতো কবির কে পছন্দ করে। তখন না হয় কবির এর সাথে দেখা হলে তুই ওর কথা বলে দিবি।”

-“এক মিনিট, এক মিনিট তুমি কি করে জানলে তিন্নি স্যার কে পছন্দ করে?”

সাদনান কিছু বলে না শুধু হাসে।
মাইশা তখনো উত্তর এর আশায় তাকিয়ে ভাইয়ের দিকে।
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে খামখেয়ালি উত্তর করে

-“তোর টা কিভাবে জেনেছি?”

মাইশা উত্তর দেয় না।
কারণ সে তো জানে না সাদনান তার আর আয়ানের রিলেশন এর কথা কিভাবে জেনেছে।
তাই তার কাছে উত্তরও নেই।
সাদনান আর কিছু না বলেই রহস্যময় হেসে সোফায় ছেড়ে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা লাগায়।

———–

প্রিয়তা কফির মগ টা নিয়ে রুমে এসে দেখলো সাদনান সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছে।
প্রিয়তা কফি টা সাদনানের সামনে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে চলে যায়।
অতঃপর বই নিয়ে বসে পড়ে।
সাদনান আঁড়চোখে সে দিকে একবার তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-“কাল থেকে যেনো কিচেনে যেতে না দেখি।
পড়া গুলো কমপ্লিট?”

-“হ্যাঁ।
আর একটু বাকি।”

সাদনান ততক্ষণে উঠে সাদা সার্ট টা টেনে টুনে ঠিক করে এগিয়ে আসে বউয়ের নিকট।
বই টা বন্ধ করে দিয়ে বলে উঠে

-“ফ্রেশ হয়ে এসো।
আর পড়তে হবে না।”

প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে আলমারি হতে সাদনানের আজ সকালে অনলাইনে অর্ডার দেওয়া ড্রেস গুলোর মাঝে থেকে একটা রাতের পোষাক নামিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
সাদনান আজ সকালেই অনেক গুলো ড্রেস আনিয়েছ।
একদম সকালেই রাহান রিসিভ করেছে।
কেউ দেখে নি।
সব গুলো ড্রেসের মাঝে একটা সুন্দর ছোট গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো একটা বক্স ছিল।
যেটা খুব সাবধানে সাদনান তার আলমারি ড্রয়ারে রেখে দিয়েছে প্রিয়তার না দেখার আগে।
এই ড্রয়ারের চাবি সাদনান কাছে থাকে।

-“আপনি ওখানে কি করছেন?”

সাদনান বক্স টা হাতে নিয়ে কথা গুলো ভাবছিল।
কিন্তু প্রিয়তার প্রশ্নে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।
অতঃপর হাতে থাকা বক্স টা নিয়ে এগিয়ে যায় ছোট জানের নিকট।
প্রিয়তা একটা গেঞ্জি ছোট ছোট বিড়াল ছাপা আর গেঞ্জির টার সাথে ম্যাচিং করে ট্রাউজার পড়ে আছে।
সাদনান তার ছোট বউ কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
বেশ লাগছে তার বউ কে।
সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে বক্স টা খোলে সেখান থেকে এক জোড়া ইয়ার রিং একটা রিং আর একটা লকেট বের করে।
সে দিকে তাকিয়ে প্রিয়তার চোখ বেরিয়ে আসার জোগাড়।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

-“এগুলো সব ডায়মন্ড?
আপনি এসব কেন করতে গেলেন?”

-“আমার ইচ্ছে।
আমার বউয়ের জন্য অনেক আগে থেকেই নিজের উপার্জন এর টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম।আমার সাধ্য এটুকুই। কিন্তু ভবিষ্যতের টা বলতে পারছি না।
কাল দেওয়ার কথা ছিল এগুলো। সমস্যা নেই দ্বিতীয় বাসরে দিয়ে দিলাম। আমার ছোট জান।”

প্রিয়তার প্রশ্ন সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিতে দিতে বক্স টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে ইয়ার রিং জোড়া পরিয়ে দিয়ে গলায় লকেট টা পড়িয়ে দিয়ে প্রিয়তার গেঞ্জি টা কাঁধ থেকে সরিয়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে গভীর চুম্বন করে সেখানে।

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here