প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-০৭

0
278

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-০৭
________________
ঢেউয়ের স্রোতে ভাসছে নৌকা। বৈঠা হাতে নৌকা চালাচ্ছে ইমতিয়াজ মাঝে বারংবার দেখছে রাগান্বিতাকে। মেয়েটাকে বড্ড বেশিই যেন অন্যরকম লাগছে এখন। ইমতিয়াজ বৈঠা বাইতে বাইতে বলে উঠল,
“তা আজ হঠাৎ সাজ বিহীন বাহিরে নামলেন। দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে না আপনি জমিদার বাড়ির সেই রূপবতী ছোট কন্যা।”

রাগান্বিতা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“কেন ভালো লাগছে না বুঝি?”
“না সেটা নয় একটু অন্যরকম লাগছে তবে খারাপ লাগছে না। আপনারা তো সুন্দরী জমিদার কন্যা আপনাদের খারাপ লাগতে পারে নাকি।”

খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললো রাগান্বিতা,
“কথায় কথায় রূপবতী বলবেন না তো শুনতে ভালো লাগে না।”

ইমতিয়াজ হাসে। মোকলেসকে নিয়ে রাগান্বিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ভালো মানুষের দাম রইলো না রে মোকলেস আজকাল সুন্দর জিনিসকেও সুন্দর বলা নিষিদ্ধ।”

রাগান্বিতা চোখ রাঙানোর দৃষ্টিতে তাকালো ইমতিয়াজের দিকে। বললো,
“সুন্দর মানেই ভয়ংকর এটা জানেন নিশ্চয়ই।”

ইমতিয়াজ এবার ভাড়ি উচ্চস্বরে হাসলো। বললো,
“আপনি বড্ড হাসাতে পারেন রাগান্বিতা। সমস্যা নেই একটা কথা জেনে রাখুন, এই ইমতিয়াজের ভয়ংকর জিনিসের উপরই আকর্ষণ বেশি।”
“আপনার সাথে কথায় পারা যাবে না।”
“আপনি এত সুন্দর করে কথা বলেন যে উত্তর না দিয়েই পারি না।”

রাগান্বিতা চুপ হয়ে যায় আর কিছু বলে না। এই ছেলেরা বড্ড বেশিই বদমাশ। ইমতিয়াজ নদীর পানির দিকে তাকায়। ঢেউয়ের তালে তালে চলতে থাকে। এভাবে চলতে চলতে তারা এসে পৌঁছালো বিপুল সৌন্দর্যে ঘেরা এক শাপলার বিলে। যেখানে রয়েছে শুধু কারি কারি শাপলা। কি সুন্দর রঙ তাদের! রাগান্বিতা মুগ্ধ হলো এত সুন্দর সুন্দর শাপলা দেখে। ইমতিয়াজ নৌকা চালানো হাল্কা থামালো। বললো,
“হাতে শাপলা কুড়াবেন নাকি?”

রাগান্বিতা মুখে জ্বলজ্বল করা এক হাসি নিয়ে বললো,
“এটা তুলার জন্যই তো এতটা পথ বাবার থেকে দিলাম ফাঁকি।”

ইমতিয়াজ যেন এতক্ষণে বুঝলো রাগান্বিতা কেন তার সাজগোছ পাল্টে বেরিয়েছে। ইমতিয়াজ ডাটিসহ শুধু পাতাটা ছাড়িয়ে হাতে করে একটা সুন্দর লাল রঙের শাপলা তুলে আনলো। বৈঠা দিলো মোকলেসের হাতে। তারপর ফুলটার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিতাকে উদ্দেশ্য বললো,
“একটু সাজবেন নাকি।”

রাগান্বিতা অবাক হলো। অবাক হয়েই বললো,
“সাজবো মানে?”

ইমতিয়াজ তার হাতের শাপলার নিচের অংশ মানে ডাটিটাকে মাঝ বরাবর করে মাঝখান থেকে ছিঁড়ে দুইভাগ করে দিলো। খুব সুন্দর ডিজাইনের মতো করে ডাটিটার দুই অংশকে ভাগ ভাগ করলো তবে পুরোপুরি ছিড়লো না। রাগান্বিতা শুধু দেখতেই ছিল বিষয়টা আর তার পিছনে লুবনা নিজের মতো করে শাপলা কুড়াতে লাগলো। ইমতিয়াজ শাপলার ডাটির অংশটুকু সুন্দর মতো সাজিয়ে শাপলার ফুলটাকে পুরোপুরি মেলে দিলো তারপর রাগান্বিতার গলায় মাপটা আন্দাজ মাফিক ডাটির দুই অংশটুকু গিট দিলো তারপর রাগান্বিতার দিকে ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বললো গলায় পড়ে নিন।

রাগান্বিতা শুধু তাকিয়েই ছিল ইমতিয়াজের হাতের দিকে। শাপলার ফুলটা দিয়ে গলার অলংকার বানিয়েছে ইমতিয়াজ। রাগান্বিতার কোনো হেলদোল না দেখে আবারও বললো ইমতিয়াজ,
“কি হলো ধরুন?”

রাগান্বিতা নিলো। রাগান্বিতা ফুলটা নিতেই ইমতিয়াজ বললো,
“এবার গলায় পড়ে নিন।”

রাগান্বিতা বিনা বাক্যে পড়ে নিলো। ইমতিয়াজ যেন খুশি হলো এতে। ইমতিয়াজ চাইলে নিজ থেকেই ওটা পড়িয়ে দিতে পারতো রাগান্বিতাকে কিন্তু দিলো না। অদ্ভুত একটা বিষয় ফুলটা পুরোপুরি রাগান্বিতার গলার মাপ মতো হয়েছে। ইমতিয়াজ আশেপাশে তাকালো পর পর ছোট ছোট দেখে আরো দুটো লাল টুকটুকে শাপলা নিলো। সুন্দর মতো ফুলদুটোকে মেলে দিয়ে রাগান্বিতার দুই কানে পড়ে নিতে বললো। তার কানে থাকা ছোট ছোট অলংকারের সাথে গুঁজে দিয়েছে ফুলদুটো এতে আরো বেশি মায়াবীময় যেন হয়ে উঠলো রাগান্বিতার মুখখানা। দুই হাতেও পড়েছে শাপলা। ইমতিয়াজ এক মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার মুখের দিকে। খুবই স্বল্প আওয়াজে বললো,

‘মেয়েটাকে এত সুন্দর লাগছে কেন!’

ইমতিয়াজ আবারও আশেপাশে তাকালো তবে এবার আর শাপলা তুললো না শাপলার আশেপাশে কিনারায় থাকা ছোট কিছু ফুল তুলে সেগুলো মাঝখান থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে একটার ভিতর আরেকটা রেখে বানিয়ে ফেললো মাথায় দেওয়ার মতো একটা অলংকার। ইমতিয়াজ জিনিসটা রাগান্বিতার হাতে দিয়ে মুখে বললো না ইশারায় নিজের মাথাটা দেখিয়ে পড়ে নিতে বললো। রাগান্বিতাও বিষয়টা বুঝতে পেরে নিরদ্বিধায় পড়ে নিলো। এবার যেন পুরোপুরি পারফেক্ট লাগছে রাগান্বিতাকে। ইমতিয়াজ বেশ অনেক্ক্ষণ তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার দিকে। লাল শাড়ি, গলায় লাল রঙের শাপলার হার, কানে শাপলার দুল, হাতে শাপলার ব্যাচলেট, মাথায় ছোট ছোট ফুলের মায়াবী আলিঙ্গনের ছড়াছড়ি,লাল রঙা ঠোঁট। ইস বড্ড বেশিই যেন সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।’

ইমতিয়াজ মনে মনে আওড়ালো,
“তোমার এই ভয়ংকর রূপ কখন যেন আমায় মেরে দেয় রাগান্বিতা।”

মোকলেসের ডাক শোনা গেল। আকাশে মেঘ করেছে যখন তখন বৃষ্টি নামবে। মোকলেস নৌকা চালাতে চালাতে বললো,
“ইমতিয়াজ ভাই বৃষ্টি আইবো মনে হয় নৌকা কি ওইপার নিয়া যামু।”

রাগান্বিতারও যেন হুস ফিরলো। সেও যেন এতক্ষণ কোন ঘোরে আঁটকে ছিল। ইমতিয়াজের ধ্যান ভাঙলো এসব কি ভাবছিল সে। ইমতিয়াজ রাগান্বিতার থেকে চোখ সরিয়ে ফেললো। আকাশপানে তাকিয়ে খানিকটা চেঁচিয়ে মোকলেসকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“বৈঠা আমার কাছে দে,

মোকলেস দিলো ইমতিয়াজও দ্রুত বৈঠা হাতে নৌকা চালাতে লাগলো। আকাশে ভয়ংকরভাবে মেঘ করেছে যখন তখন বৃষ্টি পড়বে। ইমতিয়াজ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাগান্বিতা আর লুবনা ওদের শক্ত করে বসতে বললো। ওরা বসলো। অতঃপর যে পথ দিয়ে এসেছিল সেই পথ দিয়েই দ্রুত ছুটতে লাগলো ইমতিয়াজ। রাগান্বিতা তখনও তার গায়ের অলংকার নিয়ে ভাবছিল। আনমনেই মুচকি হেঁসে উঠলো। তার হাসিটা বুঝি দেখলো ইমতিয়াজ। তবে আপাতত বেশি ভাবলো না।’

প্রায় আধ ঘন্টার রাস্তা বিশ মিনিটে আসলো ইমতিয়াজ। অনেক দ্রুতই আসলো তারা। নৌকা কিনারায় আসতেই মোকলেস দ্রুত নেমে নৌকা বাঁধলো ঘাটে। তারপর একে একে নামলো লুবনা আর রাগান্বিতা ইমতিয়াজও নামলো শেষে। খানিকটা ফিস ফিস করে রাগান্বিতার কানের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে বললো,
“প্রেম বড্ড ভয়ংকর রাগান্বিতা,আপনি সইতে পারবেন না।”

ইমতিয়াজ চলে গেল আর রাগান্বিতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ওখানে। ছেলেটা তাকে কি বলে গেল? সে কি প্রেমে পড়েছে না তো তাহলে বললো কেন কথাটা! লুবনা ডাকলো রাগান্বিতাকে। বললো,
“বাড়ি যাইবা না বুবু! বৃষ্টি নামবো তো।’

রাগান্বিতার হুস আসলো। লুবনার দিকে তাকিয়ে বললো,
“হুম যাবো তো চল যাই।”

রাগান্বিতা আর একবার ইমতিয়াজের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে চলে গেল নিজেদের বাড়ির দিকে। অন্যদিকে ইমতিয়াজ সেও ঘুরলো পিছনে। এক অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,
“জগৎ জুড়ে যেন শুধুই ভয়ংকর সব প্রেমের খেলা, হয় শুরু নয় সব শেষ।”

খিলখিল করে হাসলো ইমতিয়াজ। মাথায় থাকা গামছাটা খুলে চুলগুলো ঝেড়ে ঠিক করলো। তারপর কোমড়ের সাথে এতক্ষণ যাবৎ আঁটকে রাখা তার চশমাটা বের করে পড়ে নিলো চোখে। অদ্ভুত স্বরে বললো,
“তুমি কি প্রেমে পড়েছো ইমতিয়াজ?”

ইমতিয়াজ নিজে নিজেই জবাব দিলো,
“হবে হয়তো।’

——
বাড়িতে নিজের রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে রাগান্বিতা। ফুলের তৈরি এত সুন্দর অলংকারে আজই প্রথম যেন দেখছে নিজেকে। রাগান্বিতা ভাবলো তখনকার ইমতিয়াজকে। ছেলেটা যেন পুরোই অন্যরকম। কিন্তু তখনকার কথাটা? রাগান্বিতার ভাবনার মাঝে তার রুমে হাজির হলো মিলিতা বেগম মানে দাদিমা। খানিকটা উৎসাহের সঙ্গে বললেন,
“শাপলা আনো নাই রাগান্বিতা?”

রাগান্বিতার হুস আসলো। পিছ ফিরে বললো,
“হুম এনেছি তো দাদিমা ওই রন্ধনশালায় রেখেছি গিয়ে দেখো।”

দাদিমা বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার দিকে। আচমকাই রাগান্বিতার মাঝে কার যেন প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো তার সামনে। কিছু একটা ভেবেই ভয়ংকর এক চোখ নিয়ে চেঁচিয়ে বললো দাদিমা,
“এগুলো তুমি কি পড়ছো রাগান্বিতা? তাড়াতাড়ি খুলে ফেলো?”

হুট করেই দাদিমার এমন কথা শুনে রাগান্বিতা যেন চমকে উঠলো। বললো,
“কেন কি হয়েছে দাদিমা? আমায় ভালো লাগছে না।”
“তুমি এগুলান খুলো হয়ালে।”

বলেই এগিয়ে গিয়ে রাগান্বিতার গা থেকে শাপলা ফুলের অলংকার খুলে ফেলতে লাগলেন দাদিমা। উত্তেজিত হয়ে গেলেন তিনি। দাদিমার এমন রিয়েকশনে রাগান্বিতা যেন কিছুই বুঝলো না। সে বার বার দাদিমাকে শান্ত করতে করতে বললো,
“তুমি এমন করছো কেন? আমি সব খুলে ফেলছি দাঁড়াও।”

রাগান্বিতা সব খুলে ফেললো। এমনিতেও সে এগুলো খুলতো এখন। দাদিমা ফুলগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে বললো,
“আর কহনো ওইসব পড়বা না, ওগুলায় হাপ থাকে জানো।”

রাগান্বিতা যেন এতক্ষণে বুঝলো দাদিমার উত্তেজিত হওয়ার কারনটা। রাগান্বিতা হাল্কা হেঁসে বললো,
“তুমিও না দাদিমা ওসবে সাপ আসবে কোথা থেকে আমি তো দেখেই পড়েছি।”
“ছোডো ছোডো হাপ থাকে তুমি জানো না। পাঁচবাড়ির আগে মুন্নার মাইয়াডা এমন শাপলা গলায় দিয়া মইরা গেছে। আর কহনো পড়বা না আমারে কও?’
“আচ্ছা ঠিক আছে। পড়বো না। মুন্নার মেয়ে কে? আমি তো এসব শুনিনি।”
“তহন তুমি ছোডো ছিলা তাই হুনো নাই আর পড়বা না কিন্তু ওগুলান।”
“আচ্ছা দাদিমা তুমি ভয় পেও না আর পড়বো না আমি।”

দাদিমা যেন এতক্ষণে শান্ত হলেন। কপাল জুড়ে থাকা ঘামটা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে বললো,
“নাইয়া আও আমি খাওন দিতাছি।”
“ঠিক আছে দাদিমা।”

রাগান্বিতার উত্তর পেতেই রুম থেকে বের হলেন দাদিমা। হাত পা তার এখনো কাঁপছে।

রাগান্বিতা বিষয়টা দেখলো কিন্তু সে সত্যি বুঝলো না। দাদিমা কি সত্যি ওইকারণে তার সাজ দেখে ঘাবড়ে গেলেন নাকি অন্যকিছু! বেশি ভাবলো না রাগান্বিতা।”

#চলবে…..

[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️
#everyone 🦋.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here