প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-৩২

0
245

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-৩২
________________
ফজরের ধ্বনি কানে আসতেই ঘুমটা ভেঙে গেল রাগান্বিতার সে আধশোয়া হয়ে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকালো কিছুক্ষণ। চোখের ঘুমটা পুরোপুরি যেতেই রাগান্বিতা তাকালো ইমতিয়াজের ঘুমন্ত মুখের দিকে। কি মায়া ভরা ওই মুখখানায়! রাগান্বিতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ইমতিয়াজের মুখের দিকে। ধীর স্বরে বললো,“আপনায় ভীষণ ভালোবাসি প্রিয় কখনো ছেড়ে যাবেন না তবে যে আমি পাগল হয়ে যাবো। আপনায় যে কেন এতো ভালোবাসি আমি নিজেও জানি না। আপনার চোখ দুটোতেই আমি বড্ড মায়া দেখি, আপনার কণ্ঠস্বর প্রতিবার যেন আমার কানে মধুর সুরেলা হয়ে ভাসে আর আপনার বিশ্বস্ত বুকখানা ইস! আমি যতবার ওই বুুকখানায় মাথা রাখি কি যে শান্তি অনুভব হয় আপনায় বোঝানো যাবে না। আপনার একটুখানি অবহেলায় আমি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাই আমায় কখনো অবহেলা কইরেন না। তবে যে আমি জীবিত থেকেও মৃত ঘোষিত হবো।”

একা মনে অনেককিছু বললো রাগান্বিতা। চট করেই তার হুস আসলো তাকে নামাজ আদায় করতে হবে। রাগান্বিতা ইমতিয়াজকে ডাকলো। বললো,“শুনছেন, উঠুন জলদি নামাজ পড়তে যাবেন না।”

কয়েকবার ডাকতেই ইমতিয়াজের হুস আসে। যে দ্রুত উঠে বসে। বলে,“কি হয়েছে বউ?”

রাগান্বিতা হাল্কা হেঁসে বলে,“কিছু না দ্রুত উঠুন নামাজ পড়তে হবে।”

ইমতিয়াজ শুনলো সে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে চলে যায় বাথরুমে। কতক্ষণ পেরিয়ে দ্রুত টুপি আর পাঞ্জাবি পড়ে বেরিয়ে যায়। ইমতিয়াজ যেতেই রাগান্বিতা ঢুকে বাথরুমে।
—–
ফজরের নামাজ আদায় করে জানালার ধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতা। ধীরে ধীরে আধারে মেশা প্রকৃতিটা হলো আলোকিত। পাখিরা ডানা ঝাপটাচ্ছে দূর আকাশে। গাছের পাতা নড়ছে। রাগান্বিতার মন চাইলো এই প্রকৃতির মাঝে উঠানটায় একটু হাঁটতে। রাগান্বিতা আর দেরি করলো না সে বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে। কক্ষ থেকে বের হতেই রাগান্বিতার নজরে আসলো সেই তালাবদ্ধ করা কক্ষটার দিকে। যেটা বর্তমানে আর তালাবদ্ধ থাকে না। প্রায় মাসখানেক আগে যখন রাগান্বিতা তাদের বাড়ি থেকে এসেছিল তখনই দেখে তালাবদ্ধ করা কক্ষটা খোলা। অন্যান্য কক্ষগুলোর মতই এটাও পরিপাটি ছিল। তবে রাগান্বিতা বুঝেছিল তারা আসার আগেই কেউ কক্ষটা পরিষ্কার করে ছিল। রাগান্বিতা জিজ্ঞেস করেছিল এই কক্ষটায় আগে কি ছিল। ইমতিয়াজ বলে, ‘ময়লা সয়লা থাকতো। যা এখন সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’ রাগান্বিতাও আর ঘাটে নি। রাগান্বিতা আলতো পায়ে নানা কিছু ভাবতে ভাবতে বাড়ির ভিতর থেকে বের হলো। মুক্ত খোলামেলা পরিবেশটায় প্রাণ খোলা নিশ্বাস নিয়ে হাঁটতে লাগলো। হঠাৎই রাগান্বিতার নজরে আসলো রবিনকে। লোকটা হাতে কি নিয়ে যেন বাড়ির পিছনের দিকটায় যাচ্ছে। রাগান্বিতা কৌতুহলী পিছু নিলো রবিনের কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ডালপালা মিশ্রিত জায়গাটার কাছে আসতেই রবিনকে আর দেখতে পেল না রাগান্বিতা। রাগান্বিতা আশেপাশে তাকালো কিন্তু না কেউ নেই। তবে লাস্টবার ওই জমানো ডালপালা একটু নড়তে দেখেছিল।’

রাগান্বিতা আর একটু এগোবে এরই মাঝে পিছন থেকে বলে উঠল ইমতিয়াজ,“বউ।”

রাগান্বিতা আর এগোতে পারলো না। সে পিছন ফিরে তাকালো। বললো,“জি, আপনি চলে এসেছেন।”

ইমতিয়াজ দু’কদম এগিয়ে এসে বললো,“হুম। তুমি ওখানে কি করছো?”

রাগান্বিতা কথাটা চেপে গেল। বললো,
“কিছু করছিলাম না তো সকালের প্রকৃতিতে একটু হাঁটতে ইচ্ছে হলো তাই হাঁটছিলাম।”
“ওহ আচ্ছা এদিকে আসো।”

রাগান্বিতা এগিয়ে গেল। ইমতিয়াজ রাগান্বিতার কাঁধ ধরে বললো,“চলো আমার সাথে আমরা একটু পর বের হবো।”

বলেই রাগান্বিতার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো ইমতিয়াজ। রাগান্বিতাও আর কিছু বলতে পারলো না তবে কৌতুহল একটা রয়েই গেল। এই রবিনকেও মাঝে মধ্যে কেমন যেন লাগে রাগান্বিতার। সেদিন রাতের ঘটনাটা হুট করে মনে পড়লো তার।

বাড়ির ভিতর ঢুকতেই সর্বপ্রথম নজরে আসলো রবিনকে। রবিন রন্ধনশালা থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাগান্বিতা তাকে দেখেই তড়িৎ চমকে উঠলো। মাত্রই না রবিনকে সে বাহিরে দেখলো এরই মাঝে বাড়ির ভিতর আসলো কি করে! রাগান্বিতা আশপাশ না ভেবেই রবিনকে প্রশ্ন করলো,“আপনি কি এই মাত্র বাহিরে গিয়েছিলেন চাচা?”

রাগান্বিতার আচমকা প্রশ্নে রবিন অপ্রস্তুত অনুভব করলো। সে দ্রুত জবাব দিলো,“কই না তো আমি তো এহনই আইলাম।”

রাগান্বিতা আর কিছু বলতে পারলো না তবে কি সে ভুল দেখেছিল তখন। কিন্তু তার স্পষ্ট মনে পড়ছে রবিন হাতে করে কি নিয়ে যেন বাড়ির পিছনে যাচ্ছিল। রাগান্বিতাকে চিন্তিত দেখে ইমতিয়াজ প্রশ্ন করলো,“কিছু কি হয়েছে?”

রাগান্বিতা নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,“না কিছু হয় নি।”

ইমতিয়াজও আর কোনো প্রশ্ন করলো না।’
—-
সকালের নাস্তা সেরে নিজ কক্ষে তৈরি হচ্ছিল রাগান্বিতা। কালো রঙের জামদানী শাড়ি, হাতে সোনার চুড়ি, গলায় ভাড়ি অলংকার, চুলগুলো খোঁপা করা, চোখে গাঁড়ো কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক।

ইমতিয়াজ কক্ষে ঢুকলো। রাগান্বিতা খানিকটা চমকে তাকালো তার দিকে। ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে পড়লো দুয়ারের সামনে। এক অদ্ভুত গভীর চাহনী নিয়ে তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার দিকে। একটা মানুষকে কালো রঙের শাড়িতে এত বেশি চমৎকার দেখাতে পারে জানা ছিল না বুঝি ইমতিয়াজের। ইমতিয়াজ কেমন ঘোর লাগানো দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে গেল রাগান্বিতার দিকে। রাগান্বিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ইমতিয়াজ এগিয়ে এলো। রাগান্বিতার চোখের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ সুরে শুধালো,
“এত সেজো না বউ আমি যে পাগল হয়ে যাবো।”

রাগান্বিতা লজ্জায় মাথা নুইয়ে বললো,
“আপনার চোখে এমন প্রেম দেখার জন্য হলেও আমি বার বার সাজতে প্রস্তুত।”
“আমি বুঝেছি তুমি ভালো থাকতে দিবে না আমায়?”
“সাজলে বুঝি মানুষ ভালো থাকে না।”
“কেউ থাকে কি না জানি না তবে আমি থাকি না। এই যে এখন মাতাল মাতাল লাগছে, মস্তিষ্কের শব্দভান্ডারে শয়তান হানা দিচ্ছে এর দায় কে নিবে?”
“আমি তো আপনার বিয়ে করা বউ আমাতে ভয় কিসের!”
“মনের গহীনে হাজারো শব্দ, হাজারো কথা,লক্ষ কটি ভয় অথচ তোমায় বলতে গেলেই কোনো শব্দ খুঁজে পাই না। ফাঁকা ফাঁকা লাগে সবটা। এমনটা কেন হয় বউ?”
“আমি জানি না।”

হেঁসে ফেলে ইমতিয়াজ। আস্তে করে রাগান্বিতা গায়ে জড়ানো সকল অলংকার খুলে ফেলে। রাগান্বিতা অবাক হয়ে বলে,
“এগুলো খুলছেন যে,
“তোমায় কাল বলেছিলাম না আমরা বিলাসবহুল নয় সাধারণ ভাবে কিছুদিন সংসার করবো।”

রাগান্বিতা কিছু বললো না। ইমতিয়াজ রাগান্বিতার গায়ের অলংকার খুলে গলায় চিকন একটা লকেট সমৃদ্ধ চেইন, দু হাতে দুটো চিকন চুড়ি আর কানে ছোট দুটো দুল পড়িয়ে দিল। তারপর ব্যাগে রাখা একটা সাদামাটা শাড়ি বের করলো। কিন্তু পরক্ষণেই রাগান্বিতাকে একপলক দেখে বললো, “আজ থাক কাল পড়ো। এতটুকু যন্ত্রণা আমি সইতেই পারি।”

শেষ কথাটার অর্থটা ঠিক বুঝলো না রাগান্বিতা। তবে কিছু জিজ্ঞেস করে নি আর। মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে আসলো তার,“অদ্ভুত একটা লোক।”

রাগান্বিতাকে হাল্কা ভাবে সাজিয়ে ইমতিয়াজ করুণ চোখে তাকিয়ে রয় ওর মুখের দিকে। মনে মনে বলে, “তোমার কি মনে হয় না তুমি আমার শহরে এসে ভুল করেছো?” উত্তর এলো না। তবে ইমতিয়াজ এও জানে এই কথাটা রাগান্বিতাকে বললে রাগান্বিতা জবাবে বলতো, “কেন বলুন তো”। ঠিক তখনই ইমতিয়াজ রাগান্বিতাকে উত্তর দিতো,-
“তোমার শহর ভীষণ সুন্দর,
নয়নে জুড়ায় আঁখি।
আমার শহর বেজায় তীক্ষ্ণ,
বিষণ্ণতায় মাখা মাখি!”

সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা থমকে যেত। কেমন বিষণ্ণ মাখা চাহনী নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর সেই চাহনী দেখে ইমতিয়াজ ক্ষত বিক্ষত হতো। কি এক দারুণ অবস্থা।
—-
ঢাকার নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজ। রবিনকে জানানো হয়েছে তারা কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও যাচ্ছে সে চাইলে তার বউ বাচ্চাকে নিয়ে ইমতিয়াজদের বাড়িতে থাকতে পারে। রবিনও মেনে নেয়। বার বার বাড়ি যাওয়া আবার ফিরে আসা বড্ড ঝামেলার লাগে রবিনের।’

রাগান্বিতা নদীর এপার থেকে ওপারে তাকালো। আশেপাশেও তাকালো। মানুষ খুব কম। বেলা বেশি না সকাল আটটা বাজে। চারপাশ পুরো নিরিবিলি। রাগান্বিতা প্রশ্ন করলো,“আমার কিসে চড়ে যাবো?”

উত্তরে ইমতিয়াজ জবাব দিলো,“ট্রলারে।”
কিছুক্ষণের মাঝেই একটা ট্রলার আসলো রাগান্বিতাদের সামনে। ইমতিয়াজ তাকে নিয়ে সেই ট্রলারে উঠলো। রাগান্বিতা পুরো ট্রলারে চোখ বুলাতেই অবাক হলো। কারণ পুরো ট্রলারে মানুষ হিসেবে ছিল তারা তিনজন। ইমতিয়াজ, সে আর ট্রলার চালক। আর বাকি যারা ছিল তারা কেউই মানুষ না।

#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here