#আমার_তুমি
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা
আজ সকাল থেকে সওদাগর বাড়িতে রান্না বান্না বেশ আয়োজন করা হচ্ছে।
বাড়ি বড় মেয়ে কে চেয়ারম্যান এর নাতির জন্য দেখতে আসবে।
কিন্তু কোন নাতি এটা প্রিয়তা বুঝতে পারছে না।
আজ দু টি দিন হয় স্কুলও যেতে পারে না।
বাড়ি ঘর ঝাড়ু মুছা করা থেকে শুরু করে সব আসবাবপত্র পরিস্কার করা।
রান্না বান্না সব করার জন্য কাজের লোক আছে।
কিন্তু মিতা সওদাগর কিছুতেই এই দুই দিন ধরে প্রিয়তা কে বাড়ির থেকে বেরুতে দেয় না।
এটা সে টা কাজ করিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে প্রিয়তা বেশ চিন্তা আছে। পাত্র কে হতে পারে?
মির্জা পরিবারে বড় ছেলে মির্জা রাহাত মাহমুদ আর ছোট ছেলে মির্জা সাদনান শাহরিয়া। আচ্ছা আর যাই হোক বাড়ির বড় ছেলে কে রেখে নিশ্চয়ই ছোট ছেলের বিয়ে দেবে না।
এ-সব ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা রেডি হয়ে নেয়।
সুন্দর একটা ফ্রক পড়ে গলায় জর্জেট এর একটা ওড়না পেচিয়ে চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
করিডর দিয়ে যাওয়ার সময় নিচে নজর পড়তেই দেখা মিলে দুই জন মধ্যবয়সী লোক আর এক জন মুরব্বি আর কলো সুট পড়া এক জন ব্যক্তি আর তিন জন মহিলাও আছে।
আর সারা আর ওর ছোট চাচার এক মাত্র মেয়ে মাইশা কে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপর আসছে।
মাইশা ওদের দুই বছরের বড় এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
সারা আর মাইশা উপর এসে দু জনেই প্রিয়তার সাথে কুশল বিনিময় করে আয়নার রুমের দিকে চলে যায়। মাইশা সাথে আছে বলে আর সারা কে জিজ্ঞেস করা হলো না পাত্র কে।অবশ্য প্রিয়তা ভাবে যদি সাদনান মির্জা পাত্র হতো তবে অবশ্যই সারা তাকে জানাতো আর জানাতে না পারলে এতো টা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতো না।
কারণ সারা জানে প্রিয়তা সাদনান কে কি পরিমাণ ভালোবাসে। যদিও সাদনান তা ছোট মানুষ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু হয়তো এক দিন সত্যি তা উপলব্ধি করতে পারবে।
প্রিয়তারা আয়নার রুমে এসে দেখলো
আয়না শুধু শাড়ী পড়ে বসে আছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে একটা টুলে।
প্রিয়তা আয়না কে এভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
-“আপু তুমি রেডি হও নি কেন?
সবাই চলে এসছে।”
বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের উপর হতে ইয়ার রিং জোড়া হাতে নিয়ে তা পড়িয়ে দেয় আয়না কে।
সারা মাইশা দু জনেই চুপ চাপ বিছানায় বসে দেখে যাচ্ছে। ছোট প্রিয়তা কিভাবে তার বড় বোন কে রেডি করে দিচ্ছে।
প্রিয়তা হঠাৎ করে প্রশ্ন করে আয়না কে
-“মন খারাপ?”
আয়না অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো ছোট বোনের দিকে।
টুপ করে গড়িয়ে পড়ে বাম চোখ হতে এক ফোঁটা জল
-“ভাইয়া আসবে না?”
চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করে আয়না।
-“বলেছে তো চলে আসবে।
হয়তো এসে পড়েছে।
প্লিজ লক্ষী আপু কাঁদে না।
আর কাঁদলে চোখের কাজল লেপ্টে তোমাকে ভূত দেখা যাবে।
পরে দেখা যাবে পাত্র মানে দুলাভাই তোমাকে দেখতে এসে না দেখেই পালিয়ে যাবে।”
কথা টা বলতে বলতে হেসে দেয় প্রিয়তা।
পাশ থেকে মাইশা সারাও হাসে।
ঠিক তক্ষুনি কেউ দরজা থেকে বলে উঠে
-“মাশাআল্লাহ।
আমার দুই টা প্রিন্সেস।”
কথা টা বলতে বলতে আয়ান ঘরে ভেতর প্রবেশ করেই বোনদের কপালে আদর করে দিলো।
আয়না জড়িয়ে ধরে আয়ান কে আয়ান ছোট বোনের দিকে নিজের ডান হাত টা বাড়িয়ে দিতেই প্রিয়তাও ঝাপটে জড়িত ধরে বড় ভাই-বোন কে।
কে বলবে এরা দুই মায়ের গর্বে জন্ম?
এদিকে সারা আর মাইশা মুচকি হাসে।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এখানে একজন রমণীর গালে লাল আভা দেখা দিয়েছে।
আয়ান হুট করে নজর পড়ে বিছানায় দুই রমণীর উপর। আয়ান বোনের নিয়ে এতো টাই বিভোর যে এতক্ষণ তাদের নজরেই আসে নি।
কিন্তু এখানে যে তার প্রেয়সীও থাকতে পারে জানা ছিল না।
যাক এক কাজে দুই কাজ হলো।
আয়ান বোনদের ছেড়ে দিয়ে সারা মাইশার সাথে হালকা কথা বলে রুম ত্যাগ করে।
আয়নাও সবার সাথে কথা বলে এখন।এতোক্ষণ মন টা বেচারির বড্ড খারাপ ছিল।
বড় ভাইয়ের আগমনে তা উবে গেলো।
প্রিয়তা আয়নার শাড়ীর কুঁচি গুলো ঠিক করে উঠে দাঁড়াতেই শিউলি এসে বলে গেলো প্রিয়তা কে রান্না ঘরে ডাকছে।
প্রিয়তার মন টা বড্ড খারাপ হলো।
তবে মুখে হাসি রেখে সারা আর মাইশা কে আয়নার রুমে রেখে নিচে যাওয়ার অগ্রসর হয়।
নিচে যেয়ে প্রিয়তা লিভিং রুমে থাকা সব কয়টা মানুষ কে সালাম দিলো।
শফিক সওদাগর পরিচয় করিয়ে দিলো।
বাড়ি ছোট মেয়ে কে।
এক জন মিতা সওদাগরের বয়সী মহিলা ওকে কাছে ডেকে নিয়ে আদর করে দেয়।
প্রিয়তা গিয়েছে অনেক বার মির্জা বাড়ি এটা সাদনানের মা সালেহা বেগম।
কথা বলে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে সালেহা প্রিয়তা কে।
প্রিয়তা সবার সাথে কথা বলে রান্না ঘরে চলে যায়।
প্রিয়তা রান্না ঘরে প্রবেশ করতেই মিতা সওদাগর অনেক গুলো ফল একটা ঝুরিতে প্রিয়তার হাতে দিয়ে বলল
-“এগুলো কেটে নিয়ে বসার ঘরে দিয়ে আসবি।”
হুকুমের স্বরে বলেই তিনি রান্না ঘর থেকে চলে গেলো। প্রিয়তা বটি নিয়ে সে গুলো কাটতে বসে গেলো।
শিউলি থালা বাসন সব গুছিয়ে রাখছে।
একটু আগেই হয়তো খাবার পর্ব শেষ হয়েছে বুঝতে পারলো প্রিয়তা।
খাবার কথা মাথায় আসতেই পেটের ভেতর ক্ষুধা অনুভব করে।
ইস সকালে শুধু লুকিয়ে দুই টা বিস্কিট খেয়েছে।
মনে হতেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ে গেলো।
শিউলি বুঝতে পারে।
এগিয়ে এসে কাঁধে রেখে বলে উঠে
-“তোমার বান্ধবী আছে না ছোট আপা?
সারা না কি জানি।অয় কিন্তু খায় নায়।
বলছে তোমার সাথে খাবে বলে সুন্দরী আপা ডারে লইয়া উপর চলে গেছে।”
প্রিয়তা হতভম্ব। অবাক হয়ে তাকালো শিউলির দিকে।
বিস্ময় চাহনি দিয়ে প্রশ্ন করে শিউলি কে
-“কি বলছো এসব চার টা বাজে এখন।”
-“তো আর কইতাছি কি।”
প্রিয়তা আর কিছু বলে না। শিউলিও নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
আর প্রিয়তা তাড়াহুড়ো সহিতে ফল গুলো কেটে সুন্দর করে সাজিয়ে ট্রেতে করে লিভিং রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসে রান্না ঘর হতে।
এরমধ্যে সাদনানের দাদা দাদি তাগাদা দেয়।
মেয়ে কে নিয়ে আসার জন্য।
প্রিয়তা উপর চলে যায় আয়না কে আনতে পেছন পেছন আয়ানও আসে।
তার পর সারা আর মাইশা দু জনেই আগে নিচে চলে আসে।
আর আয়ানের অসহায় চোখে তাকায় প্রেয়সীর দিকে।
সে তো এসছিল এই মেয়ের সাথে একটু কথা বলার জন্য।
সব জায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছে তার প্রেয়সী তাকে।
অবশ্য রাখবে নাই বা কেন।সে তো করেছেও এমন অপরাধ। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে এমন টা করে নি।এক বার মনে হয় সব দোষ নিজের
তো একবার মনে হয় এই মেয়ে কষ্ট করে একটু মানিয়ে নিলেই তো হয়।
এ-সব ভাবতে ভাবতে আয়ান আয়না কে ধরে নিয়ে নিচে চলে আসে।
রাহাতের দাদি আম্বিয়া মির্জা তিনি তার পাশে বসিয়ে মুচকি হেসে এটা সে টা জিজ্ঞেস করে আয়না কে।
সবাই কথাবার্তা বলে আয়নার সাথে।
কিন্তু প্রিয়তা ভাবছে।
অন্য কথা সাদনান ভাই কেন আসে নি?
ওনি কোথায়?
প্রিয়তা ভাবনার মাঝেই রাহান সহ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সাদনান।
সাদনান কে দেখেই প্রিয়তার বুকের ভিতর ধক করে উঠে। সাদা সার্ট চুল গুলো এলোমেলো। মুখে ক্লান্তির ছাপ।এই লোক টা এতো সুন্দর কেন? প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই
সালেহা বেগম গিয়ে ছেলের গালে হাত রেখে আহ্লাদী কণ্ঠে বলে উঠে
-“কি দরকার ছিল এতো টা পথ জার্নি করে এখানে আসার?
কাল সকালেও আসা যেতো।”
সাদনান মাকে আশ্বাস দিয়ে ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানায়
-“আমি ঠিক আছি।
তবে একটু ফ্রেশ হতে পারলে ভালো হতো।”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]