প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-২১

0
232

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২১
________________

নিকষকালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে বহুক্ষণ হয়েছে। রাগান্বিতা মাগরিবের নামাজ সেরে জানালার ধারে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে কতক্ষণ যাবৎ, বাবার জন্য বড্ড মন খারাপ করছে তার। ইমতিয়াজ নামাজের জন্য বেরিয়েছে আর ফেরে নি। তবে দ্রুত চলে আসবে বলে গেছে। রাগান্বিতা নীরবে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো বাহিরে, ঘন কালো অন্ধকার ছাড়া তেমন কিছুই নজরে আসছে না। রাগান্বিতা ভাবছে, ইমতিয়াজের প্রতি বড্ড বেশিই যেন আসক্ত হয়ে গেছে সে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ভয় বা দ্বিধা নেই রাগান্বিতার। সে মনে করে, বাঙালি নারী হোক বা অন্য কোনো শ্রেণির নারী সব বিবাহিত মেয়েদেরই উচিত তার স্বামীর প্রতি আসক্ত থাকা তাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা। কুহু আপা প্রায়ই বলতেন মা নাকি বাবার প্রতি সবসময় আসক্ত ছিলেন তাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। আম্মার মৃত্যুতেও নাকি বাবা প্রচুর কেঁদেছিলেন। বউকে খুব ভালোবাসতো কি না। রাগান্বিতা মনে মনে বিশ্বাস করে নিয়েছে ইমতিয়াজ তাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসেন। প্রকাশ না করলেও বাসেন। তার চোখ, তার কথা বলার ধরন সবকিছুই যেন তাকে ভালোবাসার কথা মনে করিয়ে দেয়। মুখে বললেই যে ভালোবাসা হয় এমনটা নয়, মুখে না বলেও মানুষ আড়ালে আবডালে তার প্রিয় মানুষকে প্রচুর ভালোবাসতে পারেন। রাগান্বিতাকে আড়ালেই ভিতর থেকেই বড্ড ভালোবাসেন ইমতিয়াজ তা না হলে এত যত্ন করতো নাকি। রাগান্বিতার মন খারাপটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল এই ইমতিয়াজ নামটাই যে একটা বিশাল ভালোলাগা। মানুষটার কথা ভাবলেই রাগান্বিতার মনটা ভালো হয়ে যায়। হঠাৎই নিচে কাকে যেন হেরিকেন হাতে বাড়ির বামদিকটায় থাকা এক ঘনজঙ্গলের দিকে যেতে দেখলো রাগান্বিতা। তার মনে হলো ওটা বুঝি রবিন। রাগান্বিতা কি ভেবে যেন নিজের কক্ষ থেকে বের হলো, তাকে দেখতে হবে ওটা রবিন কি না আর রবিন হলেও এই রাত-রেরাতে হেরিকেন হাতে যাচ্ছে কোথায়!’

রাগান্বিতা ছুট্টে গেল নিচে দূর থেকেই সে বুঝতে পারলো ওটা রবিনই। কিন্তু রবিন এইসময় যাচ্ছে কই! রাগান্বিতা ভালোমতো তার মাথাটা ঘোমটা দিয়ে ঢেকে নিলো তারপর আস্তে আস্তে চলতে লাগলো রবিনের পিছন পিছন। রবিন হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে থামলো এক কবরস্থানের সামনে। রাগান্বিতা দেখলো তা হঠাৎই রবিন কাকে যেন বলে উঠল,
“তুমি এহানে আছো আর আমি তোমারে সারাজায়গায় খুঁজি।”

প্রতিউত্তরে কবরস্থানের পাশে বসে থাকা ব্যাক্তিটি বললো,
“এত খোঁজার কি আছে?”
“এক বেডায় আইছিল কইলো এবারের মালগুলান নাকি ভালো হয় নাই।”
“ভালো হয় নি মানে,
“আসলে কাশিমম্মা ভুল করছে একখান আজগর মিয়ার মাল মতিন মিয়ারে দিয়া দিছে।”
“তুমি খেয়াল করো নি?”
“আমি তখন বাড়িত ছিলাম।”
“আচ্ছা আমি দেখছি তুমি যাও।”
“এই রাত্তির বেলা একলা একলা কবরস্থানে বইয়া থাকা ঠিক হইবো না।”

ব্যক্তিটি তাও শুনলো না অনেকক্ষণ বসে রইলো। আলতো করে কবরস্থানের মাটিতে হাত বুলালো। রবিন মন খারাপ করে বললো,
“মৃত মানুষ কি আর ফিরা আহে কও?”
“জানি তো আসে না। ও আজ বেঁচে থাকলে খুব ভালো হইতো তাই না কও!’
“হুম। মাইয়াডা খুব ভালো আছিল! তোমারেও কত ভালোপাইতো।”

জবাব দিলো না ব্যক্তিটি। অন্যদিকে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রবিন যে কারো সাথে কথা বলছে তা বেশ বুঝতে পেরেছে রাগান্বিতা কিন্তু কি বলছে আর কাকে বলছে তা কিছুই দেখতে বা শুনতে পাচ্ছে না। হঠাৎই গাছের পাতা নড়তেই কিছু একটা আচ করতে পেরেই রবিনকে উদ্দেশ্য করে বললো ব্যক্তিটি,
“হেরিকেনের লাইট নিভাও ওখানে কেউ আছে গিয়ে দেখো।”

রবিন যেন চমকে উঠলো দ্রুত হেরিকেনের আলো কমিয়ে তাকালো ওদিকে। চেঁচিয়ে বললো,
“কে ওখানে?”

আচমকাই রবিনকে চেঁচিয়ে উঠতে দেখে ঘাবড়ে গেল রাগান্বিতা পরক্ষণেই নিজেকে সামলে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে বললো রাগান্বিতা,
“রবিন চাচা আমি রাগান্বিতা।”

রবিন কণ্ঠটা শুনতেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বললো,
“বউমা আপনি এহানে কি করেন? তাড়াতাড়ি বাড়িত চলেন রাত দুপুারে এইসব জায়গায় থাকা ঠিক না।”

রবিন কবরস্থান থেকে সরে এসে দাঁড়ালো রাগান্বিতার কাছে। রবিন কিছু বলার আগেই রাগান্বিতা প্রশ্ন করলো,
“আপনি এই জায়গায় কি করছিলেন চাচা?”

রবিন কি বলবে বুঝতে পারছে না। কথা পাল্টে বললো,
“বাড়ির সামনে চলেন তারপর বলতাছি।”
“আপনার সাথে কি কেউ ছিল রবিন চাচা?”

রবিন থরথর করে জবাব দিলো,
“কই কেউ ছিল না তো আমি একাই ছিলাম।”
“কিন্তু আমার কেন যেন মনে হলো আপনি কারো সাথে কথা বলছিলেন।”
“হ বলতাছিলাম তো?”

রাগান্বিতা আগ্রহ নিয়ে বললো,
“কে ছিল?”

রবিন নিশ্চুপ স্বরে বললো,
“আমার মা।”

—–
হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো ইমতিয়াজ। চোখে মুখে খানিকটা চিন্তিত ভাব। এই রাগান্বিতা গেল কই! ইমতিয়াজ সারাবাড়ি খুজলো কিন্তু কোথায় পেল না। এবার ইমতিয়াজ রবিন চাচাকে ডাকলো।”
“রবিন চাচা, রবিন চাচা।”

সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। ইমতিয়াজ আবারও চিন্তিত স্বরে রাগান্বিতাকে ডাকলো। বললো,
“রাগান্বিতা, রাগান্বিতা তুমি কোথায়?”

এরই মাঝে সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো রাগান্বিতা,
“আমি এখানে!’

ইমতিয়াজ দ্রুত রাগান্বিতার দিকে দৌড়ে গেল হতভম্ব হয়ে বললো,
“কোথায় ছিলে তুমি কত জায়গায় খুঁজেছি তোমায় জানো তুমি।”

রাগান্বিতা মাথা নত করেই বললো,
“আমি দুঃখিত। আমি আসলে একটু,

কিছু বলার আগেই রবিন বললো,
“রাগ হইও না ইমতিয়াজ ওই বাড়ির পিছনে একটা পুকুর আছে না ওইখানে গেছিলাম রাগান্বিতা একটু জেদ করছিল তাই জন্যে।”

ইমতিয়াজ তার রাগ কমালো। বললো,
“এই রাত-বেরাতে পুকুরপাড়।”

রাগান্বিতা এগিয়ে আসলো। ইমতিয়াজের হাত ধরে বললো,
“আমি দুঃখিত আমি আসলে ভুল করে ওই জঙ্গলের ওদিকটায় গিয়েছিলাম আপনি শুনলে রাগ করবেন তাই রবিন চাচা ওসব বলছেন।”

ইমতিয়াজ শুনলো। চিন্তিত হয়ে উঁচু আওয়াজে বললো,
“ওই জায়গাটা ভালো নয় তুমি এই রাতের বেলা ওখানে কেন গিয়েছিলে বউ?” যদি তোমার কোনো ক্ষতি হতো।”
“আমার কিছু হয় নি। আমি ঠিক আছি। আমি জানতাম না ওই জায়গাটা ভালো না। একা একা ভালো লাগছিল না তাই হাঁটতে বেরিয়েছিলাম কখন যে ওদিকটা গেলাম বুঝতে পারি নি। রবিন চাচা বললো পর জানলাম।”

ইমতিয়াজ শান্ত হলো। আর বেশি কিছু না ভেবে বললো,
“ঠিক আছে এবারের মতো তোমায় কিছু বললাম না কিন্তু আর কখনো ওখানে যাবে না রাতের বেলা তো একদমই না।”

রাগান্বিতা মাথা নাড়িয়ে বললো,
“ঠিক আছে।”

ইমতিয়াজ হাল্কা হাসলো। রবিন ওখান থেকে চলে গেল। ইমতিয়াজও তার বউকে নিয়ে উপরে উঠলো। আসার সময় বাজার থেকে গরম গরম পেঁয়াজু আর আলুর চুপ নিয়ে এসেছিল ইমতিয়াজ। কিন্তু রুমে ঢুকেই রাগান্বিতাকে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে গেছিল। ইমতিয়াজ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো,
“তোমার জন্য বাজার থেকে গরম গরম পেয়াজু আর আলুরচপ কিনে এনেছিলাম এতক্ষণে বোধহয় ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
“আমি গরম আনি।”
“বেশি ঠান্ডা হয়ে গেলে তাই করতে হবে।”
—–

রাতের ভোজন শেষ করে বিছানায় শুয়ে আছে রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজ। ইমতিয়াজের বুকে মাথা দেয়া রাগান্বিতা। হঠাৎই ইমতিয়াজ প্রশ্ন করলো। বললো,
“তুমি আমায় খুব ভালোবাসো তাই না বউ?”

রাগান্বিতা মিষ্টি হেঁসেই জবাব দেয়,
“হুম বাসি তো! কেন আপনি বাসেন না?’

ইমতিয়াজ জবাব দেয় না। উল্টো আবার বলে,
“আমায় এত ভালো কেন বাসো বউ?”

রাগান্বিতা ইমতিয়াজের বুক থেকে নিজের মাথাটা উঠালো। চাইলো ইমতিয়াজের চোখের দিকে, ইমতিয়াজও চাইলো। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,
“আমি যে আপনায় ভালোবাসি কেন বাসি জানি না। শুধু জানি আপনায় ভালোবাসাতেই আমার প্রকৃত সুখ। সবচেয়ে বড় কথা আপনায় ভালোবাসতে আমার ভালো লাগে তাই ভালোবাসি। আমি আপনায় সারাজীবন ভালোবেসে যেতে চাই ইমতিয়াজ।”

বলেই পুনরায় ইমতিয়াজের বুকে মাথা রাখলো রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ শুধু শুনেই গেল রাগান্বিতার কথা জবাবে কিছু বললো না। অনেকক্ষণ নীরবতা চললো দুজনের মাঝে। হঠাৎই নীরবতা ভেঙে ইমতিয়াজ বললো,
“নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিও আমরা কাল রেশবপুরে যাবো।”

#চলবে…..

[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। গল্প দিতে এতো লেট হচ্ছে বলে জানি সবাই রেগে আছো কিন্তু তোমাদের কি করে বুঝাবো আমি লিখতে গিয়েও লিখতে পারি না। আমাকে আবার বোধহয় রাইটিং ব্লকে ধরেছে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here