মন_শহরে_বসন্ত_হাওয়া |১| #কে_এ_শিমলা ®

0
700

দীর্ঘ চার বছর সংসার করার পর আমার স্বামী দ্বিতীয়বার বিয়ে করার জন্য, যখন আমার হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দেয়। তখনো আমি অবাক হইনি একবিন্দু পরিমাণ। তবে হ্যাঁ আমার পৃথিবী থমকে গিয়েছিল সেদিন। যেদিন আমার ভালোবাসার মানুষ, আমার এক জীবনের প্রেমিক পুরুষ, আমার প্রিয় স্বামী। অন্য নারীর সহিত রাত কাটিয়ে বাড়ি এসেছিল। চার বছরের সংসার জীবন। তিন বছরের একটি দারুন প্রেমের সম্পর্ক। যার ভেতরে ছিল একটি সীমাহীন ভালোবাসার গল্প। সবমিলিয়ে সাত বছরের চেনা মানুষটিকে আমার একদম অপরিচিত লাগছিল। অচেনা অজ্ঞাত মনে হচ্ছিল। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি রক্তিম তাঁর ভালোবাসার আমি কে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজের জীবনে জড়িয়ে নিবে। আমার জায়গায় অন্য কাউকে খুঁজবে। বুঝতে পারছিলাম না আমার মধ্যে খামতি টা কোথায় ছিল? তারপর বুঝলাম ‘পুরুষ মানুষ চাইলে যুগের পর যুগ এক নারীতে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। আর চাইলেই এক নারীর সংস্পর্শে এসে অন্য নারী কে ভুলে যেতে পারে, অনায়াসে।’
‘সে হোক নিজের হৃদয়ের গভীরে থাকা এক গোলাপ! আর হোক বা নিজের ঘরের রাণী।”

তবে আমি সম্মান করি সেই পুরুষদের যারা তাদের নারীর অনুপস্থিতিতেও তাঁর জায়গা শুধু তাঁর জন্যই রাখে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, আর যুগের পর যুগ কেবল মাত্র এক নারীতেই তাদের সীমাবদ্ধতা।”

উপরিউক্ত কথা গুলো বলে তাঁর পার্শ্বে রাখা দুটো ফাইলের উপর দৃষ্টি দেয় রণয়ী। তাঁর সম্মুখ চেয়ারে বসা অনুরিমা তাকে দেখছে অপলক। সে রণয়ীর পানে পলকহীন দৃষ্টি রেখেই প্রশ্ন করে, ‘তুমি ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছিলে?”

রণয়ী একটু ভাবে কিছু। দৃষ্টি বুলায় কিয়ৎক্ষণের মাঝেই অনেক জায়গায়। অফিসের এই মাঝারি আকারের সুন্দর কক্ষটির এই কোনায় সেই কোনায়। তবুও চোখ রাখে না অনুরিমার চোখের দিকে। অতঃপর বলে, “জোর করে কাউকে বেঁধে রাখা যায় না অনু। একটি পাখি কে তুমি খাঁচায় যতই আদর যত্ন করে পোষ মানাও। সে যদি সত্যিকার অর্থে তোমার পোষ না মানে। তুমি তার বদ্ধ খাঁচার দ্বার খুলে দাও। তাঁর মনের সুখে, গায়ে মুক্তির সুখ মেখে উড়াল দিবে তাঁর চিরায়ত বাসস্থানে। তোমার সব কষ্ট, মায়া, তোমার পোষ সবকিছুই রয়ে যাবে। থাকবে না তোমার মায়ার সেই পাখি। আর মানুষ! সে তো জন্ম হতে স্বাধীনতাচেতা। একটা পাখিকে যে জায়গায় আঁটকে রাখা যায় দিনের পর দিন। অথচ খাঁচা খুলে দিলেই উড়াল দেয়। সেখানে মানুষ তো বুদ্ধিদীপ্ত সম্পন্ন জীব। তাঁর হাত আছে পা আছে। তাকে তুমি যতই আটকে রাখার চেষ্টা করো। তোমার উপর থেকে মন উঠে গেলে তুমি আর কখনোই তাকে মায়ার খাঁচায় বন্দী করে রাখতে পারবে না।”
জানো না একটা কথা আছে। মানুষ বলে, ধরে রাখতে জানলে মানুষ থাকে। অথচ আমি বলি মানুষ কে ধরে রাখার মতো না। ধরে বেঁধে তো পাখি রাখা যায় মানুষ নয়।”
তাই ‘যে পাখি আমার মায়ার খাঁচার মায়া বুঝেনি আমি থাকে আটকে রাখিনি আর। খাঁচা শুন্য করে তাকে উড়িয়ে দিয়েছি। কষ্ট আমার হয়েছে তাঁতে কী? তাঁর মুখে তো মুক্তি সুখের হাসি দেখেছি।”

অনুরিমার ছলছল টলমল দৃষ্টি। অবাক বিস্মিত কন্ঠে সুধায়, তাঁর কষ্ট হয়নি ছেড়ে যেতে? এক জীবনের প্রেমিকা, নিজের সেই প্রেমিকা নামক স্ত্রী কে ছেড়ে যেতে? এতো সহজে কেউ কী করে এতো আপন কাউকে ছেড়ে যেতে পারে?”

রণয়ী নিচের দিকে চেয়ে একটি ফাইলে দৃষ্টি রাখলো‌। অল্প খানিক হেসে বললো, ‘আমি তো তাকে চিনি সাত বছর। না প্রেম সম্পর্ক হওয়ার আগেও চিনি একবছর। সব মিলিয়ে আট বছর। আট বছরের চেনা মানুষ ছেড়ে গিয়েছে। আমি এক যুগ এক‌ সাথে কাটানো মানুষের ও বিচ্ছেদ দেখেছি। ষোলো বছরের ছয় মাস প্রেম। অতঃপর বিয়ে। ঊনত্রিশ বছর বয়সে সে নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ। আর আমার মানুষ তো সেখানে! যাক এতো পরিবর্তনশীল মানুষ। এতো বিচ্ছিন্ন বিচ্ছেদ দেখেও মনের মাঝে বিশ্বাস ছিল। আর যাই হোক আমার মানুষ আমায় ছেড়ে যেতেই পারে না। সে তো জানে বিচ্ছেদ যন্ত্রণা কতটা পীড়াদায়ক। সে অন্তত আমাকে ছেড়ে যাবে না। যে তাঁর ভগ্ন হৃদয়খানায় আবার ভালোবাসার প্রলেপ দিয়েছিল। অতঃপর দিনশেষে আমিও পরাজিতা একটি পবিত্র সম্পর্কের কাছে। আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে। সে ছেড়ে গিয়েছে আমায়।”

অনুরিমা চোখের পলক ফেলতেই টোপ করে অশ্রুকণা গড়ায় আ রক্তিম কপোল ছুঁয়ে। ডান হাত উঠিয়ে কোমল দু কপোল মুছে। নাক টেনে বলে, “যদি তারা এভাবে কাঁদিয়ে চলেই যাবে তবে জীবনে শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থাকার অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে কেন আসে? এক বুক ভালোবাসা নিয়ে বিনিময়ে এক বুক হাহাকার। চোখভরা জল দিয়ে রাতের ঘুম কেড়ে নেয় কেন? একটুও অনুতাপে নিপীড়িত হয় না তাদের পাষাণ হৃদয়!”

রণয়ী কলম দিয়ে লিখতে লিখতে বলে, ‘ভালোই হলো বলো। এভাবে মন অন্য কাউকে দিয়ে অভিনয় করে তাঁরা কাছে তো থাকছে‌ না। এখন মুক্তি দিয়ে যে শান্তি পাচ্ছি সেই শান্তিটাও তবে চিরতরে হারিয়ে যেতো। আজ যার কাছে মনে হচ্ছে সব মানসিক শান্তি। কাল তাঁর থেকে মানসিক শান্তির পরিবর্তে মানসিক অশান্তি পেতেই পারি। আমার কাছে যে আর মানসিক শান্তি পায়নি। সে চলে গিয়েছে তাঁর মানসিক শান্তি অন্যথায় খুঁজতে। অবশ্য কষ্ট বেশি হতো না যদি না সে আমার ভালোবাসার প্রথম আর শেষ পুরুষ হতো। তাঁর মাঝে আমার মানসিক শান্তি থাকতো। সে তাঁর মায়ায় জড়িয়েছিল আমায় খুব তীব্র ভাবে। কেন যে আমার হয়েই থাকলো না। এক জীবনে সব চাওয়া তো পূরণ হয় না। থাক! তাকে পেয়ে হারিয়েছি। তাঁর স্মৃতি বুকে নিয়ে নাহয় আমি বাঁচি। আর তাঁর বুকে মাথা রেখে অন্য কেউ বাঁচুক।”
তবে হ্যাঁ সে নারীও কোনো এক ভাবে বুঝুক। কেড়ে নেওয়ার পর সুখী হলেও, হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা কেমন বিষাক্ত।”

অনুরিমা বিরবির করে বলে, সেই মেয়েটি সুখী না হোক। কারো সুখ কেড়ে নিয়ে কেউ বেশি দিন সুখে থাকতে পারে না। এই প্রকৃতির বিচার সেও দেখুক।”
রণয়ীর উদ্দেশ্যে বলে, তুমি আইনী কোনো ব্যবস্থা নাওনি? বললো আর ছেড়ে দিলে?”

রণয়ী ফিচেল হেসে বলে, কী দরকার বলো! যে থাকতে চায় না এসবে আটকে রেখে কেবল তাকে হয়তো রাখা যাবে। মন তো নয়। আমি চাই না কেউ মন অন্য কাউকে দিয়ে। সে আমার হয়ে থাকুক।‌ একবার তো জেনে শুনেই তাঁর হলাম। হয়তো তখন তাঁর কেউ ছিলাম না। কিন্তু মায়া লেগেছিল বড্ড। তাই তাকে নিজের করেছিলাম। কিন্তু আবারো কীভাবে তাকে গ্রহণ করতাম? স্ত্রী নামক ভালোবাসার আমি কে রেখেও যে অন্য কাউকে চায়। রাত কাটায় সেই বিশ্বস্ত বিশ্বাসঘাতকে কীভাবে নিজের করে রাখি? আমি বিদ্রোহ চাইনি শান্তির আশায় চলে এসেছি বুকে পাথর চেপে হলেও।”

অনুরিমা আবার চোখের জল মুছে বললো, ‘একজন মানুষের যে আড়ালে এতো তিক্ত অতীত থাকতে পারে। আমি বোধহয় কম দেখেছি। তবে তোমার গল্পটা আমায় গভীরে স্পর্শ করছে রণয়ী। মানতে পারছি না আমি।”

রণয়ীর কেবিনের বাহির থেকে রোজা বলে উঠলো, অনুরিমা! স্যার তোমায় ডেকে পাঠালেন।”

রোজার কথা শ্রবণ হলে অনুরিমা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। রণয়ীর উদ্দেশ্যে বলে, আসছি! একদিন তোমার প্রেমকাহিনী শুনবো। যদি তুমি ইচ্ছুক হও তো।”

রণয়ী জোরপূর্বক হাসলো খানিক। বললো, শুনানোর অপেক্ষায় থাকবো।”

অনুরিমা বের হয়ে গেল। দরজার সম্মুখ হতে গেল রোজাও।‌ রণয়ী টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছলো। অবাধ্য জল গড়ালো। ভেতর চিৎকার করে বলে, “রক্তিম! তুমি আমায় এমন যন্ত্রণা না দিয়ে গেলেও পারতে। না পাওয়ার বিষাদ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারতাম। কিন্তু পেয়ে হারানোর ব্যথা যে আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায় প্রতিনিয়ত। তোমার কী আমায় মনে পড়ে না? কীভাবে তুমি প্রিয় স্বামী থেকে আমার অচেনা‌ বেগানা পুরুষদের সামীল হলে। তোমার যে বুকে মাথা রেখে আমি ঘুমিয়েছি এক হাজার চারশত ষাট দিনেরো বেশি। সেখানেই আজ মাথা রেখে ঘুমায় অন্য নারী। কথাটা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটায়। হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দেয়। তাঁরপরেও আমায় বাঁচতে হয়। দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস নিয়ে আমাকে মৃতের জীবিত, জীবন্মৃত হয়ে দিন পারি দিতে হয়।”

নিঃশব্দের শত অভিযোগ আর কান্না শেষে রণয়ী নিজের কাজে মন দেয়। যদি একটু ভুলে থাকা যায় তো। ব্যস্থতায় ডুবে থাকলে নাকি ভুলে থাকা যায় বিরহ ব্যথা? রণয়ী দেখেছে। শত ব্যস্থতায় থেকেও ভুলা যায় না। তবুও সে নিজেকে ব্যস্থতায় ডুবিয়ে রাখে দিনের সিংহভাগ সময়।”

সময় কাটলো। সন্ধ্যার আবছায়া ক্ষীণ আলো ম্লান হয়ে আঁধারিয়া ছেয়েছে বিশাল অম্বরসহ যান্ত্রিক শহরে। রং বেরঙের আলোয় আলোকিত হলো আশপাশ। ঘড়ির কাঁটা এখন ছয়ের ঘর ছাড়িয়ে সাতটা নয়ের ঘরে। অফিসের ভেতর আগের মতোই। সকাল সন্ধ্যা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে। ফ্যান ও চলছে অনেকের নির্দিষ্ট মাঝারি আকারের কেবিনে। আবার এসিও রয়েছে। যাদের সমস্যা আছে তাঁরা কেবিন দরজা বন্ধ করে রাখছে।”
রণয়ীর কেবিনেও দরজা বন্ধ তবে ফ্যান চলছে মৃদু গতিতে। ঠিক মাথার উপরিভাগে। তাঁর হাতের দশ দশটি আঙ্গুল সমানে চলছে মনিটরের ঠিক সামনে রাখা কী বোর্ডের উপরে। কিছুক্ষণ সেখানে আঙ্গুল চালিয়ে পাশে রাখা তিনটি ফাইল থেকে হলুদ রঙা ফাইলটি হাতে নিল। পুনরায় তাতে চোখ বুলিয়ে দেখলো শুরু থেকে শেষ অব্দি। সবকিছু ঠিকঠাক দেখে উঠে দাঁড়ায়। চোখের সাদা ফ্রেমের চশমাখানা টেবিলের উপর রেখে ফাইল নিয়ে বের হয়ে যায়।”

ফোন কানে ধরে কলে কথা বলছিলো দুর্জয় শাহরিয়ার ইমাম। এই বিশাল অফিসের একমাত্র উত্তরাধিকারী। ইমাম পরিবারের একমাত্র ছেলে দেলোয়ার হক ইমামের পর। দেলোয়ার হক ইমামের একমাত্র পুত্র দুর্জয় শাহরিয়ার ইমাম। দীর্ঘ আড়াই বছর যাবৎ বাবার পরলোকগমনের পর হতে দক্ষ হাতে একাই সামলে নিচ্ছে দুর্জয় অফিস। বিশাল এই ব্যবসায়ে নিজ বোনের ও হাত রয়েছে। অফিসে সপ্তাহে সে তিন দিন আসে নিয়ম করে।”

বত্রিশ বছর বয়সী দুর্জয় শাহরিয়ার এখনো নিয়মিত শরীরচর্চার বদৌলতে দেহের গড়ন ধরে রেখেছে ঠিক ছাব্বিশ সাতাশ বছর বয়সের তরুনের মতোই। সে নিজেও তো এই সময়টা পার করে এসেছে। সে সময়কালে স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা মনোযোগী ছিল। এখনো তাই আছে। জীবনের কোনোকিছুই আর অপূর্ণ নেই তাঁহার। তবে মায়ের ভাষ্যমতে বিয়ে সংসার না হলে, একজন নারী কিংবা পুরুষ। সে যতোই প্রাপ্ত বয়স্ক হোক, পূর্ণ হয় না। আর তাই এই বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকায় একটি দিক এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে তাঁর। অবশ্য এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই দুর্জয়ের। তবে মায়ের কথায় ভাবে! দিনের পর দিন পেরিয়ে বয়স বাড়ছে। শেষ বয়সে একটি বিশ্বস্ত হাতের তো প্রয়োজন। বৃদ্ধা মা আর কত দিনই বা আছেন এই জগত সংসারে। আজ হোক বা কাল তিনির জীবনাবসান ঘটবে। চিরন্তন এই ধ্রুব সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই কোনোভাবেই। তাই সত্য যা মেনে নিতে হবে। যতদিন নির্ধারিত হায়াত আছে ততদিনই এই রঙিন জগতের মেহমান তিনি। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন। শুধু তিনিই নয়। পৃথিবীতে আগত প্রত্যেকটা সৃষ্ট জীব কিংবা প্রাণী। প্রত্যেকের জন্যই মৃত্যু অবধারিত পূর্ব হতে। জন্মিলে মরিতে হইবেই।”

তিনি চলে গেলে দুর্জয় একা। কাজের মানুষরা আর কেমন খেয়াল রাখবে। তাদের সাথে মন খুলে দু টুকরো কথা বলা যাবে না। বোন তাঁর নিজ সংসার রেখে তাঁর কথা চেয়েও শুনতে পারবে না। তবে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন চলে কী?”

দরজার করাঘাত হলে ফোন কান থেকে নামায় দুর্জয় কথার ইতি টেনে। ওপাশ থেকে নারী কন্ঠে ভেসে আসে ইংরেজি কয়েকটা শব্দ, ‘মে আই কাম ইন স্যার?”

কাঁচের প্রাচীর ভেদ করে যেখানে বাহিরে কে দাঁড়িয়ে আছে এই মুহুর্তে তা দেখা সক্ষম। সেখানে না দেখেই আবিদ চেয়ারে বসে গা এলিয়ে দিলো। তবে কন্ঠটা শ্রবণ করার জন্যই সে করাঘাতের শব্দ শ্রবণ করেও প্রবেশের অনুমিত দিলো না। হাত বাড়িয়ে এসির রিমোট নিয়ে পাওয়ার কমিয়ে দিতে দিতে বললো, “ইয়েস! কাম ইন।”

স্বাভাবিক শান্ত গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো রণয়ী। ছাব্বিশ বছরের এই যুবতীর মুখশ্রী অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই গুরুগম্ভীর থাকে সবসময়। না চাইতেই তাই দুর্জয়ের খেয়াল চলে যায় তাঁর মাঝে।‌ অধীর আগ্রহ ছিল দুর্জয়ের প্রথম প্রথম। অফিসের অন্যান্য নারী কর্মীরা যেখানে অবসর সময়ে কিংবা দুপুরের ভোজনে গিয়ে কথা বলে, হেসে গল্প গুজবে মাতে। সেখানে এই নারী চুপচাপ নিজের খাবার খাওয়া সমাপ্ত করে নিজের কেবিনে ফিরে আসে। হয়তো প্রয়োজনে দু একটি কথা বিনিময় করে। তাও কেউ নিজ থেকে এসে বললে তো। তাঁর মধ্যে মিস অনুরিমা, মিসেস রোজা, মিসেস নয়না আছেন। তাদের মধ্যে বেশ সখ্যতা লক্ষ্য করা যায়। এর বেশি কারো সাথে কথা বলতে দেখা যায় না। হয়তো কালভেদ্রে কোনো একদিন বলা হয়। এক টেবিলে খাবার খেতে বসেও কথা বিনিময় হয় না। ব্যাপার খানা এমন কেউ প্রথম সাক্ষাৎকারে বলতে বাধ্য, ‘এই যুবতী বাকশক্তিহীন।”
কেন তাঁর এমন আচরণ? কী তাঁর পেছনের কারণ? এমন নিশ্চুপতার কারণ কী? অতঃপর জেনেই নেয় দুর্জয়। তাঁর সম্পর্কে পুরোটা।”

রণয়ী দুর্জয়ের ঠিক সম্মুখে এসে টেবিলের এপাশ থেকে ফাইল খানা রাখলো। বললো, “সকালের দেওয়া ফাইল স্যার। দেখে নিলে উপকৃত হই। যদি ভুলত্রুটি হয় তো সংশোধন করে নিতাম।”

অন্য কেই হলে দুর্জয় হয়তো নম্র তবে শান্ত গম্ভীর গলায় বলতো, ‘এখন কী তবে আপনার কথায় আমাকে কাজ করতে হবে? আপনি কাজ সম্পন্ন করেছেন। রেখে যান! ভুলত্রুটি হলে কাল আবার দেবো তখন সংশোধন করবেন।’ কিন্তু এই মেয়ের ক্ষেত্রে দুর্জয় চেয়েও এমন কঠিন হতে পারে না। অন্য চোখে যে দেখে তাও না। স্বজনপ্রীতি তাও নয়। অফিসের সব কর্মচারীদের সে এক চোখেই দেখে। তবে কিছু মানুষ হয়তো এমনই আছে। যাদের মুখশ্রী দেখলে চেয়েও কঠোর হওয়া যায় না। কঠিন ভাষায় তাদের কিছু বলা কওয়া যায় না। তবে মেয়েটির কাজ এমন‌। দেখলে যা, না দেখলেও তা। কোনো ভুল পাওয়া যায় না। নির্ভুল সব। অন্যান্য ফাইল দেখলেই সর্বনিম্ন দু একটা ভুল বের হয়। কিন্তু ইনার ফাইলে পাওয়া যায় না।

দুর্জয় রণয়ীর দেওয়া ফাইলটি কিছুটা সময় নিয়ে দেখলো। অতঃপর পাশের স্তুপকৃত অনেকগুলি ফাইলের উপর স্থান করে দিল উক্ত ফাইলটির। রণয়ী বুঝলো সব ঠিকঠাক। পেছন ঘুরে দুইপা এগিয়ে গেলে গম্ভীর গলায় ডাকে দুর্জয়।”

“মিস রণয়ী রহিম! যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন? চলে যাচ্ছেন যে বড়?”

রণয়ী চোখ বুজলো শক্ত করে। আবার পেছন ফিরে পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলে, জ্বী স্যার বলুন।”

দুর্জয়– আপনি চলে যাচ্ছেন? নিন এই ফাইলটি নিন।”

রণয়ী দুই হাত বাড়িয়ে ফাইলটি নিজের আয়ত্তে নিয়ে বলে, “এবার আসতে পারি স্যার?”

দুর্জয় পুনরায় চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বললো, “ইয়েস, নাও ইউ ক্যান গো।”

রণয়ী বাধ্য মেয়ের মতো বাহিরে হেঁটে চলে গেল। দুর্জয় তাঁর যাওয়া দেখলো। মনে মনে আওড়ালো, “হায়রে মানুষ! কেউ চেয়ে পায় না। আর কেউ পেয়েও খাঁটি হীরের মূল্য বুঝে না।”

চলবে!

#মন_শহরে_বসন্ত_হাওয়া |১|
#কে_এ_শিমলা ®

|নতুন গল্প আশাকরি ভালো লাগবে। গল্পটি কাল্পনিক তাই গল্পের মতোই দেখবেন আশাকরি| (আগে একটি গল্প দিয়েছিলাম তিন চার পর্বের সেখানে অনেকেই নায়িকার মিল দেখতে চেয়েছেন। অনেক কিছু বাদ পড়েছে। তাই গল্পটি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here