#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্ত বয়স্কদের ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
যে মেয়েটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসলো তাকে কীভাবে ঠকালো সে? প্রহরের পাগল পাগল লাগছে। জীবনে কিছু কিছু ভুলের মাশুল আজীবন দিতে হয়। কন্ঠর প্রতি যে আগের সেই টান অনুভব করে না প্রহর সেটা কি কন্ঠকে জানিয়ে দেওয়া দরকার? ঐশী! ঐশীর প্রতি এই আকর্ষণ কি ভালোবাসা নাকি সাময়িক মোহ? নাহ কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই প্রহরের কাছে। হুট করে যে মানুষের মতিভ্রম হয় সেটা প্রহরকে দেখেই বোঝা যায়।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো। সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটে বলে অধিকাংশ সময় যায় ফোনে। নিউজফিডে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা পোস্টে চোখ আঁটকে গেলো কন্ঠর। সাথে দমও আঁটকে যাওয়ার উপক্রম। ঐশী ইসলাম নামে একটা মেয়ের আইডি থেকে প্রহরের সাথে ছবি আপলোড হয়েছে। কন্ঠর চোখ থেকে সক্রিয়ভাবে অশ্রু পড়ছে। হাত কাঁপছে। মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছে। ঐশীর আইডি স্টক করতে লাগলো কন্ঠ। নাহ এর আগে আর কোনো পোস্ট নেই প্রহরকে নিয়ে। কিন্তু লাস্ট পোস্টের ক্যাপশন ছিলো,
“ প্রণয়ের পরিণতি! ”
কন্ঠ সমস্ত রাগ-ক্ষোভ ভুলে দ্রুত প্রহরের নম্বরে ডায়াল করে। সরাসরি প্রহরের সাথে কথা বলা দরকার। কিন্তু পরক্ষণেই কন্ঠর মনে হলো ঐশী নামক মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করা দরকার আগে। ঐশী অনলাইনে আছে। কন্ঠর দু’টো আইডি। একটাতে শুধু পরিবারের লোকজন আরেকটাতে অপরিচিত – পরিচিত সবাই। টুকটাক ফেইসবুকে লেখালেখি করে কন্ঠ। সেই আইডিতেই ঐশী এড আছে। কন্ঠ মেসেঞ্জারে গিয়ে নক করলো ঐশীকে। কন্ঠর চোখের পানিতে এরমধ্যে বক্ষ ভিজে গেছে। ম বন্ধ হয়ে আসছে। ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। হৃৎস্পন্দনের গতিও বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখুনি জ্ঞান হারাবে সে। কিন্তু সমস্ত অনুভূতি পাশে রেখে ঐশীর সাথে কথা বলতে হবে। কন্ঠ নক করার ঠিক পাঁচ মিনিট পরে ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে।
” হ্যালো আপু। আপনার গল্প আমার ভীষণ ভালো লাগে। ”
” ধন্যবাদ আপু। কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করবো?”
” হ্যাঁ আপু বলুন। ”
কন্ঠ প্রহরের একটা সিঙ্গেল ছবি পাঠায় ঐশীকে। ঐশী দেখে অবুঝের মতো লাভ রিয়াক্ট দেয়। তার মাথায় একবারও প্রশ্ন আসে না কন্ঠর কাছে প্রহরের ছবি কীভাবে এলো।
” প্রহরের সাথে আপনার সম্পর্ক কী?”
” আসলে আপু এটা তো পারসোনাল বিষয়। তবুও আপনি আমার প্রিয় লেখিকা তাই বলছি, উনার সাথে আমার বিয়ে হবে শীঘ্রই!”
” অভিনন্দন আপু।”
কন্ঠ ফোনটা সাথে সাথে ফ্লোরে ফেলে দিলো। চিৎকার করে উঠলো। দিকবিদিকশুন্য লাগছে তার। কে কী বলবে সেসব আর মাথায় নেই। কন্ঠর চিৎকারে শারমিন সুলতানা ছুটে এলেন। কন্ঠ বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। কন্ঠর মা চমকালেন। কন্ঠকে কখনো এরকম অবস্থায় দেখেননি উনি। শারমিন সুলতানা ছুটে গিয়ে কন্ঠকে জড়িয়ে ধরলেন।
” কন্ঠ! মা কী হয়েছে তোর? এমন করে কাঁদছিস কেনো?”
কন্ঠ নির্বাক। কথা বলার মতো অবস্থা তার নেই। শারমিন সুলতানা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে কন্ঠকে কী হয়েছে! কিন্তু কন্ঠ একইরকম আচরণ করছে। দিনদুনিয়া যেনো ভুলে গেছে মেয়েটা। কী যেনো ভেবে কন্ঠ ফ্লোর থেকে ফোনটা উঠাতে যায়। কিন্তু কোমরের ব্যথার জন্য উঠে আর বিছানায় বসতে পারে না। ফ্লোরে বসেই কল করে প্রহরকে। কন্ঠর সমস্ত শরীর কাঁপছে। শারমিন সুলতানাও বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
” কেমন আছো কন্ঠ?”
” ঐশীর সাথে কবে বিয়ে তোমার? ”
কন্ঠর মুখে ঐশীর নাম শুনে থমকে যায় প্রহর। কন্ঠ কীভাবে জানলো এসব? কতটা জানে কন্ঠ? তাহলে কি সবকিছুই জেনে গেলো?
” কন্ঠ প্লিজ আমার কথা শোনো। আমি সেদিন রাতে কেনো ওসব করলাম বুঝতে পারিনি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তোমার কাছে আসছি এখুনি। ”
কন্ঠ কিছু বলার আগেই প্রহর কল কেটে দিলো। কন্ঠর কথায় প্রহরের বুঝতে বাকি নেই কন্ঠর ঠিক কী অবস্থা এখন। শারমিন সুলতানা এতক্ষণে একটু হলেও মেয়ের পাগলামির কারণ বুঝতে পেরেছেন। মুহুর্তেই রেগে গেছেন তিনি। এই পরিবারের মেয়ে হয়ে প্রেম! কিন্তু কন্ঠর অবস্থা দেখে রাগ দেখাতে পারছেন না শারমিন। ফ্লোরে আধশোয়া অবস্থায় ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে কন্ঠ। চোখেমুখে পানি। শারমিন সুলতানা কন্ঠকে আবারও জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
” মা মাথা ঠান্ডা কর। আমরা কথা বলবো। ”
” মা! আমাকে মেরে ফেলো। আমি তোমাদের সম্মানের কথা ভুলে প্রেম নামক সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম। আজ তার শাস্তি পাচ্ছি মা। ও আমাকে ঠকিয়েছে মা! প্রহর আমাকে ঠকিয়ে…. ”
কন্ঠ কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। একমাত্র মেয়ের এরকম অবস্থা দেখেও শারমিন সুলতানাও কাঁদছেন। কন্ঠর বাবা বাসায় না। কি করবেন বুঝতে পারছেন না তিনি। কন্ঠকে কোনোরকমে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সমুদ্রদের বাসায় গিয়ে সবকিছু বলে। সমুদ্র বাসায় ছিলো। বিনা,সমুদ্র আর শায়লা শারমিনের সাথে কন্ঠর কাছে এসেছে। এখনও জ্ঞান ফেরেনি দেখে সমুদ্র কন্ঠর চোখেমুখে পানিরছিটা দিচ্ছে। কন্ঠর মা এতটাই হতভম্ব হয়ে গেছেন যে জ্ঞান হারালে যে পানিরছিটা দিতে হয় সেটাও ভুলে গেছেন।
” বড়ো মা কী হয়েছে কন্ঠর? প্রহর কে? আমি তো কখনো তার নাম পর্যন্ত শুনিনি ওর মুখে।”
সমুদ্র কন্ঠর হাতে হাত দিয়ে ঘষে গরম করার চেষ্টা করছে। সমুদ্রর দেখাদেখি বিনাও কন্ঠর পায়ের পাতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। শারমিন সুলতানা ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। কন্ঠ বাঁচবে তো? ওর শরীর এমন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কেনো? মনে মনে হাজারো কুচিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে উনার মনে। শায়লা শারমিনের হাত ধরে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করে।
” আমি জানি না সমুদ্র। তুই একটু ইফতিকে কল দিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসতে বল বাবা।”
” হ্যাঁ বলেছি আমি আগেই। তুমি চিন্তা করো না। ”
আধা ঘণ্টার মাথায় ইফতি ডাক্তার নিয়ে বাসায় ফেরে। ডাক্তার ইফতির বন্ধু,বজলুল হাসান। ইফতি কিছু বুঝতে পারছে না। কন্ঠকে এরকম অবচেতন অবস্থায় দেখে ইফতি বারবার ঘামছে। মাথার পাশে বসে আছে ইফতি। সমুদ্র পাশে আর বিনা দাঁড়িয়ে আছে পায়ের কাছে। শায়লা শারমিন সুলতানার হাত ধরে ঘরের এককোনায় দাঁড়িয়ে আছেন।
” বজলুল কী হয়েছে কন্ঠর? ও চোখ মেলে তাকাচ্ছে না কেনো?”
” খুব বড়ো আঘাত পেয়েছে। এজন্য এখনো জ্ঞান ফেরেনি। চিন্তা করিস না একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। আর কোমরের ব্যথাটা আবারও চোট পেয়েছে নতুন করে। বিছানা থেকে কি পড়ে গিয়েছিল? ”
শারমিন সুলতানা নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সম্মতি জানান।
” ঔষধ দিলাম আরো কড়া ডোজের। বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে আর ব্যথার ঔষধ নিয়মিত খেতে হবে। ইফতি আমি আসছি বরং। ”
” আমি এগিয়ে দিয়ে আসছি ভাইয়া চলুন।”
সমুদ্র বজলুলকে এগিয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু বাড়ির সামনে একটা ছেলেকে দেখে সমুদ্র কী ভেবে যেনো তাকে প্রশ্ন করে সে কে?
” আমার নাম প্রহর। এখানে কন্ঠর বাসা কোথায়? ”
” আপনি প্রহর! আসুন আমার সাথে। ”
সমুদ্র যদি তখন জানত প্রহর কন্ঠকে কীভাবে ঠকিয়েছে তাহলে কখনোই তাকে ঘরে নিয়ে আসতো না।
কন্ঠর জ্ঞান ফিরতেই প্রহরকে সামনে দেখে আবারও উত্তেজিত হয়ে যায়। উঠতে না পারা সত্বেও বিছানা থেকে উঠতে চাইলে ইফতি ধরে কন্ঠকে।
” ভাইয়া আমাকে ছাড়ো আমি ওকে খুন করে ফেলবো।”
” কন্ঠ আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ এরকম পাগলামি করো না। আমি ঐশীর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবো না আর।”
কন্ঠ আবারও চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। ঘটনার সারমর্ম এতক্ষণে সবাই বুঝতে পেরে গেছে। সমুদ্র প্রহরকে বাসা থেকে বের করে দেয়। কন্ঠ আবারও পাগলের মতো কাঁদতে থাকে। ইফতির ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে কন্ঠর কষ্ট দেখে। তার ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো জন্য এরকম কষ্ট পাচ্ছে ভাবতেই সবকিছু কেমন লাগছে ইফতির। এইতো কন্ঠর পরীক্ষা শেষ হলেই দুই পরিবারের সম্মতিতে দু’জনের বিয়ের কথা হয়েছিল। একটা মানুষ একটা মানুষের জন্য এভাবে উন্মাদের মতো আহাজারি করছে দেখলেও কলিজায় লাগে। ইফতির সমস্ত কঠোরতা কন্ঠর চোখের পানিতে নম্র হয়ে গেছে এই মুহুর্তে। শারমিন সুলতানা মেয়ের কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে রুম থেকে বেরিয়ে যান। সাথে শায়লা মল্লিকও যান তাকে সামাল দিতে। সমুদ্র রাগে ফুঁসছে। প্রহরকে একটা শিক্ষা দিবে বলে মনে মনে ভাবে সে। বিনা কাঁদছে। তার কন্ঠ আপার এতো কষ্ট কীভাবে সহ্য করবে?
” কন্ঠ! তুই একটু শান্ত হ। এভাবে কাঁদলে তোর শরীর আরো খারাপ হবে। প্লিজ কন্ঠ প্লিজ!”
কন্ঠ ইফতিকে জড়িয়ে ধরে আরো বেসামাল হয়ে উঠে। কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
” আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? আমি কি পাগল হয়ে গেছি ইফতি ভাইয়া? আমি তো পারছি না নিজেকে বোঝাতে! ও আমাকে এভাবে ঠকালো? কেনো ঠকালো বলো তো? আমি কি আসলেই ভালো না? তুমি যে বলতে আমি গুড ফর নার্থিং,আসলেই তো কি তাই? ”
ইফতি কন্ঠর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো।
” তুই একটা লক্ষ্মী মেয়ে। আমি তো এমনি বলতাম। শান্ত হ,আমরা বসে কথা বলবো। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
কন্ঠ ইফতির কথায় বুকে মুখ গুজেই জোরে হাসে। সমুদ্র আর বিনা চমকায় ওর হাসিতে। মাত্রই তো কাঁদছিল এখন এভাবে হাসছে? ইফতি কন্ঠর কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর বাড়ছে। হয়তো আবারও জ্ঞান হারাবে মেয়েটা। ইফতির ভয় করছে ভীষণ। কন্ঠর মানসিক অবস্থা নিয়ে ভয় হচ্ছে তার। এভাবে একসাথে হাসা ও কাঁদা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক নয়। মনে মনে প্রহরের প্রতি তীব্র আক্রোশ জন্মাচ্ছে ইফতির। ইফতি অবশ্যই প্রহরকে জিজ্ঞেস করবে কেনো কন্ঠর সাথে এমন করলো। প্রিয় মানুষের এতো কষ্ট সহ্য করার চেয়ে তাকে সুখে থাকতে দেখতে বুকের পাশের চিনচিনে ব্যথা কম হতো।
চলবে,
প্রথম পর্বে কত রিচ! পরের পর্বে আপনাদের রেসপন্স পাই না কেনো? গল্প কি হারিয়ে ফেলেন? আর আমার পরীক্ষা সামনে তাই পর্ব ছোটো হবে।
আগের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=389516263729325&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=390730570274561&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz