#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২২
________________
হাসিমাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রাগান্বিতা ইমতিয়াজের মুখের দিকে। তার যেন বিশ্বাসই হলো না কাল তারা রেশবপুরে যাবে শুনে। রাগান্বিতা ছলছল দৃষ্টি নিয়ে ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি সত্যি বলছেন আমরা কাল রেশবপুরে যাবো?”
ইমতিয়াজ রাগান্বিতার মাথায় হাত বুলালো শীতল সুরে সুধালো,
“হুম। বউয়ের কষ্টে বুক ফাঁটে বউ!’’
রাগান্বিতা যেন খুশি হলো টুক করে ইমতিয়াজের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,
“আপনি খুব ভালো ইমতিয়াজ।”
ইমতিয়াজ মিষ্টি হেঁসে জবাব দেয়,
“আর তুমি মায়াবী!’
“আপনি আমার ঠোঁটের হাসি।”
“তুমি তো নিষ্ঠুর নও কি করে বলবো তোমায় ভালোবাসি।”
“চোখের পলকে, হাসির ঝলকে অথবা চিঠির ভীড়ে আপনি বলে দিয়েন আমি বুঝে নেবো।”
“তুমি চিঠি ভালোবাসো বউ?”
“উম! চিঠি নয় প্রেমপত্র!’
লাজুক স্বরে বললো রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ হাসলো বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কোনো একদিন তোমার নামের বিশাল প্রেমপত্র পাঠাবো বউ তুমি পড়ে নিও।”
“কত শব্দের দিবেন?”
“তুমি কত শব্দের চাও বলো,
“কথা যেন না ফুড়ায় শেষ হয়েও যেন শেষ না হয় এমন প্রেমপত্র দিয়েন। শব্দ আপনি গুছিয়ে নিয়েন।”
“ঠিক আছে। এখন ঘুমাও রাত কিন্তু কম হয় নি।”
চোখ বুঝে ফেলে রাগান্বিতা। বলে,
“আপনিও ঘুমান।”
“হুম ঘুমাচ্ছি তুমি আগে ঘুমাও,
রাগান্বিতা শুনলো চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করলো মুহুর্তেই। ইমতিয়াজ মাথায় হাত বুলাতে লাগলো তার। রাগান্বিতা সুখের সাগরে যেন ভাসলো। লোকটা বড্ড বেশিই যত্ন নেয় তার।
রাতের আকাশে পাড়ি জমানো চাঁদটা তখন উঁকি মারছিল ঘরে। ইমতিয়াজ তাকালো রাগান্বিতার মুখশ্রীর দিকে। বিড়বিড় করে বললো,
“এমন মায়াবী মুখখানার ধ্বংস করি কেমন করে!”
অনেকক্ষণ যেতেই, রাগান্বিতা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ইমতিয়াজ আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে রইলো আরো কতক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে নিজের কক্ষ থেকে বের হলো লম্বা কপাটটা দিল আস্তে করে বন্ধ করে। ইমতিয়াজ নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যায় তালাবদ্ধ সেই রুমটার দিকে। চাবিটা পাশেই পায়ের কাছে থাকা একটা বড় টবের নিচে রাখা ছিল। ইমতিয়াজ তালা খুলে ভিতরে ঢুকলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজ করছিল কক্ষটাতে। ইমতিয়াজ তালাবদ্ধ কক্ষটা ভিতর থেকে আঁটকে চললো একদম সোজা। সাঁতরে দেশলাই বের করে ল্যাম জ্বালালো। ল্যামটা রাখলো সামনের টেবিলটার কাছে। চেয়ার পেতে বসলো সামনে। রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকারে আবদ্ধ থাকায় তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারপাশ অন্ধকার মাঝখানে শুধু একটা টেবিলের উপর ছোট্ট ল্যাম জ্বালানো। ইমতিয়াজ নিজের দু’গাল চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো অনেকক্ষণ। নিশ্বাস ফেললো জোরে। চোখ খুলে একটা খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে চিরকুট বানালো। হাতের বলপেন নিয়ে লিখতে শুরু করলো কিছু। সে লিখলো,
“আমি ধ্বংস, কিন্তু সে আমাতেই মুগ্ধ!
“আমি ভয়ংকর, সে শীতল।”
“আমি খুনি, সে নিরপরাধ।”
“আমি যে প্রতিহিংসার আগুনে গড়া এক নিষ্ঠুর পাপী, সে কেন বুঝচ্ছে না এমন পাপী মানুষদের কখনো ভালোবাসতে নেই, কখনোই না।”
কথাগুলো লিখেই চিরকুট ভাজ করলো। সযত্নে রাখলো টেবিলের পাশেই থাকা ছোট্ট একটা ঝুলির মধ্যে। সেখানে আরো কতগুলো এমন চিরকুট লেখা ছিল। ইমতিয়াজ সেই চিরকুটগুলোতে হাত বুলিয়ে আবার কিছু লিখতে শুরু করলো। লেখা শেষ হতেই ল্যাম হাতে এগিয়ে যায় রুমের ডানদিকটায় যেখানে বিশাল একটা জানালা আছে। ইমতিয়াজ জানালাটা খুলে দিতেই বাহিরের বাতাস এসে ছুঁয়ে দিল তারে, নিভিয়ে দিতে নিলো তার হাতের ল্যামটাকে। কিন্তু নিভলো না ইমতিয়াজ হাত দিয়ে আটকালো তাহারে। কতক্ষণ পের হতেই হঠাৎ কোথা থেকে যেন উড়ে আসলো ইমতিয়াজের সেই কবুতরটা। ইমতিয়াজ খাবার খাওয়ালো তাকে। তারপর সেকেন্ড চিরকুটটা বেঁধে দিলো কবুতরের পায়ে। বিড়বিড়িয়ে কি যেন বললো! কবুতর চলে গেল। ইমতিয়াজ তার পানে চেয়ে রইলো বহুক্ষণ!’
—-
পরেরদিন,
বেশ সকাল সকালই রাগান্বিতার বাবা জানতে পারলেন আজ নাকি তার মেয়ে জামাইরা আসবে। কথাটা শোনা মাত্রই তিনি ছুটে যান দাদিমার ঘরে। মানুষটা রাগান্বিতার শোকে অনেকটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। রাগান্বিতা আসবে শুনেই সে যেন সতেজ হলেন, রান্নাবান্নার কাজে হাত ছোঁয়ালেন। খবরটা দিয়ে গেছে মোকলেস,, বলেছে সকালে নাকি তার কাছে একটা কবুতর এসে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। রাগান্বিতার বাবার হাতেই চিঠিটা দিয়েছিল মোকলেস। সেখানে ইমতিয়াজ লিখেছিলো,
আসসালামু আলাইকুম জমিদার সাহেব। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমরা আগামীকাল বৃহঃস্পতিবার আসছি, দাদিমাকে আমার সালাম জানাবেন সঙ্গে বলবেন ভালো ভালো রান্না করে রাখতে তার রাগান্বিতা আসছে।
ইতি
ইমতিয়াজ!’
রাগান্বিতার বাবা প্রচন্ড খুশি হয়েছেন অবশেষে তার প্রাণপ্রিয় কন্যা তার দুয়ারে পা রাখবে। চিঠিতে আগামীকাল থাকলেও বৃহস্পতিবার আজকে। তবে চিঠি লেখার তারিখ অনুয়ায়ী হয় কালকে।”
‘বাবা’ হঠাৎই রেজওয়ানের ডাক শুনে পিছন ঘুরলেন মোতালেব তালুকদার। তাকে ঘুরতে দেখেই রেজওয়ান প্রশ্ন করলো,
“বাড়িতে হঠাৎ কিসের তোড়জোড় শুরু হলো বাবা?”
“রাগান্বিতা আসবে আজকে!’
বাবার কথা শুনে চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটলো রেজওয়ানের। উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,
“সত্যি বাবা।”
“হুম ইমতিয়াজ বার্তা পাঠিয়ে ছিল।”
“আমি তবে বাজার থেকে ওর জন্য ভালো ভালো খাবার, ফলমূল নিয়ে আসি বাবা?”
“হুম যাও সঙ্গে করে মিষ্টি আনতে ভুলো না কিন্তু।”
“আচ্ছা বাবা।”
বলেই বেরিয়ে পড়লো রেজওয়ান। রেজওয়ান শহরে গিয়ে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে সব নিয়ে চলে এসেছে। আজ চারদিন হয়েছে এসেছে। একবার ভেবেছিল বোনের কাছে যাবে একবার কিন্তু পরে আবার কি ভেবে যেন যায় নি।
—–
এবারের যাত্রাপথের মাধ্যম হিসেবে ইমতিয়াজ ট্রেনটাকে বেছে নিয়েছে। তার ইচ্ছে সন্ধ্যার মধ্যেই রেশবপুরে পৌঁছানো। তাই সকাল সকালই বেরিয়ে পড়েছে। এদিকটা থেকে বের হতেই বড় বিপাকে পড়তে হয় ওদের যেমন লেগেছে সময় তেমন ক্লান্তিকর পরিশ্রম। ঢাকার শহরের যাত্রাপথ বড্ডই কঠিন লাগে রাগান্বিতার। এত মানুষ আশেপাশে থাকে। গ্রামের যাত্রাপথ যেন এর চেয়ে সোজা। বগির সিটে বোরকা পরিধিত বসে আছে রাগান্বিতা। আর তার পাশেই ইমতিয়াজ। প্রকৃতির মুগ্ধ করা বাতাস তাদের ছুঁয়ে দিচ্ছে বারংবার। রাগান্বিতা চেয়ে চেয়ে শুধু পথগুলো দেখলো কি সুন্দর এই দেশখানা। মাঠে মাঠে গরু -মহিষ, উঁচু উঁচু গাছ সঙ্গে নীল আকাশ।
সময় গড়ালো ওরা ট্রেন ছেড়ে নৌকায় উঠলো। নদীতে জোয়ার ভাটার উপদ্রব থাকায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা লাগলো। বেশ কয়েকঘন্টা নদীতেও কাটানো হলো তাদের আসার পথে দু’দিনের খাবার নিয়ে এসেছিল তারা যদি কোনোভাবে নৌকার বেড়া জ্বালে আঁটকে পড়ে তখন। প্রথম জোয়ার ভাটার তান্ডব দেখে রাগান্বিতা তাই ভেবেছিল আজ তারা বাড়ি যেতে পারবে না। কিন্তু পারলো! ওরা যখন রেশবপুরের নদীর ঘাটে এসে পৌঁছালো তখন বিকেল প্রায়। ইমতিয়াজ দ্রুত মাঝির পাওনা মিটিয়ে চললো এগিয়ে। এবার লাস্ট বাহন তাদের গরুর বা মহিষের গাড়ি। যেটা সরাসরি রাগান্বিতাদের বাড়ির সামনে নিয়ে যাবে। ইমতিয়াজ অনেক খুঁজে একটা বড়সড় মহিষের গাড়ি ভাড়া করলো। রাগান্বিতাও উঠে বসলো। চোখ বেয়ে যেন তার অশ্রু গড়ালো কতদিন পর নিজ জন্মস্থানের হাওয়ার গন্ধ পেল। রাগান্বিতা চুপটি করে বসে রইলো, আর গাড়ির পিছন দিকটার এদিকটাতেই ইমতিয়াজ বসা। গ্রামের প্রকৃতির দিকে চোখ বুলাচ্ছিল সে। সঙ্গে হঠাৎই বিড়বিড় করে বললো,
এ সেই গ্রাম, যে গ্রাম আমায় নিঃস্ব করেছে,
শেষ সর্বস্ব হারিয়ে করে দিয়েছে ফকির।”
পরমুহূর্তেই রাগান্বিতার দিকে তাকিয়ে আবারো ধীর স্বরে বললো ইমতিয়াজ,
আবার এই গ্রামই সঙ্গে দিয়েছে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসার এক রমনী, সে রমনী পাষাণ মন গলাতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। একটু একটু করে ভরিয়ে দিচ্ছে সব। তবুও কভু কি পারবে পুরোপুরি সবটা ঘোচাতে, খামতি কমিয়ে নতুন প্রেমের সূচনায় মোড়াতে!’
—-
সদর দরজার সামনে পায়চারি করছে রাগান্বিতার বাবা। মন, চোখ-মুখে যেন বড্ড অস্থিরতার ভাব। মেয়েটাকে একটুখানি দেখার জন্য বড্ড ব্যাকুল বাবা। কখন যে আসবে কে জানে!” হঠাৎই বাড়ির সামনে এসে একটা মহিষ গাড়ি থামলো। রাগান্বিতার বাবা ছুট্টে এগিয়ে গেলেন,,
#চলবে…..
[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️