#আমার_তুমি
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা
-“তোমার পছন্দ আছে?”
-“হ্যাঁ,আমি সময় করে তোমার সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দেবো।”
কালাম খাঁন রাতে খাবার টেবিলে বসে কবির কে জিজ্ঞেস করেছিল মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না? কিন্তু কবির সোজা বলে দিয়েছে পছন্দ হয় নি আর সে এখন বিয়ে করতে চায় না।
কালাম খাঁন ছেলের কথায় চেহারায় চকচক করে উঠে।
ছেলে যেহেতু বলেছে তার মানে কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আর তাই তো গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করে নিলেন উপরোক্ত প্রশ্ন টা।
কবির বাবার প্রশ্নের জবাব দিয়ে কফির মগ টা হাতে নিয়ে উপরে নিজের রুমে উদ্দেশ্য চলে গেলো।
কালাম খাঁন তৎক্ষনাৎ একটু চিন্তিত হলেন।
বন্ধু কে নিজ মুখে বলেছে এখন কি করে বলবে ছেলে রাজি নয় আর তার ছেলের নিজের পছন্দ করা মেয়ে আছে।
মা হারা ছেলে তার তাও আবার এই একটা মাত্র স্ত্রী শেষ চিহ্ন।
সেই ভালোবাসার অংশ কে কি করে কষ্ট দিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে তিনি ফোন হাতে বন্ধু কে কল লাগায়।
————–
মফিজুর মির্জা রাতের খাবার খেয়ে মাত্র রুমে এসছে ঠিক তক্ষুনি ওনার ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে।
তিনি তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গিয়ে বিছানা হতে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো কালাম খাঁন এর ফোন।
তিনি চট করে ভেবে নিলেন হয়তো বিয়ের ব্যাপার কথা এগুবে।
তাই ফোন টা রিসিভ করতেই কালাম খাঁন মলিন কণ্ঠে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
মফিজুর মির্জা একটু চিন্তিত হলেন বন্ধুর কণ্ঠ এমন শোনাল কেন?
-“তোর কিছু হয়েছে?”
-“আসলে কিভাবে বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না।”
-“আরে এতো ভনিতা না করে বলে ফেল।
তুই আমি একই রকম।”
বলেই উচ্চস্বরে হেসে ফেলেন।
সাথে কালাম খাঁন হাসলেন তবে হাসিতে যেনো প্রাণ নেই।
তিনি ইতস্তত ছাড়িয়ে অপরাধী কণ্ঠে বলে উঠে
-“আসলে হয়েছে কি ও না কিছুতেই বিয়ে করতে এখন রাজি হচ্ছে না।”
মফিজুর মির্জা কেমন চুপ হয়ে গেলো যা ওপাশ হতে কালাম খাঁন বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলো কথা কেন বলছে না?
এদিকে মফিজুর মির্জা ভাবছেন এই কথা বাপ, ভাই কে কি করে বলবেন।
কিন্তু অন্তরের কথা অন্তরে রেখে মুখ বলল
-“পছন্দ আছে?”
-“বলল তো তাই।”
-“খুব ভালো।”
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে মফিজুর মির্জা ফোন কাটে।
তার ঠিক মিনিট এর মাথায় সাদনান ওনার রুমে প্রবেশ করে।তিনি কালাম খাঁন এর বলা কথা গুলো সাদনান কে বলেন।
সাদনান মুখ গম্ভীর করে রাখলেও মনে মনে বেশ খুশি।
আর সেই খুশি নিয়ে মনে মনে ভাবে এখনি ঠিক সময় কথা পাতিয়ে ফেলা যাবে।
তাই তো ফট করে প্রশ্ন করে মফিজুর মির্জা কে
-“বাবাই আয়ান কেমন?”
সাদনান সোফায় বসে একটা ম্যাগাজিন উল্টাতে উল্টাতে জিজ্ঞেস করে। সাদনানের এমন প্রশ্নে
তিনি একটু অদ্ভুত নয়নে তাকালো সাদনানের দিকে।
এটার মানে কি?
ছেলে হয়ে আরেক ছেলে কে তার কেমন লাগবে?
তিনি কি মেয়ে নাকি যে অন্য রকম লাগবে?
তবে মনের কথা মনে রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
-“ভালোই তো।
একজন পুরুষ হিসেবে যেমন লাগা দরকার।”
সাদনান মফিজুর মির্জা কথা হো হা করে হেসে দিলো।
দরজা থেকে আরও একজন মহিলার হাসির শব্দও হলো
আর সে টা সুফিয়া বেগম।
তিনি চা নিয়ে এসছে আর এসেই কথা টা কর্নপাত হতেই ফিক করে হেঁসে রুমে প্রবেশ করেন।
দুই মা ছেলের হাসির মানে বুঝতে পারে না মফিজুর মির্জা।
তাই তিনি চা হাতে বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলো দু’জনের দিকেই।
সুফিয়া বেগম চা দিয়ে চলে গেলো আবার।
সে দিকে তাকিয়ে কিছু বিরবির করে মফিজুর মির্জা।
সাদনানের কানে তা পৌঁছায় না।
সাদনান নিজের হাসি কন্ট্রোল এনেই বলে উঠে
-“তুমি তো বললে কবির বিয়ে করতে রাজি না।
আর এটা এখন মাইশা কে বললে ওর হয়তো খারাপ লাগবে।
আর এমনিতেও কয়েক দিন আগে শফিক চাচা তোমার সাথে আয়ান আর মাইশার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিলেন।
কিন্তু কবির খাঁন এর সাথে বিয়ের কথা শুনে আর এগিয়ে আসে নি।
তুমি চাইলে এটা দেখতে পারো।
আর আয়ান কে তো চিনো কেমন ও।”
মফিজুর মির্জা চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে একটু চিন্তিত হলেন।
অতঃপর মাথা ঝাঁকিয়ে আবারও বলে উঠে
-“এটা ঠিক বলেছি।
আমি তো কখনো ভাবি নি এসব।
আচ্ছা বাবা,আর ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখি?”
-“একদম। ”
কথা শেষ করে সাদনান রুমে চলে আসে।
রুমে এসেই দেখলো তার ছোট জান এখনো বইয়ের মাঝে মুখ গুঁজে বসে আছে।
মূলত সাদনান বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
সাথে এত্তো গুলো পড়াও কমপ্লিট করতে বলেছে।
আর এসে সব গুলো পড়া নেবে এটাও বলেছে।
তাই তো প্রিয়তা তখন থেকে বসে আছে কিন্তু এতো কঠিন কঠিন পড়া কি আর মুখস্থ হয়?
কিন্তু প্রাণপণ চেষ্টা সে করে যাচ্ছে।
সাদনান যে তার পেছন এসে দাঁড়িয়েছে সে দিকেও তার খেয়াল নেই।
সাদনান মুচকি হাসলো।
কিন্তু প্রিয়তা ততক্ষণে অনুভব করতে পারছে।
পেছনে তার সুদর্শন ব্যক্তিগত পুরুষ টা অবস্থান করছে।
সাদনান বই টা বন্ধ করে দিয়ে দিলো পেছন হতে হাত দিয়ে।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে তার ছোট জান কে দাঁড় করিয়ে দুই হাতে প্রিয়তার কোমড় জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
এক হাত দিয়ে ডান গালে তর্জনী আঙ্গুল ছুঁয়ে ধীরে কন্ঠে বলে উঠে
-“থালার মতো বড় একটা চাঁদ উঠেছে আকাশে।
বাবাইর রুম থেকে আসার সময় দেখেছি।
কিন্তু আমার কি মনে হয়? উঁহু মনে হয় না সতি ওই চাঁদের চেয়ে আমার ব্যক্তিগাত চাঁদ টা বেশি সুন্দর।
সাদনানের কথায় প্রিয়তা লজ্জা রংধনু রং ধারণ করে।
গালে লাল আভা ফুটে উঠে।
সাদনান সেই গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
-“পরীক্ষা না হলে।
শাস্তি হতো এভাবে পাগলের করার জন্য আর সাথে পাগলামি টা দেখিয়ে দিতাম।”
সাদনান কথা শেষ করে চট করে কোলে তুলে বউ কে।
অতঃপর বিছানায় শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে এসে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের মাঝে তার ছোট জান কে।
প্রিয়তাও গুটিসুটি মেরে সেভাবে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সাথে সাদনান নিজেও।
————
-“রাহান ভাই আপনি এতো রাতে এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছেন?”
সারার প্রশ্নে রাহান একটু চমকাল।আজ সাদনান তাকে বাড়ি যেতে দেয় নি আর সে লিভিং রুমে একটা পিলারের পেছনে
সে তো এই মেয়ে কে দেখতে এখানে দাঁড়িয়ে ছিল।
কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে কখন যে সারা এসে পরেছে টেরই পায় নি।
-“পানি নিতে যাচ্ছিলাম।”
আমতা আমতা করে বলে উঠলো রাহান।
সারা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে বিশ্বাস করে নি।
তাই রাহান ফোন টা পকেটে রেখে ডাইনিং এর দিকে চলে গেলো।
সারাও পেছন পেছন গেলো।
রাহান গিয়ে টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে জগ হতে পানি নিয়ে এক টানে খেয়ে নিলো।
অতঃপর গ্লাস টা টেবিলে রেখে পেছন ফিরতেই সারা কে দুই হাত কোমড়ে রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভয় পেলো।
তবে চেহারায় তা ফুটতে দিলো।
উল্টো নিজে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে
-“কি হয়েছে?”
-“বিশ্বাস হচ্ছে না।”
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল সারা।
রাহান এবার আর কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।
বরং একটু এগিয়ে আসে সারার নিকট।
সামান্য ঝুঁকে আসে সারার মুখের উপর।
অতঃপর খুব শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে
-“ঘুমের জন্য ঔষধ এর প্রয়োজন ছিল আর সেটাই নিতে এসছি।”
#চলবে…..