প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-১৬

0
243

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১৬
________________
রাতের আধারে ঘনিয়ে এসেছে চারপাশ। মুক্তদানার মতো চিকচিক করছে পানি। চাঁদ উঠেছে আকাশ ছুয়ে খানিকটা মেঘলাময়। বৃষ্টি হবে হবে এমন। জাহাজ ছুটছে আপন গতিতে। ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে জাহাজের এক কর্নারে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দৃষ্টি তার নিচের ঢেউগুলোর দিকে। আচ্ছা সাঁতার না জানা একটা জীবন্ত মানুষকে পানিতে ফেলে দেওয়ার পর তার যে কষ্টটা হয় সেটা কি খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়। হয়তো হয়। ইমতিয়াজ তার ভাবনা বদলালো তাকালো আকাশ পথে। সে কি খুব ভয়ংকর! হতে পারে অথচ সেই ভয়ংকর মানুষটাকেই রাগান্বিতার মতো এত সুন্দরী একটা মেয়ে বিয়ে করে ফেললো। কত নিরদ্বিধায় তার সঙ্গে তার বাড়ি ছুটছে। মেয়েটার কি একটুও ভয় লাগছে না আচমকা একটা অচেনা মানুষের সাথে অচেনা শহরে পারি জমাতে। রাগান্বিতা কেভিনে আছে ইমতিয়াজ তাকে জানিয়ে এসেছে কোনো দ্বিধা নেই সে নিশ্চিতে এখানে ঘুমাতে পারে। আজ রাতে তারা একে অপরের সাথে কোনো কথা বলবে না যদি রাগান্বিতা না চায় লাগলে যা বলার আজকের পরই বলবে। ইমতিয়াজের এ কথার পিঠে রাগান্বিতা কিছু বলে নি চুপচাপ ছিল। ইমতিয়াজও আর না বকে চলে আসে বাহিরে এরপর থেকে বাহিরেই আছে। বলতে গেলে মধ্যরাত চলছে। কি সুন্দর জোৎস্না ভরা আলো। আশেপাশে কেউ নেই একমাত্র ইমতিয়াজই দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে। ইমতিয়াজ জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো। তারপর চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবলো,

একটা মেয়ে, তার মুখে কি সুন্দর হাসি। একটা বাড়ির পিছনের আশেপাশে দৌড়াচ্ছে আর বলছে,
“আসো, আসো,আসো না। তুমি কিন্তু আমার জন্য আজও নূপুর আনো নি। তুমি বার বার কেন ভুলে যাও। এর পরের বার ভুলে গেলে আমি কিন্তু তোমায় ক্ষমা করবো না।”

আচমকাই হাতে কারো একটুখানি স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো ইমতিয়াজ। দ্রুত হাত সরিয়ে ফেললো। ইমতিয়াজের এমন কান্ডে খানিকটা হাসে রাগান্বিতা। বলে,
“আরে ভয় পাচ্ছেন কেন আমিই তো!’

ইমতিয়াজ তাকালো পুরো বিয়ের সাজেই তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
“তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন?”
“ঘুম আসছে না।”

উত্তরে ইমতিয়াজ আর কিছু বলে না। রাগান্বিতা নদীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো রাতের ফুড়ফুড়ে বাতাস তাকে ছুঁয়ে দিলো। রাগান্বিতা চোখ বন্ধ করে পুরো বাতাসটা ফিল করলো। ইমতিয়াজ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার মুখের দিকে রাতের চক চক করা জোৎস্না ভরা আলোতে রাগান্বিতাকে যেন আরো বেশি মাধুর্যপূর্ণ লাগছে। মেয়েটা একটু বেশি সুন্দর।

ইমতিয়াজ রাগান্বিতা পাশ দিয়ে দাঁড়ালো। বললো,
“আমার বউটা একটু বেশি সুন্দর।”

রাগান্বিতা কথাটা শুনতেই চোখ খুলে ফেললো ‘আমার বউটা’ কথাটা যেন তড়িৎ গতিতে তার কানে বেজে উঠলো। রাগান্বিতা মুচকি হাসলো। বললো,
“ওই চাঁদের থেকে নয়।”

ইমতিয়াজ চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যদি বলি তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি চাঁদের থেকেও বেশি সুন্দর।”
“আপনি বানিয়ে বলছেন।”
“তুমি মানো কিন্তু বলতে চাইছো না।”

রাগান্বিতা কি বলবে বুঝতে না পেরে হেঁসে ফেলে। রাগান্বিতার হাসি দেখে ইমতিয়াজ বুকে হাত দিয়ে বললো,
“ওভাবে হেঁসো না তো আমার বড্ড লাগে।”

রাগান্বিতা এবার ইমতিয়াজের চোখের দিকে তাকালো। বললো,
“আমার যে আরো লাগে।”
“মানে?”

এবার উচ্চ স্বরে হাসে রাগান্বিতা। বলে,
“মানেটা আরেকদিন বলবো।”
“আজ বললে কি হবে।”
“আপনার আগ্রহ কমে যাবে।”
“আগ্রহ কমবে কেন?’’
“বলে দিলেই বুঝে যাবেন।”
“তুমি আমায় চেনো না আমি,

আর কিছু বলার আগেই রাগান্বিতা ইমতিয়াজের ঠোঁট চেপে ধরলো। বললো,
“হুস, সমস্যা নেই চিনে নেবো। আপনি তো এখন আমারই।”

রাগান্বিতার এতটুকু কথার মাঝে ইমতিয়াজের ভিতরটা কেমন করে উঠলো। সে দ্রুত দু’কদম পিছিয়ে গেল রাগান্বিতার থেকে। বললো,
“আমি এখন তোমারই তাই না রাগান্বিতা।”

খানিকটা লাজুকভাব নিয়ে বলে রাগান্বিতা,
“হুম।”

এরপর এদের মাঝে অনেকক্ষণ নীরবতা চলে দুজনেই দাঁড়িয়ে থাকে রেলিং ধরে। কথা আর বলে না।”

সময় চললো। হঠাৎই রাগান্বিতা আবদার করে বললো,
“চলুন বসি।”
“এখানে?”
“হুম।
“আজ থাক এভাবে গা ভর্তি গহনাগাঁটি নিয়ে এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না তুমি বরং কেভিনে যাও।”
“আপনার কি ভয় করছে?”

ইমতিয়াজ জবাব দেয় না। রাগান্বিতা আবার বলে,
“আমার কিন্তু করছে না আপনি আছেন তো। আর এখানে কেউ নেই। চলুন বসি।”

ইমতিয়াজ আর বারণ করতে পারলো না। মেয়েটা এত দ্রুত তাকে এত বিশ্বাস করে নিলো। অতঃপর তারা গিয়ে বসলো জাহাজের এক কিনারায় পা ঝুলিয়ে। এতরাতে এভাবে বসে থাকাটা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত ইমতিয়াজ জানে না। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই সমস্যা হবে না হয়তো।”

জাহাজ ছুটছিল তার নিজ গতিতে। রাগান্বিতা ইমতিয়াজ পাশাপাশি বসে। দুজনেই চুপচাপ রাগান্বিতা বললো,
“পরিবেশটা সুন্দর না।”

উত্তরে শুধু এতটুকুই বলে ইমতিয়াজ,
“হুম।”
—-

রাগান্বিতার রুমে বসে ওর একটা শাড়ি জড়িয়ে ধরে কাঁদছে দাদিমা। মেয়েটা চলে গেল, রাগান্বিতার এভাবে বিয়ে হয়ে যাবে এটা কখনো ভাবে নি দাদিমা। কুহুর বিষয়টা ভাবলে আজও তার বুক ফাঁটে।

“এভাবে কাঁদছো কেন?”

দাদিমা চমকে উঠলেন সামনেই রাগান্বিতার বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,
“কই কানতাছি নাতো চোহে কি জানো একটা গেছে।”

রাগান্বিতার বাবা বিছানায় বসলেন। বললেন,
“পোলার কাছ থেকে লুকাইয়া লাভ আছে কও।”

এবার দাদিমা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। আরো উচ্চস্বরে কাঁদলেন। বললেন,
“মনডা বড্ড কানতাছে রে মোতালেব নাতিডা এমনে চইল্লা গেল।”
“ভয় পাইও না নামাজ পইড়া দোয়া কইরো দেখবা সব ভালো হইবো।”
“কুহুর কথা ভাবলেই মনডা ভয়ে কাইপ্পা উঠে রে।”

মোতালেব দ্রুত বললো,
“হু চুপ তাহো কেউ শুইন্না ফেলবো। ওর কথা কাউরে কবা না রাগান্বিতারে তো নাই।”
“একবার কইলে ভালো হইতো না।”
“আগে হইলে বলতাম কইয়ো কিন্তু এহন তো ওর বিয়া হইয়া গেছে আর বলা লাগবে না।”
“ওই পোলাডার হাতে তুইল্লা দেওয়া কি ঠিক হইলো মোতালেব।”

জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো মোতালেব। বললো,
“আর কি করতাম কও উপায় কি আর ছিল। তবে ছেলেডা মনে হয় ভালোই হইবো। আমি রাগান্বিতার জন্য ওই পোলাডার চোখে মায়া দেখছি।”

মোতালেবের কথা শুনে ফট করেই বলে উঠলেন দাদিমা,
“আমরা যা চোহে দেহি তা কি সবসময় হাছা হয় মোতালেব।”

মোতালেব জবাব দিলেন না। এমন সময় হঠাৎই বাহিরে শোরগোল শোনা গেল। কারা যেন চেঁচিয়ে বলছে, কেডা জানি আবার খুন হইছে তালুকদার সাহেব?”

এত রাতে আচমকাই এমন বার্তা শুনতেই বুকের ভিতর দক উঠলো দাদিমার। আর মোতালেব তালুকদার যেন অবাক হলেন। দ্রুত রাগান্বিতার রুম থেকে বেরিয়ে নিচে ছুটে গেলেন। দাদিমাও বেরিয়ে আসলেন রাগান্বিতার বাবার পিছু পিছু।

হতভম্ব হয়ে রুম থেকে বের হলো রেজওয়ান, বোনের চিন্তায় সেও ঘুমাতে পারছিল না। রেজওয়ান বের হতেই বাবাকে নজরে আসলো তার। কিছুটা চিন্তিত কণ্ঠে বললো,
“বাহিরে শোরগোল শুনছো বাবা?”
“হুম তা শুনেই তো আসলাম চলো তো দেখি,

বলেই রেজওয়ান আর মোতালেব তালুকদার চললো বাড়ির বাহিরে। বাড়ির উঠানে ভিড় পড়েছে আবার। এমন ভিড় দেখে খানিকটা আন্দাজ করতে পেয়েছেন রাগান্বিতার বাবা। রেজওয়ান সরাসরি জিজ্ঞেস করলো সবাইকে,
“কি হয়েছে?”

একজন বললো,
“কি কমু রেজওয়ান বাবা মুজিবর গো বাড়ির পিছনের ডোবায় একটা পোলার লাশ ভাইসা উঠছে কে যেন মাইরা হালাই থুইছে।”

রেজওয়ান অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কার লাশ?”

সবাই সরে গেল লাশের কাছ থেকে। লাশের চেহারাটা দেখতেই রাগান্বিতার বাবা যেন থমকে গেলেন। কারন লাশটা আর কারো নয় মাহাদের!’

#চলবে……

[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here