#আমার_তুমি
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা
-“মাশাআল্লাহ।”
রাহানের মুখে এমন বাক্য শুনে আয়ান ভ্রু কুঁচকে
রাহানের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই তার বুকের ভেতরও ধক করে উঠে। মাইশা, সারা দুইজন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসছে দু’জনেই এক রকম কাপড় হলুদ শাড়ী লাল পাড়ের। বাঙালী স্টাইলে পড়া।কাঁচা ফুলের গহনাও পড়েছে তবে গহনা গুলো খুব নরমাল।এতেই যেনো আরও বেশি সুন্দর লাগছে।আয়ান তার প্রেয়সীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিন্তু
পরক্ষণেই রাহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-“ভুলেও যেনো নজর ওদিকে না যায়।”
-“উফ, তুই চুপ কর।
আমার নজর এতো টাও বাজে নয় যে বিবাহিত মহিল,,,,
রাহান সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না তার আগে আয়ান ওর মুখ চেপে ধরে হাত দিয়ে।
চোখ কটমট করে তাকিয়ে বিরক্তিকর মুখে বলে উঠে
-“ওই সব মুখে আনবি না।”
-“বা*ল ছাড়তো।
কেউ নেই এখানে।”
আয়ানের হাত টা মুখ থেকে টেনে সরিয়ে রাহান আয়ানের চেয়ে আরও দিগুণ বিরক্ত মুখে বলে উঠে।
-“ভাইয়া ভাবি’রা কখন আসবে?”
ওদেরকে কথার মাঝেই মাইশা,সারা দুজনেই এগিয়ে আসে।
আর সারা জিজ্ঞেস করে।
-“মা তো বলল গাড়িতে আছে।
বেশিক্ষণ লাগবে না।মিনিট দুই এক এর মধ্যে পৌঁছে যাবে।”
সারা’র প্রশ্নের জবাবে হাল্কা হেসে উত্তর দেয় আয়ান।
তাদের কথার মাঝেই একটা গাড়ি গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
আর সে টা থেকে প্রথম মিতা সওদাগর তার পর আয়না ওর পরে প্রিয়তা নেমে আসে।
প্রিয়তা আর তাদের সবাই ঘিরে ধরে।
বাড়ির মহিলারা গিয়ে তাদের নিয়ে আসে।
আয়না কে একদম সাজিয়ে আনা হয়ছে।কিন্তু সারা একদম নরমাল পোষাক। নরমাল তো হবে তার কিছুই তো সাদনান দেয় নি। তাই আয়না কে সালেহা বেগম স্টেজে বসিয়ে দিয়ে প্রিয়তা কে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাড়ির ভেতরে চলে আসে।
অতঃপর সোজা নিজের রুমে এনে একটা হলুদ শাড়ী সুন্দর করে পড়ি একদম তরতাজা বিভিন্ন রকমের ফুলের গহনা দিয়ে সাজিয়ে দেয়।
কোনো রকম কৃত্রিম সাজসজ্জা নেই।
এতেই অপরূপ সুন্দরী লাগছে প্রিয়তা কে।
সালেহা বেগম প্রিয়তার কানের নিচে নিজের চোখ হতে কাজল লাগিয়ে মুগ্ধতা নিয়ে বলে উঠে
-“মাশাআল্লাহ।
কারোর নজর না লাগে।”
এতো সবের মাঝে প্রিয়তা নির্বিকার। সে বুঝতে পারছে না কিছু।
তাকে কেন এতো যত্ন করে সাজানো হলো?
তাকে তো আয়ান ভাই বলেছিল যাতে বাড়ি থেকে সেজে না আসে আর তাই তো সে সাজে নি।
কিন্তু ও ভেবেছে অনেক লোকজন থাকবে।আর আয়ান তাই হয়তো সাজতে না করেছে।
কিন্তু এখন তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
প্রিয়তা কে এভাবে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
সালেহা বেগম হাল্কা হাসলেন।
অতঃপর হাত ধরে বেরিয়ে আসে বাড়ির ভেতর হতে।
সারা, মাইশাও,আয়নাও একি রকম সাজ।
তাই ও বুঝতে পারলো সব মেয়েরা এক রকম সেজেছে।
কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে দেখলে কয়েকজন মেয়ে আবার ভিন্ন রকম।
তাই চোখ পিটপিট করে সালেহা বেগম এর দিকে তাকাতেই তিনি বলে উঠে
-“এটাই নিয়ম ছেলের বাড়ি আর মেয়ের বাড়ি খুব কাছের মানুষ গুলো বউয়ের মতো সাজে।
আর অন্যদের আলাদা।
এটা সাদনানের দাদির কথা।”
প্রিয়তা কিছু বলে না আর।
ততক্ষণে সারা, মাইশা এসে ওকে স্টেজে নিয়ে আয়নার পাশে বসিয়ে দিয়ে ওরা দুইজন দুই সাইডে বসে পরে।
আর একে একে সবাই এসে হলুদ দিচ্ছে।
প্রথম আয়না কে দ্বিতীয় প্রিয়তা কে।
সাদনান নেই এখানে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো মিতা সওদাগর নিজেও প্রিয়তার গালে হলুদ ছুঁয়ে দেওয়ার সময় ওনার চোখে স্পষ্ট জল ছিল।
এটা কেউ খেয়াল না করলেও প্রিয়তা করেছে।
কিন্তু তার মনি কেন কান্না করছে?
বিয়ে তো আয়না আপুর তবে তাকেই বা কেন সবাই আয়নার সমান সমান হলুদ লাগাচ্ছে?
রাহাতও পাশের একটায় সোফায় বসে আছে। রাহাতের পাশে আয়ান,রাহান,মাইশা দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা কে বাড়ির সব মহিলার হলুদ লাগিয়েছে।
এখন পাড়াপ্রতিবেশি আর কিছু আত্মীয় স্বজনরা লাগাবে।
তাই প্রিয়তা একটু সুযোগ বুঝে সারার কানে ফিসফিস করে বলে উঠে
-“ওয়াশ রুমে যেতে হবে।”
-“আর একটু অপেক্ষা কর প্রায় শেষ।
তুই, আমি চলে গেলে ভাবির অস্বস্তি হবে।”
প্রিয়তা এতোক্ষণে এটা বুঝতে পারলো ওকে আয়নার জন্য এখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
কিন্তু সবাই ওকে কেন আয়নার সমান সমান হলুদ ছোঁয়া দিচ্ছে?
এর মধ্যে প্রিয়তার নজর যায় বাগানে এক সাইডে সাদনান দাঁড়িয়ে কয়েকজন লোকের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।
সাদনানও সবার মতো হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা কটি পরেছে।
কিন্তু অদ্ভুত হলো সবার গুলো কালো শুধু সাদনানের টা সাদা।
এই লোক সব সময় একটা না একটা সাদা পড়বেই হয়তো সার্ট নয়তো প্যান্ট মোদ্দা কথা তার সাদা একটা না একটা পরিহিত থাকবেই।
ইশ,কি সুন্দর লাগছে।
হলুদে আসা কিছু মেয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সাদনান কে। কিন্তু সাদনান সে দিকে কোনো হেলেদুলে নেই।
কিন্তু প্রিয়তার ভীষণ রাগ লাগছে।
মেয়ে গুলো উপর।
কিন্তু হায় আফসোস সে চাইলে কিছু করতে পারবে না আর নাই পারবে বলতে।
এসব ভেবেই প্রিয়তার রাগ মন খারাপে পরিণত হলো।
সে চুপ চাপ সে দিক হতে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
রাত প্রায় দশ টা বাজেতে চলে।
তাই তাড়াতাড়ি হলুদের অনুষ্ঠান শেষে করে।
প্রিয়তা আর আয়না কে সারা মাইশা ওদের রুমে নিয়ে গেলো।
সারা প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে দিয়ে নিজে বাবা মায়ের ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে গেলো।
মাইশা আয়না কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়েছে।
আর ও নিজে তাদের দুই বোনের জন্য কাপড় নিতে আম্বিয়া মির্জার রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
————
সারা ফ্রেশ হয়ে আর উপর নিজের রুমে আসে নি সে নিচে থেকে গিয়েছে।
আর মাইশা কে দিয়ে আম্বিয়া মির্জা দুই টা শাড়ী দিয়েছে।
এগুলো দুই বোন কে দুই টা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সালেহা বেগম একটা শাড়ী রেখে বাড়ি থেকে পড়ে আসা প্রিয়তার ড্রেস গুলো দিয়ে দিলো।
আর এগুলো পড়ে নিচে আসার জন্য বলে।
মাইশা বাধ্য মেয়ের মতো প্রিয়তা কে ড্রেস দিয়ে আয়নার জন্য শাড়ী নিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়তা সে গুলো ওয়াশ রুম থেকে পড়ে বেরিয়ে এসে দেখলো রুমের লাইট অফ।
প্রথম ভাবলো হয়তো কারেন্ট চলে গিয়েছে।
কিন্তু চার পাশ থেকে হাল্কা আলো আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো।
মানে কারেন্ট আছে কিন্তু রুমের আলো নেই।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই কেউ ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসার একটা অবয়ব দেখতে পেলো।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ ভয়ে পেয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো।
কিন্তু ও খুব পরিচিত একটা পারফিউম এর স্মেইল পেলো।
আর এই টা শুধু সাদনানের আশে পাশে থাকলেই পাওয়া যায়।
কিন্তু এই রুমে সাদনান ভাই কি করে আসবে?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝে ব্যক্তি টা ওর একদম নিকটে এসে দাঁড়ালো।
একটা হাত উঁচু করে প্রিয়তার গালে রাখে।
প্রিয়তা ঠান্ডা শক্ত হাতের স্পর্শ মাঝেও ভেজা কিছু অনুভব করলো।
আর সেই শক্ত হাতের মালিক যে সাদনান সেটাও বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
কিন্তু শিওর হতে মিনমিন স্বরে ডাকলো
-“সাদনান ভাই?”
-“হুম।”
সাদনান হাতের সব টা হলুদ গাল হত ঘাড়সহ লাগিয়ে দেয় নিজের ছোট জান’কে।
আর সেটা লাগাতে লাগাতে জবাব দেয়।
প্রিয়তা আবারও অভিযোগের স্বর তুলে বলে উঠে
-“আপনি ছিলেন না তখন।”
-“এখন তো এসছি।”
-“কিন্তু কেন?”
সাদনানের কথা শুনে প্রিয়তা ফটাফট প্রশ্ন করে।
যার উত্তর স্বরূপ সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়
-“হলুদ দিতে।”
-“কিন্তু হলুদ তো আপুর?”
-“না আমার।
কাল সারপ্রাইজ আছে।”
#চলবে…..
[আমি বার বার করে বলছি ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন। আমি আজকের পর আর ইগনোর করতে বলবো না আজ লাস্ট। এর পর নিজ দায়িত্বে পড়বেন। আবার একজন বলছে গল্প টা কফি করছি।তো যে বলছেন কপি তাকে উদ্দেশ্য করে বলছি আগে এটা কোথাও পড়ে থাকলে আমাকে লিংক দেবেন।আমি পড়তে চাই।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]