আমার_তুমি #পর্ব_২৯[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ] #জান্নাত_সুলতানা

0
365

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৯[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনার বোঝার ভুল হয়েছে মির্জা সাহেব।
আমি প্রথমেই আপনার ছোট্ট নাতনির কথা বলেছি।”

জাফর মির্জা চায়ের কাপ টা মুখে সামনে ধরে ছিল সবেমাত্র। কিন্তু ওয়াসিফ দেওয়ান এর ফোনের ওপাশে হতে বলা কথা টা শোনা মাত্রই তিনি অবাক হয়ে গেলো।চা মুখে নেবার কথা ভুলে গেলো।
খাবার শেষ রুমে এসে ফোন করেছেন ওয়াসিফ দেওয়ান কে।আর মাইশা কে না সারার কথা বলাতে ওয়াসিফ দেওয়ান উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠে।

-“সারা’র কথা?”

জাফর মির্জা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে। ওয়াসিফ দেওয়ান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব বলে উঠে

-“হ্যাঁ।
আপনি বড় নাতনি কে না তো।”

জাফর মির্জা সহসা কিছু বলতে পারে না। তবে তিনি জানায়া বড় বোনের বিয়ে না দিয়ে তো আর ছোট বোন কে দেওয়া যাবে না।
তাছাড়া বাড়ির সদস্যদের সাথে তো কথা বলতে হবে। তাই তিনি আশ্বাস দিলেন মাইশার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলেই তিনি সারা’র বিষয়ে কথা বলবে।
জাফর মির্জা সাথে কথা শেষ তিনি তাদের রুমের পাশে বড় গেস্ট রুম টা থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমের দিকে পা বারাতেই দেখলো কাজের মহিলা টা সদর দরজা আটকাচ্ছে।তিনি চায়ের কাপ টা দেওয়ার জন্য বুয়া কে ডাকতেই মহিলা টা এগিয়ে এসে খালি চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে চলে যেতে নিলে তিনি আবারও ডেকে জিজ্ঞেস করলো

-“এতো রাতে দরজা বন্ধ করলে যে কেউ বাহিরে গিয়েছে?”

বুয়া একটু চমকালো।তবে সত্যি টা বললে জাফর মির্জা কিছু বলবে না। তাই তিনি মাথা নুইয়ে জানালো

-“ছোট সাহেব বউ মনিরে নিয়া বাইরে গিয়েছে।”

কাজের মহিলা কথা শেষ করে চলে গেলো।
জাফর মির্জা রুমে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরে দেখলো আম্বিয়া মির্জা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি ভাবলেন হয়তো ওনার দেরী হয়েছে তাই এসেছে।
বউয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল

-“তুমি আসতে গেলে কেন পা ব্যাথা নিয়ে আমি তো যাচ্ছিলাম।”

আম্বিয়া মির্জা কিছু বললো না আগে আগে রুমে চলে গেলো পেছন পেছন জাফর মির্জাও যায়।

———–

সাদনান ড্রাইভিং করছে। প্রিয়তা পাশে বসে আছে এক হাত কোলের উপর আরকে হাত সাদনান তার হাতের উপর ধরে রেখেছে।
বউকে সময় দেওয়া হয় না তার অনেক দিন হয়।শুধু রাতে একটু কাছে পায়।এতো দিন দিতে পারে নি দৌড়াদৌড়ি কাজের চাপের জন্য। আর কাল হয়তো রাত দিন কোনোটাই দিতে পারবে না। তাই আজ সারা রাত বউ কে দেবো রাতের শহর ঘুরবে তারা।
সাদনান বাড়ি থেকে সোজা প্রিয়তাদের স্কুল এর পাশে দক্ষিণ দিকের চায়ের দোকানের সামনে থামায়।
সাদনান প্রিয়তা কে গাড়ি তে বসতে বলে নিজে গাড়ি থেকে বেড় হয়ে দোকানের কাছে গিয়ে দোকানদার কে দুই টা চা দিতে বলে।এখানে আরও দুই তিন টা কাপল +ভার্সিটির কিছু ছাত্র ছাত্রীও আছে। সাদনান গাড়ি তেকে নামার আগে একটা কলো মাস্ক পড়ে নিয়েছে।
তাই তাকে কেউ চিনতে পারে নি।কিন্তু এই দোকানে সাদনান, আয়ান, রাহান, রাহাত মাঝে মধ্যে চা খেতে আসে এটা তাদের সেই স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে ভার্সিটি পর্যন্ত চলেছে নিয়ম করে।কিন্তু এখন আর তেমন আসা হয় না মাঝে মধ্যে আসা হয়। তাই সাদনান কে চিনতে দোকানদার এর ভুল হয় না।
তিনি অবাক হয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে উঠলো

-“ছোট মির্জা?”

সাদনান তৎক্ষনাৎ ফিসফিস করে বলল

-“হ্যাঁ চাচা।
আপনি,,,,

-“বুঝবার পারছি।
আপনার সমস্যা হইবো।আপনি দাঁড়ান আমি এক্ষুনি চা করে দিচ্ছি।”

তিনি কথা বলতে বলতে দুই টা চায়ের কাপ হাতে হঠাৎ থেমে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো

-“আপনি একা আইছেন আজ?
আবার চা দুই,,,,

-“আপনার বউ মা এসছে সাথে, গাড়িতে আছে।”

মধ্যবয়সী দোকানদার সামছুল মিয়া কে থামিয়ে বলে উঠে সাদনান।
সামছুল মিয়ার মুখের হাসি মূহুর্তে গায়েব হয়ে গেলো অবাক হয়ে জানতে চাইলো

-“আপনি বিয়া করছেন?

-“হ্যাঁ চাচা।
তবে এটা আপাতত কেউ জানে না।আমি আপনাকে খুব কাছের মানুষ মনি করি তাই বললাম। আশা করি আমার বিশ্বাস টা রাখবেন।”

-“এই চিনলেন এতো দিনে!
আচ্ছা বউ মা কি এনের?”

-“হ্যাঁ চাচা আয়ানের ছোট বোন।”

সাদনান এর কথায় তিনি হেঁসে ফেলে।তিনি হয়তো কিছু বুঝতে পারে।
অতঃপর চা বানিয়ে সাদনান এর হাতে দেয়।
সাদনান কাপ দু’টো টুলের উপর রেখে পকেট হাতরে ওয়ালেট বের করে একটা পাঁচশ টাকার নোট ওনার হাতে দিয়ে বলল

-“খুচরা নেই।
আরেক দিন এসে চা খেয়ে যাব।”

সাদনান এর কথায় তিনি হাসলো।প্রতি বার এমন করে খুচরো নেই বলে বড় নোট ধরিয়ে দেয়।
তাই তিনি কথা বাড়ায় না মুচকি হেঁসে বলল

-“আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।”

সাদনান বিনিময়ে হাসলো।অতঃপর সেখান থেকে চলে আসে। দোকান দারের কোনো ছেলে নেই শুধু দুই টা মেয়ে একজন কে বিয়ে দিয়েছে আর একজন এখনো পড়ালেখা করে এবার হয়তো অষ্টম শ্রেণি বা নবম শ্রেণির ছাত্রী হবে।
সাদনান জানালা দিয়ে প্রিয়তা কে বলল গাড়ি থেকে নামতে প্রিয়তা নেমে এলো।
সাদনান একটু এগিয়ে গেলো সামনে অন্ধকার দিক টায় কিন্তু সেখানে গিয়ে একজোড়া কাঁপল এর কথোপকথন কানে আসে।
প্রিয়তা খুব সহজে কণ্ঠ গুলো চিনে ফেলে।
আর মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো

-“কবির স্যার?”

কবির আর তিন্নি চায়ের কাপ হাতে পেছনে ফিরে আবছা আলোয় সাদনান আর প্রিয়তা কে দেখে তিন্নি বলে উঠলো

-“সাদনান ভাই, প্রিয়তা।”

-“ভালো হলো।
দেখা হয়ে গেলো।”

প্রিয়তা মুচকি হেঁসে এগিয়ে গিয়ে বলল।
সাদনান কবির এর সাথে কথা বলে আর তিন্নি প্রিয়তার সাথে।
ওদের সাথে কথা বলে জানতে পারলো কবির, তিন্নি সেই বিকেলে বেড়িয়েছে আর খাবার দাবার ঘুরাঘুরি শেষ তারা এখান থেকে চা খেয়ে বাড়ি চলে যাবে।কিন্তু এখন আর যাবে না তিন্নি আর প্রিয়তা বায়না ধরলো ওরা আইসক্রিম খাবে।
সাদনান আবার মাস্ক টা পড়ে নিয়ে প্রিয়তা কে নিয়ে গাড়িতে বসে।কবির আর তিন্নিও ওদের গাড়িতে যায়।
ওরা সেখান থেকে দশ মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটা আইসক্রিম পার্লারে সামনে গাড়ি থামায়।
আর ওরা সেখানে গিয়ে আইসক্রিম অর্ডার দেয়। কিন্তু সাদনান প্রিয়তা কে বেশি খেতে দেয় নি।এখনো হাল্কা ঠান্ডা আছে আবার তার উপর রাত এতো প্রিয়তা অভিমান হয় নি।বরং ভালো লেগেছে কতো দিন পর সাদনান তাকে এমন ভাবে কেয়ার করলো।
ওরা ঘুরাঘুরি শেষ যে যার বাসায় চলে যায়।
তখন হয়তো রাত বারো টা ছুঁই ছুঁই করছে।
সাদনান চাবি দিয়ে সদর দরজা খোলে ভেতরে ঢুকে।অতঃপর আবার লক করে প্রিয়তা কে নিয়ে রুমে চলে আসে। কিন্তু এই পুরো ঘটনা টা আম্বিয়া মির্জা তার রুমের দরজার দাঁড়িয়ে দেখলো।

———

“আমি আপনার জন্য এখানে পড়ে আছি ওয়াজিদ।
আর সেই আপনি আমাকে না বলে দেশে চলে গেলেন?”

ফোনের স্কিন মেসেজ টা জ্বলজ্বল করছে। হোয়াটসঅ্যাপ এসছে এটা।
ওয়াজিদ মেসেজ টা পড়ে ফোন টা মুঠো করে ব্যালকনিতে এসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস টানে।
ঠিক তক্ষুনি হাতে থাকা ফোন টা এবার সশব্দে বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে তাকাতেই দেখলো কল টা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এসছে আর মাঝে গোল একটা পিকচার ভেসে উঠলো একজন স্কুল পড়া ষোড়শী কন্যা স্কুল ড্রেস পড়ে দুই দিকে দুটি বিনুনি হাতের মুঠো পুরো আগে আগে হাঁটছে তার ঠিক পেছনে কলেজ ড্রেস পড়ুয়া ওয়াজিদ মেয়েটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
ছবি টা কবের?এই তো সাত কি আট বছর আগের হবে।
ওয়াজিদ ফোন টা কেটে দিলো।কিন্তু ওপাশের রমণী টা হার মানলো না আবারও কল দিলো।
ওয়াজিদ এবার ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে মিষ্টি একটা কণ্ঠে কান্না ভেজা গলায় বলে উঠলো

-“আর কি করলে আপনি আমার আমায় মেনে নিবেন ওয়াজিদ?”

ওয়াজিদ হাসলো এই মেয়ে টার চোখে তার জন্য ভয়ংকর ভালোবাসা দেখে।কিন্তু, কিন্তু তাহলে সে কেন তাকে কষ্ট দিবে? সেও তো ভালোবাসে কই সে তো এমন করে না।মায়ের পর এই নারী কে সে অন্য চোখে দেখে তার মনে এই নারীর জন্য ভালোবাসা অনুভব করে।
কিন্তু নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে না ওয়াজিদ। নির্বিকার কণ্ঠে শুধালো

-“প্রথম ভুল করেছো মেনে নিয়েছি।আবার একই ভুল তুমি দ্বিতীয় বার করেছো।সেটা কি করে মেনে নেবো? ভুল মানুষ একবার করে,আর সেই একই কাজ বার বার করলে সেটা অন্যায়।”

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here