#আমার_তুমি
#পর্ব_৩০[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
-“আপনার মনে হয়নি আপনি আমাকে অবহেলা টা বেশি করেন?
আর আমি অনেক বার বলেছি স্টিভ এর সাথে আমার কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই। জাস্ট ফ,,,,
-“মিথ্যা বলা শেষ হয়েছে?
তবে আমি ওই দিন যা দেখেছি সেটা কি?”
-“আমি মিথ্যা বলছি না ওয়াজিদ।
কখনো কখনো চোখের দেখার মাঝেও ভুল হয়।”
কথা টা শেষ করেই রিধি ফোন টা কেটে দিলো।কি দরকার বার বার নিজে কে ছোট করার?
তারচেয়ে ঢেরবেশি ভালো মা বাবার পছন্দ মতো ছেলে কে বিয়ে করে নিবে এবার দেশে যাবে।
রিধি চোখের পানি গুলো একটু পর পর হাত দিয়ে মুছে যাচ্ছে। কিন্তু এতে একফোঁ টা লাভ হচ্ছে না।এই অবাধ্য চোখ জোরা থেকে অঝর দ্বারা জল পরছে।
রিধি মেঝে থেকে উঠে বিছানায় বসে। ওর শরীর বিন্দু পরিমাণ শক্তি পাচ্ছে না। শরীর এর ব্যাথার থেকে যে মনের ব্যাথার বেশি ভারি।
রিধি সুইচ টিপে লাইট টা অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।
আর মনে পড়ে যায় আজ থেকে মাসখানেক আগের একটা ঘটনা।
সে দিন অফিস বন্ধ ছিল রিধির। রিধি একটা জব করে।সেখানের একটা রিধির খুব ভালো ছেলে বন্ধু আছে।
ওয়াজিদ ডক্টর হওয়াতে ওদের বেশি একটা দেখা সাক্ষাৎ হতো না তবে ফোনে সব সময় কথা হতো।সে দিন রিধির অফিস বন্ধ ওয়াজিদ তাই রিধির সাথে দেখা করবে বলে। রিধি রাজি হয়।কিন্তু রিধি ওয়াজিদ এর লোকেশান অনুযায়ী সেখানে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায়।তবে বাঁধ সাধে রাস্তায়।রিধির বন্ধু স্টিভ রিধি কে বলে ওর গার্লফ্রেন্ড কে গিফট দিবে তাই রিধি যেনো একটা কিছু পছন্দ করে দেয়।
রিধি রাজি হয়ে যায়। বেশি সময় তো আর লাগবে না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ওরা যেই রেস্টুরেন্টে এ দেখা করার কথা ওরা সেখানের একটা শপিংমল যায়।
আর সেখানে ওয়াজিদ রিধির জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু রিধি ওয়াজিদ কে দেখে নি ওয়াজিদ ঠিকই রিধি কে দেখে ছিল আর ওয়াজিদ ভেবেছে রিধি তাকে ঠকাচ্ছে। তাই সে দিন রিধির সাথে প্রচন্ড ঝগড়া করে তবে রিধি কে কিছু বলতে দেয় আর না রিধির কোনো কথা ওয়াজিদ শুনেছে।
শুনবে কি করে রিধি যে সত্যি আরও একবার দেশে থাকা কালিন অবস্থায় এমন একটা ঘটনা করে ছিল।এবারের ঘটনা মিথ্যা হলেও সেবারের ঘটনা সত্যি ছিল। আর এবারের সত্যি কি ওয়াজিদ কোনো দিন জানতে চাইবে?
এদিকে ওয়াজিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিধির ছবির দিকে।এটা ইতালির একটা রেস্টুরেন্টে যেখানে রিধি শাড়ী পড়ে একটা দোলনায় বসে আছে আর ওয়াজিদ পাশে বসে রিধির দিকে তাকিয়ে আছে। ছবি টা ক্লিক করেছে ওয়াজিদ এর সেখানকার এক ফ্রেন্ড। ছবি টা ছয় সাত মাস আগের হবে।
তখনো তো সে সব পুরনো সৃতি ভুলে আবার নতুন করে বাঁচতে চেয়ে ছিল তবে কেন রিধি সেই একই কাজ আবার করলো?
কেন আগের মতো ওকে ঠাকলো?
দু’টি মনে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন কিন্তু প্রশ্নের উত্তর গুলো কি এক?
———–
সাদনান আজ শপথ বাক্য পাঠ করতে যাবে। আজ তাকে সরকারের পক্ষে হতে পুরো সিকিউরিটি সাথে সব দায়িত্ব দেওয়া হবে
সাদনান শোয়া থেকে উঠে বসে। সকাল ছয় টা বাজে এখন প্রিয়তা নামাজ শেষ আবার ঘুমিয়েছ সাদনান নিজেও প্রিয়তার সাথে নামাজ পড়েছে। কিন্তু সে আর ঘুমায় নি মুলত ঘুম আসছে না।
সাদনান এক পলক প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। বহু দিন হয় নিজের হাতে কফি করে খাওয়া হয় না। বউয়ের হাতে খায় কিন্তু আজ নিজে হাতে বানিয়ে বউ কে খাওয়াবে।
সাদনান নিচে এসে দেখলো লিভিং রুমে সোফায় আম্বিয়া মির্জা বসে আছে। ওনার হাতে চা।
বাড়ির কেউ এখনো উঠে নি শুধু কাজ লোকেরা উঠেছে।
সাদনান লিভিং রুম হতে রান্না ঘর সব চোখ বুলিয়ে নিলো। রান্না ঘরে কেউ নেই ডাইনিং টেবিলে দুইজন কাজের লোক কিছু করছে। সাদনান সব পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
-“দাদু ভাই কোথায় যাচ্ছো?
কফি লাগবে তুমি বসো আমি কাউ কে বলছি।”
আম্বিয়া মির্জা সাদনান কে দেখে বলে উঠে।
সাদনান মুচকি হেঁসে মাথা নেড়ে বলল
-“না দাদি।
কাউ কে বলতে হবে না। আমি করে নিচ্ছি।”
আম্বিয়া মির্জা আর কিছু বলে না।এটা নতুন নয় সাদনান আগে প্রায়শই নিজের কাজ নিজে করে। পড়া লেখার সুবাদে বাড়ির বাহিরে থেকেছে নিজের রান্না বান্না কাপড় ধোঁয়া আর সেই থেকে নিজের কাজ নিজে করে।
তিনি চা চুমুক বসায়।সাদনান মিনিট পাঁচ এক পর ফিরে এলো হাতে দুই টা কফির মগ। আম্বিয়া মির্জা যা দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলেন তিনি কফি খায় না।তবে নাতি কার জন্য কফি বানিয়েছে?
তিনি কিছু বলবে তার আগেই সাদনান কফি নিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে আসে।
প্রিয়তা তখন সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে বসছে।গায়ে সাদা একটা কুর্তি ওড়না পাশেই রাখা।চুল গুলো হাল্কা ভেজা প্রিয়তা আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে ঘড়ির দিকে তাকায়।সাড়ে ছয় টা বাজে এখন নিচে যেতে হবে নয়তো দাদি আবার কি করে বসে আল্লাহ মালুম। প্রিয়তা গায়ে ওড়না জড়াতে যাবে তখুনি একটা গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো
-“ওড়না পড়তে হবে না।
শাড়ী পড়ার কথা ছিল? ”
-“রাতে পড়ে ছিলাম।
আর এখন তো বাহিরে যেতে হবে আপনি নিজে তো না করেছেন বাহিরে শাড়ী পড়ে ন,,,,
প্রিয়তা সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না। তার আগেই সাদনান কফির মগ রেখে এগিয়ে এসে প্রিয়তা কে নিজের কাছে টেনে নেয়।
চুল গুলো নিজের ডান হাত দিয়ে গুছিয়ে দিতে দিতে বলল
-“হুম।
কিন্তু তুমি চাইলে এখন পড়তে পারতে।”
-“এখন তো নিচে যেতে হবে।”
-“রাতে ফিরতে দেরী হবে।”
-“অপেক্ষা করবো।”
সাদনান এর কথার বিপরীতে জানায় প্রিয়তা।
সাদনান মুচকি হেঁসে এগিয়ে যায় সেন্টার টেবিলের দিকে।
এক টা কফির মগ প্রিয়তার হাতে দিয়ে আরেক টা নিজে হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়।
সূর্য মামা লাল আভা ফুটিয়ে উঠে এসছে অনেক টা দেখতে দারুণ লাগছে।
সাদনান মেঝেতে বসে প্রিয়তা কেও টেনে কোলে বসাল।
দু’জনে চুপচাপ বসে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।
————-
-“এই মেয়ে একা একা এখানে কি করছো?”
সারা আকস্মিক রাহানের কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো।তবে নিজে কে সামলে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ঘুরালো চার দিকে।
বেশ কয় টা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গেইট এর বাহিরে সাথে অনেক গুলো বাইক।
সারা’র চঞ্চল মস্তিষ্ক খুব দ্রুত বুঝে গেলো এগুলো তার ভাইয়ের সাথে যাবে আজ।
সারা ওড়না দ্বারা চট করে নিজের মাথা সহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নিলো।
সারার এখানে আসার কোনো যুক্তিগত কারণ নেই এমন-ই হাঁটতে হাঁটতে বাগানে এসে কখন যে বসে পড়েছে সে দিকে খেয়াল নেই।
না, কারণ আছে এই রাহান ভাই কে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তো এমন অবস্থা হলো।
সে দিন রাতের পর আজ দেখা হলো তাদের।রাহান একটা কালো শার্ট পড়ে আছে। সাথে কালো প্যান্ট মুখে ছোট ছোট দাঁড়ি, চুল গুলো অর্ধেক কপালে পড়ে আছে দেখতে দারুণ লাগছে। সারা’র ইচ্ছে করলো চুল গুলো নিজের হাত দ্বারা গুছিয়ে দিতে।কিন্তু সারা’র ইচ্ছে মনেই রয়ে গেলো আর রাহাম
সারা’র ভাবনার মাঝেই ধমকের স্বরে বলল
-“এই মেয়ে এক্ষুনি ভেতরে যাবে।”
-“যাচ্ছি তো।
এভাবে বলার কি আছে।”
সারা শেষ এর কথা টা বিরবির করে বলে।
যা রাহানের কানে যায় না।
রাহান মুচকি হাসে হয়তো প্রেয়সীর কথা না শুনলেও মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে মনে কি চলছে।
#চলবে…..