প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-১৯

0
249

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১৯
________________
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইমতিয়াজ, হঠাৎ করেই রাগান্বিতার জড়িয়ে ধরার বিষয়টার জন্য সে মোটেও প্রস্তত ছিল না। রাগান্বিতা ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরলেও ইমতিয়াজের হাত ছিল স্থির সে ধরে নি রাগান্বিতাকে। ইমতিয়াজের বুকের ভিতর টিপ টিপ করে শব্দ হচ্ছে। রাগান্বিতা তো তার বুকেই মাথা রেখে দাড়িয়ে আছে ‘মেয়েটা নিশ্চয়ই শুনতে পাচ্ছে তার বুুকের ধুকপুকানি। রাগান্বিতা চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো। আকাশে তখন প্রবল বেগে বিদ্যুৎ চমকালো রাগান্বিতা হাল্কা একটু ঘাবড়ে গিয়ে ইমতিয়াজকে আর একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রাগান্বিতার ডান কানটা তখন ইমতিয়াজের বুকের ধুপকানি খুব সুন্দরভাবেই শুনতে পাচ্ছিল সে বুঝেছিল ইমতিয়াজের বুক কাঁপছে। সেই বুঝি প্রথম মেয়ে ছিল যে ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরলো।

অনেক্ক্ষণ যাওয়ার পরও যখন রাগান্বিতা ইমতিয়াজকে ছাড়ছিল না তখন ইমতিয়াজেরও যেন কি হলো সে চোখ বন্ধ করে জড়িয়ে ধরলো রাগান্বিতাকে। আকাশ পথ বেয়ে তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামছিল, কি সুন্দর এক মুহুর্ত! প্রকৃতি জুড়ানো ঠান্ডা বাতাস বইছিল তখন। বাতাসের সংস্পর্শতা রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজকে নাড়িয়ে দিচ্ছিল খুব। অনেকক্ষণ পর রাগান্বিতা মুখ খুললো। শীতল সুরে বললো,
“আপনার বুকখানায় আমার এত শান্তি কেন লাগছে ইমতিয়াজ ছাড়তে একটুও ইচ্ছে করছে না।”

ইমতিয়াজ চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসলো। বললো,
“ওটা তো তোমারই স্থান যতপারো শান্তি নেও আমি কিছু মনে করবো না বউ।”

রাগান্বিতার শরীর জুড়ে এক হিমশীতল হাওয়া বয়ে গেল যেন। সে হাসলো, আনমনা মুচকি হাসলো। কেমন এক অদ্ভুত শান্তি শান্তি লাগছে রাগান্বিতার, যা এর আগে কখনো লাগে নি।’

——-
রাত প্রায় সাড়ে আট’টা। পুরো বাড়ি জুড়ে অন্ধকার। বাহিরে প্রবল বেগে ঝড় চলছে। বাড়িতে বর্তমানে রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজ ছাড়া কেউ নেই। রবিন চাচা তার বাড়িতে গিয়েছে, বিকেলের আবহাওয়া দেখেই ইমতিয়াজ বুঝেছিল রাতে ঝড় উঠবে তাই ঝড়ের আগেই যেন রবিন বাড়ি যেতে পারে তাই পাঠিয়ে দিয়েছে তার বউ বাচ্চাও অপেক্ষা করছে কি না। ইমতিয়াজ চুপটি করে নিজ রুমের পালঙ্কে বসে আছে পুরো রুমে অন্ধকার কিন্তু সে বিষয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই উল্টো এই অন্ধকারে বসে থাকতেই বড্ড ভালো লাগছে। কিছু একটা ভাবছে ইমতিয়াজ, নিজেকে বড্ড এলেমেলো লাগছে সে বুঝি সবটা গুলিয়ে ফেলছে নিজের পুরো গন্তব্যই যেন গুলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎই দুয়ার খোলার শব্দ আসতেই দুয়ারের দিকে তাকালো ইমতিয়াজ বাসন্তী রঙের লাল পাড়ের শাড়ি, মাথায় ঘোমটা, হাতে অলংকার, গায়ে অলংকার সঙ্গে ল্যাম হাতে রুমে প্রবেশ করলো রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়েই রইলো ওর পানে। কি এক অদ্ভুত অনূভুতি কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না। ইমতিয়াজ দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো। রাগান্বিতা এগিয়ে আসলো ল্যামটা টেবিলের কর্নারে রেখে বললো,
“এভাবে অন্ধকারে বসে কি করছেন? খাবেন না।”

ইমতিয়াজ উত্তর দিলো না উল্টো প্রশ্ন করলো,
“তুমি এত সুন্দর কেন রাগান্বিতা?”

গাড়ো কাজলের আঁখিজোড়া নিয়ে শীতল দৃষ্টিতে ইমতিয়াজের দিকে তাকালো রাগান্বিতা। ধীর স্বরে লাজুকতা নিয়ে বললো,
“আপনার বউ বলে।”

কি এক উত্তর! পাল্টা কিছু বলতেই পারলো না ইমতিয়াজ। সে চুপ করে রইলো। অনেকক্ষণ পর বললো,
“তোমার এখানে অসুবিধা হচ্ছে না তো আমি কিন্তু কাল থেকে বাসায় থাকবো না দুপুরে আসতেও পারি নয়তো একবারে রাতে আসবো তোমার ভয় করবে না তো।”

রাগান্বিতা চুপ করে রইলো। রাগান্বিতাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো ইমতিয়াজ,
“কি হলো কথা বলছো না যে ভয় করবে বুঝি।”

রাগান্বিতা হাসলো। বললো,
“আপনি বোধহয় আমার সম্পর্কে সবকিছু এখনো জানেন নি রাগান্বিতা একা থাকতে ভয় পায় না।”
“খুব ভালো। চলো একসাথে খাই?”

কথাটা বলেই ইমতিয়াজ পালঙ্ক থেকে নামলো রাগান্বিতাও নামলো তারপর দুজন চললো নিচে একসাথে রাতের খাবারটা শেষ করার জন্য। বাহিরে তখনও তুমুলবেগে বৃষ্টি হচ্ছিল।’

—–
জানালার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতার বাবা। আকাশে ঘনকালো মেঘেরা ঝাপটে ধরে আছে। রাগান্বিতার বাবার ধারণার মতে তাদের এদিকে ঝড় বৃষ্টি না আসলেও আকাশের অবস্থা দেখে তিনি বেশ ধরে নিয়েছেন শহরের ওদিকে বেশ ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। রাগান্বিতার বাবার এসব ধারণা কখনোই ভুল হয় না। জোরে নিশ্বাস ফেললো রাগান্বিতার বাবা। মেয়েটা বাড়ি নেই দুইরাত হতে চললো। বুকের ভিতর খাঁ খাঁ করছে চারপাশ যেন শূন্য শূন্য লাগছে। রাগান্বিতার বাবার রুমটা থেকে কুহুর কবরটা দেখা যায় সেই বাঁশ ঝারের মধ্যে মেয়েটা শুয়ে আছে। না জানি কিভাবে আছে মেয়েটা। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো রাগান্বিতার বাবা। মেয়ের বাবাদের বুঝি বড্ড জ্বালা।’

“বাবা আসবো?”

হঠাৎই রেজওয়ানের কণ্ঠটা কানে আসতেই দ্রুত চোখের পানি মুছে ফেললেন মোতালেব তালুকদার। ঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,
“জি বললো,

রেজওয়ান এগিয়ে আসলো। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“বহুদিন তো হলো বাবা আমি গ্রামে এসেছি এবার তো আমার শহরে যাওয়া উচিত।”

রেজওয়ানের কথা শুনে অনেকক্ষণ চুপ থাকলেন মোতালেব তালুকদার। দৃষ্টি শান্ত রেখে বললো,
“তুমিও চলে যাবে রেজওয়ান।”

বাবার কথা শুনে বেশ খারাপ লাগলো রেজওয়ানের। সে বললো,
“আমি চলে আসবো বাবা আমার কিছু জিনিসপত্র আছে ওখানে ওগুলো নিয়েই চলে আসবো তোমায় একা থাকতে হবে না। আমি ফিরে এসে দুজন একসাথে জায়গা জমি দেখবো চাষাবাদ করবো। ঠিক আছে বাবা।”

মোতালেব তালুকদার যেন খুশি হলেন। বললেন,
“তুমি সত্যি বলছো গ্রামেই থাকবে তুমি।”
“হ্যাঁ বাবা। আমি থাকবো না পড়াশোনাও তো শেষ চাকরি করার ইচ্ছে থাকলেও এখন আর করবো না তোমার সাথেই থাকবো এখানে এসে কিছু করবো।”

রেজওয়ানের মাথায় হাত বুলালেন মোতালেব তালুকদার। বললেন,
“ঠিক আছে। তুমি ফিরে এলেই তোমার জন্য একটা লাল টুকটকে বউ খুঁজে আনবো আমি।”

এক্ষেত্রে কিছু বলে না রেজওয়ান লাজুক হাসে শুধু। যা দেখে রাগান্বিতার বাবা মিষ্টি হেঁসে বলে,
“তা কবে যেতে চাইছো শহরে?”

রেজওয়ান বেশি সময় না নিয়েই বললো,
“কালই যাই বাবা।”
“কিন্তু আকাশের যে অবস্থা।”
“চিন্তা করো না প্রকৃতি ঠিক-ঠাক থাকলেই যাবো বাবা।”

—–
রাত তখন একটু গভীরে। বলতে গেলে আজ রাগান্বিতার আর ইমতিয়াজের বাসররাত। কিন্তু রুমের মাঝে নেই কোনো সুভাশ্বোতা আর নাহি আছে রুমের কোনো সাজসজ্জা। তাও খারাপ লাগছে না রাগান্বিতার। সে চুপচাপ বসে আছে পালঙ্কে। দাদিমা আসার আগে অনেককিছু বলেছিল তাকে। দাদিমার কথা মতো একগ্লাস দুধও জোগাড় করে রেখেছে রাগান্বিতা। নিজেকে সাজিয়েছে একটু ভিন্নভাবে। বাসন্তী রঙটা রাগান্বিতার অনেক প্রিয় তাই তো এটাই পড়েছে। বাহিরে বৃষ্টি পড়া থেমেছে। তবে বাতাস বিদ্যমান। আজই প্রথম রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজ একই পালঙ্কে একই সঙ্গে ঘুমাবে। রাগান্বিতা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে বড্ড সংশয় লাগছে মনে। কেমন একটা ঝিম ঝিম ভাব। বলতে বলতে সময় গড়ালো। ঠকঠক শব্দ করে রুমে এগিয়ে আসছিল কেউ। রাগান্বিতা ভাবলো ইমতিয়াজ এসেছে। সে মাথা নিচু করে চুপটি করে বসে রইলো। ঠকঠক শব্দটা ধীরে ধীরে আরো যেন বেড়ে গেল। রাগান্বিতার এবার কেমন যেন লাগলো এভাবে শব্দ করে ইমতিয়াজ তো কখনো হাঁটে না। আর হাঁটলেও এতক্ষণে তো ঘরে চলে আসার কথা। ঠকঠক শব্দটা কানে আবার বাজলো। রাগান্বিতা সে কি ভেবে যেন পালঙ্ক ছেড়ে নামলো। আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে। ঘরে তো সে আর ইমতিয়াজ ছাড়া কেউ নেই তবে ঠকঠক শব্দটা করছে কে! ইমতিয়াজই করছে কি!

নানাবিদ ভাবনা ভেবে হাতে ল্যামটা নিয়ে চললো রাগান্বিতা। ঘরের দুয়ার খুলে যেই না বের হবে এরই মাঝে দুয়ারের সামনে এসে দাঁড়ালো ইমতিয়াজ৷ এতে খানিকটা ভড়কে গিয়ে দু’পা পিছিয়ে যায় রাগান্বিতা। রাগান্বিতার রিয়েকশন দেখে বললো ইমতিয়াজ,
“কি হলো কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

রাগান্বিতা থরথর করে বললো,
“কে যেন বাহিরে ঠকঠক করে আওয়াজ করছিল?”

ইমতিয়াজ হাসে। নিজের হাতের কোদালটা দেখিয়ে বলে,
“ঠকঠক সে তো এ করছিল।”

রাগান্বিতা এবার তাকালো ইমতিয়াজের হাতের কোদালটার দিকে। অবাক স্বরে বললো,
“আপনি এইসময় হাতে কোদাল নিয়ে কি করছিলেন?”

ইমতিয়াজ গম্ভীর আওয়াজে বলে,
“যদি বলি তোমায় খুন করতে আসছিলাম বউ।”

চলবে……

[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। একটু ফ্যামিলিগত সমস্যার কারণে এই কয়েকদিন গল্প দেই নি এর জন্য আমি দুঃখিত।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here