আমার_তুমি #পর্ব_২৩[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ] #জান্নাত_সুলতানা

0
378

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৩[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“মানে?”

সারা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
রাহান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়

-“মানে সারা দিন খারাপ লাগছিল।
এখন সব ঠিক আছে।”

সারা কুঁচকানো ভ্রু জোড়া শীতল হলো।
এ-র মধ্যে সুফিয়া বেগম এসে রাহান কে ফ্রেশ হতে বলে।
রাহান সারার দিকে এক পলক তাকিয়ে গেস্ট রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো। সারাও চলে গেলো।
সাড়ে আটটা বাজতে চলে সবাই চলে আসার সময় হয়েছে।
তাই সুফিয়া বেগম কাজের লোক নিয়ে খাবার দাবার গুছিয়ে নিতে লাগলো।

———-

রাতে খাবার শেষ সাদনান রুমে চলে আসে।
মিনিট দশ এক পর প্রিয়তাও কফি হাতে রুমে আসে। সাদনান তখন ল্যাপটপ কোলে রেখে সোফায় বসে কাজ করছে।
প্রিয়তা কফির মগ টা সাদনানের সামনে সেন্টার টেবিলে রেখে দেয়।
সাদনান এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে কফির মগ টা হাতে তুলে সেটায় চুমুক বসায়।
প্রিয়তা তখনো দাঁড়িয়ে আছে সেভাবেই।
সাদনান বুঝতে পারে বউয়ের মন খারাপ যদিও তেমন কিছু হয় নি দাদি প্রিয়তার সাথে কথা বলে না।
এমনি কি খাবার টেবিলেও বা আজ্জম মির্জা, জাফর মির্জা কারোর সঙ্গে সন্ধ্যার বিষয়ে কথা বলে নি। তার হঠাৎ চুপ করে যাওয়ার কারণ প্রিয়তা বুঝতে পারে নি।
কিন্তু সাদনান এর এসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর ঘটে নি।সে স্বাভাবিক যেনো সন্ধ্যা কথা সে ভুলে গিয়েছে বা এমন কিছু হয় নি।
তার কারণ টা জানার জন্য প্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে সাদনান বুঝতে পেরে একটু অন্যমনস্ক হয়ে সন্ধ্যা দাদির সাথে বলা কিছু কথা মনে পড়ে। দাদির তার এমন নয় সে জানে আর হঠাৎ পরিবর্তন টার মানে বুঝতে পারে নি।
তিনি আগের দিনের মানুষ সেই সুবাধে ওনার ভাষ্যমতে বউ তো বউ স্বামী সংসার সামলাবে। সে কেন বাড়ির বাহিরে রংঢং করে ঘুরে বেড়াবে?
সাদনান এর কানে আগেও এই কথা গুলো এসেছে দাদি প্রিয়তা কে বলেছে কিন্তু সে সব সূত্র ধরে কিছু বলে নি কিন্তু দাদি আজ নিজেও সাদনান এর সাথে এসব নিয়ে কথা তুলেছে।
সাদনান কিছু বলে নি।
চুপ করে দাদির অভিযোগ শুনেছে সর্বশেষ তার একটাই প্রশ্ন ছিল প্রিয়তার জায়গায় যদি সারা বা মাইশা হতো তবে কি তিনি এমন করতো?
আম্বিয়া মির্জা তখন নিশ্চুপ ছিলেন।
সত্যিই তো কিন্তু তিনি উত্তর দেয় নি শুধু জবাবে বলেছে তিনি মানিয়ে নিতে চেষ্টা করবে।

-“দাদি আজ কথা বলে নি।”

প্রিয়তার কথায় সাদনান ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।
সে তো বেমালুম ভুলে বসে ছিল বউ তার সামনে দাঁড়িয়ে।
কিন্তু নিজে কে যথাসম্ভব শান্ত রেখে কোলে হতে ল্যাপটপ নামিয়ে পাশে সোফায় রাখে।
প্রিয়তার হাত টেনে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় সাদনান।
প্রিয়তা হাল্কা কেঁপে উঠল। ভড়কালো হকচকিয়ে সাদনান এর শুভ্র রঙের পাতলা সার্ট এর বুকের কাছ টায় খামচে ধরে।
সাদনান হাসলো আরও কিছু টা প্রিয়তার ছোট দেহ খানার কোমড় নিজের শক্ত হাতের মাঝে আরও শক্ত করে চেপে ধরে।
সাদনান প্রিয়তার চোখ বন্ধ দেখে মৃদু কণ্ঠে বলল

-“চোখ খুলো।”

প্রিয়তা তাড়াতাড়ি মাথা ঝাঁকিয়ে মিনমিন করে জানালো

-“আপনি অন্য দিকে তাকান।”

-“পাঁচ মাসের বেশি সময় হতে চলে।
এখনো এমন টা মোটেও আশানুরূপ আচরণ নয় মিসেস সাদনান।”

সাদনান এর এমন গম্ভীর কণ্ঠে বাণী প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে সাদনান এর চাপ দাঁড়ি ভর্তি সুন্দর সুশ্রী মুখপানে তাকালো।
আর অমনি প্রিয়তার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।
এতো সুন্দর হতে কে বলেছে এই লোক কে?
যা পড়ে এতেই ভীষণ সুন্দর লাগে।
প্রিয়তা আনমনেই সাদনানের কপালে পড়া থাকা এলোমেলো চুল গুলো নিজের হাতের সাহায্য ঠেলে পেছনে দিয়ে দেয়।
সাদনান আচমকাই প্রিয়তার হাত টা ধরে ফেলে।
প্রিয়তা আবার মাথা নুইয়ে নিলো।
সাদনান প্রিয়তার হাত টা নিজের গালে রাখে।

-“এই হাত দু’টো দিয়ে শুধু আমাকে ভালোবাসা হবে।
মনে থাকবে?”

-“আপনার কাজ ঠিক মতো হলেই তো হলো।”

-“সংসার করার জন্য সারাজীবন পরে আছে।
বিশেষ করে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত বাসায় থাকবো ততক্ষণ আমার সামনে থাকবে।
তার মানে এটা নয় আমি না থাকলে তুমি একা সব কাজ করবে।”

প্রিয়তা কিছু বলে না।
শুধু আগের ন্যায় মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয় যার মানে আচ্ছা।
সাদনানের মন ভরে না বউয়ের এমন মাথা নুইয়ে বসা থাকায় মুখ টা ঠিক স্পষ্ট নয়।
সাদনান প্রিয়তার মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে কিন্তু এতেও যেনো মন ভরে না।
আরও কিছু হলে ভালো হয়।
ভাবে না সাদনান আর কিছু। মূহুর্তের মাঝে বউয়ের ওষ্ঠ জোড়া নিজের ওষ্ঠ দিয়ে চেপে ধরে ভালোবাসা দিতে থাকে।
প্রিয়তাও সাথে তাল মেলায়।সাথে সাদনানের হাতের অবাধ্য স্পর্শ তো আছেই।যা বড্ড জ্বালাচ্ছে প্রিয়তা কে। সাদনান অনেক টা সময় নিয়ে প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা প্রিয়তার ঠোঁট মুছে দেয়।
প্রিয়তা ছাড়া পেয়ে যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে। পিটপিট করে চোখ তুলে সাদনান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে সাদনান এর কোল হতে।
অতঃপর আলমারি খোলে সেখান থেকে রাতের পোষাক নামিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তা ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
সারা দিন মোটামুটি ভালোই খাটাখাটুনি হয়েছে তাই বিছানায় শোয়া মাত্রই নিদ্রা ভর করে।
সাদনান বেশ অনেক টা সময় পর নিজের সব কাজ শেষ ওয়াশ রুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে বউ কে টেনে নিজের বুকের উপর এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
প্রিয়তাও ঘুমের ঘোরে সাদনান এর বুকের মাঝে বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিয়ে গেলো।
সাদনান হাসলো যেই হাসিতে কোনো বিষাদ নেই আছে শুধু সুখ।

————

ভোট প্রচারণা চলছে।
সেই সাথে চলছে সাদনান এর ব্যস্ততা।
আর তিন দিন পর ভোট তাই ভীষণ গরম এলাকা।আজ কের পর ভোট প্রচারণা বন্ধ কাল থেকে তাই সাদনান আজ ভোট প্রচারণা বেড়িয়েছে সাথে ছিলেন ওয়াসিফ দেওয়ান।
আর অন্য দিকে গিয়েছে আজ্জম মির্জা জাফর মির্জা কোথাও যায় নি।
বয়স হয়েছে কিন্তু দেখতে এখনো জোয়ান।
কিন্তু দেখতে জেয়ান হলেও শরীর তার মেহনত সাথে হাঁটা চল করতে গেলে সেটা ধরা পরে।একটুতেই হাঁপিয়ে যায়।
তাই তিনি আজ পার্টি অফিস রয়ে গিয়েছে।

——————-

কবির তিন্নির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল

-“রেডি হয়ে এসো।”

তিন্নি খাবার শেষ মাত্র রুমে এসছে এর মধ্যে কবির রুমে আসে।
তিন্নি কবির এর এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে আসে।
কিন্তু নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে প্রশ্ন করলো

-“কি এটা?”

-“নিজে দেখে নাও।”

কথা শেষ কবির চলে গেলো।
তিন্নি প্যাকেট থেকে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের একটা পাতলা শাড়ী বেড় করে।
যেটা দেখে তিন্নির মুখ হা হয়ে গেলো।
এটা তো ওই দিন কবির শপিংমল থেকে নিয়ে ছিল।
তিন্নি তখন অতো খেয়াল করে নি শাড়ী টা এতো পাতলা তবে ওর এটা ভালো লেগে ছিল।
কিন্তু এতো পাতলা হবে বুঝতে পারলে সে কক্ষনও এটার দিকে তাকাতো না।
আর ও না তাকাতো আর না কবির এর দৃষ্টি ওটায় যেতো আর না আজ শাড়ী টা ওর হাতে আসতো আর না পড়তে হতো।
কিন্তু এখন কি করার কবির একবার যখন দিয়ে দিয়েছে তখন এটা পড়তেই হবে কিছু করার নেই।
তার কারণ কবির যা বলে তার উল্টো হলে সে ভীষণ রেগে যায়।
এটা তিন্নি জানে তার কারণ কলেজে বহুবার দেখেছে কবির এর রূপ।
তিন্নি এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে ওয়াশ রুম থেকে শাড়ী টা পড়ে আসে।
সে এই কয়েক মাসে শাড়ী পড়া টা বেশ শিখে নিয়েছে।
তার কারণও অবশ্য কবির প্রায়শই তিন্নির নিকট আবদার জুড়ে যেনো কবির এর ছুটির দিনে তিন্নি শাড়ী পড়ে।
তিন্নি মেনে নিয়েছে তার ভীষণ ভালো লাগে কবির এর এসব ছোট ছোট আবদার গুলো।
এই যেমন হুটহাট তিন্নির হাতে খাবার খেতে চাওয়া কলেজ থেকে আসার সময় এটা সেটা নিয়ে আসা আবার কলেজ যাওয়ার সময় কপালে চুমু খাওয়া।

#চলবে…..

[কেন জানি লিখতে ইচ্ছে করে না 😞কোনো শব্দ মাথায় আসে না। কি হয়েছে জানি না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here