মন_শহরে_বসন্ত_হাওয়া |১৪| #কে_এ_শিমলা ®

0
261

#মন_শহরে_বসন্ত_হাওয়া |১৪|
#কে_এ_শিমলা ®

চুলো থেকে চায়ের পাতিল নামাতে গিয়ে হাতে আঁচ লেগে সেটা ফ্লোরে পড়ে গেল। ছিটকে এসে খানিকটা পায়ে ও পড়লো। চিৎকার করে দূরে সরে গেলেন রাহিমা সুলতানা। উনার চিৎকার শুনে তড়িগড়ি করে ছোটে আসলেন রাজিবুল হাসান। নিজের স্ত্রী কে পায়ে ধরে ফ্লোরে বসা অবস্থায় দেখে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো তিনির। চা এবং পাতিল ফ্লোরে দেখে বুঝলেন হাত ফসকে পড়ে গিয়েছে তা।”

রাজিবুল হাসান ধরে নিয়ে আসলেন রাহিমা সুলতানা কে। এমনটা নতুন নয়। প্রায়শই হাত থেকে এরকম কিছু পড়ে যায়। রাহিমা সুলতানা ভালোবাসার মানুষ ছিলেন রাজিবুল হাসানের। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছেন। তিনি বাবার বাড়ি যেমন ছিলেন স্বামীর বাড়িতেও তেমন। কখনো কোনো কাজ নিজ হাতে করতে হয়নি। কাজের মানুষ ছিল। এখন পুত্র বধু এলো। তাঁর স্বামী বলে উনাদের ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র বাসা তাঁর। মাসের খরচাপাতি নিয়ে আসে। নামমাত্র নিজে রাঁধে। সবকিছুই রাহিমা সুলতানা কে করে দিতে হয়। কেবল হাঁড়িতে নাড়াচাড়া করাটাই নূরার রান্না। একদিন সাহস করে বলেছিলেন রাহিমা সুলতানা। আগের মতো একজন কাজের মানুষ রেখে যেন দেয়। নূরার গরম চাহনি দেখে আর সাহস হয়নি বলার। ছোটা বুয়া এসে শুধু ঘরটাই পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। তাও সপ্তাহে চারদিন। বাকি তিনদিন রাহিমা সুলতানা কে করতে হয়‌। এতোবড় বাড়ির কাজ বৃদ্ধ তিনি করবেন! তবুও ভয়ের চোটে করতে হয়। অল্প করেই হাঁপিয়ে উঠেন। কী থেকে কী করবেন খোঁজে পাননা। কখনো করার অভ্যাস নেই যে। যে চারদিন বুয়া এসে করে দেয়, মনে হয় যেন খুব বড় বোঝা একটা নেমে গেল। কেবল রক্তিমের জন্যই কাজের বুয়া আছে। আর যাই হোক বাড়ি অপরিষ্কার দেখলে তো সে প্রশ্ন তুলবে। সব নূরার বুদ্ধি। অথচ এই কাল সাপ কে নিজের ঘরে নিজেই ঢুকিয়েছিলেন এক সুন্দর মনের মেয়েকে বাহির করে দিয়ে। হাড়ে হাড়ে টের পান রাহিমা সুলতানা কত বড় অন্যায় এবং ভুল উনারা করেছেন।”

গরম পানি যে জায়গায় পড়েছে। সেই জায়গা লাল হয়ে গিয়েছে। জ্বলছে খুব! এমনিতেই হাত পায়ের চামড়া ঝুলে গিয়েছে। তারপর এতো খাটুনি।‌ রাতে হাত, পা, কোমর এমনকি সর্বাঙ্গের ব্যথার কাতরান। তখন রাজিবুল হাসান নিরবে চোখের জল জড়িয়ে মালিশের প্রলেপ আঁকেন। কিছু বলার নেই। নিজ হাতে এমন ভাগ্য ডেকে এনেছেন।”

ফুস্কা পড়েছে পায়ে‌। হাতের কব্জিতে ছ্যাকা। রাজিবুল হাসান পেস্ট লাগিয়ে দিলেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে দিতে আফসোসের সাথে বললেন, ‘বুঝলে রাহিমা! ওই মেয়েটা যখন কাঁদার বদলে কড়া কথায় বাড়ি ছাড়লো, আমি তখনই বুঝেছি আমাদের জন্য সামনে এই দিন অপেক্ষা করছে। যাই বলো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তো মানুষ আর কাঁদে না। তাদের এক একটি দীর্ঘশ্বাসে আকাশসম অভিযোগ থাকে। অভিশাপ না দিলেও তাদের চোখের পানিতে, দীর্ঘশ্বাস গুলোতে অভিশাপ ঠিকই থাকে। বিনা দোষেই মেয়েটা কষ্ট পেলো। আমরা অন্যায় করেছি তাঁর সাথে। তাঁর প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস আমাদের জন্য অভিশাপ। এটুকু তো প্রাপ্যই।”

স্বামীর কথায় ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন রাহিমা সুলতানা। আহাজারি করে বললেন, ‘আমায় আর লজ্জা দিও না গো তুমি। আর বলো না এসব। আমি বুঝে গেছি আমি কী কাজ করেছি। আমার ভুলের শাস্তি, আমার কর্মের প্রতিফল আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। যে মেয়ে মন জুগানোর জন্য পা ধুয়ে দিত। সেই মেয়েকে রেখে এক নষ্ট** কে আমি বাড়িতে ঠাই দিয়েছি। যার কারণে এখন আমার পা পুড়ে‌।”
যে মেয়ে নিজ হাতে আমায় কিছু করতে দেয়নি। হাতে সুন্দর করে চুড়িয়ে পড়িয়ে দিত, সেই মেয়েকে আমি মূল্যবান ভাবিনি। এক নাগিনী কে আশ্রয় দিয়েছি যার জন্যে আমার হাত পুড়ে এখন। যে আমি যুবতী কালে কোনো কাজ করিনি। ওই মেয়ের জন্য আমার এখন বৃদ্ধ বয়সে এতো কাজ করতে হয়। আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি আমায় দিয়েছেন। মেয়েটার উপর আমি অত্যাচার করেছি। কখনো মুখ ফুটে আমার ছেলের কাছে বলেনি। নিরবে সব সয়ে গেছে। আর এখন কিছু না করেও ছেলে সন্দেহের চোখে দেখে‌। মিথ্যা অপবাদ দেয় এই বয়সে‌। একটাবার ওরে পেলে আমি দুহাতে ধরে ক্ষমা চাইতাম। যে পাপ করেছি তা প্রায়শ্চিত্ত করার মতোন নয়। তাও আমি মাফ নিতাম ওর থেকে। মৃত্যুর পর যেন আল্লাহ আমারে এতোটা শাস্তি আর না দেন।”

রাজিবুল হাসান বিছানায় আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে শুনলেন স্ত্রীর কথা। বড্ড বেশি অনুশোচনা হয়।”
নিরবে কাটলো কিছুক্ষণ। কেবল রাহিমা সুলতানার কান্নার শব্দ হলো। রাজিবুল হাসান উঠে গেলেন। রাহিমা সুলতানা অসুস্থ দু’দিন থেকে। দুপুরে কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দুজনে মিলেই অবশ্য কাজ করেন। তখন আর ঔষধ নেওয়া হয়নি। একজন কাজের মানুষ লুকিয়ে রাখবেন তাঁর ও উপায় নেই। পুত্র বধু বলেছে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে গিয়েছে‌। তাঁর অনুপস্থিতিতে কী হচ্ছে না হচ্ছে সব দেখে সে। ছেলের কাছে তাঁর নামে কিছু বললে উনাদের তো শাস্তি আছেই। সাথে ছেলের জীবনেও নেমে আসবে তান্ডব। আর কতোদিনই বা পৃথিবীতে আছেন। মুখ বুজে সহ্য করে নেন। যে ঘরে একবুক শান্তি পেতেন। শখের বাড়িটাকেই আজ নরক মনে হয়। দমবন্ধ হয়ে আসে। বাহির থেকে মানুষ তো বুঝে সুখেই আছেন। ভুক্তভোগী উনারাই না জানেন! কী নির্মম ভাবে দিনকাল কাটাচ্ছেন।”

প্লেটে করে ঠান্ডা ভাত ঠান্ডা তরকারি নিয়ে এলেন রাজিবুল হাসান। তরকারি হিসেবে কেবল ডাল পেয়েছেন।‌ দুজন খেয়ে নিতে পারবেন রাতে। ভাত মেখে মুখে তুলে দিলেন রাজিবুল হাসান। রাহিমা সুলতানা মুখটা কে অসহায় বানিয়ে বললেন, ‘ঠান্ডা! নুন নেই। একটু দাও‌।”

রাজিবুল হাসান নুনের কৌটা এনে উপুড় করে ছিটা দিতেই মুখ খুলে অনেকখানি নুন পড়ে গেল প্লেটে। হাত কাঁপছিল রাজিবুল হাসানের।‌ রাহিমা সুলতানা অসহায় চোখে তাকিয়ে সরে গেলেন। পানি পান করে বললেন, ‘আর খাবো না! একপিস পাউরুটি আছে ফ্রিজে। ওইটা এনে দাও। এতেই হয়ে যাবে।”

‘ডাল আছে আরো। দাঁড়াও নিয়ে আসি।”

‘না লাগবে না। ওঠা আমায় দিয়ে দিলে তুমি খাবে কী?”

‘ফ্রিজে ডিম আছে না! একটা বেজে নিয়ে আসি।”

‘না গো ফ্রিজে কিছুই নাই। শুধু পাউরুটি‌। আর না জানি কোন দিনের জেলি। ওটা বাহিরে বের করে রাখো পরিষ্কার করতে হবে।”

রাজিবুল হাসান অশ্রুসিক্ত চোখে উঠে গেলেন বিছানা ছেড়ে। এতো বড় বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন। কে বলবে রাতে খাওয়ার জন্য উনাদের এই ঘরে একটা তরকারি নেই হাঁড়িতে। একটা ডিম নেই ফ্রিজে। অথচ এই বছর কয়েক আগেও ফ্রিজ ভর্তি খাবার পড়েছিল।‌ নষ্ট হতো ফলমূল থাকতে থাকতে। নিজের কাছে যা টাকা ছিল তা খরচা করে শেষ। যে টাকা ব্যাংকে ছিল। তা নিজের করে নিয়েছে নূরা। কিছু বলার উপায় নেই। না জানি কতদিন এমন আযাব সহ্য করতে হয়।”

~~~~~______

অফিস থেকে ফিরে রক্তিম নূরাকে পেল না বসার ঘরে। বেডরুমে যেতেই দেখলো সে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ফোন ঘাটছিল। তাকে দেখামাত্রই তা রাখলো। রক্তিম বিছানায় বসে পায়ের মোজা খুললো। গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে?”

‘কী হবে আমার আবার? কিছুই না।”

‘এভাবে কথা বলছো কেন?”

‘তো কীভাবে বলবো? নিজের মা বাবাই শুধু অসুস্থ হয়। বউ আর অসুস্থ হয় না? তাই না? তাদের তো ঠিকই দেখতে চলে যাও। বউ কে তো একবারো কল করে খোঁজ নাও না।”

‘আজেবাজে কথা একদম বলবে না নূর। আমি মা বাবা কে দেখতে যাইনি গত দুই সপ্তাহ ধরে। অফিসের কাজের যন্ত্রণায় এমনিতেই ঘুম আসে না। তুমি মেজাজ খাবে না একদম।”

‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তোমার মাথা খাই! মেজাজ নষ্ট করে দেই। তুমি যদি তোমার মা বাবা কে দেখতে না যাও তবে ছিলে কোথায় আজ? অফিসে নেই কেন?”

‘তোমার মা বাবা তোমার মা বাবা বলছো কেন? উনারা তোমার কেউ না? আর আমি অফিসে ছিলাম না তুমি জানলে কী করে? কে বলেছে তোমায়?”

‘তোমার মা বাবা কে আমি মা বাবা মানলেও উনারা কী আমায় মানেন? উনাদের চোখের ভাষা বলে দেয় তাদের কতটা অপছন্দ আমি। এখন কী তুমি আমায় সন্দেহ করেছো?”

‘কথা পেঁচাবে না। আমি তোমাকে সন্দেহ করিনি। শুধু বলেছি তুমি কিভাবে জানো আমি অফিসে নেই।”

‘যদি বলি আমি গিয়েছি‌। ছিলে কোথায় সেটা বলো তুমি।”

‘এখন কী তোমার কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে আমায়?”

‘রক্তিম! সোজাসাপ্টা বলো।”

‘মিটিং ছিল আমার বাহিরে। সেখানেই ছিলাম। যখন অফিসে গিয়ে পাওনি কল করলে না কেন? তোমাকেও ডেকে নিতাম।”

‘রক্তিম! তুমি আমাকে ঠকাচ্ছো না তো? আজকাল তুমি ঠিক করে আমার সাথে কথা বলো না। অকারণে রাগ করো। চেঁচামেচি করো। তুমি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছো।”

‘ঠকানো আমার অভ্যাস নয়। তোমার আছে! এই পরিবর্তন আমি না তুমিই হয়েছো। তুমি যেভাবে আজকাল কথা বলো‌। যতটা অনিহা আমার প্রতি তুমি দেখাও। বিশ্বাস করো আমার জীবনে যতটা দিন রণয়ী ছিল! ততোটা দিন যে সুখ আমি পেয়েছি। তোমার কাছে এই দশ বারো বছরে তাঁর এক কোণাও পাইনি।”

‘রক্তিম! তুমি! তুমি আমাকে ওই মেয়ের সাথে তুলনা করলে? তুমি আমার কাছে সুখ পাচ্ছো না?”

‘চেঁচামেচি করবে না একদম। নেকা কান্না আমার সামনে নয়। যাও চা নিয়ে আসো। মাথা ধরেছে আমার।”

‘পারবো না তোমায় চা দিতে। রুনা কে গিয়ে বলো।”

‘স্বামী কার! যাও চা তুমি আনবে মানে তুমিই আনবে। আর রুনা কে আজ থেকে বাদ দিয়ে দাও। তাঁর তো কোনো কাজ নেই। তুমিই সব করো।”

‘রক্তিম!”

‘যাও!”

মুখ গুমরো করে ঘর থেকে বের হলেও নূরার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো তাচ্ছিল্যের হাসি। ‘তোমার ঠকানোর অভ্যাস নেই। তবে ঠকে যাওয়াটা পুরনো অভ্যেস‌। শুভ কামনা প্রিয় স্বামী। আমার টাকার ব্যাংক। তোমার জন্য বড়সর একটি সারপ্রাইজ আছে‌। খুব শীঘ্রই পাবে তুমি।”

চা নিয়ে ঘরে এলো নূরা। রক্তিম মাথা মুছে তোয়ালে রাখলো চেয়ারের উপর। নূরার থেকে চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় চলে এলো। অন্ধকার বারান্দা। বসলো চেয়ারে সে। গা এলিয়ে দিল তাতে। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সমানে হঠাৎ ভেসে উঠলো এক সুন্দর মুখশ্রী। কী নজরকাড়া হাসি! হৃদয় নাড়িয়ে দিতে সক্ষম। উফফফ! এমন ভুল কেন হয়? যে ভুল কখনো সংশোধন করা যায় না হাজার চেয়েও। কেন জীবনে এমন ভালোবাসা আসার পরেও হারালো সে? আজকাল এটা ভাবলেই ভীষণ ব্যথা হয় বুকের বাঁ পাশে। তবুও দিন পারি দিতে হয় দিন। আফসোস হয়ে থেকে যাবে সে আমরণ। ভালোবাসা নিয়ে সে এসেছিল ঠিক! তবে বিনা দোষেই এমন শাস্তি পেয়ে গেল। সে নারীর প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস এখন তাঁর বুকের বাঁ পাশের তিক্ত ব্যথা যেন।”

~~~~•••••
খাবার টেবিলে ছেলের সাথে বসে আছেন সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ছেলে কে দেখছেন তিনি। ভেবে রেখেছিলেন আজ কথা বলেই ছাড়বেন ছেলের সাথে। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন! বুঝে উঠতে পারছেন না। ছেলে কীভাবে নিবে! সেটা ভেবে। দনুমনো করতে করতে পানি পান করে বললেন, ‘আব্বা একটা কথা বলার ছিল।”

‘জ্বী আম্মা বলুন।”

‘বলছিলাম, রণয়ী মেয়েটা কেমন?”

‘মানে?”

‘মানে সে অফিসে কাজ করে কেমন?”

‘কাজে তো ভালোই। বেশ পরিশ্রমী মেয়ে। অফিসে ভালো কর্মচারী বাছাই করলে তিনি প্রথম স্থানে থাকবেন বলা যায়। কাজে মনযোগী মানুষ। বলতে পারেন আব্বা যেরকম পরিশ্রমী মানুষ খুঁজতেন। তাদের মধ্যে একজন।”

সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন খুশি হলেন। বললেন, ‘মেয়ে হিসেবে ভালো না? আমার দেখায় কিন্তু সে অনেক ভালো একটা মেয়ে।”

‘হুম ভালো‌।”

দুর্জয়ের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। তিনি বললেন, ‘আমার পূত্র বধূ হিসেবে যদি আমি পছন্দ করি তাকে। কেমন হবে আব্বা?

দুর্জয় বিস্মিত চোখে তাকায় মায়ের কথায়‌। বলেন কী আম্মা! কন্ঠে একরাশ বিষ্ময় নিয়ে বললো, ‘কী বলছেন আম্মা?”

‘হ্যাঁ আব্বা। মেয়ে হিসেবে যেহেতু ভালো সে ! তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে না?”

‘আম্মা!”

‘অনেক আগে থেকেই তাকে পছন্দ ছিল আব্বা আমার। আপনার নানু কেও বলেছিলাম। মানুষের অতীত তো থাকেই‌। তারও না হয় আছে। একজন ভাঙ্গা মনের মানুষ তো জানে! আরেকজনের মন ভাঙ্গা কতটা অনুচিত! আর কতটা কষ্টের। আব্বা! আপনি বলেন। আপনার যদি পছন্দ না হয়। আমি কোনো কথাই আগাবো না। আমার ছেলে যার সাথে ঘর করতে চাইবে তার সাথেই হবে। প্রয়োজনে তাকে বাদ দেবো। আপনি ভাবেন আব্বা। সময় নিন। শুধু মায়ের মন রক্ষার্থে মত দিবেন না। আমি তবে অপরাধী হয়ে যাবো।”

দুর্জয় হাত ধুয়ে এসে বসলো মায়ের পাশে। কিছু একটা ভাবলো। তারপর বললো, ‘আপনি কথা বলুন আম্মা। যদি তাঁর কোনো সমস্যা না থাকে আমারো তবে নেই। আপনার মন রক্ষার্থে নয় শুধু। আমার পছন্দ থেকেই বলছি। বুঝে নিন মানুষ হিসেবে আমি তাকে পছন্দ করেছি। ঘর করার জন্য।”

‘আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আব্বা। আপনি একজন ভাঙ্গা মনের মেয়ে কে বিয়ে করলেও সুখী হবেন আব্বা। সেই মেয়েটাও আপনার মতো মানুষ পেয়ে সুখী হবে। আপনি সুখী হবেন। আপনার আম্মা ভুল করেননি একদিন মিলিয়ে নিবেন।”

‘আমার মায়ের পছন্দ কখনো ভুল হতে পারেই না। তিনিও আমার জন্য ভুল হবেন না।”

‘আগে আমায় একটা কথা দিন আব্বা! আপনি সংসার জীবনে কখনো তাঁর অতীত নিয়ে কথা তুলবেন না।”

দুর্জয় মায়ের কথায় হাসলো। বললো, ‘আম্মা! আমি আপনার পুত্র! আপনি এটুকু বিশ্বাস রাখেন আমার উপর। কাউকে মনে আঘাত করে কথা বলতে শিখেনি আপনার পুত্র। আপনার শিক্ষা! সেই আমিই কীভাবে সঙ্গিনী কে আঘাত করি‌? যার সাথে ইহজীবন পরজীবন পারি দেবো আমি।”

সন্তুষ্ট হেসে সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন বললেন, ‘সে মেয়ে নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী। নয়তো আপনার মতো মানুষকে সে পেতো না আব্বা। দেখুন না একজনের হয়েও সে হতে পারেনি। কখনো এটা ভাবেন না আব্বা। আপনি তাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। সে এর আগেও সংসার করেছে‌। দ্বিধায় ভোগবেন না। একজন তালাকপ্রাপ্তা নারী কে বিবাহ করলে খোদা তায়ালাও কিন্তু খুশি হোন‌।”

‘আপনি তাঁর সাথে কথা বলুন আম্মা। সে মত না দিলে তো সব শেষ।”

‘সেও মানবেই।”

দুর্জয় মায়ের পাশ থেকে উঠে গেল। মায়ের কথায় বলে তো দিল। আদৌ সে মন থেকে মানতে পারবে? কেন তাঁর জীবনের প্রথম পুরুষ হয়েও হতে পারলো না সে। কেন সদ্য জন্ম নেওয়া তাগড়া যুবককেই বা অনুভূতির দাফন করতে হলো‌। অতঃপর ঘুরেফিরে সে নারী তাঁর ঘরেই আসবে‌‌। আসবে কী সে? পুরনো অনুভূতি পুনরায় জেগে উঠলে ক্ষতি হবে না তো। আঘাত পাবে না তো তারা আর?”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here