#আমার_তুমি
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা
-“জানিস কবির খাঁন আমাদের আর ক্লাস নেবে না।
even আমাদের কোনো ক্লাস এ নিবে না।”
ক্লাস এ সারা আর প্রিয়তা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মেয়ে খুশি খুশি মনে কথা গুলো সমালোচনা করতে শোনা গেলো।
সারা নির্বিকার। সে গিয়ে দ্বিতীয় সারির তে টেবিলে বসে পড়ে।
প্রিয়তা অবাক হয়।
এই মেয়ে গুলোই কয়েক মাস আগে কবির স্যার নতুন আসাতে কি খুশিই না ছিল।
আর এখন চলে যাওয়াতেও এতটা খুশি?
এই মেয়ে গুলো গিরগিটির মতো।
গিরগিটী যেমন রঙ পরিবর্তন করতে সময় লাগে না কিছু কিছু মানুষও ঠিক এমন সময় সময় নিজেদের রূপ দেখায়।
প্রিয়তা বেশি আর ভাবে না সারার পাশে গিয়ে বসে পড়ে আর ম্যাম ক্লাস এ এলে ক্লাসে মনোযোগী হয়।
কিন্তু মাথায় ঘুরছে কবির স্যার কেন আর ক্লাস নেবে না?
—————–
কবির খাঁন চার মাস আগে প্রিয়তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসছে।
তিনি সাইন্স এর শিক্ষক তাই তাদের Higher math ক্লাস টা নিতো।
দেখতে যেমন মাশাআল্লাহ ঠিক তার রাগ আর ব্রিলিয়ান্টও তেমন যাকে এক কথায় বলা চলে পারফেক্ট।
কিন্তু তার রাগের আর অত্যাচারের কারণেই কয়েক মাসেই মেয়েদের মন তিক্ততায় ভরে গিয়েছে।
কিন্তু সব মেয়েদের সাথে খারাপ আর রূঢ়ভাবে কথা বললেও প্রিয়তা আর সারা’র সাথে বেশ সুন্দর করে কথা বলতো নিজ থেকে এটা সেটা বুঝিয়ে দিতো।
কিন্তু হঠাৎ ওই দিন কেন কবির খাঁন এমন করলো প্রিয়তা বা সারা কারোর মস্তিষ্ক উত্তর তৈরি করতে পারে না।
———-
স্কুল ছুটির পর প্রিয়তা আর সারা দুজনেই ব্যাগ গুছিয়ে সবার লাস্ট ক্লাস হতে বেরিয়ে আসে।
কম বেশি সবাই চলে গিয়েছে। শুধু কয়েকজন বাদে।
ওদের ক্লাস দোতলায় আর আসার সময় স্যার দের কেবিনের সামনে দিয়ে আসতে হয়।
সারা আর প্রিয়তা টুকটাক কথা বলতে বলতে উপর থেকে নেমে স্যার দের লাইব্রেরীর সামনে আসার পর হঠাৎ করে সামনে এসে কবির স্যার দাঁড়িয়ে যাওয়াতে দুই জনেই আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠে।
তবে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।প্রিয়তা ভয় পাচ্ছে। এটা ভেবে যদি স্যার আবার তাকে মারে।
আর সারা রাগে ফুঁসছে কিন্তু স্যার বলে কিছু বলতে পারছে না তাই মাথা নুইয়ে দু’জনে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ চাপ।
যা দেখে সামনে দাঁড়ানো কবির খাঁন মলিন হাসে।
সে কেন পারে না এই মেয়ে টার সামনে এলে নিজে কে সামলাতে?
কাল তো রাগে অভিমান এতো গুলো স্টিলের স্কিল দিয়ে হাতে ইচ্ছে মতো মারলো।
কিন্তু এই মেয়ে কি তার রাগ, অভিমান সম্পর্কে মোটেও অবগত? এসবের ছিটে ফোঁটাও কিছু জানে।কিন্তু কবিরের নিজেরই বা কি দোষ ওই দিন যখন সাদনানের সঙ্গে কথা বলছিল আর সারা দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল তখন কবির সেখান দিয়ে যাচ্ছিল আর সব টা দেখার পর তক্ষুনি সন্দেহ হয়ে ছিল নিজের মনে।
আর যখন একটা ছেলে কে দিয়ে খুঁজ নিলো তখন সত্যি তার সন্দেহ ঠিক হলো।
প্রিয়তা সাদনান কে ভালোবাসে।
আর এটা জানার পর কেন জানি রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারে নি।
কবির এক দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা মাথা নিচু করে থাকলেও তার দৃষ্টি সামনে দাঁড়ানো মেরুন রং এর সার্ট পড়ে কলো সুট তার উপর জড়িয়ে রাখা মানবটার ডান হাতের দিকে।
সবার ভাবনার তেরো টা বাজিয়ে সারা কবির খাঁন কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে উঠে
-“স্যার আমরা কি যেতে পারি?”
-“হ,হ্যাঁ।
আসলে কাল একটু বেশি হয়েছে। তার জন্য সরি।”
কবির খাঁন একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে আমতা আমতা করে উত্তর দেয়।
কবির খাঁনের মুখে এমন কথা শোনে সারা, প্রিয়তা দুজনেই অবাক হয়ে একে অপরের মুখে চাওয়া চাই করে।
-“ঠিক বুঝতে পারি নি স্যার? ”
সারা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে।
কবির খাঁন আঁড়চোখে একবার প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে
অপরাধী ভঙ্গিতে বলে উঠে
-“আসলে আমি প্রিয়তা কে বলছি।
সরি আমি কাল ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি।”
-“না না স্যার কোনো ব্যাপার না।
তাছাড়া আপনি গুরুজন শিক্ষক বাবার সমতুল্যা আপনারাই তো আমরা ভুল করলে শাসন করবেন,আবার ভুল শুধরেও দেবেন।”
প্রিয়তার মুখে “বাবার মতো” কথা টা শোনে কবির অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তা দিকে।
এই মেয়ে তাকে ডিরেক্ট বাবার আসনে বসিয়ে দিলো?
কবির স্যার একটু তাড়াহুড়ো সহিতে পা চালিয়ে যেতে বলে উঠে
-“পাঁচ টা বেজে যাচ্ছে।
বাসায় চলে যাও।”
কথা টা বলেই কবির খাঁন চলে যায়।
সারা আর প্রিয়তা দু’জনেই স্কুলে আঙিনা থেকে বেড়িয়ে এসে রাস্তায় বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।
হাঁটতে হাঁটতে দু’জনই খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে আলোচনা করছে তাদের মুখ দেখে যে কেও অনায়েসে বলে দিতে পারবে।
এ-র মধ্যেই কিছু মনে পড়ার মতো করে প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে সারা কে জিজ্ঞেস করে
-“দুই স্যার’র হাত খেয়াল করেছিস?”
-“আমার খেয়ে কাজ নেই।
এখন স্যার হাত, পা খুঁজতে যাব?”
মুখ ভেংচি কেটে জবাব দেয় সারা।
প্রিয়তা এবার একটু সিরিয়াস মুড এনে গম্ভীর কণ্ঠে বলে
-“স্যার’র ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা ছিল।”
-“কি বলছিস?”
অবাক হয়ে জোরে বলে উঠে সারা।
প্রিয়তা স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়
-“হুম সত্যি।
-“আমি কিছুর গন্ধ পাচ্ছি।
সাবধানে থাকবি।”
এদের কথার মাঝেই দুই টা বাইক এসে ওদের সামনে থামে।
একটায় সাদনান অপরটায় রাহান।
সাদনান আজও একটা সাদা টি-শার্ট পড়ে আছে।দেখতে মাশাআল্লাহ ফর্সা ত্বকে মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল মুখ ভর্তি চাপ দাঁড়ি, সরু নাক তার ঠিক নিচে সিগারেটে পোড়া ঠোঁট। পরক্ষনেই প্রিয়তা নিজের এসব আজে বাজে চিন্তা ভেবে নিজেই লজ্জা পায়।কিন্তু একটা কথা তবুও মনে কোথা থেকে যেনো বলে উঠে
ইস এই মানুষ টা এতো কেন সুন্দর?
আচ্ছা আমাকে কি ওনার পাশে সত্যি মানাবে?
প্রিয়তা আবার ভাবে কেন আমি দেখতে ততটাও খারাপ নয়।
পাঁচ ফিটে্র বেশি লম্বা।
গায়ের রঙ টা অতোটা ফর্সা নয়।কিন্তু চেয়ারায় আলাদা একটা মায়া আছে আর সাথে আছে সুন্দর ভালো এক টা মন।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে হুকুমের স্বরে বলে উঠে
-“তাড়াতাড়ি উঠে বস।”
-“তুই বরং ভ,,
-“বেশি বকবক করিস না।”
রাহান কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু সাদনানের ধমকে আর সব টা বলা হয় না।
-“আমরা কি কোথাও যাব ভাইয়া?”
-“হ্যাঁ।
রাহাত ভাই আয়না আপু কে নিয়ে আসছে।
সাথে আমাদেরও যেতে বলেছে।”
সারা প্রশ্নের উত্তরে বলে উঠে রাহান।
সারা বিরক্ত হয়।
এই লোক সব সময় ভাইয়া বলে প্রশ্ন করলেই উত্তর নিজের মুখে রেডি রাখে।
আচ্ছা ওনি কি সত্যি কিছু বুঝতে পারে না?
সারা’র ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা বলে উঠে
-“আমি যাব না।
বাড়ি যেতে দেরী হলে মনি চিন্তা করবে।”
-“তোমার মনির কাছে পারমিশন নেওয়া হয়েছে।
আর তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমার আপু ওখানে আছে।”
-“সারা আমার বাইক যাক?”
-“নাহ আমার সাথে যাবে।
আয়ান মোড়ের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে প্রিয়তা আয়ানের বাইকে যাবে।”
রাহানের হাসি হাসি মুখ টা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে।
সে তো জানে প্রিয়তা কে কিছুতেই সাদনান তার বাইকে উঠতে দেবে না।
তাই লাস্ট একটা আশা ছিল।
কিন্তু সেটায়ও বেট্টা আয়ান বাগাড় দিয়ে দিলো।
নিজে তো ঠিক লাইন মা’রে মাইশার সাথে।
রাহানের বিষাদময় মুখ টা আবারও চকচক করে উঠে সাদনানের কথা শুনে
-“কিন্তু আপাতত তুই সারা কে নিয়ে যা।
আমি আসছি ওকে নিয়ে।”
কেউ আর কিছু বলে না সারা গিয়ে চুপ চাপ রাহানের পাশে বসে পড়ে।
আর প্রিয়তা সাদনানের।
-“ধরে বসো।”
সাদনান বলে উঠে।
প্রিয়তা সুন্দর করে এক হাত সাদনানের কাঁধে রেখে সুন্দর করে ধরে বসে।
ওরা রেস্টুরেন্টে এসছে।
বাইক থামিয়ে রাস্তায় আয়ানের দেখা মিলে নি।
এতে অবশ্য অনেকের ভালো হয়েছে কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করে নি কেউ।
সবাই দোতলায় রেস্টুরেন্টে এর ভিতর বসে আছে মাইশা সহ রাহাত,আয়না।
ওরা মোট দুই টা টেবিলে বসে।
কিন্তু রাহাত আর আয়নার প্রাইভেসি দিতে ওদের আলাদা একটা কর্নারে টেবিলে বসিয়েছে।
সাদনানের ঠিক বরাবর প্রিয়তা।
রাহান সারও পাশা পাশি।
মাইশা, আয়ানও টেবিলের এপার ওপার বসছে।
তার পর সবাই আড্ডা দিয়ে খাবার খেয়ে রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরে।
এ-র মধ্যে সাদনান একবারও প্রিয়তার সাথে আর কথা বলে নি।
শুধু রেস্টুরেন্টে প্রিয়তা যখন খাবার খাচ্ছিল তখন খাবার টা একটু ঝাল ছিল তাই সে একটু পর পর পানি খাচ্ছিল।তখন একবার জিজ্ঞেস করেছিল খাবার কি বেশি ঝাল ব্যস আর কিছু না।
প্রিয়তা চুপ করে ছিল আসলে খাবার ঝাল নয়।
কিন্তু সকালে মিতা সওদাগর ওকে থাপ্পড় মেরেছিল আর দাঁতের সাথে লেগে তখন ঠোঁটের নিচে কিছু টা অংশ কেটে গিয়েছে।
কিন্তু ওর চুপ করে থাকা দেখে সাদনান ভ্রু কুঁচকে ওয়াটার ডেকে আইসক্রিম এনে দিয়ে ছিল।
প্রিয়তা এতেই ভীষণ খুশি।
যাক তার বড় ভাই বোনের পরে তাকে কেউ একটু খেয়াল রাখে।
আচ্ছা এই খেয়াল রাখা টা যদি সব সময় সবার আগে সাদনান ভাই করে এতে কি বেশি ক্ষতি হতো?
প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই মিতা সওদাগর হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে প্রিয়তার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে।
চুল গুলো মুঠোয় পুরে টেনে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠে
-“তোর মা আমার সংসার কালনাগিনী হয়ে এসে আমার সোনার সংসার, এতো ভালো স্বামী সব কেড়ে নিয়ে ছিল।
আর এখন তুই আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাইছি?”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]