প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-২০

0
234

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২০
________________
কতক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে মুহূর্তেই ফিক করে হেসে ফেললো রাগান্বিতা৷ এতে ইমতিয়াজ কি অবাক হলো মটেও হলো না সে শুধু চেয়ে রইলো রাগান্বিতার হাসি জোড়ানো ঠোঁটের দিকে। গম্ভীর আওয়াজে বললো,
“কি হলো হাসছো যে? ভয় লাগে নি তোমার।”

রাগান্বিতা তার হাসি থামালো দু’কদম এগিয়ে গেল ইমতিয়াজের দিকে। হাল্কা একটু উঁচু হয়ে ইমতিয়াজের কানের কাছে ঠোঁটটা নিয়ে শীতল সুরে সুধালো,
“ভালোবাসার মানুষকে কেউ কখনো খুন করতে পারে নাকি ইমতিয়াজ সাহেব?”

ইমতিয়াজ আওড়ালো, চোখের পলক ফেললো বার কয়েক স্তব্ধ সুরে গাইলো,
“তুমি জানলে কি করে আমি তোমায় ভালোবাসি?”

আবার হাসে রাগান্বিতা নিজের কক্ষের দুয়ারের দিকে এগিয়ে গিয়ে আবার পিছন ফিরে বললো,
“আমি তো জানি আপনি আমাকেই ভালোবাসেন আপনার সন্দেহ থাকলে কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন এতে আমি কিছু মনে করবো না। হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে কক্ষে আসুন আমি অপেক্ষা করছি।”

রাগান্বিতা চলে গেল। আর ইমতিয়াজ কেবল হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার যাওয়ার পানে। বললো,
“মেয়েটা বড্ড অন্যরকম।”

ইমতিয়াজ এবার হাতের কোদালটা কাঁধে তুলে এগিয়ে যেতে লাগলো তাদের কক্ষ থেকে আরো দু’ কক্ষ পরে। কোদালটা মাটি কাটার কাজে রবিন নিয়ে গিয়েছিল কাল। আজ সকালেই কাদা মিশ্রিত বাহিরের দুয়ারের ধারে যে রেখেছিল আর বাড়ির ভিতরে আনা হয় নি। একটু আগে আকাশের অবস্থা বুঝতে ইমতিয়াজ দুয়ার খুলেছিল তখনই তার নজরে আসলো তাই ওটাকে নিয়ে উপরে আসছিল কাঁদা থাকায় আর কাঁধে তোলেনি। তবে হাতে তার কাঁদা লেগেছে একটু!’
—–
ইমতিয়াজ হাত পা ধুইয়ে ওযু করেই তাদের কক্ষে ঢুকলো। রাগান্বিতা তখনও বিছানায় বসে। ইমতিয়াজ গামছা হাতে ভিতরে গিয়ে তাড়া দিয়ে বললো,
“এখনো ঘুমাও নি কেন বউ?”

রাগান্বিতা চোখ তুলে তাকালো। খানিকটা লাজুক সুরে সুধালো,
“দাদিমা বলেছিলেন আজ রাতে যেন আমি আপনার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি সঙ্গে আপনি রুমে এলে আপনার পা ধরে সালাম দেই।”

বলে উঠে গিয়ে পা ধরে সালাম দিতে নিলো রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ সরে গেল রাগান্বিতাকে ধরে উঠিয়ে বললো,
“তোমার স্থান আমার পায়ে নয় বউ আমার বুকে।”

রাগান্বিতা মুগ্ধ হলো। ইমতিয়াজ দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো রাগান্বিতাকে। রাগান্বিতা সালাম দিলো ইমতিয়াজও সালামের জবাব দিয়ে বললো,
“চলো দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আসি।”

রাগান্বিতা খুশি হলো কারণ কথাটা সেও বলতো ইমতিয়াজকে। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের থেকে সরে কাছেই টেবিলের উপর রাখা জায়নামাজ দুটো নিয়ে বিছিয়ে দিলো নিচে। ইমতিয়াজ টেবিলের ড্রয়ার খুলে টুপিটা নিয়ে মাথায় দিলো। দুজন একসাথে নামাজে দাঁড়ালো নফল নামাজ আদায় করলো। শ্রুতি মধুর একটা সময় পার করলো।’
—–
আকাশটা তখন ঘন কালো মেঘে ঢাকা ফজর হতে এখনো ঢের দেরি। রাগান্বিতা ইমতিয়াজ পালঙ্কে বসা। দুজনেই চুপচাপ কারো মুখে কথা নেই। হঠাৎই রাগান্বিতা বললো,
“আপনার জন্য গ্লাসে করে দুধ রেখেছিলাম কিন্তু এখন আর খাওয়া যাবে না ঠান্ডা হয়ে গেছে।”

ইমতিয়াজ খানিকটা হাসলো। বললো,
“সমস্যা নেই রেখেছো যখন দেও।”
“ঠান্ডা দুধ ভালো লাগবে না তো।”
“তুমি বললে আমি নিরদ্বিধায় বিষও পান করতে পারি বউ ওটা তো সামান্য ঠান্ডা দুধ মাত্র।”

ইমতিয়াজের কথায় খানিকটা রেগে গেল রাগান্বিতা। ভাড়ি কণ্ঠে বললো,
“আপনি বড্ড খারাপ জানেন, মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলেন আমার বড্ড রাগ লাগে।”

ইমতিয়াজ হাসলো। আলতো হাতে রাগান্বিতাকে নিজের কাছে টানলো। মাথাটা বুকে ঠেকিয়ে বললো,
“আমার বুকটা বড্ড জ্বলছে বউ, তুমি কি সারিয়ে দিতে পারবে?”

রাগান্বিতা যেন থমকে গেল দু’হাতে শক্ত করে ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“জ্বলছে কেন?”
“আগে একা থাকতাম জ্বলতো না তুমি আসার পর থেকে জ্বলছে।”

রাগান্বিতার যেন কি হলো সে ইমতিয়াজের বুকে চুমু কাটলো। ঠোঁট ছুঁয়ে ইমতিয়াজের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আর জ্বলবে না ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিয়েছি না দেখবেন এখন থেকে সব ভালো হবে।”

ইমতিয়াজ অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল রাগান্বিতার চোখের দিকে কি যে ভাবলো কে জানে। ধীরে ধীরে সে কেমন যেন হয়ে গেল আস্তে করে রাগান্বিতার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে অল্প করে সুধালো,
“তুমি বড্ড ভালো বউ।”

রাগান্বিতা মিষ্টি হাসে। বলে,
“আপনিও।”

ইমতিয়াজ হঠাৎ করেই ছোট বাচ্চাদের মতো রাগান্বিতার বুকে মাথা রাখলো। রাগান্বিতাও দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো। দুজনেই নীরব থাকলো বহুক্ষণ। তবে ইমতিয়াজ মনে মনে আওড়ালো,
“তুমি ভুল জানো বউ আমি ভালো নই। আমি যে বড্ড নিষ্ঠুর। আমি তো ভেবে পাই না তুমি এই নিষ্ঠুর পুরুষটাকে এত ভালোবাসলে কি করে! তোমার ভালোবাসা কি আমায় ভালো থাকতে দিবে। কেন যেন আমি তোমার চোখে বার বার আমার সর্বনাশই দেখি রেকশপুরের কাদম্বিনী।”

ধীরে ধীরে সময় গড়ালো ফজরের ধ্বনি কানে আসলো প্রকৃতি হতে লাগলো পরিষ্কার।’

——
সময় ছুটলো অনেকটা। দেখতে দেখতে দু’সপ্তাহ পেরোলো। এই দু’সপ্তাহে অনেকটাই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে রাগান্বিতা। পুরো বাড়ির রঙই পাল্টে ফেলেছে আশেপাশে থাকা যত আগাছা ছিল সব উপড়ে ফেলেছে এখন আর ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগে না। বাড়ির বাহিরের চারিদকে কিছু সুন্দর সুন্দর ফুলগাছ লাগিয়েছে রাগান্বিতা। ফুল ফুটতেও শুরু করেছে। এখনই সে ফুলের সুভাস পুরো বাড়ি জুড়ে ঘুরে। সারাদিন রাগান্বিতা বাড়িতে একাই থাকে রবিন শুধু কাজ করে চলে যায়। রাগান্বিতা বলেছিল একদিন তার বউকে নিয়ে এখানে আসতে কিন্তু রবিন বলে,
“তার বউটা নাকি পোয়াতে তাই এখন আসতে পারবে না।” রাগান্বিতাও মেনে নিয়েছে।’

নিস্তব্ধ বিকেল। বাড়ির বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতা প্রকৃতি জুড়ে কিছুক্ষণ পর পর গা ছুঁয়ে বাতাস বইছে। বাতাসে রাগান্বিতার কালো কেশগুলো উড়ছে। হঠাৎই সাইকেলের বেল বাজার আওয়াজ আসলো রাগান্বিতা সামনে তাকালো দেখলো তাদের বাড়ির দিকে এক ডাকপিয়ন আসছে। মুহূর্তেই বুকটা কেমন করে উঠলো। ডাকপিয়ন চেঁচিয়ে বললো,
“চিঠি এসেছে, চিঠি এসেছে!’

রাগান্বিতা আর দেরি করলো না। মাথায় লম্বা করে ঘোমটা টেনে ছুটে আসলো নিচে। যথারীতি তার হাতে চিঠি দিয়ে ছোট্ট একটা সাইন নিয়ে ডাকপিয়ন চলে গেল। রাগান্বিতা এপিট ওপিঠ উল্টে চিঠিটা বের করলো। সাথে সাথে গাড়ো কালিতে লেখা দেখলো। কেউ লিখেছে,

“তোমার নামে আর চিঠি লিখবো না বধূ
অনেক হয়েছে আর না
এবার তো জানো শুধু তুমি আমার ছাড়া আর কারো না!”

~ নিষ্ঠুর এক প্রেমিক পুরুষ!’

বুকটা আঁতকে উঠলো রাগান্বিতার আবার সেই পুরুষ। রাগান্বিতার বুকটা হাল্কা কাঁপলো। এরই মাঝে পিছন থেকে বললো কেউ,
“বউ।”

রাগান্বিতা পিছন ঘুরলো এই সময় ইমতিয়াজকে দেখে বড্ড অবাকই হয়েছে সে। চিঠিটা লুকিয়ে ফেললো দ্রুত এগিয়ে এসে বললো,
“এই সময় আপনি এখানে?”
“হ্যা, তোমার বাবা চিঠি পাঠিয়েছে দেখো।”

রাগান্বিতা চেয়ে রইলো ইমতিয়াজের হাতের দিকে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো তার সে দৌড়ে গিয়ে বললো,
“কই দেখি!”

রাগান্বিতার হাতে চিঠিটা দিলো ইমতিয়াজ। রাগান্বিতা ওখানে দাঁড়িয়েই চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো। তার বাবা লিখেছে,

প্রিয় কন্যা,
প্রথমেই আমার সালাম নিও। আশা করি তুমি শহরে ভালোই আছো। নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছো। তুমি বাড়িতে নেই আজ চৌদ্দটা দিন আর পনেরটা রাত গেল। তোমায় বড্ড মনে পড়ে কন্যা। মনে হয় কতবছর জেনো তোমায় দেখি না। তোমার দাদিমার শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না তোমায় খালি দেখতে চাচ্ছে। এমনিতেও বিয়ে দু’দিন পেরোতেই মেয়েরা নাইওর আসে তুমি এলে না। এতে অভিযোগ নেই কোনো পথ তো কম না। সুযোগ পেলে একবার জামাইবাবাকে নিয়ে এসো রেশবপুরে। তোমায় ছাড়া আমার বাড়িটা যেন পুরোই শূন্য। পরিশেষে বলবো ভালো থেকো, জামাইয়ের খেয়াল রেখো, মনে রেখো, বিয়ের পর মেয়েদের সর্বপ্রথম কাজ হলো নিজ স্বামীর সেবা যত্ন করা তাকে ভালো রাখা। তুমিও রাখছো নিশ্চয়ই! তাকে কভু কষ্ট দিও না। আবারও বলবো, সুযোগ মিল্লে এসো তোমার আর জামাইয়ের অপেক্ষায় রইলাম,

ইতি
তোমার বাবা।”

বাবার চিঠি পড়ে রাগান্বিতার চোখে পানি চলে আসলো। বাবা তাকে কতটা ভালোবাসে কতটা ব্যাকুল হচ্ছে তার জন্য তা যেন এই চিঠিতেই প্রকাশ পেল। ইমতিয়াজ এগিয়ে এলো রাগান্বিতা চোখের পানি মুছে বললো,
“কেঁদো না বউ আমরা শীঘ্রই যাবো।”

রাগান্বিতা ছলছল দৃষ্টিতে ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সত্যি নিয়ে যাবেন।”

মাথায় নাড়ায় ইমতিয়াজ। বলে,
“হুম।”

রাগান্বিতার চোখে আবার পানি আসলো শক্ত-পোক্ত মেয়েটা আজ বড্ড কাঁদছে। ইমতিয়াজ তার দিকে তাকিয়ে গাল দুটো চেপে ধরে শীতল সুরে বলে উঠল হঠাৎ,
“তুমি কাঁদলে আমার হৃদয়ে বড্ড ব্যাথা লাগে বউ। তুমি কি চাও আমি ব্যাথা পাই।”

রাগান্বিতা দ্রুত চোখ মুছতে মুছতে বললো,
“এই দেখুন চোখ মুছে ফেলেছি। আমি আর কাঁদবো না। আপনার ব্যাথাতে যে আমিও ব্যাথা পাই।”

ইমতিয়াজ হাসলো। মিনমিনিয়ে বললো,
“ওহে সখি গো অন্তর জুড়ে মোর এতো প্রেম
দেখাইতে না পারি তোমায়! এ যে কি যন্ত্রণার একবার যদি শুধাইতে পারতাম তোমায়!’

#চলবে……

[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here