যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_২১ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
290

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_২১
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

প্রহরের শেষ ইচ্ছে পূর্ণ করেনি কন্ঠ। স্ত্রী হিসেবে ঐশীকে দিয়ে তার স্বামীকে শেষবারের মতো স্পর্শ করিয়েছে কন্ঠ। ঐশী যেনো সম্পূর্ণ বদলে গেছে প্রহরের মৃত্যুতে। সন্তান হারানোর শোক দু-তিন দিন থাকলেও স্বামী হারানোর শোক একদিনও ছিল না। প্রহরকে দাফন করার পরেই ঐশী ফিরে গিয়েছে নিজগৃহে। পৃথিবীতে কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা নিজেরাও আগলে রাখবে না আর না তো অন্য কাউকে আগলে রাখতে দিবে। এরা জেনে-বুঝে অন্যায় করে অথচ কোনো অনুশোচনাও করে না। এদের কাছে কোনো সম্পর্কের মূল্য নেই!

সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যায়। হোক সেটা সম্পর্কের রসায়ন কিংবা মানুষ হারানোর শোক। সময় সবকিছু আস্তে আস্তে ভুলিয়ে দেয়। এরমধ্যে কন্ঠ ও সমুদ্রর স্নাতক শেষ হয়েছে। বিনা এতদিনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। শারমিন সুলতানা নিজগৃহে ফিরেছেন বহুদিন। একা একা জীবনধারণ করতে দিব্যি শিখে গেছেন। এখন আর একাকীত্ব গ্রাস করতে পারে না উনাকে। একাকীত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে শিখে গেলে একাকীত্ব আর পোড়ায় না।
____________________________

” তারপর? তারপর কী হয়েছিল নানি? বাবা কেনো আমাদের ছেড়ে গেলো সেসব তো বললে না!”
” সেসব আরো পরের কথা। ”
” তারপর বলো তাহলে। ”

অষ্টাদশী পূর্ণতা নানির মুখশ্রীর দিকে আগ্রহসহকারে তাকিয়ে আছে। পূর্ণতার নানি চোখমুখ শক্ত করে ফেললেন। একটু নড়েচড়ে বসে ফের বলতে শুরু করলেন মল্লিক বাড়ির পরের কাহিনি…
______________________________

পড়ন্ত বিকেল,শুক্রবার। রান্নাঘরে কাজ করছে কন্ঠ। লুচি আর আলুর তরকারি রান্না করবে আজ। সন্ধ্যায় সবাই একসাথে বসে খেতে খেতে গল্প করবে বলেই এসব আয়োজন। এমন সময় হুট করে ইফতি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠে কন্ঠ।
” ধ্যাৎ! ভয় পাইয়ে দিলে একেবারে। ”
কন্ঠ মেকি রাগ দেখিয়ে বললো। ইফতি কন্ঠর ঘাড়ে আলতো করে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। খোঁপা করা চুলগুলো খুলে দিয়ে চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ইফতি। ইফতির টালমাটাল স্পর্শে কন্ঠর ধৈর্য চ্যুতি ঘটছে।
” ঘরে আমি ছাড়া আর কে আছে এরকম জড়িয়ে ধরবে? ভীতুর ডিম একটা। ”
” খবরদার! আমি মোটেও ভীতু নই। তুমি ছাড়ো তো। কে কখন এসে পড়ে, আজকে সবাই বাসায় আছে। ”
” ছাড়বো আগে বলো চুলে কী শ্যাম্পু দিচ্ছ আজকাল? কেমন মাতাল করা ঘ্রাণ! ইচ্ছে করছে আস্ত তোমাকে খেয়ে ফেলি।”
” রাক্ষস একটা। ”
” তুমি এটা বলতে পারলে?”
” তাহলে তুমি আমাকে খাওয়ার কথা কীভাবে বললে শুনি?”
” এতদিনেও তো খেলাম না। তবুও এই বদনাম। ”
” হয়েছে সরো। কাছাকাছি আসার যতো বাহানা। শ্যাম্পু তো চিরকাল সানসিল্ক দিয়ে আসতেছি। ”
কন্ঠ ইফতিকে জোর করে ছাড়িয়ে দিয়ে লুচি বেলতে শুরু করেছে। ইফতি কন্ঠর পাশে দাঁড়িয়ে একটু আটা নিয়ে কন্ঠর নাকের ডগায় লাগিয়ে দিলো।
” তোমার কাছাকাছি যেতে আর বাহানা লাগে না। শুধু অপেক্ষা করে আছি কবে তুমি নিজে থেকে কাছে ডাকবে।”
কন্ঠ লুচি বেলা রেখে আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিলো একবার। তারপর চট করে ইফতির পায়ের উপর পা রেখে দুহাতে গলা ধরে দাঁড়ালো। কন্ঠ নিজের নাকের ডগার আটা ইফতির নাকে ঘষে লাগিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে,
” মেয়ে মানুষের বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না জানো না? ”
হঠাৎ বিনার কাশির আওয়াজে তড়িৎ গতিতে কন্ঠ আর ইফতি দূরে সরে গেলো। বিনা ঠোঁট টিপে হাসছে। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা ইফতি কী বলবে বুঝতে পারছে না। শুধু এদিকওদিক তাকিয়ে কী যেন খুঁজছে এমন একটা হাবভাব করছে।
” ভাইয়া কি কিছু খুঁজছেন? ”
বিনা রান্নাঘরের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে শুধালো। ইফতি চট করে চিনির কৌটো হাতে নিয়ে হেসে বলে,
” এইতো পেয়ে গেছি। কতক্ষণ ধরে লবনের কৌটো খুঁজছিলাম! কন্ঠ তো খুঁজেই পাচ্ছিল না।”
বিনা লবনের কৌটোটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,
” ওটা চিনির কৌটো ভাইয়া,এটা লবনের। এই নিন।”
কন্ঠর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। বেচারা লজ্জায় পড়ে গেল।
” ওহ ভুল হয়ে গেছে। একরকম দেখতে তো। যাগগে তোমরা কাজ করো আমি আসি।”
ইফতি চিনির কৌটো রেখে আর এক মুহুর্ত দেরি না করে স্থান ত্যাগ করলো। ইফতি চলে যেতেই একসাথে হেসে উঠলো বিনা ও কন্ঠ।
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে রুমে একা একা পায়চারি করছে ইফতি। তখন কন্ঠ কী বললো সেটা নিয়ে ভাবছে। মেয়েটা কী কোনোভাবে সম্মতি দিলো? হ্যাঁ সেটাই হয়তো বলেছে। সে যা বলে বলুক। আজকে বউকে নিজের করে নিবে,একেবারে একান্ত করে। ঘরে শুধু আসুক। সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে রোমান্স শুরু করবে। এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় ত্রিশ মিনিট পায়চারি শেষে ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো ইফতি। বিনা আর কন্ঠ এঁটো থালাগুলো ধুতে ধুতে গল্পগুজব করছে। ইফতি আরেকটু এগোতে দেখল সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরের পর্দার আড়ালে। রান্নাঘর থেকে বোঝা না গেলেও বাইরে থেকে সমুদ্রর পা দুটো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বিষয়টা বুঝতে ইফতির কয়েক মিনিট সময় লাগলো। খুব সম্ভবত সমুদ্র আর বিনা ছিল রান্নাঘরে। এমন সময় কন্ঠ এসে পড়ায় বেচারা সমুদ্র লুকিয়ে পড়েছে। ইফতি নিঃশব্দে হাসলো ভাইয়ের কথা চিন্তা করে। পুরুষ জাতি স্ত্রী’র কাছে ভীষণ অসহায়। প্রিয়তমার নিকট সকল স্বামী আশিক।
” তোরা দু’জন এখনও এখানে দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছিস কন্ঠ? রাত এগারোটা বাজলো! কাজকর্ম থাকলেও আর করতে হবে না। ঘুমুতে যা দু’জন। আমি এলাম পানি নিতে। ঘরের পানি শেষ হয়ে গেছে। ”
শ্বাশুড়ির আগমনে আলাপচারিতায় ব্যাঘাত ঘটলো দুই বউয়ের।
” কথা বলছিলাম তো এজন্য সময় খেয়াল করিনি মা। বিনা তুইও যা আমি এলাম। কাজ তো সব শেষ হয়েছে। ”
কন্ঠ হেসে বললো। ততক্ষণে শায়লা মল্লিক জগে পানি ভর্তি করে নিয়েছেন।
” ঠিক আছে কন্ঠ আপা।”
কন্ঠ ধীর পায়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। শায়লা মল্লিকও গেলেন। সবাই এক এক করে রান্নাঘর থেকে বেরুতেই সমুদ্র পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে মুখভার করে দাঁড়িয়ে রইলো বিনার সামনে।
” কী হয়েছে? এমন পেঁচার মতো করে রেখেছেন কেনো মুখখানা? ”
” কতক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম বলো তো? ”
” লুকাতে বললো কে? থাকতেন এখানেই। ”
” হ্যাঁ পরে কন্ঠ আমাকে ভাজাপোড়া করে খেতো। যতই ভাবি হোকনা কেনো তার আগে তো আমরা কাজিন। এজন্যই জ্বালিয়ে মারে মেয়েটা।”
বিনা হাসতে হাসতে শোয়ার ঘরের দিকে হাঁটছে। সমুদ্র পেছন পেছন এগুচ্ছে।
” বুঝলাম। এবার চলুন ঘুমোতে। ”

কন্ঠ ঘরে ঢুকে নজর বুলালো সব জায়গায়। ইফতি নেই কোথাও। গেলো কোথায় এই রাতে? এসব ভাবতে ভাবতে দরজা দেওয়ার জন্য পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে ইফতি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে তার মুচকি হাসি। চোখগুলো কেমন পিটপিট করছে।
” তুমি এখানে এলে কীভাবে? ”
” রান্নাঘরে গেলাম তোকে খুঁজতে। গিয়ে দেখি বেচারা ছোটো ভাই আমার লুকিয়ে আছে। ”
” কী! কোথায় ছিল সমুদ্র? ”
” হুঁশ আছে না বড়ো ভাই? এসব বলতে হয় না। ”
ইফতি দরজা আঁটকে দিলো। বিছানার পাশে গিয়ে বসলো আরামসে। কন্ঠও পিছু পিছু গিয়ে বসলো।
” আহা! বলো না কোথায় লুকিয়ে ছিল?”
” নিশ্চিত তুমি ওকে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করবে তাই তো?”
” উঁহু মজা করবো।”
” হয়েছে। আর মজা করতে হবে না তোর। তারচে যা সুন্দর করে সাজুগুজু করে আয়।”
ইফতির কথায় চমকাল কন্ঠ। এই রাত্তিরে সাজগোছ? কেন ভাই? লোকটাকে কি পাগলা কুকুরে কামড়ে দিলো?
” মাথা ঠিক আছে তোমার? ”
” ঠিক না থাকলে তো পাবনা পাগলাগারদ থাকতাম। তোর সাথে এই বিছানায় বসে থাকতাম না।”
নাহ মজা করছে না ইফতি। কন্ঠ নড়েচড়ে বসে ভ্রু কুঞ্চন করে শুধালো,
” ছবি তুলে দিবা?”
” এখন?”
” তাহলে? ”
” না রে কিছু লাগবে না। এমনিতেই গোছানো জিনিস এলোমেলো হয়ে যাবে। ”
” কী যে বলো তুমিই জানো। সরো শোবো আমি। ”

কন্ঠ মুখ ঝামটি দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। ইফতি ঘরের বাতি নিভিয়ে বিছানায় এসে কন্ঠর গায়ের উপর ঝুঁকলো। অন্ধকারে ইফতির মুখশ্রী দেখতে না পেলেও স্পর্শ অনুভব করতে পারছে কন্ঠ। বালিশের ওপাশে রাখা ফোন হাতে নিয়ে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে দিলো ইফতি। ফোনের ওপর কন্ঠর ওড়না দিয়ে দেওয়ায় হালকা আলোয় আলোকিত হচ্ছে ঘরজুড়ে। এবার দু’জন দু’জনার চেহারা দেখতে পাচ্ছে। ওড়না দিয়ে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ঢাকা আছে বলে দু’হাত বুকের উপর দিয়ে রেখেছে কন্ঠ। শহরে বেড়ে উঠলেও ওড়না ছাড়া চলাফেরা কখনো করেনি কন্ঠ। সাথে হিজাব তো ছিল সব সময়।
” দেখি বুক ফাটলো কি-না। ”
ইফতি কন্ঠর হাত দুটো দুই দিকে প্রসারিত করে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো। কন্ঠ লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। লোকটা আজ লাজলজ্জা সব শেষ করে ফেলবে নিশ্চিত!
” প্লিজ এরকম করো না। বাতি নিভিয়ে নাও।”
” কেনো? না দেখলে কি ফিল আসবে? এই যে এখন আমি আমার কন্ঠর ওড়না বিহীন বক্ষে মাথা রেখে শোবো সেটা চক্ষে না দেখলে প্রাণভরবে? ”
” এভাবে লাজে মেরো না আমায়!”
” কাছে আসবো না?”
” সেটা বলিনি তো।”
” আদর করবো না?”
” এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করে? কেউ খাওয়ার কথা বললে কি তুমি প্রথমবারেই বলো আমি ওটা খাবো? তখন তো ঠিকই বলো, না না কিচ্ছু খাবো না।”
কন্ঠ ঠোঁট টিপে হেসে বললো। ইফতি কন্ঠর বক্ষে মাথা রেখে শুয়ে ঠিক বুকের মাঝ বরাবর চুম্বক এঁকে দিলো। কন্ঠর শরীর হালকা ঝাঁকুনি খেলো।
” পরের বার ঠিকই খাই কিন্তু! তারমানে তুমিও এখন মুখে ‘না’ বলিতেছ। মনে মনে ঠিক চাইছো আমি এসব করি।”
” না।”
” কোনো কোনো সময় মেয়েদের ‘না’ মানে ‘হ্যাঁ’ আর ‘হ্যাঁ ’ মানে ‘না’ হয়। এসব আমি বুঝি,জানি। ”
” এসব মিথ্যা কথা। ”
” চুপ একেবারে চুপ!”
ইফতি একটা আঙুল দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো কন্ঠর। কন্ঠ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইফতির দিকে। সবকিছু ঠিক আছে শুধু বাতি নিভিয়ে নিলে কী এমন ক্ষতি হতো? ইফতি নিজের উষ্ণতম স্পর্শে কন্ঠর মন ও মস্তিষ্কে নেশা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্বত হলো। কন্ঠ যখন লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো ইফতি তখন সারা শরীরে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিতে ব্যস্ত। ইফতির এলোমেলো স্পর্শে কন্ঠর নিঃশ্বাস থেকে থেকে ভারী নিঃশ্বাসে পরিণত হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটলো আজ। প্রেয়সীকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিলো ইফতি।
চলবে,

ফিলিং ভীষণ লজ্জা! নাও তোমাদের রোমান্টিক পর্ব। আগামীকাল গল্প আসবে না। বুধবার আমার পরীক্ষা। ওইদিন রাতে সাড়ে দশটার দিকে ছোটো করে এক পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো। সবাই দোয়া করবেন। রিচেক দেওয়া হয়নি। ❤️

আগের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=402939809053637&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=404187948928823&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here