#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১৮
________________
থমথমে চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে রাগান্বিতা সামনের কবতুরটার দিকে। তার মাথায় ঢুকছে না এখানে কে চিঠি পাঠাবে। রাগান্বিতা এগিয়ে গেল কবুতরটার দিকে ছুঁতে চাইলো বার বার কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো রাগান্বিতার হাতে কবুতরটা ধরা দিচ্ছে না এবার। সে এদিক সেদিক চোখ বুলাচ্ছে শুধু। রাগান্বিতা কবুতরটার হাবভাব ঠিক বুঝচ্ছে না চিঠি নিয়ে যখন এসেছে তখন তাকে নিতে দিচ্ছে না কেন! কবুতর টা বেশ কিছুক্ষণ এক স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল রাগান্বিতা ছুঁতে গেলেই ছুটে যাচ্ছিল অন্যদিকে। শেষমেশ রাগান্বিতা কবুতর ধরার হাল ছেড়ে দিল বোধহয় কবুতরটা তার রাস্তা গুলিয়েছে। রাগান্বিতা পালঙ্কে বসে রইলো চুপচাপ। কবুতরটা অনেকক্ষণ বসে থেকে আবার ছুটে চলে গেল। রাগান্বিতা জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো কবুতরটার যাওয়ার পানে।
“কান্ডটা ঠিক কি হলো তাই যেন বুঝলো না! কবুতর এলো চিঠি নিয়ে অথচ চিঠি না দিয়েই চলে গেল। অদ্ভুত তো!’
কবুতর যাওয়ার তিন সেকেন্ডের মাথাতেই রুমে প্রবেশ করলো ইমতিয়াজ। শান্ত স্বরে বললো,
“খাবার তৈরি নিচে চলো রাগান্বিতা।”
রাগান্বিতা খানিকটা চমকে উঠলো কারণ সে তখনো কবুতরটার কথা ভাবছিল। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের দিকে তাকালো ভাবলো ইমতিয়াজকে কবতুরের কথাটা বলা উচিত। তাই করলো। সে চিন্তিত স্বরে বললো,
“জানেন তো এই মাত্র একটা ঘটনা ঘটেছে।”
ইমতিয়াজ রাগান্বিতার দিকে এগিয়ে আসলো। খানিকটা অবাক স্বরে বললো,
“কি ঘটনা?”
“মাত্র একটা কবুতর এসেছিল কোনো এক বার্তা নিয়ে কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো আমি তাকে ছুঁতে পারি নি যতবার ধরতে গেছি ততবারই পালিয়ে গেছে। এমনটা কেন করলো?”
ইমতিয়াজ হাসলো। বললো,
“এই সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তুমি চিন্তা করছো।”
ইমতিয়াজের কথা শুনে আহ্লাদী স্বরে বললো রাগান্বিতা,
“বারে করবো না বার্তা নিয়ে আসলো অথচ না দিয়েই চলে গেল এমনটা কেন হলো এর আগে তো এমন হয় নি।”
ইমতিয়াজ রাগান্বিতার পাশে বসে ওর হাত ধরে মৃদুস্বরে বললো,
“মানুষ তো প্রায়সই তার গন্তব্য ভুলে যায় ওটা তো মাত্র পাখি ছিল।”
ইমতিয়াজের কথায় এক শীতল ভরা চাহনী নিয়ে তাকালো রাগান্বিতা ইমতিয়াজের চোখের দিকে। বললো,
“তার মানে আপনি বলছেন পাখিটা তার ঠিকানা ভুলে গিয়েছিল।”
“হুম। ভুলে যাওয়া কি অস্বাভাবিক কিছু?”
“তাও ঠিক।”
“তুমি কি ঘাবড়ে গিয়েছিলে?”
টনক নড়লো রাগান্বিতার। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বললো,
“না তবে একটু অবাক হয়েছি তাই ভাবছিলাম।”
“বুঝেছি আর ভাবাভাবির প্রয়োজন নেই চলো নিচে খাবে।”
রাগান্বিতা শুনলো নিজের মাথায় ঘোমটা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো,
“ঠিক আছে। চলুন,
“হুম তুমি হাঁটো আমি আমার জামাটা বদলে আসছি। ভয় নেই নিচে চাচা আছে,
রাগান্বিতা আর কিছু বললো না। হেঁটে যেতে যেতে বললো শুধু,
“ঠিক আছে। দ্রুত আসুন।”
“হুম যাও তুমি। আমি আসছি।”
রাগান্বিতা চলে গেল। রাগান্বিতা যেতেই ইমতিয়াজ তার রুমের দুয়ারটা আঁটকে দিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। চুপ করে দাঁড়ালো কিছুসময় এরই মাঝে উড়ে যাওয়া সেই কবতুরটা আবার ফিরে এসে বসলো ইমতিয়াজের কাঁধে। কারণ সেটা যায় নি এতক্ষণ বাড়িরই আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ইমতিয়াজ কাঁধ থেকে পাখিটা হাতে নিয়ে আস্তে করে পায়ে থাকা চিঠিটা নিলো। চিঠিটা নিতেই পাখিটা পুনরায় ইমতিয়াজের কাঁধে চড়ে বসলো। ইমতিয়াজ চিঠিটা খুললো। অনেক্ক্ষণ তাকিয়ে রইলো চিঠিটার দিকে। পড়লো কিছু। তার দৃষ্টি ছিল স্থির ইমতিয়াজ চিঠিটা পুনরায় ভাজ করে মুঠোয় চেপে রাখলো। মনে মনে বললো,
“ভাবনাটাই তবে সত্যি হলো!’
ইমতিয়াজ এগিয়ে গেল তার টেবিলটার ড্রয়ার থেকে একটা ঠোংগা বের করে কবুতরের খাবার গম বের করলো। গম দেখেই কবুতর ডানা ঝাপটালো ইমতিয়াজ ঠোংগা থেকে গম বের করে টেবিলের উপর একটা ছোট্ট বাটিতে রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে কবুতর টা ইমতিয়াজের কাঁধ ছেড়ে উড়ে বসলো টেবিলের উপর। তারপর নিজের ঠোঁট দিয়ে ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে খেতে শুরু করলো গম। ইমতিয়াজের কবুতর খুব পছন্দ। ছোট বেলা থেকেই এই কবুতরটা আসতো ইমতিয়াজের ঘরে ইমতিয়াজ তাকে গম খাওয়াতো। খাওয়া শেষ হলেই আবার উড়ে যেত। এভাবে করতে করতে একটা বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়েছে ইমতিয়াজের সাথে কবুতরটার। এখন তো খিদে পেলেই ছুটে আসে। খুব উপকারী কবুতর। ইমতিয়াজও অনেক যত্ন করে কবুতরটাকে।
—–
আসন পেতে খাবার নিয়ে নিচে বসে আছে রাগান্বিতা। সচরাচর নিচে বসে তেমন একটা খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই রাগান্বিতার। বাড়িতে বসে টেবিল চেয়ারে বসেই খাওয়া হতো। রাগান্বিতার বাবা ছিলেন একটু বিদেশি টাইপের, রাগান্বিতা শুনেছিল একসময় নাকি বিদেশিনীদেরে সাথে তার বাবার বেশ ভাব ছিল কিন্তু সময়ের সাথে সেই ভাব বিনিময় সব ঘুচে যায়। তবে কিছু অভ্যাস আজও বদলাতে পারে নি রাগান্বিতার বাবা। গ্রামের আর সব ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা মা’দের আব্বা আম্মা বলে ডাকে কিন্তু রাগান্বিতার বাবা শিখিয়েছেন আব্বাকে বাবা বলা আর আম্মাকে মা। রাগান্বিতার বাবা বেশ কিছু দেশের ভাষা জানতেন পড়াশোনাতেও বেশ পটুছিলেন। কিন্তু রাগান্বিতার মা ছিল একটু সাধারণ পড়াশোনা খুব বেশি জানতেন না। উনি সবসময় অশুদ্ধ ভাষাতেই কথা বলতেন। রাগান্বিতার বাবাও তার বউয়ের সাথে তার মতো করেই কথা বলতেন যেমনটা দাদিমার আর গ্রামের অশিক্ষিত মানুষদের সাথে করেন। তবে রাগান্বিতা আর রেজওয়ানকে সবসময় শুদ্ধ ভাষাই শিখিয়েছেন। মায়ের আদর রেজওয়ান আর কুহু কিছুটা পেলেও রাগান্বিতা তেমন পায় নি। জোরে নিশ্বাস ছাড়লো রাগান্বিতা। তার কাছে ভাষা বলতে বাবার মুখের ভাষাই সেরা।”
“এখনও খাওয়া শুরু করো নি কেন?”
হঠাৎই ইমতিয়াজের ভয়েসটা কানে বাজতেই নিজের ভাবনা থেকে বের হলো রাগান্বিতা। স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ইমতিয়াজের দিকে। ইমতিয়াজের চোখে চশমা নেই গায়ের সাদা রঙের ফতুয়া আর সাদা পায়জামা পড়া খুবই সাধারণ তবে অসাধারণ লাগছে রাগান্বিতার কাছে। রাগান্বিতা দৃষ্টি সরালো। বললো,
“আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
ইমতিয়াজ হাল্কা হাসলো। বসলো রাগান্বিতার পাশ দিয়ে। বললো,
“খিদে পেলে খেয়ে নিবে আমার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।”
রাগান্বিতা হাল্কা মাথা নোয়ালো লাজুক কণ্ঠে বললো,
“দাদিআপা মানে দাদিমা বলেছিলেন বিয়ের পর নাকি জামাই বউকে একসাথে খেতে হয়। জামাই না খেলে বউকে তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।”
ইমতিয়াজ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার দিকে। মেয়েটাকে বড্ড বেশিই লাজুকতায় ধরেছে তবে খারাপ লাগছে না। ইমতিয়াজ মৃদু হেসে বললো,
“চলো খাই।”
“জি।”
রাগান্বিতা ইমতিয়াজকে খাবার এগিয়ে দিল। ইমতিয়াজও নিলো। তারপর দুজন একসাথে করে খেতে শুরু করলো খাবার ।’
——
নিঝুম বিকেল! প্রকৃতি খুব বিষণ্ণ, নিরিবিলি আর চুপচাপ। রাগান্বিতা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির জন্য বড্ড মন খারাপ হচ্ছে বাবা, দাদাভাই, দাদিমা সবাইকে তার খুব মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে ছুট্টে চলে যাই তাদের কাছে। রাগান্বিতার খারাপ লাগলো। ঘরে ইমতিয়াজ ঘুমাচ্ছে। বোধহয় রাতে মোটেও ঘুম হয় নি তার। বাড়ির পরিবেশটা একটু বেশিই ছমছমে কেমন যেন। রাগান্বিতা ভিতু নয় বেশ সাহসী তারপরও এমন একটা জায়গায় ইমতিয়াজ একা থাকতো ঠিক কেমন যেন লাগলো। আচমকা আকাশের মেঘ বদলালো, এমনিতেও হাল্কা কালো ছিল এখন পুরো দমেই কালো হয়ে গেল। মেঘে ঢেকে গেল পুরো আসমানটা। আশপাশের পুরো গাছপালা নড়েচড়ে উঠলো বাতাস বইতে লাগতো তীব্র গতিতে। বালি আসছিল পুরো ঘরভরে। রাগান্বিতা চোখ বন্ধ করে ফেললো তার অবাধ্য ঘন কালো লম্বা চুলগুলো উড়তে লাগলো আপনাআপনি। ঘোমটা পড়ে যাচ্ছিল বারংবার। বিরক্ত লাগলেও তার বাতাসটা ভালো লাগছিল। ইমতিয়াজ হঠাৎই ছুটে আসলো ‘রাগান্বিতা, রাগান্বিতা’ বলতে বলতে চলে আসলো দ্রুত। ঘুমটা তার মাত্রই ভাঙলো। প্রকৃতির থমকানোর খানিকটা ঘাবড়ে ছিল সে। ইমতিয়াজ ছুট্টে এসে থেমে গেল বারান্দার দুয়ার পর্যন্ত এসেই রাগান্বিতার সেই মোহনীয় সৌন্দর্য দেখেই চোখ আঁটকে গেল তার। স্থির হলো চোখ, আঁটকে গেল শরীর। কি যেন এক মায়া সৃষ্টি হলো ঠিক বুঝলো না ইমতিয়াজ!’
রাগান্বিতা পিছন ঘুরলো। ইমতিয়াজকে দেখেই একটু চমকালো। এগিয়ে এসে বললো,
“আপনার ঘুম ভেঙে গেছে?”
কেমন এক ঘোরলাগানো স্বরে বললো ইমতিয়াজ,
“তুমি ঘুমাতে দিচ্ছো কই।”
“আমি আঁটকে রাখলামও বা কই?”
“রেখেছো তো তোমার ওই চুলে, কানে ঝুলানো দুলে, হাতের কাঁকনে, গলার গহনে, চোখের ওই মায়াবী ধরনে। এতভাবে আঁটকে রেখে বলছো, আটকালাম কই! এ কিন্তু ভাড়ি অন্যায়!’
রাগান্বিতা লজ্জা পেল। তবে দমলো না মাথা নুইয়ে হাসতে হাসতে বললো,
“আপনার দৃষ্টি ভালো না তাই আঁটকে যান।”
ইমতিয়াজ এগিয়ে যায়। রাগান্বিতার থুতনি ধরে মাথাটা উচু করে বললো,
“আমি তোমার চোখে বার বার আমার সর্বনাশ কেন দেখি বউ?”
রাগান্বিতা চমকালো, ভড়কালো, অবাক হলো খুব। এ বুঝি প্রেমকথন ছিল! রাগান্বিতা লাজুক হয়ে মিষ্টি হেঁসে কেমন করে যেন জড়িয়ে ধরলো ইমতিয়াজের বুক!’
#চলবে…..
[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️