যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_৯ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
123

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( প্রাপ্ত বয়স্কদের ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

প্রিয় মানুষের এতো কষ্ট সহ্য করার চেয়ে তাকে সুখে থাকতে দেখতে বুকের পাশের চিনচিনে ব্যথা কম হতো।

” ফেইসবুকে কাপল পিক আপলোড করেছো কেনো ঐশী? সবকিছু পাবলিক করতে হবে কেনো?”
প্রহর একপ্রকার চেঁচিয়ে বললো ঐশীকে উদ্দেশ্য করে। ঐশী প্রায় আঁতকে উঠলো। এ যাবৎ প্রহর কখনো তার সাথে এরকম আচরণ করেনি। তাহলে আজকে হঠাৎ কী হয়েছে তার? আর এই দুপুরবেলা হুট করে দেখাও বা কেনো করতে বললো সে?
” পাবলিক করলে সমস্যা কী? তাতে এরকম রিয়াক্ট করার কী হয়েছে? সেজন্য এরকম চিৎকার করে কথা বলবা!”
প্রহর রাগে ঐশীর কাঁধ চেপে ধরে শক্ত করে। ক্রমশ আরও জোরে চেঁচিয়ে বলে,
” সমস্যা আছে বলেই তো বললাম। আজকের পর থেকে আমাদের মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ থাকবে না। আর যদি যোগাযোগ করার চেষ্টা করো তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো।”
ঐশীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে স্থান ত্যাগ করে প্রহর। ঐশী বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে প্রহরের যাওয়ার পথের দিকে। কাঁধে ব্যথা করছে অল্প অল্প। ঐশীর কেনো যেনো কন্ঠর কথা মনে পড়লো। সকালে কন্ঠ প্রহরের কথা জিজ্ঞেস করে লাপাত্তা! অনলাইনে আর আসেনি। এখন আবার প্রহর এরকম আচরণ করলো। কোথাও যেনো সমীকরণ মিলে যাচ্ছে ঐশীর।
পরপর কেটে গেছে তিন দিন। এই তিন দিনে কন্ঠকে ছেড়ে এক মুহুর্তের জন্য সরেনি ইফতি। দুই পরিবারের সবাই চুপ হয়ে গেছে। কন্ঠর কান্নাকাটি আর পাগলামিতে সবাই হতাশ। ধীরে ধীরে কন্ঠর মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। সারাদিন একা একা কথা বলে। কথাগুলো যে প্রহরের সাথেই বলে সেটা সবাই জানে। কিন্তু এরমধ্যেই আবার হুটহাট কাঁদতে শুরু করে মেয়েটা। সবকিছু স্বাভাবিক করার একটাই উপায় কন্ঠকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে হবে। ইফতি সেইমত কথাও বলে রেখেছে এক জায়গায়। আজকে বিকেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে কন্ঠকে।

” সমুদ্র সাহেব! ”
বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে সমুদ্র। বিনা খাটের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
” হ্যাঁ বলো।”
” আপনি তো দুপুরেও খেলেন না। এখনও কি খাবেন না?”
সমুদ্র ফোনের দিক থেকে নজর সরিয়ে বিনার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। কালো রঙের শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। সবকিছুই ঠিক আছে শুধু নাকটা একটু বেশি চ্যাপ্টা লাগে সমুদ্রর কাছে। এজন্য মাঝেমধ্যে বুচি বলে ডাকে সমুদ্র।
” খাবো। কন্ঠকে নিয়ে কি ভাইয়া ফিরেছে? ”
” না, আসলে তো টের পেতাম। ”
” ঠিক আছে। ওঁরা ফিরুক, তারপর খাবো। তুমি বরং খেয়ে নাও এখন।”
” না আমিও খাবো না এখন। আপনার না সামনে পরীক্ষা? ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে ফোন রেখে পড়তে বসুন।”
” বাব্বাহ! ম্যাডাম এলেন নাকি?”
” ভালো কথা বললেও দোষ। গেলাম আমি। ”
বিনা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সমুদ্র শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো। বিনা ভাবলো হয়তো খাটের কোণায় শাড়ির আঁচল আঁটকে গেছে। কিন্তু পেছন ফিরে তাকাতেই সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো বিনার।
” আর একটু থাকো। বসো আমার পাশে।”
” আচ্ছা। ”
বিনা বিনাবাক্যে সমুদ্রর পাশে বসলো। সমুদ্রের খুব করে ইচ্ছে করছে বিনার কপালের উপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো আলতো করে কানের পাশে গুঁজে দিতে। কিন্তু ইতস্তত লাগছে ভীষণ। বিনা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সমুদ্রর দিকে। এতে করে সমুদ্রর আরো অস্বস্তি লাগছে। যদিও বিয়েটা অনিচ্ছায় করেছিল সমুদ্র কিন্তু সেরকম পছন্দের কেউ তো ছিলো না। একসাথে থাকতে থাকতে তাই বিনার প্রতি একটা মায়া জন্মেছে তার। সবচেয়ে বড়ো কথা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে পবিত্র। আর এক ছাদের নিচে থাকতে থাকতে সেই সম্পর্কে ধীরে ধীরে ঠিক ভালোবাসা এসে যায়।
” কী হলো? বসতে বলে কিছু বলছেন না!”
বিনার কথায় সমুদ্র নড়েচড়ে বসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
” বিনা তুমি কি আগে কখনো কাউকে পছন্দ করতে? ”
” না তো। ”
” আমাকে পছন্দ করো?”
” না তো।”
” কেনো করো না?”
” কারণ আপনি যেনো কেমন। ”
বিনার কথায় সমুদ্র হাসবে না-কি রাগ করবে বুঝতে পারছে না। ভালো লাগে না সেটা এভাবে অকপটে স্বীকারও করা যায়? সমুদ্র বিনার একটা হাত আলতো করে চেপে ধরে বললো,
” কেমন বলো তো?”
” নানা যেমন নানিকে ভালোবাসতেন আপনি তেমন করে আমাকে ভালোবাসেন না।”
” তা উনারা কীভাবে ভালোবাসতেন? ”
” নানা সব সময় বাড়ি ফেরার সময় নানির প্রিয় কিছু না কিছু নিয়ে আসতেন। যেমন : বাদাম, বুনোফুল ইত্যাদি। ”
সমুদ্র যতটুকু শুনেছে বিনার নানা-নানির অভাবের সংসার। কিন্তু তারমধ্যে এই বয়সেও এরকম ভালোবাসা দুজনের মধ্যে!
” ঠিক আছে। তোমার প্রিয় কিছু জিনিসের নাম বলো। আমিও এরপর সেগুলো নিয়ে আসবো।”
মুহুর্তেই বিনার চোখগুলো খুশিতে চকচক করে উঠলো। অতিরিক্ত খুশিতে সমুদ্রের অন্য হাতটাও আঁকড়ে ধরে খিলখিল করে হাসছে বিনা।
” ওই যে কন্ঠ আপা একদিন কী জানি আনলো না? গোলগাল! টক লাগে? ”
” ফুচকা? ”
” হ্যাঁ হ্যাঁ সেটাই। ”
” ঠিক আছে। এখন চলো গিয়ে দেখি ভাইয়া এলো কি-না। রাত তো ন’টা পেরিয়ে গেলো,এতক্ষণে নিশ্চয়ই এসেছে। ”
সমুদ্র বিছানা থেকে নামলো। সাথে বিনাও। দু’জন কন্ঠদের ফ্ল্যাটের দিকে এগুলো।

কন্ঠকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বসার ঘরে এসে বসেছে ইফতি। পাশে বসে আছে কন্ঠর বাবা ও মা। একমাত্র মেয়ের এরকম অবস্থা দেখলে কোন বাবামায়ের মন মানসিকতা ভালো থাকে? কোথায় মেয়েকে শাসন করবে প্রেম করার জন্য সেখানে ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। ইফতির চোখমুখ এতটা গম্ভীর হয়ে আছে যে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না পর্যন্ত। কন্ঠর উপর রাগ থাকলে এভাবে দিনরাত কাজকর্ম রেখে নিশ্চয়ই পড়ে থাকতো না। তাহলে রাগটা কি প্রহরের উপর?
” ইফতি তোর কী হয়েছে বাবা?”
শারমিন সুলতানা মলিন কন্ঠে শুধালেন ইফতিকে। কন্ঠর বাবাও উত্তরের আশায় ইফতির মুখপানে তাকিয়ে আছেন।
” নিজের উপর রাগ হচ্ছে বড়ো মা। আমি কেনো কন্ঠর দিকে খেয়াল রাখলাম না বলো তো? কন্ঠকে বিয়ে করার কথা তো বছর চারেক আগেই তোমাদের বলেছিলাম। তখনই যদি কন্ঠকেও মনের কথাটা জানিয়ে দিতাম তাহলে নিশ্চয়ই বাইরের কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারতো না।”
” ও তো বরাবর পাগলামি করতো বলেই তুই এসব বিষয় এড়িয়ে গেছিস। ওর লেখাপড়ার যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য সব সময় এমন ব্যবহার করেছিস যাতে কিছু বুঝতে পর্যন্ত না পারে। আসলে দোষটা কপালের না দোষ কন্ঠর নিজের। মানুষ চেনার মতো দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। ”
” না বড়ো আব্বু। এ জগতে অনেক মানুষ আছে যারা ভালোবেসে ঠকে গেছে। সবাই কি বোকা? নাহ বড়ো আব্বু। কন্ঠকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে হবে আগে। তারপর সবকিছু। ”
” আমার তো মনে হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া দরকার। ”
কন্ঠর মায়ের কথায় ইফতি চমকায়। এই অবস্থায় বিয়ে? কন্ঠ তো নিজের মধ্যেই নেই এখন।
” নাহ বড়ো মা। কন্ঠ আগে সুস্থ হোক তারপর। আমি চাই না এভাবে বিয়ে হোক।”
কন্ঠর বাবা-মা দু’জনেই চুপ রইলেন। নেহাৎ ইফতি নিজেদের মানুষ। নয়তো কতো বদনাম হতো মেয়েটার। সমুদ্র আর বিনা এসেছে কিছুক্ষণ আগে। কন্ঠ বসে আছে বিছানায়। তবে নিশ্চুপ। কোনো কথাবার্তা নেই, নেই কোনো নড়াচড়া। কেমন যেনো পাথরের মতো হয়ে গেছে। শারমিন সুলতানা প্লেটে অল্প ভাত নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এক লোকমা ভাতও খায়নি কন্ঠ। ইফতিও ঘরের এককোনায় দাঁড়িয়ে আছে। কতগুলো ঔষধ খেতে হবে কন্ঠকে। খালিপেটে তো সেগুলো খাওয়াও সম্ভব না!
” কন্ঠ আপা একটু ভাত খেয়ে নাও।”
বিনা আকুতিভরা কন্ঠে বললো। কন্ঠ যেনো কারো কথা শুনতেই পাচ্ছে না। আশেপাশের বাড়ির লোকজন এসেছিল বিকেলে। সবাই কথা বলাবলি করেছিল কন্ঠকে নিয়ে। প্রেমে ঠকে গিয়ে কেউ এভাবে পাগল হয়? না-কি আবার মেয়ে পোয়াতি! আরও কত ধরনের কথা! শারমিন সুলতানা সবকিছু শুনেও চুপ থেকেছেন। কয়েকজনকে চুপ করাবে সে? আর ক’জনকে বোঝাবে শরীর দিয়েও মানুষ এতটা আঘাত পায় না যতটা আঘাত পায় মন দিয়ে ঠকে গেলে।
” কন্ঠ বিনা তোকে খেতে বলছে একটু খেয়ে নে মা। দেখ তোর জন্য সমুদ্র, বিনা,ইফতি কেউ খায়নি এখনো। ”
কন্ঠ একবার তাকালো ইফতির দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিনার দিকেও তাকালো। এই মানুষগুলো কতো ভালোবাসে তাকে । তার এতটুকু অসুস্থতায় সবাই ভীষণ উদ্বীগ্ন। অথচ যার জন্য সে গুমরে গুমরে মরছে সে তো একটা কল পর্যন্ত করলো না! অবশ্য কল করলেও বা কী? প্রহরের মতো বেইমানের সাথে কোনো যোগাযোগ করতেও চায় না কন্ঠ। তবুও বেহায়া মন! এই মনটা নিয়ে যতো জ্বালা। ইফতি কন্ঠর পাশে বসলো এসে। কন্ঠ বিছানার চাদরের দিকে তাকিয়ে ভেবে যাচ্ছে আকাশপাতাল।
” কন্ঠ আমি খাইয়ে দেবো? দেই? ”
ইফতির কথাগুলো যেনো কেমন মায়াভরা লাগলো কন্ঠর কাছে। কী দরদ নিয়ে আকুতি! খাইয়ে দেওয়ার জন্য আকুতি। অথচ এই মানুষটা যে কতটা কঠিন সে কথা সবাই জানে। কন্ঠ মুখে কোনো শব্দ না করলেও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। ইফতি দ্রুত বড়ো মায়ের হাত থেকে ভাতের প্লেট নিজের হাতে নিলো। কয়েক লোকমা ভাত খেয়ে কন্ঠর গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ইফতির খারাপ লাগছে ভীষণ। ভাত খেতে খেতে চোখের পানি ফেলা কতটা যন্ত্রণার সেটা যার সাথে ঘটেছে কেবল সেই জানে। ইফতি প্লেট বিছানায় রেখে আলতো করে চোখের পানি মুছে দিলো। শারমিন সুলতানা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে উনার। প্রহরকে পেলে মনে হয় খু*ন করতেন তিনি। আর কন্ঠর উপরও রাগ হচ্ছে। ওই ছেলেটাই কন্ঠর কাছে সবকিছু? তারজন্য নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে এভাবে মরার মতো পড়ে থাকতে হবে?

চলবে,
গল্পের রিচ কই? আপনাদের ছোটো মন্তব্য আমার লেখার অনুপ্রেরণা। ❤️
আগের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=390116230335995&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=391342923546659&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here